চন্দ্রাবতী,পর্ব:৯

0
345

#চন্দ্রাবতী
#আমিনা আফরোজ
#পর্ব:-০৯

শান বাঁধানো পুকুর ঘাটের সিঁড়িতে একাই বসে আছে চারু। ধরনীতে ততক্ষনে নেমে এসেছে নিকষ কালো অন্ধকার। চারিদিক সুনসান নিস্তব্ধ। শুধু থেমে থেমে কখনো সখনো শোনা যাচ্ছে ঝিঁঝিঁ পোকার অস্পষ্ট ডাক । আজকের আকাশে চাঁদের ছিটেফোঁটাও নেই। চারিদিক ঘোর অন্ধকার নেমেছে।

এই অন্ধকারের মাঝেই ঠাঁই বসে আছে চারু। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নানা ধরনের চিন্তা। মাথায় যেন রিতিমত নিশ্চুপ যুদ্ধ চলছে । যুদ্ধের প্রতিপক্ষ দল যে বিলকিস বেগম ও রাশেদ এতে কোন সন্দেহ নেই। চারু কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না চন্দ্রার মতো মেয়ে সব অত্যাচারগুলো মুখ বুঝে মেনে নিচ্ছে কেন? যে চন্দ্রাকে ও চিনে সেই চন্দ্রা কখনো অন্যায় মেনে নেয় না সে নিজের প্রতিই হোক আর অন্যের প্রতিই হোক। তাহলে কি এসবের পিছনে অন্য কোন কারন আছে?

চারুর এইসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই নিঃশব্দে ওর পাশে এসে বসলেন আমজাদ হোসেন । নামায শেষে মসজিদ থেকে ফিরে সারাবাড়ি চারুর খোঁজ করে ওকে না পেয়ে অগত্যা পুকুরপাড়ের দিকে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি । অবশেষে ভাগ্যক্রমে পুকুরপাড়েই চারুকে পেয়ে গিয়েছেন। তাই নিঃশব্দে চারুর পাশে এসে বসলেন তিনি। চারুর দিকে মিনিট দুয়েক তাকিয়ে বুঝতে পারলেন চারু কোনো চিন্তায় মগ্ন হয়ে রয়েছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে নিজেও চুপ করে বসে রইলেন। আপাতত নিশ্চুপ থাকাটাই বোধহয় ভালো।

এভাবেই সন্ধ্যা গড়িয়ে কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ সময়। হঠাৎ করে কারো পদ ধ্বনি শুনতে পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালেন আমজাদ হোসেন। চারু তখনো সামনের সীমান্তের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিশ্চুপ বসে আছে আর মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। যেন এই মুহূর্তে ও খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। ওর কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে এ কাজে কোন বিঘ্ন ঘটলে পুরো দুনিয়াটাই রসাতলে যাবে আজ।

এদিকে নিভু নিভু হেরিকেন হাতে নিয়ে পুকুরপাড়ের দিকে এগিয়ে আসছেন এক নারী অবয়ব । চলার গতি তার মন্থন। সকৌশলে পা ফেলে এগিয়ে আসছেন তিনি। পুকুর ঘাটে এসেই হারিকেনটি উঁচিয়ে ধরে গলা কেশে বলল,

–” তোমরা দুটো এখানে কি করছো শুনি? আমি সেই কখন থেকে খুঁজে যাচ্ছি তোমাদের। ”

নারী অবয়বটির কন্ঠ শুনে এতক্ষণে চিনতে পারলেন আমজাদ হোসেন । এ যে ওনার সহধর্মিনী। তিনি ইশারা দিয়ে চারুকে দেখিয়ে নিচু স্বরে বললেন,

–” দেখছো না চারু মন খারাপ করে বসে আছে। তাই ওকে বসে বসে নিঃসঙ্গতার সঙ্গ দিচ্ছি আমি।”

