#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_6
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
( প্রথমেই কিছু কথা বলে নেই।অনেকেই চাচ্ছেন শ্রাবণ নায়ক হোক৷ কিন্তু আবেগ দিয়ে ভাবলে হবে না মহুয়ার জন্য স্ট্রং একটা নায়ক প্রয়োজন। মহুয়ার জীবনে এমন একটি চরিত্র লাগবে যে নিজে তো ধাক্কা দিয়ে গর্তে ফেলবে যেন আঘাতে ঘুরে দাঁড়াতে শিখে বিনা সাহায্যে। তবে অন্য কাউকে অন্যায় করতে দেবে না। শ্রাবণ ওর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছে কখনো জানতে আগ্রহী হয়নি ওর অতীত। আর না ওর সম্পর্কে কিছু। আমি না ভাই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করবো আর না কোনো বন্ধুত্ব নষ্ট করবো। সবটা আস্তে আস্তে ঠিক করে নিবো দুই তিনটা পর্বে একটু সময় দিতে হবে। প্রথমেই যদি ভালোবাসার কথা বলেন তাহলে গল্প শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। আর আমি গল্প কোনো সিরিয়ালের মতো লিখছি না নিজের মতো করে লেখার চেষ্টা করছি।)
___________
(মেঘলা যার পরিচয় সে নিজেই। মা-বাবা, আত্মীয় স্বজন বলতে কেউ নেই। কুটির বস্তিতে যার বেড়ে উঠা।লোক মুখে শোনা যায় এক্সিডেন্টে ওর মা-বাবার মৃত্যু হয়। ওই বস্তির পাশে এক মহিলা এক বছরের মেঘলা কে খুঁজে পায়৷ তারপর থেকে ওকে নিজের কাছেই রেখে দেয়। বস্তিতে কষ্টে বেড়ে উঠতে শুরু করে। এক সময় ওই বুড়ি মা-রা যায় তারপর থেকে নিজের পেট বাঁচানোর জন্য চোরি, ছিনতাইয়ের পথ বেছে নেয় মেঘলা। ওর আসল পরিচয় এখনো কেউ জানেনা আর মেঘলার নিজেরো কখনো জানতে ইচ্ছে হয়নি।)
ড্রয়িং রুম জুড়ে সবাই চুপচাপ বসে আছে।
আমেনা বেগম মুখে আঁচল টেনে কান্না করছেন।
নিরুপমা ভাবিকে বুঝাচ্ছেন।
শ্রাবণ আনোয়ার চৌধুরীর দিকে ফিরে প্রশ্ন করলো,’ দাদাভাই আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন তো..?’
আনোয়ার চৌধুরীঃ আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে তোমার উপর দাদুভাই। আমি পুলিশ কে কল করছি।
মেঘলা ভয়ে মনে মনে বিড়বিড় করতে শুরু করলো। সাথের সখীরা বার বার নিষেধ করে ছিলো। এতো গুলো টাকা দেখে লোভ সামলাতে পারেনি। লোকে ঠিক বলে লোভে পাপ পাপে জেল খানা।
দূর থেকে ছোঁয়া আর মহুয়া চুপচাপ মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে।
মহুয়া ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ এতো ঝামেলা না করে তোমার ভাই ডাক্তার বলো আবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে, ডিএনএ টেস্ট করাতে তাহলেই ঝামেলা মিটে যায়।
ছোঁয়া খুশিতে মহুয়ার দুই গাল আলতু করে ছুয়ে এটা নিজের আম্মুর কাছে বললো।
নিরুপম বেগম ভাইদের বলতেই সবাই এই সিদ্ধান্ত নিলো৷
মেঘলা বেচারি একটু ফাঁক খুঁজছে পেলেই পালিয়ে যাবে৷ ওকে শুধু একটু ভয় দেখাতে বলে ছিলো কিন্তু এমন ভাবে ফেঁসে যাবে ভাবতে পারেনি। এখন সে কি করবে..? কোনো বাচ্চা টাচ্চা কিছু নেই, কিসের বাচ্চা! এই দ্বিতীয় বার সে শ্রাবণ কে দেখেছে, প্রথম বার দেখেছে ছবিতে আর এখন সামনাসামনি।
_______
অন্ধকার এক রুমে থেকে অট্টহাসিতে কেঁপে উঠল রুমটি। কি ভয়ংকর সেই হাসি।
