#গোলকধাঁধা
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৩
বলে সিরাতকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। এরপর বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। এদিকে সত্যিই পুরো রাতটা নির্ঘুম কাটলো সিরাতের। তবে ভোরের দিকে ক্লান্ত চোখদুটো কিছুতেই খোলা রাখা গেলো না।
এলার্মের জোরালো শব্দ। প্রতিদিনের মতো আজও ঘুম ভাঙলো প্রত্যয়ের। ঘুমন্ত অবস্থায়ই হাত বাড়িয়ে এলার্ম বন্ধ করে ওঠলো ও। আড়মোড়া ভেঙে এদিকওদিক চাইতেই চমকে ওঠলো সে৷ মেঝেতে বসে বিছানায় হাতের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে সিরাত। প্রত্যয় নিজের হতচকিত ভাব কাটিয়ে দেখলো ওকে। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠলো হাসি। ভেতরে ভেতরে প্রচুর শান্তি পাচ্ছে ও। মুডটাই ভালো হয়ে গেলো সকাল সকাল। সিরাতকে এরকম অসহায় অবস্থায় দেখে ওর এতদিনের রাগ-ক্রোধেরা যেন একটু হলেও শান্তি পাচ্ছে। ইস! কতদিন সে অপেক্ষা করেছে ভালোমানুষির মমতাময়ী মাতা সিরাত আঞ্জুমকে এভাবে দেখার! চোখের শান্তি! হাই
সাউন্ডে মিউজিক ছেড়ে লাগোয়া ব্যলকনিতে
ব্যায়াম করতে গেলো সে। এত জোরে মিউজিক শুনে সিরাত লাফ দিয়ে ওঠে বসে চোখ খুললো। মাথার ভেতর সব ঘোলাটে হয়ে আছে৷ গতদিনের সব
ঘটনা মনে পড়তেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো ও। নিজের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। নিজের শত্রুর সাথে একঘরে রাত কাটিয়েছে সে। জামাকাপড় ঠিক করে ওঠে দাঁড়াতেই বারান্দা থেকে প্রত্যয়ের
গলা শোনা গেলো,
‘ভালোমানুষির দেবীর ঘুম
ভেঙেছে তাহলে?’
সিরাত শুনেও উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলো। কি বলবে বা করবে ভেবে ওঠতে পারলো না। প্রত্যয় গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে ঘরে ঢুকে মিউজিক অফ
করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। বুকের ওপর আড়াআড়ি হাত ভাঁজ করে রেখে ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ‘কথা বলার ইচ্ছে নেই জানি। তবে আমার কথা না শোনে কিছু করতেও পারবে না। মমতার মাতার এ কি হাল!’
‘চুপ করুন, স্ক্রাউন্ডেল কোথাকার।’
সিরাত রাগে চেঁচিয়ে ওঠলো৷ চোখের কোণে বোধহয় জলও জমেছে৷ প্রত্যয় কথা না বাড়িয়ে বলল,
‘ওদিকে ওয়াশরুম। আর আমি প্রত্যাশাকে পাঠাচ্ছি ওকে বলতে পারো কিছু প্রয়োজন হলে।’
সিরাত তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল, ‘আমি বাড়ি ফিরতে চাই।’
প্রত্যয় চোখমুখ শক্ত করে বলল, ‘বাড়িতে বসে আরাম করার জন্য তো তোমায় বিয়ে করিনি। তোমার আরাম হারাম করার জন্যই তো এতসব আয়োজন।’
‘ঘৃণা করি আপনার মতো কাপুরুষকে।’
প্রত্যয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘তাতে আমার কিছু যায় আসে না। বাট তুমি এ বাড়িতেই থাকবে, আমার চোখের সামনে। কোথাও যাওয়া চলবে না।’
সিরাত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘আপনি কি বুঝতে পারছেন না আপনার এসব প্রতিশোধের নেশায় অহেতুক আমার বাবা-মা’কে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করছেন? এতটা পশু কীভাবে হতে পারেন?’
প্রত্যয় ওর কথায় তেমন গা করলো না। বরংচ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়াল করলো কোনো নাম্বারে। ওপাশ থেকে সাড়া পেয়ে হাসিমুখ করার চেষ্টা করে কুশল বিনিময় করে কিছুক্ষণ কথা বললো। সিরাত অমন নরম স্বরে কথা বলা
প্রত্যয়কে দেখে মনে মনে গালি দিলো। ব্যাপারটা হয়তো ধরতে পারলো ও। সেজন্যই ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে বলল, ‘আঙ্কেল সিরাত ভয় পাচ্ছে আপনাদের সাথে কন্ট্রাক্ট করতে। বলুন তো আমি কি করবো?’