আমজাদ সাহেবের কথা শুনে এতক্ষণে টনক নড়লো আনোয়ারা বেগমের । তিনি নিজেও কৌতূহলবশত চারুর মুখ পানে তাকালেন । সত্যিই তো মেয়েটার চোখে-মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ দেখতে পাচ্ছেন তিনি। কিন্তু এই তো কিছুক্ষণ আগে বিকেল বেলা যখন মেয়েটা বাড়ি থেকে বের হয়েছিল তখনো ঠিকঠাক ছিল মেয়েটা। তাহলে কিছু সময়ের মধ্যে কি এমন হল যে মেয়েটা এই অন্ধকারের মধ্যে একা একা বসে আছে? তাও আবার চিন্তার ঝুড়ি নিয়ে । কথাগুলো মনে মনে ভেবে তিনিও হেরিকেন হাতে এগিয়ে এসে চারুর বাম পাশে বসলেন। অতঃপর হেরিকেনটা পুকুর ঘাটের সিঁড়িতে রেখে কোন ভনিতা ছাড়াই বলে ওঠলেন,

–“কিরে চারু এখানে এমন অন্ধকারের মাঝে বসে আছিস কেন? কিছু হয়েছে কি? বিকেল বেলাতে ও তো ঠিকঠাক দেখলাম।”

আনোয়ারা বেগমকে কথা বলতে দেখেই সাহস পেলেন আমজাদ সাহেব । তাই তিনি নিজেও চারুর মাথায় হাত রেখে বললেন ,

–“তোর কি হয়েছে আমাদের বল তো ?” এভাবে মনমরা হয়ে চুপচাপ বসে আছিস কেন? তোর মন খারাপে যে আমাদের খুব কষ্ট হয়, এটা বুঝিস না?”

আমজাদ হোসেনের কথা শুনে এবার মুখ তুলে তাকালো চারু। নানা নানিকে দু’পাশে বসে থাকতে দেখে কিছুক্ষন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেদিকে।তারপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল ,

–“তোমরা জানো চন্দ্রা ভালো নেই। চন্দ্রা স্বামী চন্দ্রাকে মারধর করে। আমি চন্দ্রাকে নিয়ে কিছু বলতে গেলেই নানুমণি আমার সাথে কেমন করে । তোমরাই বলো আমি কি কখনো চন্দ্রার খারাপ চাইতে পারি ?”

চারুর কথা শুনে এবারে স্পষ্ট সবকিছু বুঝতে পারলেন আনোয়ারা বেগম ও আমজাদ সাহেব। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে চারু ও চন্দ্রা। দুজনে একসাথে থাকতে থাকতে কখন যে ওরা দুজনে এক প্রাণ হয়ে গেছে তা কেউ জানে না।

আমজাদ সাহেব চারুর প্রশ্নের উত্তরে মুচকি হেসে বললেন,

–” আমরা জানি তুই কখনো চন্দ্রার খারাপ চাস না বরং ওর জন্য সব সময় ভালো কিছুই সিদ্ধান্ত নিবি তুই যা তুই এর আগেও নিয়েছিস। কিন্তু কি হয়েছে বল তো আর তুইই বা কিভাবে জানলি যে চন্দ্রার স্বামী ওকে মারধর করে ?এটাতো মিথ্যাও হতে পারে তাই না ?”

–“উহু মিথ্যা হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।”

–” তুই এতটা নিশ্চিত দিয়ে কি করে বলছিস চারু। চন্দ্রা কি নিজে বলেছে যে সে তার সংসারে সুখী নয়।”

নানীর কথা শুনে চারু মাথা নাড়িয়ে না বোধক সম্মতিতে বলল ,

–“না না চন্দ্রা আমাকে কিছু বলে নি তবে ফুলি মামীর থেকে শুনেছি।”

–“তাহলে শোনা কথাতে এতটা বিশ্বাস করছিস কেন? হতেই পারে তুই ভুল শুনেছিস। তবে চন্দ্রার বিষয়ে আমিও খানিকটা দ্বিধায় আছি । ওকে সেদিন বলেছিলাম ওর সাথে কিছু কথা আছে আমার কিন্তু পরে আর সময় পাই নি। বিলকিসকেও তো কোন কিছু বলতে শুনলাম না।”

বিলকিস বেগমের কথা শুনে চারু বিরক্ত হয়ে বলল,

–“ওনার কোন কথা আমাকে আর বলবে না তুমি। উনিই তো সব কিছুর নাটের গুরু। মেয়েকে তার স্বামী মারধর করে জেনেও তিনি চন্দ্রকে পাঠিয়েছেন সেই নরকে। এমনও মা হয় নাকি?”