রুমের বাহির থেকে কেউ দৌড়ে এসে বলে উঠলো, ‘ বস ঝামেলা হয়ে গেছে। ‘
অন্ধকার রুম থেকে কেউ বলে উঠলো, ‘ মোবাইল দে।’
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একজন হাতে মোবাইল তুলে দিলো।
” ওই শান্তি নীড়ে আমি অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে ছাড়বো”
শ্রাবণ রেগে চুপ করে বসে আছে। না পারছে মেয়েটাকে কিছু করতে আর না পারছে কাউকে কিছু বলতে। ইচ্ছে তো করছে থাপ্পড়িয়ে দাঁত ফেলে দিতে কিন্তু শ্রাবণ মেয়েদের গায়ে হাত তুলে না তাই চুপ করে বসে আছে।
শ্রাবণের এমন শান্ত আচরণ একদম পছন্দ হলো না মহুয়ার। এ কেমন ছেলে! এতোটা সিরিয়াস মুহূর্তে এতোটা শান্ত কিভাবে আছে.? আস্তে আস্তে করে নিজের রুমে চলে গেলো মহুয়া।
শ্রাবণ নিচের দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। মেয়েটা হঠাৎ এসে এমন কথা বলার নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে! কে পাঠিয়েছে মেয়েটাকে.???
আজাদ চৌধুরী আহনাফের সাথে কথা বলে ফোন রাখতেই অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। কল রিসিভ করে কানে দিতেই কেউ বলে উঠলো, ‘ কি বেপার আজাদ চৌধুরী খুব টেনশনে আছো!..???’
কন্ঠটা চিনতে কিছুটা সময় লাগলো কিছু সময় যেতে কন্ঠটা চিনতে ভুল করলো না আজাদ চৌধুরী। ততক্ষণাত আবার নাম্বারটার দিকে তাকালো ১৮বছর পর সেই চিরচেনা কন্ঠ শুনে থমকে গেলেন।
~ হ্যালো আজাদ আমার বন্ধু চিনতে পেরেছো!!..? নাকি এতো বছর পর বন্ধুর কথা শুনে আনন্দে বোবা হয়ে গেছো.? নাকি ভয় পেলে!.? কেমন আছো বন্ধু..?
আজাদ চৌধুরীঃ তুই!! তুই বেঁচে আছিস..?
~ হিহিহি তোদের কি মনে হয়! আমি ম’রে গেছি..? একটু টিভি তো অন কর।
আজাদ চৌধুরী রিমোট হাতে টিভি অন করতেই দেখতে পেলেন টিভিতে শ্রাবণ আর মেঘলার ছবি পাশাপাশি দেওয়া আর সাংবাদিকরা উনাদের কোম্পানির নিচে ঘেরাও করে রেখেছে।
~ কি অবাক হলে!.? একটু পর তোমার বাড়িতেও চলে আসবে বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী শান্তি কোম্পানির মালিকের ছেলেদের একি পতন হচ্ছে!..?
আজাদ চৌধুরীঃ তুই করেছিস এমনটা তাই না!..?
~ এখন তো কেবল শুরু আমার কাছ থেকে যেভাবে এক এক করে সব কেঁড়ে নিয়েছিস তোর জীবন থেকেও সব সুখ শান্তি কেঁড়ে নিয়ে শান্তি নিড়ে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিবো। এখন তোর ঘর সামলা আবার কথা হবে।
আজাদ চৌধুরী রেগে কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেলো। উনি দপ করে সোফায় বসে পড়লেন৷ কিছু সময় চোখ বন্ধু করে রাখলেন৷ ইতিমধ্যে দারোয়ান এসে বলে গেলো গেইটে অনেক সাংবাদিক দাঁড়িয়ে আছে, ভেতরে আসতে চাচ্ছে।
আজাদ চৌধুরী ছেলের দিকে তাকালেন৷
শ্রাবণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টিভির দিকে।
মেঘলা টিভিতে এইসব শুনে বলে উঠলো, ‘ সব মিথ্যা কথা এই লোককে আমি চিনি না। আমি চলে যাচ্ছি। সরি আপনাদের বিরক্ত করার জন্য। আমি তো নাটক করছিলাম।’
মেঘলা দ্রুত পায়ে বের হয়ে যেতে নিলে আজাদ চৌধুরী ডেকে দাঁড় করালেন।
আজাদ চৌধুরীঃ কতো টাকা পেয়ে ছিলে.?
