#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১৮
#ফারিহা_খান_নোরা
‘আমার নাম খালেদ মনোয়ার।আমি আফসানের বাবা।’
ভদ্রলোকের কথাটি মির্জা বাড়ির লিভিং রুমে বা’জ পড়ার মতো প’ড়ে।ভ’য়ে আশা বেগমের শরীর থরথর করে কাঁ’প’ছে।যে কেউ দেখে বলবে মৃ’গী রোগী। সিতারা বেশ উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। নিষ্প্রভ স্বাভাবিক ভাবেই খাবার খেয়ে যাচ্ছে।জেনো এসব তার আগে থেকেই জানা।তুর অবাক চোখে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। ইলিয়াস মির্জা ঠাট্টার স্বরে বলে,
‘আপনি কে ভাই কোথায় থেকে এসেছেন? আফসান কি আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছে যে, নিজেকে তার বাবা বলে দাবি করছেন আশ্চর্য!’
খালেদ মনোয়ার আত্মবিশ্বাসী স্বরে বলে,
‘শুধু আপনার ছেলেকে নিজের ছেলে বলেই দাবি করছি না,বরং আপনার বউকেও নিজের বউ বলে দাবি করছি।’
‘আপনি পাগল নাকি এসব কি বলছেন।আমার বউ আপনার বউ হতে যাবে কেন?’
খালেদ মনোয়ার এবার তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,
‘যেভাবে আফসান আমার ছেলে হয়েছে ঠিক সেই ভাবে। আফসানের জন্মদাতা আমি।’
আশা বেগম এবার আর চুপ থাকলো না। কম্পনরত কন্ঠে বলে,
‘আফসানের বাবা তুমি এই পা’গ’লে’র কথা শুনছো কেনো।কথা শুনেই বুঝা যায় এই লোকটা একটা পা’গ’ল। তুমি দাড়োয়ান ডেকে এই পা’গ’ল’টাকে বাড়ি থেকে বের করে দেও।’
খালেদ মনোয়ার আশা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘তুমি আমায় চিনো না আশা?’
আশা বেগম ভ’য়ে ঢুক গিলে তারপর কাঠকাঠ গলায় বলে,
‘আমি আপনার মতো পাগলকে কিভাবে চিনবো?’
খালেদ মনোয়ার এবার বেশ রে’গে যায়।সে চোখের পলকে আশা বেগমের কাছে এসে তাঁর হাত মু’চ’ড়ে ধ’রে বলে,
‘চুপ একদম চুপ! ন’ষ্টা মহিলা, আমার কাছে শু’ই’তে তোর আমাকে পা’গ’ল মনে হয় না।যখন সত্য কথা বলছি তখন পা’গ’ল মনে হয় ? তোকে কয়দিন হলো ফোন দিয়ে বলছি আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আয় তুই আমার কথা শুনেছিস?’
এসব দেখে ইলিয়াস মির্জা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তাঁর পুরো পৃথিবী অ’ন্ধ’কা’র হয়ে যায়।বু’ড়ো বয়সে এসে স্ত্রীর সম্পর্কে এসব শুনতে কারো ভালো লাগে। জীবনের চব্বিশ বছর ধরে জেনে এসেছে আফসান তার ছেলে অথচো এই লোকটি জোর দিয়ে বলছে তাঁর ছেলে।তিনি দ্রুত আশাকে খালেদের থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা আড়াল করে,কিঞ্চিত আশা নিয়ে বলে,
‘আপনার কোথাও ভু’ল হচ্ছে।সে আমার স্ত্রী।’
খালেদ সাহেব জো’রে হাসতে শুরু করেন।হাসি থামিয়ে বলে,
‘যে মানুষ এতো গুলো বছর ভু’ল জেনে একটা ন’ষ্টা মহিলার সাথে সংসার করেছে আবার অন্যের বাচ্চা কে নিজের বাচ্চা মনে করে এতো বড় করেছে সে নাকি আমার ভু’ল ধরছে হাস্যকর!’