–“উহু তুই কিন্তু ভুল বললি। বিলকিসের মতো ভালো মা আর দুটো নেই। তোকে একটা গল্প শোনাই মন দিয়ে শুনবি কিন্তু।”

গল্পের কথা শুনতেই চারু উৎসুক নয়নে তাকালো নানীর দিকে। চারুর উৎসাহ দেখে মুচকি হাসলেন আমজাদ হোসেন। চারুর ছোট বেলা থেকেই ছিল গল্পের প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক। এই গল্প শুনিয়ে শুনিয়েই ওকে খাওয়াতে হতো,গোসল করাতে হতো এমনকি ঘুমানোর সময়ও গল্প বলতে হতো। আমজাদ সাহেব জানেন এই গল্প শুনেই চারুর সমস্যার সমাধান হবে। যে কথা চারুকে এমনিতেই বোঝানো যায়না সেই কথা গল্পের মাধ্যমে বললে ও ঠিকই বুঝবে কথাগুলো ভেবে তিনিও মন দিলেন আনোয়ারা বেগমের গল্পের দিকে । দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আনোয়ারা বেগম শুরু করলেন উনার গল্প।

আমি যখন তোর নানার ঘরে বউ হয়ে আসি তখন আমার বয়স ছিল বড় জোর চৌদ্দ বছর। বিয়ের পর এবাড়িতে আমার প্রথম বন্ধুত্ব হয় বিলকিস আর মনোয়ারার সাথে। বিলকিসও তখন আমার সমবয়সীই ছিল। চঞ্চল আর ভারি মিশুক প্রকৃতির মেয়ে ছিল বিলকিস। দিনের বেশিরভাগ সময় মেয়েটা সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকতো । অভাবের সংসারে কোনভাবে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে হতো ওদের। তবুও মেয়েটা সব সময় হাসি খুশি থাকতো। কখনো কোনদিন অভিযোগ করতে শুনি নি ওকে। ওদের অভাবের সংসারে প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম নিল ওদের ছেলে নাহিদ। এরপর বছর ছয়েকের মাথায় জন্ম নিল চন্দ্রা। চন্দ্রা জন্মে সবচেয়ে বেশি খুশি ছিল বিলকিস । মেয়েকে সব সময় চোখে চোখে রাখতো ও। মেয়েকে নিয়ে বুনেছিল হাজারো স্বপ্ন কিন্তু ওই যে অভাবের তাড়নায় সব স্বপ্ন বিলীন দিতে হয় ওকে। শুধু তাই নয় মেয়ের প্রতি হতে হয় কঠোর। চন্দ্রার যখন ছয় বছর তখন একবার গাছ থেকে পড়ে গিয়ে খুব আঘাত পায় ও। সেবার চন্দ্রার হাত ভেঙে গিয়েছিল। চন্দ্রা তখন ছোট বাচ্চা। ব্যথা-যন্ত্রণায় যখন ও কাতরাচ্ছিল তখন সেইসাথে কেঁদেছিল আরো একটি মানুষ , সে হচ্ছে বিলকিস। আমি যখন চন্দ্রাদের দাওয়ায় গিয়ে পৌঁছায় তখন দেখি মেয়ের সাথে সাথে বিলকিসও কেঁদে চলেছে অনবরত। আমি জিজ্ঞেস করতেই বলল,

–“ভাবি গো দেহ না আমার চন্দ্রার হাত ভেঙ্গে গেছে। ব্যথার চোটে মাইয়াডা আমার কানতাছে আর আমি মা হইয়া কিছু করবার পারতাছি না।”

আমি বললাম ,

–“চল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। ”

–“কিন্তু টাকা কই পামু?”

–“আমার থেকে নিবি।”

এতোটুকু বলে থামলেন আনোয়ারা বেগম। তারপর চারুর উদ্দেশ্যে বলল,

–” আমার কথার পৃষ্ঠে সেদিন বিলকিস কি বলেছিল জানিস? ”

চারু প্রশ্নের জবাবে উৎসুক হয়ে বললো,

–” কি বলেছিল সেদিন?”