ওপাশ থেকে সিরাতের বাবা শিমুল সাহেবের গলা শোনা গেলো। ওনি বিনয়ী গলায় বললেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। ওকে বলে দাও আমরা রাগারাগি করবো না একদম।’
কাহিনী দেখে সিরাত থ! এতক্ষণ ওর বাবার সাথে কথা বলছিলো এই গুন্ডা? আর এতোটা ব্রেইন ওয়াশ করলো ওর বাবার? যে এত ভালোভাবে কথা বলছে? তার মানে কাল বাবা-ই ভিডিও কলে সোহাকে দেখিয়েছিলো? সিরাত জ্বলন্ত চোখে তাকাতেই
প্রত্যয় ওর দিকে ফোন এগিয়ে দিলো। দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় ও ফোন কানে ঠেকাতেই প্রত্যয় বাঁকা হেসে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। সিরাত ফোন কানে ধরে খানিকটা নত সুরে বলল, ‘বাবা আমি আসলে…’
শিমুল সাহেব রুক্ষ স্বরে বললেন, ‘তুই আমাকে আগে বলবি না? বললে কি আমরা বাঁধা দিতাম? তোর পছন্দই সব আমাদের কাছে। পালিয়ে না গেলেও পারতি! যাইহোক, ছেলেটা ভালো। কতশত নাম
শুনেছি ওর। ভালো পরিবারের ছেলে। বিয়ের আগে এসে আমাকে এমনভাবে ধরলো যে মত দিতে বাধ্য হয়েছি।’
সিরাত হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো। ভালোই বোকা বানিয়েছে ওর বাবাকে। ও ছোট্ট করে বলল, ‘স্যরি।’
শিমুল সাহেব বললেন,
‘একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। তোকে আর বিয়ের জন্য জোরাজোরি করতে হবে না। কত প্রস্তাব ফিরিয়েছিস তুই!’
সিরাত এড়িয়ে গিয়ে বলল, ‘তোমরা ঠিক আছো? মা, নীরু কোথায়? সোহা ভালো আছে তো?’
‘আমাদের কি হবে? ভালোই আছি। তোর মা মুখভার করে আছে একটু, চিন্তা করিস না আমি বুঝিয়ে বলবো। নীরু স্কুলে। সোহা ভালো আছে, একদম
চিন্তা করবি না ওর জন্য। এবার একটু নিজের সংসারে মন দে! খানদানি পরিবার একটু মানিয়ে-গুছিয়ে চলবি মা।’
সিরাতের গলা ভার হয়ে এলো। কোনোমতে বলল, ‘সোহার খেয়াল রেখো, মেয়েটার গায়ে জ্বর আছে কিন্তু।’
‘চিন্তা করিস না মা। ডাক্তার দেখে গেছে ওকে। জামাই বাবাজিই তো সব ব্যবস্থা করে দিলো। বড় ভালো ছেলে। তুই যে কেন পালাতে গেলি!’
শিমুল সাহেবের কথা শুনে সিরাতের চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। নাটকবাজ প্রত্যয় এত সম্মান পাওয়ার যোগ্য নয় এটা সিরাতের থেকে ভালো কে জানে? সবই আই ওয়াশ। ও জিজ্ঞেস করল, ‘মাকে দাও একটু কথা বলি?’
‘রান্না বসিয়েছে। পরে কথা বলিয়ে দেবো। এখন তবে রাখি।’
সিরাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘আচ্ছা।’
ফোন রাখতেই চশমা পরিহিত প্রত্যাশা এলো। দেখতে সুন্দর মেয়েটির আচরণ মিশুক প্রকৃতির। কাল দেখেই বুঝেছিলো সিরাত; প্রত্যয়ের মতো নয় তার এ বোনটি! সিরাতকে ভীষণ সমীহ করেছে। এ বাড়িতে একমাত্র ওকেই ভালো কেউ বলে বিবেচনা করেছে ওর মস্তিষ্ক। প্রত্যাশা চোখের চশমা ঠিক করে আলতো হেসে বলল, ‘তোমাকে ভাবী বলে ডাকি? যেভবেই হোক না কেন, ভাবী তো সম্পর্কে?’
