#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৭
কথা শেষ করেই পুতুল নিজের পা উঁচু করে, পরশের অধরে,অধর মিলিয়ে দিলো।
পরশ এক ঝটকায় পুতুল কে সরিয়ে ঠাসসস করে একটা চড়, দিয়ে বলে,এসব অসভ্যতা কোথা থেকে শিখেছিস।
‘পুতুলের চোখ থেকে টুপটুপ করে অশ্রু ঝড়ছে। মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের করছে না৷ ঠোঁট কামড়ে চোখ থেকে নিরব অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
‘পরশ একটু সামনে এসে পুতুলের দুই কাঁধে হাত রেখে বলে,কি রে উত্তর দিচ্ছিস না কেন? উত্তর দে।
পুতুল হুটকরে পরশকে জড়িয়ে ধরলো, আমাকে মারো, বকো যা খুশি করো,তবুও পরাণ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়েটা দিও না। তুমি আমাকে বিয়ে করো,আমি তোমার সব কথা শুনবো, একদম তোমার মনের মত চলবো। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না।
‘পরশ পুতুলকে সরিয়ে দিয়ে বলে,আজ বাদে কাল আমার ভাইয়ের বউ হবি, তোর এসব বলতে লজ্জা করছে না। তুই ছোট ছোটর মত থাক। যা হচ্ছে তাতেই সবার মঙ্গল। বলেই হনহন করে চলে গেলো।
‘পুতুল বালিসে মুখ গুজে কান্না শুরু করলো।
এমন সময় জুলিয়া এসে বলে,পুতুল দেখ তোর জন্য পরাণ ভাইয়া কি নিয়ে এসেছে?
‘পুতুল ভারি কন্ঠ বলে,তুমি এখন যাও আমার এসব দেখার ইচ্ছে নেই।
‘সেকি কথা পুতুল,তোর জন্য আইফোন নিয়ে এসেছে এই দেখ।
‘অন্য সময় হলে পুতুল আনন্দে লাফিয়ে উঠতো৷ কিন্তু আজ পুতুলের মন একদম ভালো,নেই।
‘জুলিয়া পুতুলকে টেনে তুলে বলে,এই দেখ তোর ড্রীম।
‘পুতুলের চোখে পানি দেখে বলে, তুই কাঁদছিস কেন?তোকে তো কোথাও পাঠাচ্ছে না। তুই বিয়ের পরেও এবাসায় থাকবি।
‘পুতুল জুলিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে ছুটে চলে আসলো নিজের মায়ের রুমে, সুফিয়া বেগম বারান্দায় বসে ছিলেন৷ পুতুল যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
‘সুফিয়া বেগম ঘাবড়ে গেলেন, কিরে মা তোর কি হয়েছে কাঁদছিস কেন? বল আমাকে কি হয়েছে?
‘আমি এই বিয়ে করবো না। তুমি বাবাকে বুঝিয়ে বলো আম্মু।
‘কান্না বন্ধ কর আমিও এই বিয়ে হতে দেবো না। লাগলে মা, মেয়ে আন্দোলন করবো।
‘পুতুল কান্না থামিয়ে বলে,সত্যি?
‘হুম সত্যি।
পুতুল হেসে নিজের রুমে চলে আসে,এসে দেখে বেডের উপর অনেকগুলো চকলেট রাখা।
চকলেট দেখেই খেতে শুরু করে,তারপর মনে, মনে বলে,প্ল্যান এ ফেইল করেছে তো কি? প্ল্যান বি তো কাজ করেছে। সেটা ফেইল করলে প্ল্যান সি তো রেডি আছেই। নিমিষেই কয়েকটা চকলেট শেষ করে ফেললো পুতুল।
তারপর ভাবলো,বিয়ে না করলে কি! আইফোন তো নিতেই পারি। প্ল্যান সি সাকসেসফুল করতে ফোন তো লাগবেই। পুতুল উঠে দাঁড়িয়েছে এমন সময়
‘পরাণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,পুতুল তোর সাথে কথা আছে।
‘তুমি বলো আমি শুনছি। বয়রা তো নই যে শুনবো না।
‘রুমে এসে কথা বলতে পারি?
‘নাহহ পারো না। মুভিতে দেখোনা ছেলে,মেয়ে একি রুমে থাকলে লোকে বদনাম দেয়।
‘আমাদের তো বিয়ে হচ্ছে তাহলে সমস্যা কোথায়?
‘বিয়ে হচ্ছে তার মানে এটা ভবিষ্যত কাল। আর ভবিষ্যত হবে মানে, হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। তাই বর্তমানে যা চলছে সেটা ফলো করো।
‘আচ্ছা এই ব্যাগ দু’টো ধর।
‘পুতুল হাত বাড়িয়ে ব্যাগ নিলো৷
‘একটাতে ড্রেস আরেকটাতে তোর জন্য একটা মোবাইল আর কিছু ছোট, ছোট গিফট আছে। এসব তো কিছুই না বিয়ের পর তোকে অনেক শপিং করে দেবো।
‘আচ্ছা এবার যাও।
‘শোন পুতুল আমি তোকে ভালোবাসি।
‘তাতো আমাকে বাড়ির সবাই বাসে। বলেই মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর বিড়বিড় করে বলে,আসছে উড়ে এসে জুড়ে বসতে, শালা তোকে বিয়ে করে সারাজীবন শুনবো,টাকার জন্য সুগার ড্যাডি বিয়ে করেছে।লজ্জা নাই আমার মত বাচ্চাকে বিয়ে করতে চাস।আমাকে তো চিনতে পারেনি৷ তুমি আর তোমার ভাই কি ভেবেছে আমাকে! নাকে দড়ি দিয়ে যদি না ঘোড়াই তবে আমার নাম ও পূর্নিমা জাহান পুতুল না। শখ কত তো বিয়ে করবে আমাকে!