আনোয়ারা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

–” আমার কথা শুনে বিলকিস বলল, না ভাবি আমি চন্দ্রার লাইগা কারো কাছে হাত পাতুম না। চন্দ্রারে না কারো কাছে হাত পাততে দিমু। ওরে আমার কোন দিন মানুষের কাছে ছোট হবার দিমু না। ওরে যে অনেক বড় হইতে হইবো । আমার অপূর্ণ ইচ্ছা আমি ওরে দিয়া পুরান করামু। আমার মাইয়া কারো কাছে ঋনী থাকবো না,কারো কাছে না।

সেদিন হাজার অনুরোধ করার পরেও বিলকিস আমার থেকে টাকা ধার নেই বরং ওর বিয়ের গয়না আমার কাছে বন্ধক রেখে মেয়ের চিকিৎসা করিয়েছিল শুধুমাত্র চন্দ্রকে কারো কাছে ঋণী থাকতে দেবে না সেইজন্য। চন্দ্রা বড় হওয়ার সাথে সাথে বিলকিসের চিন্তা যেন আরো বেড়ে গেল মেয়েকে চোখে চোখে দেখেও শেষ রক্ষা হলো না শেষ অব্দি। পাড়ার অনেক বাজে ছেলের নজরে পড়ে গিয়েছিল চন্দ্রা । চেয়ারম্যানের ছেলে তো চন্দ্রাকে তুলে নিয়ে যাবারও হুমকি দিয়ে গিয়েছিল। তাইতো তড়িঘড়ি করেই রাশেদের সাথে বিয়েটা ছেড়ে ফেললো বিলকিস।

আবারো একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলেন আনোয়ারা বেগম। অতঃপর চারুর দিকে তাকিয়ে বললেন,

–“কখনো-সখনো পরিস্থিতি পিতা-মাতাকে কঠোর হতে শেখায়। তার মানে এই নয় যে তারা তাদের সন্তানদের ভালো চান না বা ভালবাসেন না। পিতা-মাতা সব সময় সন্তানদের জন্য ভালোটাই ভেবে রাখেন নিজে কষ্ট পেয়েও সন্তানদের দুই হাতে সুখ দিয়ে থাকেন। ”

–বুঝলাম কিন্তু……

–“চারু শোন সংসার করতে গেলে এক-আধটু ঝামেলা হবেই। কারণ আমাদের সকলের ভাবনা চিন্তা তো আর এক হবে না তাই না। মতাভেদ থাকবেই। আর এই মোতাভেদ থাকার কারণেই ঝগড়া হয়। দেখ তোকে আমরা ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনতা দিয়ে বড় করেছি। শিখিয়েছি সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। তবে যখন তুই নিজের চোখে অন্যায় দেখবি তখন সেই অন্যায় প্রতিবাদ করবি। চন্দ্রার সাথে যদি কোন খারাপ কিছু হয় তবে আমি নিজে সেদিন তোকে বলবো সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে । আমার কাছে অন্যায় যে সহে আর অন্যায় যে করে তারা দুজনেই সমান অপরাধী। ওর সাথে কথা বলে দেখ আসলে ওর সংসারে কোনো ঝামেলা আছে কি না? তারপর না হয় পরবর্তী পদক্ষেপ নিস।”

–“ঠিক আছে আপা। আমি নিজে বিলকিস নানীকে সরি বলে আসবো। কারো সম্পর্কে না জেনে কোন কথা বলবো না আর কোন দিন।”

–“এইতো আমার ভালো চারুমনি। এখন বাড়িতে চল। খেতে হবে তো , এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে।”

–“হ্যা চলো ,আমারও খিদে পেয়েছে।”

কথাটা বলেই চারু তক্ষনাত উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। চারুর সাথে সাথে আনোয়ারা বেগমও দাঁড়ালেন । তারপর হেরিকেন হাতে চারুর হাত ধরে বাড়ির পথে যাওয়ার সময় পিছন ফিরে তাকিয়ে বললেন,

–“তোমাকেও কি আলাদা করে বলতে হবে এখন? তাড়াতাড়ি আসো, খেতে দেব।”

আনোয়ারা বেগম এর কথা শুনে আমজাদ হোসেন মৃদু হেসে উত্তর দিলেন ,

–“তোমরা যাও আমি আসছি।”