সিরাতের রাগ হলেও মলিন হেসে বলল, ‘তোমার ইচ্ছে।’
‘আমি সবসময় তোমার মতো মিষ্টি কাউকেই ভাবী হিসেবে কল্পনা করেছি। ভাইয়ার কাজে আমি লজ্জিত তবুও বলছি, তোমাকে আমার দারুণ পছন্দ হয়েছে।’
সিরাত হাসলো। তাতে যেন কোনো প্রাণ নেই। প্রত্যাশা ওর মনোভাব বুঝে কাল মায়ের রেখে যাওয়া শাড়ি, জামাকাপড়ের প্যাকেট হতে মিষ্টি রঙের একটা শাড়ি বের করে বলল,
‘আজ শাড়িই পরো। নতুন বউ যেহেতু। মেহমান আছে কিছু।’
সিরাত মানা করলো না। প্রত্যাশা নিজে থেকেই বলল,
‘মায়ের কাজগুলো আমি করছি! আসলে মা চেয়েছিলো তার বোনের মেয়ে লিয়ানা আপুর সাথে ভাইয়ার বিয়ে দিতে। সেজন্যই এরকম করছে। মায়ের পক্ষ থেকে আমি দুঃখিত।’
‘ইট’স ওকে।’
‘ফ্রেশ হয়ে আসো। আট’টা বাজতে চললো। নাস্তা করতে হবে, কাল তো কিছুই মুখে তুললে না৷ অবশ্য সেরকম পরিস্থিতিই ছিলো না।’
সিরাত কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। নতুন জায়গা, নতুন বাড়ি, নতুন সম্পর্ক। অথচ নিজের অপারগতার জন্য প্রত্যয়ের বন্দিনী মনে হচ্ছে নিজেকে। আভিজাত্যপূর্ণ এ বাড়িতে থাকতে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। বেশিক্ষণ সময় নিলো না ফ্রেশ হতে। শাড়িটা কোনোরকমে পরে রুমে ঢুকে দেখলো প্রত্যাশা তখনো ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ওকে দেখে কাছে এসে শাড়ির বেহাল দশা দেখে বলল, ‘শাড়ি পরতে জানো না বুঝি?’
‘জানি, তবে আনাড়ি এখনো। মা সাহায্য করতো সবসময়।’
প্রত্যাশা হেসে কুচি ঠিক করে দিতে দিতে বলল,
‘আমি কিন্তু ভালোই পারি।’
‘কীসে পড়ো তুমি?’
‘এইচএসসি দেবো।’
‘তুমি বেশ ভালো, প্রত্যয় চৌধুরীর মতো খারাপ নও।’
প্রত্যাশা ঠোঁটে আলতো হাসি ঝুলিয়ে বলল,
‘কি জানি!’
বলে সেফটিফিন খুলে ভালো করে শাড়ি ঠিক করতে নিলো। কয়েক সেকেন্ড পর দরজার বাইরে থেকে পায়ের শব্দ পাওয়া গেলো। সিরাত আতংকিত চোখে তাকালো। প্রত্যাশা চিল্লিয়ে বলল, ‘এসো না ভাইয়া।’
প্রত্যয় দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বোনের চিৎকার শুনে হতভম্ব হয়ে বলল, ‘আমার ঘরে আমি আসতে পারবো না? বেশি সাহস? এখন পারমিশন নিতে হবে তোর কাছ থেকে?’
‘ভাবীকে শাড়ি পরাচ্ছি ভাইয়া। প্লিজ যাও।’
প্রত্যয় ধমকে ওঠলো, ‘কে ভাবী?’
‘সিরাত আঞ্জুম।’
বোনের কথা শুনে প্রত্যয় থমকালো। এরপর বিরক্তি নিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো সেখান থেকে।
নাস্তার টেবিলে মুশফিকা চৌধুরী খাবার সাজাচ্ছেন। আমির সাহেব বসে পত্রিকা পড়ছেন। প্রত্যাশা সিরাতকে নিয়ে আসতেই তিনি পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে দেখলেন ওকে। এরপর আবারও পড়ায় মন দিলেন। সিরাত ইতস্তত করে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম।’
আমির চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলেন, ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো?’
‘জি, ভালো।’
‘বসো। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?’