মেঘলা মিরাজ চৌধুরীর দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ৫০হাজার।’
দুইজন সাংবাদিক বাড়ির ভেতর চলে আসলো। এসেই বলতে শুরু করলো, ‘ ম্যাম আপনি বলুন চৌধুরী বাড়ির লোকরা কি আপনাকে মে’রে তারিয়ে দিচ্ছে!..? আমরা আছি আপনার পাশে ভয় পাবেন না সত্যিটা বলুন আমাদের .?’
আজাদ চৌধুরী সাংবাদিকের সামনে গিয়ে রেগে বলে উঠলেন,’ আপনারা আমাদের পারিবারিক বিষয় মাথা না ঘামিয়ে বেড়িয়ে যান। আর আমার পুত্রবধূকে বিভ্রান্ত করবেন না ও এমনিতেই প্রেগন্যান্ট।’
সাংবাদিকঃ শ্রাবণ চৌধুরী কি উনাকে বিয়ে করেছেন..?
আজাদ চৌধুরীঃ জ্বী।
সাংবাদিকঃ কখন, কোন সময়.? প্রমাণ কি.?
আজাদ চৌধুরীঃ এক মাস পর বড় করে আয়োজন করে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে তখন জেনে যাবেন এখন বাসা থেকে বের হন।
দারোয়ান এসে সাংবাদিকদের বের করে দিলো।
বাসার সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আজাদ চৌধুরীর দিকে।
মেঘলা বিরক্ত হয়ে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ এবার আমি আসি। আমার কাজ এতো টুকুই ছিলো।’
আজাদ চৌধুরীঃ তুমি আজ থেকে এই বাড়িতেই থাকবে। আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি এখনি পুলিশ ডাকছি। সারাজীবনের জন্য কারাগারে বন্ধি হয়ে থাকবে।
মেঘলা রেগে বলে উঠলো, ‘ এটা কি মামা বাড়ির আবদার! আমি এখানে কেনো থাকবো.?’
আজাদ চৌধুরীঃ যতো টাকা কন্টাক্ট করে এখানে এসেছো তার থেকে দ্বিগুণ টাকা দিবো তিন মাস আমার ছেলের বউ হওয়ার অভিনয় করবে তারপর তোমার মুক্তি।
শ্রাবণঃ আব্বু!!.
আজাদ চৌধুরীঃ আর কারো একটা কথাও আমি শুনবো না আমি যা বলবো তাই। রেডি হও একটু পর কাজী আসবে।
শ্রাবণঃ এই মেয়েকে কখনো আমি বিয়ে করবো না!
আজাদ চৌধুরীঃ তিন মাস সহ্য করে নাও।
শ্রাবণঃ আমাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করবেন না! এটা জীবন কোনো পুতুল খেলা নয়।
আজাদ চৌধুরীঃ তাহলে পারবে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে..? আজ কে এই মেয়েকে বিয়ে না করলে কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে। আমার এতো কষ্টে তিলে তিলে গড়া কোম্পানি, সম্মান সব এক নিমেষেই শেষ ।
শ্রাবণঃ নিজের সার্থের জন্য ছেলের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছেন..? আর কে করছে এইসব..?