এদিকে, আজ সারাদিন বেশ আরাম আয়েশেই দিন কেটে গেছে চন্দ্রার। সারাদিন শুয়েই কাটিয়েছে ও। দুপুরবেলা শাশুড়ি এসে ভাত খাইয়ে দিয়ে গেছে ওকে। জ্বর অবশ্য এখনো কিছুটা কমেছে ওর তবে ব্যথা কমেনি এখনো। এইতো সন্ধ্যার পরেও খাওয়া দাওয়ার পরে জোর করে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে গেছেন আকলিমা বেগম । ওষুধ খাওয়ার পরেই বিছানায় জানালা বরাবর শুয়েছিল চন্দ্রা । দৃষ্টি ছিল বাহিরের পানে। যেখানে শুধু নিকষ কালো অন্ধকার। অনেকটা চন্দ্রার জীবনের মতো। এমন সময় ওর পাশেই রাশেদের উপস্থিতি বুঝতে পারল চন্দ্রা। সারাদিন পর সবে বাড়িতে ফিরল সে। রাশেদ ধীরে ধীরে সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে এসে চন্দ্রার কাধে হাত রাখল। রাশেদের হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিল চন্দ্রা তারপর ঝাঁজালো গলায় বলল,

–“খবরদার কইতাছি হামার গায়ে হাত দিবেন না আপনি?”

চন্দন এমন ঝাঁজালো কথা শুনে অবাক হয়ে গেল রাশেদ । সেইসাথে ভ্রু কুঁচকে গেল ওর। ওতো শুধু চন্দ্রার গায়ে জ্বর দেখছিল। কিছু একটা ভেবে গম্ভীর গলায় রাশেদ বলল ,

–“ক্যান হাত দিলে কি হইব?”

–“আমার গায়ে হাত দেওনের অধিকার আপনার নাই।”

–“তাই নাহি?”

–“হু।”

চন্দ্রার উত্তর শুনতেই জোরে হেসে উঠল রাশেদ হাসতে হাসতে বলল,

–“শুনো শুধু তোমার গায়ে ক্যান , তোমার সব জায়গায় হাত দেওনের অধিকার আমার আছে। কারণ আমি এখনো তোমার স্বামী হই।”

–“উহু নাই। যে হাত দিয়া আপনি অন্য পর নারীরে শুইছেন, সেই হাতে আপনি আমারে ধরবেন আর আমি আপনারে কিছু কমু না এটা ভাবলেন কেমনে? আর রইল স্বামীর হওনের কতা সেই কবেই আপনারে আমি মনে মনে তালাক দিয়া রইছি ।”

চন্দ্রার কথা শুনে রাশেদ চাপা গলায় বলে উঠলো,

–” খুব সাহস বাইড়া গ্যাছে দেখছি । এত সাহস বাড়ানোর কারণটা কি শুনি?”

–“কারণটা না হয় আপনার ভাষাতেই কই । আমারে সাহসের মূল কারণ হইলো দুই দিনের সেই চারু।”

চন্দ্রার কথা শুনে রাশেদ আবারো হেসে বলল,

–” মাথাডা খারাপ হইয়া গ্যাছে নাকি তোমার। ওই মাইয়া তো শহরে, গেরামে আইবো কই থাইকা।”

–“আপনার অনুমান ভুল। চারু গেরামে আইছে। আমি নিজে ওরে পরশু দিন রাস্তা দিয়ে যাইতে দেখেছি । ও তো আমার শ্বশুর বাড়ির চেনে না তাই আইতে পারে নাই। আমিও ডাক দেই নাই। কারন আমি চাই ও নিজে এই অন্যায়ের খোঁজ করুক। তারপর আপনারে উত্তম শাস্তি দিক।”

চন্দ্রার কথা শুনে রাশেদ রেগে বলে উঠলো,

–‘ ছোটলোকের বাচ্চা তোর এই স্বপ্ন কোনদিন সত্যি হইবো না আর না আমি হতে দিমু। না তোকে কোনদিন আমি ছাড়ুম আর না তুই কোনদিন আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবি। এইভাবে জীবনের শ্যাষ দিন অব্দি তোরে আমার কাছে বন্দি থাকতে হইবো।”

–” মোটেও না । আপনার এই খাঁচার শিকল ভেঙ্গে আমি তো বাহিরে বের হবোই।”

কথাগুলো বলার পর আর কোনো সুযোগ পায়নি চন্দ্রা। রাশেদ লাগে ওর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ক্ষুধার্ত হায়নার মত ঝাঁপিয়ে পড়ে চন্দ্রার দুর্বল শরীরের উপর। চন্দ্রার দু-চোখ আবারো নোনা পানিতে সিক্ত হয়ে ওঠে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here