‘না।’
সিরাত চেয়ারে বসলো। মনে মনে বংশ উদ্ধার করলো তাদের। কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটে চুপ করে রইলো। খানিকক্ষণ বাদে প্রত্যয়ও এসে যোগ দিলো নাস্তায়। সিরাতকে দেখে ঠাট্টার চাহনি দিয়ে কফির মগে
চুমুক দিলো ও। সিরাত মুখ বুজে সব সহ্য করলো। প্রত্যাশা নাস্তা সার্ভ করে দিলো ওকে। মুশফিকা চৌধুরী ফিরেও তাকালেন না। তিনি স্বামী-ছেলেকে নাস্তা দিয়ে নিজের খাবারে মন দিলেন। আমির চৌধুরী বসে সব লক্ষ্য করলেন। গতকাল সিরাতের বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় রেগে গেলেও এখন বুঝলেন মেয়েটার আদব-লেহাজ আছে। ছেলে যখন আব্দার করলো সিরাতকে বিয়ে করার, তখন তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছিলেন এই মেয়েটি কোনো বিত্তশালী পরিবারের নয়। ছেলেকে অনেক
বোঝালেন তিনি এ নিয়ে। কিন্তু প্রত্যয়ের এক কথা, একেই বিয়ে করবে। কি যেন হিসাব-নিকাশের কথা আওড়েছিলো সেদিন। সন্দেহ হওয়ায় তিনি খোঁজ নিয়ে দেখলেন এ মেয়ের জন্য ভার্সিটিতে বেশ নাকানিচুাবানি খেয়েছে তার ছেলে। ছাত্রনেতা
প্রত্যয় চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচির
নেতৃত্ব পর্যন্ত দিয়েছে এই মেয়ে। সেখান থেকেই বোধহয় একটা চাপা রাগ ছিলো সিরাতের প্রতি আমির সাহেবের। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি
খাবারে মন দিলেন। সিরাত বেশিকিছুই খেতে
পারলো না।
________
প্রত্যয় ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রেডি হচ্ছে।
চিরচেনা সেই স্টাইলে। পাঞ্জাবি-পাজামা পরে
একদম ছাত্রনেতা ভাব নিয়ে। একটু পর পরই ওর ফোন আসছে। অমুক, তমুক, চেলা প্যালা ফোন দিয়ে মাথা খাচ্ছে। দ্রুত যেতে বলছে। আজ নাকি ওদের দলের গুরুত্বপূর্ণ মিটিং। সিরাত মলিন মুখে চুপ হয়ে বসে এসব দেখছে। মনে মনে ভাবছে এই গুন্ডা
কি এখন ওর ভার্সিটি যাওয়াও বন্ধ করে দেবে?
প্রত্যয় ওকে আনমনা দেখে তা ভালোই আন্দাজ করে নিলো। সিরাতের মুখের ওপর ভেজা তোয়ালে
ছুঁড়ে মারলো। এরপর ওকে আদেশের সুরে বলল, ‘আমার কাপড়গুলো ধুয়ে সুন্দর করে ইস্ত্রি করে রাখবে, এসে যেন দেখি।’
‘আমি আপনার চাকর নই।
প্রত্যয় কটাক্ষ করে বলল,
‘জানি আমার বউ। বারবার মনে করানোর প্রয়োজন নেই।’
সিরাত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘বউ হতে বয়েই গেছে।’
প্রত্যয় শুনেও না শোনার ভান করলো। বেরিয়ে যেতে যেতে বলল, ‘আমার কথা মেনে চললে ভার্সিটিতে যেতে পারবে। নয়তো ঘরে বসে শুধুই বউয়ের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কাপড় যেন চকচক করে। মাইন্ড ইট!’
সিরাত হতবাক হয়ে ওর যাওয়া দেখলো। লোকটা
এত ধুরন্ধর! এভাবেই ব্ল্যাকমেইল করে সব কাজ করাবে নাকি? একটু পরই দরজায় টোকা পড়লো। সিরাত দরজা খুলে দেখলো হাতে বালতি নিয়ে বিশ-বাইশ বছরের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিরাতকে দেখে সে বিস্ময় নিয়ে বলল, ‘আফনেই নতুন ভাবী?’
সিরাত মৃদু কন্ঠে বলল, ‘হ্যাঁ।’
‘কেমুন আছুইন?’
‘ভালো। তুমি কে?’
মেয়টি হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে চোখমুখ কুঁচকে বলল,
‘নাম দুখু। আমি এ বাড়ির বা’ন্দী। আফনেরে দেইখা বড়ই ভালা লাগতাছে। দুইজনরে মানাইসে ভালা।’
সিরাত হকচকালো। দুখু আবার কেমন নাম? ও অস্বস্তি নিয়ে বলল,’ইয়ে মানে কিছু প্রয়োজন?’