আজাদ চৌধুরীঃ রুমে গিয়ে রেডি হয় শ্রাবণ।
রেগে নিজের রুমে চলে আসলো শ্রাবণ ।
মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে বের হলে কারাগারে আর এখানে থাকলে বিয়ে করতে হবে।টাকাও পাবে মাত্র তিন মাসের ব্যাপার। অনেক কিছু ভেবে রাজি হয়ে গেলো।
আজাদ চৌধুরী নিরুপমা কে ইশারা করলো মেয়েটাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
আমেনা বেগম নিজের রুমে গিয়ে ছেলের জন্য কান্না করছেন।এমন ছেলের বউ সব মা’র মেনে নিতে কষ্ট হবে।না আছে পড়াশোনা আর না আছে কোনো পারিবারিক শিক্ষা।
আজাদ চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে রইলেন। রায়হান ফিরে এসেছে! প্রতিশোধ নিতে চাইবে আজাদ চৌধুরীও ছেড়ে দিবে না। যতো যাই হোক এই পরিবারকে উনি শেষ হতে দিবেন না এটা তো রায়হানের ছোটো একটা চাল মাত্র। রায়হান যে কতোটা ভয়ানক আজাদ চৌধুরী খুব ভালো করে জানেন। ওর নেক্সট পরিকল্পনা নিশ্চয়ই আরও ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে।
_____
কাজী আসার পর শ্রাবণ একবার নিচে নেমে এসে ছিলো। বিয়ে পড়ানো শেষ হওয়ার পর বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় জেনো বাইক নিয়ে চলে গেছে।
মেঘলাকে শ্রাবণের রুমে বসিয়ে গেলো ছোঁয়া।
মেঘলার ভীষণ খিদে পেয়েছে। রুমের এদিক ওদিকে তাকিয়ে কিছু খুঁজলো। রুমটা খুব সুন্দর পরিপাটি। এতো সুন্দর রুম সে কখনো দেখেনি। দেখবে কিভাবে থেকেছে বস্তিতে।
ছোঁয়া আবার ফিরে এসে একটা শাড়ি রুমে দিয়ে গেলো। কাল এই মেয়ের জন্য কাপড় আনা হবে।
মেঘলা শাড়ি হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে রেখে দিলো। সামনে আলমারি টান দিয়ে খুলে একটা শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।
_________
আহনাফ বাসায় এসে বাসার পরিস্থিতি বুঝলো। প্রথম দিন হসপিটালে ভীষণ দখল গিয়েছে ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দাদির রুমে গেলো। দাদির শরীর বেশি ভালো না। হয়তো আজ যা হয়েছে কিছুই উনাকে জানানো হয়নি। এইসব জানলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
দাদির মেডিসিন, খাবারের কথা জিজ্ঞেস করে টুকটাক কথা বলে বের হয়ে নিচে আসতে নিলে মহুয়ার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।
ভেতরে ছোঁয়া বলছে,’ আচ্ছা মহুয়া আমার কি ছোটো বোন হিসেবে বাসর ঘরটা একটু সাজিয়ে আসা উচিত না!..?
মহুয়াঃ তুমি দেখেছো কিভাবে বিয়ে হয়েছে! এটাকে বিয়েও বলে না।
ছোঁয়াঃ যাই বলো কবুল তো বলেছে।
মহুয়াঃ হুম আস্তে আস্তে একরুমে থাকতে থাকতে ভালোবাসাটা তৈরি হয়ে গেলেই হয়।
ছোঁয়াঃ থুর ভাবির পেশা কি ছিলো শুনলে না।
মহুয়াঃ মানুষের পেশা নয় তার আচরণ কেমন সেটা লক্ষ করো! সে এমন পথ কেনো বেছে নিয়ে ছিলো সেটা একবার ভাবো! তার অতীত জানতে চাওও ছোঁয়া। সেও আমাদের মতো মানুষ আজ পর্যাপ্ত সব কিছু পেলে সেও আমাদের মতো থাকতো আমাদের থেকে ভিন্ন পথ বেছে নিতো না। এক বেলা না খেয়ে থাকলে কেউ মুখে খাবার তুলে দিবে এমন কেউ নেই মেয়েটার। কয়লা থেকেও হিরে পাওয়া যায়।
ছোঁয়াঃ আমার তো তোমার অতীত জানতে ইচ্ছে হয়।
মহুয়া হেঁসে বারান্দায় চলে গেলো।