✨পরশ একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে। কিছুক্ষণ বসে থেকে, একজনকে কল করলো,রিসিভ হতেই বলে,কি তোমার আর কতক্ষণ লাগবে?
‘এইতো চলে এসেছি। সামনে তাকিয়ে দেখে পিওলি।
‘হায় পিওলি। কেমন আছো? বসো।
‘গুড তুমি কেমন আছো পরশ।
‘আছি আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে যা, যা বলেছি মনে আছে তো?
‘হ্যা মনে আছে৷
‘সব একদম পার্ফেক্ট ভাবে করবে।
‘টেনশন নিওনা সুইটহার্ট ওসব আমার বা’হাতের খেল।
‘রাতে ডিনার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে।
‘পলাশ সাহেব বললেন,পরশকে দেখছি না যে?
‘পরাণ বললো,এখনো বাড়ি ফেরেনি৷
‘জুলিয়া বলে,তাহলে আমি ওয়েট করি পরশ ভাইয়া ফিরলে একসাথে খাবো।
‘পুতুল হেসে বলে,সে তোমার বর নাকি! তারজন্য ওয়েট করবে।হতেও পারে সে খেয়ে আসলো।
‘সবার কথার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো।একজন সার্ভেন্ট যেয়ে দরজা খুলে দিতেই পরশ আর পিওলি ভেতরে আসলো।
‘পরশ এসেই বলে,বাহহহ ভালো সময় এসেছি,আমরাও ফ্রেশ হয়ে আসি একসাথে খাবো আর ওর সাথে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিবো। জুলি ওকে তোর রুমে নিয়ে যা একটু ফ্রেশ হয়ে আসুক।
‘পুতুল কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে। তারপর মনে, মনে বলে,আমার মত সুন্দরী রেখে শেষে কিনা এই বিলেতি মূলা কে পছন্দ করলো। থাকুক তাতে আমার কি! একদিন কাঁদবে আর পুতুল, পুতুল করবে।কিন্তু তখন আর পুতুলের নাগাল পাবে না।
‘নিলুফা বেগম আড় চোখে পুতুলের দিকে তাকিয়ে আছেন। পুতুলকে তার ভিষণ পছন্দ।
‘ পরশ আর পিওলি এসে খেতে বসলো৷
পিওলি বসেছে পুতুলের পাশে,পিওলি বলে,হেই কিউট বেবি,তোমার নাম কি?
‘আমি বেবি না, বিয়ে দিলে আমার নিজের বেবি থাকতো।
পুতুলের কথা শুনে সবাই পুতুলে দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো।
পুতুল হেসে বলে,আসলে এই কথাটা পরশ ভাইয়া আমাকে বলেছে।
‘পরশের কাশি উঠে গেলো পুতুলের কথা শুনে।
‘পলাশ সাহেব ধমক দিয়ে বলে,পুতুল খেতে বসে এতো কথা কিসের? চুপচাপ খাবার শেষ করো।
‘খাবার শেষ করে সবাই বসে আছে। পুতুল তখনো খাচ্ছে।
‘পরশ বলে,চাচ্চু ও র নাম ফারিহা নূর। আমরা একে অপরকে পছন্দ করি।
‘খাবার রেখে পুতুল অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো পুতুলের হাসি দেখে।
‘পরশ ধমক দিয়ে বলে,পুতুল তুই কিন্তু বেশি করছিস। আমি কোন জোক্স বলিনি কিন্তু।
‘জোক্স নয়তো কি? ওর আর তোমার বয়স দেখো, মনে হচ্ছে মা’ছেলে। বলে আমার হাসা শুরু করলো।
‘একদম বাজে বকবি না পুতুল। ও আমার মাত্র চার বছরের সিনিয়র। তাতে কি? ভালোবাসা বয়স দেখে হয় নাকি?
‘পুতুল আর কোন কথা না শুনে উঠে চলে আসলো হাসতে হাসতে, আসার সময় বলে,ভালোবাসা অন্ধ তাই পরশ ভাইয়ার নাকে আসে না বয়সের গন্ধ।
‘পলাশ সাহেব রেগে বলেন, কি হচ্ছে কি এসব পরশ?
‘চাচ্চু আমি নূর কে পছন্দ করি। আর আশাকরি তোমরা মেনে নেবে।
‘পরাণ নির্বিকার সে তো পিওলিকি দেখেই ভয়ে আঁটোসাঁটো হয়ে আছে।
‘নিলুফা বেগম বললেন,ভাইজান ওদের যা ইচ্ছে করুক৷ ও যদি এই মেয়েকে নিয়ে সুখে থাকতে চায় থাকুক৷ এখনকার ছেলেমেয়েরা বেয়াদব। বাবা-মায়ের কথা শুনেনা। আমরা একটা কথা বললে,তারা সেই কথার বিপরীতে একশো যুক্তি হাজির করে।
‘জুলিয়াও চলে আসলো হনহন করে। এসে দেখে পুতুল এখনো হাসছে।
‘জুলি বালিশ এনে পুতুলের শরীরে ছুড়ে মেরে বলে,হাসি থামাবি নাকি! কখন থেকে পাগলের মত হেসে যাচ্ছিস।
‘আমার মুখ,আমার দাঁত,আমার মন,আমার হাসি তাতে তোমার কি সমস্যা? আর সার্কাস দেখে হাসবো না?
#চলবে