‘ভাইজানের কাপড় ধুইতে নিয়া যামু। কি কি ধুইতে হইবো দেন নিয়া যাই।’
সিরাত অস্ফুটস্বরে বলল, ‘জানি না।’
দুখু অবাক হলো না। নতুন বউ কেমন জানবে? ও ঘরে ঢুকতে ঢুকতে লন্ড্রি ঝুড়িতে রাখা কাপড়গুলো দেখিয়ে বলল, ‘এইখানে আধোয়া কাপড় রাহে ভাইজানে। আমি নিয়া যাই তাইলে।’
‘কোথায় নেবে?’
‘ধোপার দোকানে। ইংলিশে কি কয় জানিনা।’
‘লন্ড্রি?’
‘হ। প্রতি রবিবার বাড়ির হগলের কাপড় ধুইতে দেয়।’
সিরাত ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘তোমার ভাইজানেরও?’
‘এ বাড়ির হগল কাপড়ই তো দেয়। ভাইজানে বাদ যাইবো নাকি? আজিব কতা।’
সিরাত প্রত্যয়ের পরিকল্পনা বুঝতে পারলো। এর মানে
ওকে নাস্তানাবুদ করার জন্যই এতগুলো কাপড় ধুতে বলে গেছে? বাজে লোক কোথাকার! ও দুখুর হাত থেকে কাপড়গুলো নিয়ে বলল, ‘তুমি যাও।’
দুখু অবাক গলায় বলল,
‘কিন্তু কাপড়?’
‘আমি ধুয়ে দেবো।’
সিরাত উত্তর দিলো। দুখু ওর কথা শুনে মিটিমিটি হেসে চলে গেলো। সিরাতের রাগে-দুঃখে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করলো। একরাশ বিরক্তি নিয়ে প্রত্যয়ের কাপড়গুলো ধুয়ে দিলো পা দিয়ে পেরে।
রাতে বাড়ি ফিরে এ দৃশ্য দেখে প্রত্যয় ভীষণ
প্রশান্তি অনুভব করলো। অথচ জানতেই পারলো না সিরাত কী ভীষণ ঝড় চালিয়েছে ওর প্রিয় কাপড়গুলোর ওপর! সিরাত ব্যলকনিতে। প্রত্যয়ের সামনে থাকতে ওর অস্বস্তি হয়। শত হলেও
লোকটা তার স্বামী। কিন্তু দেখলেই রাগ হয়।
প্রত্যয় গলা ফাটিয়ে ওকে ডাকতেই
হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো সিরাত৷ পাছে যদি আবার ভার্সিটিতে যেতে না দেয়? এই অমানুষকে তো
বিশ্বাস নেই। প্রত্যয় বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে আয়েশি ভঙ্গিতে। ওকে দেখেই বলল, ‘পা টিপে দাও।’
সিরাত মুখ অন্ধকার করে বলল, ‘পারবো না।’
প্রত্যয় ধমকে ওঠলো, ‘স্বামীর আদেশ অমান্য
করা? জানো তো এর ফল?’
অগত্যা বাধ্য হয়ে সিরাত ওর পা টিপে দিতে রাজি হলো। বিনিময়ে প্রত্যয় মুচকি হেসে বলল, ‘কাল ভার্সিটিতে যাবে, আমার সঙ্গে করে। কিন্তু যদি বাড়াবাড়ি করো, পরশু থেকে আবারও বন্ধ।’
সিরাত বহুকষ্টে নিজের গালি আটকালো। প্রত্যয়
ওকে একপলক লক্ষ্য করে শয়’তানি হাসি দিয়ে
বলল, ‘শাড়িতে তো ভালোই মানায়।’
সিরাত ভস্ম করা দৃষ্টি উপহার দিয়ে বলল, ‘নজর খারাপ তা তো জানতাম না।’
‘আস্তে-ধীরে সবই জানবে। এখন মনোযোগ দিয়ে পা টেপো।’
সিরাতের ইচ্ছে করলো পা দুটো ভেঙ্গে দিতে। বহু
কষ্টে নিজের ইচ্ছেকে সংবরণ করলো সে।
‘
[ট্রিপিক্যাল ব্যাপারস্যাপার আছে গল্পে। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]
চলবে…