বাহির থেকে ওদের সব কথা শুনছিলো আহনাফ। এই মেয়েটা সবার থেকে ভিন্ন। খুব কৌতুহল জাগলো মহুয়ার সম্পর্কে জানতে। আসলেই কি দাদাভাইয়ের আত্মীয় নাকি অন্য কোনো কাহিনী!.? ।কিন্তু এখন নয় আগে এই ঝামেলা শেষ হোক।
মেঘলাকে হালিমা চৌধুরী রুমে খাবার দিয়ে গেলো।
রাতে আর শ্রাবণ বাড়িতে আসেনি। টেনশনে আমেনা বেগমের পেশার বেড়ে গেলো। মাথায় পানি ঢাললো মহুয়া। খুব যত্ন করে খাবার খাইয়ে দিতে চাইলো কিন্তু আমেনা বেগম মুখে কিছু তুললেন না। পেশারের মেডিসিন খাইয়ে রুমে এসে দেখে ছোয়া ঘুমাচ্ছে। ছোঁয়ার পাশে শুয়ে পড়লো।
আজাদ চৌধুরী ড্রয়িং রুমে বসেই রাত কাটিয়ে দিলেন ছেলের জন্য উনারও টেনশনে হচ্ছে। ঠিক আছে তো শ্রাবণ? শান্ত সৃষ্ট ছেলেটার ভাগ্য কেনো এমন হলো!! রায়হান না সুযোগ পেয়ে আবার শ্রাবণের কোনো ক্ষতি করে দেয়। ছেলেটা এখনো আসছে না কেনো.? আজ পরিবার আর কোম্পানির ভালো দেখতে গিয়ে ছেলেটার জীবনে শেষ করে দিলো।
মেঘলা দরজা বন্ধ করে শান্তিতে নিচে ঘুমিয়ে গেলো। ওর কোনো টেনশন নেই। সকালে আবার বস্তিতে একবার যেতে হবে এখন ঘুম প্রয়োজন।
_________
প্রতিদিনের মতো আজও মহুয়া সকালে উঠলো সাথে ছোঁয়া কেও তুলে দুইজন নামাজ পড়ে রুম থেকে বের হয়ে ছাদে গেলো আজ আর বাগানে জায়নি। এই বেয়াদব লোকের মুখোমুখি হতে চায় না মহুয়া।
ছাঁদ থেকে নেমে রুমের সামনে আসতেই আহনাফের মুখোমুখি হয়ে গেলো। আহনাফ ওদের দেখেও না দেখার মতো নিজের রুমে চলে গেলো।
_______
মেঘলা ঘুম থেকে উঠে বাহিরে বের হয়ে আসলো।
ছোঁয়া আর মহুয়া কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলো। ছোঁয়া এক নজর মেঘলার দিকে তাকিয়ে গটগট করে মহুয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
মেঘলা ঘুরে ঘুরে পুরো বাড়ি দেখতে শুরু করলো। ঘুরতে ঘুরতে একটা ঘরের সামনে এসে থামলো। ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলো একটা ছেলে বৃদ্ধ মহিলার হাত ধরে বসে আছে।
_________
একটা ছেলে দৌড়ে এসে বলে উঠলো, ‘ রনি ভাই আকাম তো ঘইট্টা গেছে।’
রনি কলেজের সামনে বসে সিগারেট টান বসিয়ে আকাশের দিকে ধুঁয়া ছেড়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কি আকাম করছোস!.?’
~ ভাই আমি না জামিলরে ফুলবানোর থাইকা যেই ১৫টা মাইয়া আনতে বলছিলো সেই ১৫টা মাইয়া পালায় গেছে পাঁচ দিন আগে।
রনি পকেট থেকে পিস্তল বের করে ছেলেটাকে চেপে ধরে বিশ্রী গালি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ কেম্নে পালাইছে এত্তোগুলো গরু সাথে দিয়ে ছিলাম কিসের জন্য!? মাইয়া গুলোরে তিন দিনের মধ্যে আমার সামনে দেখতে চাই।’
ছেলেটা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলো, ভাই ওদের মধ্যে একটা মেয়ে জামাল আর তার লগের দুইটারে মে’রে ফেলছে।’
রনিঃ কি কচ!? ছবি দেখা মাইয়ার। নিজ হাতে কে’টে টুকরো টুকরো করমু কতো বড় কলিজা ওই মাইয়ার দেখমু। ব্যা*** বাচ্চার।
ছেলেটা ছবি বের করার আগেই আরেকটা ছেলে এসে বলে উঠলো, ‘ ভাই মাইয়াটা কলেজে আইছে।’
” খা*** পোলার খবর কি..?”
~ ভাই কেউ চিনে না। আমি আরও খবর নিয়া দেখতাছি।
রনিঃ আমি আসছি তুই ছবি নিয়ে দাঁড়ায় থাক। বলেই সেই বোরকা পড়া মেয়েকে দেখতে চলে গেলো।
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।