ইলিয়াস মির্জা রা’গা’ন্বি’ত অবস্থায় বলে,
‘আপনি এসব বলছেন ওর নামে।আপনার কাছে এসবের কোনো প্রমাণ আছে। আপনার মুখের কথা তো আমি বিশ্বাস করবো না,প্রমাণ লাগবে।কিসের ভিত্তিতে আপনি ওর নামে এসব বলছেন?’
খালেদ মনোয়ার আশার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
‘আফসানের জন্মদাতা বাবা আমি।আজ থেকে এক সপ্তাহ আগেও আপনার স্ত্রী আমার বাড়িতে গিয়েছিল। কেন গেছে আমি এসব মুখে বলতে পারবো না,আপনি বুজে নেন।যে মহিলা এই বয়সে এসেও পর পুরুষের টান ছাড়তে পারে নি,সে কখনো ভালো হবে না।’
এসব বলে খালেদ মনোয়ার তাঁর হাতের স্মার্ট ফোনে একটা ভি’ডি’ও অন করে ইলিয়াস মির্জার হাতে তুলে দিতে নেয়।আশা বেগম বুজতে পারে এটা কিসের ভি’ডি’ও,সে দ্রুত গতিতে এসে মোবাইলটার উপর থা’বা মা’রে।ফলাফল স্বরূপ ফোনটি নিচে প’ড়ে যায়।আশা বেগমের আচারণে ইলিয়াস মির্জার বুজতে দেরি হয় না,আসলে লোকটি সব সত্য বলছে।আশা বেগম ফোনটি তুলেতে নিলে খালেদ মির্জা তাকে ধা’ক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।ফোনটি অন করে ইলিয়াস মির্জার হাতে তুলে দেয়। আশা বেগম নিচে পা’ড়া অবস্থায় কাতরাতে কাতরাতে বলে,
‘খালেদ তুই বড় ভু’ল করছিস।আমি তোকে ছা’ড়’বো না, নিমক হারাম তুই আমার থেকে এ যাবৎ লাখ লাখ টাকা নিয়েছিস বিষয়টা গো’প’ন রাখবি বলে।আজ তুই এসব বলতে পারলি? তুই যখন টাকা চেয়েছিস তখনই দিয়েছি,যখন ডেকেছিস তখনই গিয়েছে।হা’রা’মী’র বাচ্চা,স্বার্থপর তোর জন্যই আজ আমার এই অবস্থা।’
‘এই তো পাখি পথে এসেছো।একটু আগেই না বললে তুমি আমায় চিনো না,আমি নাকি পা’গ’ল।এসব বলতে বলতে খালেদ মনোয়ার আশা বেগমের কাছে যেয়ে বসে তার গালে হাত দিয়ে বলে,
‘এসব কিছু তোর থেকে শিখেছি ময়না পাখি। তুই নিজের স্ব’র্থে’র জন্য বান্ধবীকে কাজে লাগিয়েছিস।তুই টাকা কি এমনি এমনি দিয়েছিস? নিজের এসব অ’প’ক’র্ম লুকাতে দিয়েছিস।আফসানকে তুই খা’রা’প বানিয়েছিস। তোর জন্যই আফসান আজ জেলে। নারী পা’চা’র’কা’রী চ’ক্রে’র আসল মাথা হলো তুই।এসব কিছু জানতাম বলেই আমার মুখ বন্ধ করতে তুই টাকা দিতি।আর কি জেনো বললি,আমি ডাকলেই তুই সাড়া দেস।কেন দেস কারণ ফুর্তি করতে,এই বয়সে এসেও যা শরীর বানিয়েছিস কি আর বলি। যাইহোক আমার মনে হলো আমি এসব কিছু ভুল করেছি, সত্য সবার জানা উচিত সেজন্য আজ সবকিছু খুলে বললাম কারণ তোর পাপের ফল আমার ছেলে ভো’গ করছে।’
‘ইলিয়াস মির্জার হাতে আশা ও খালেদার অ’ন্ত’র’ঙ্গ মুহূর্তের ভি’ডি’ও চলছে। তারমধ্যে এসব জ’ঘ’ন্য কথা ইলিয়াস মির্জা আর নিতে পারলেন না,সে হাতের ফোনটা ফেলে বুকে হাত দিয়ে সোফায় বসে প’ড়ে।’
শশুড়ের সামনে তুরের এসব শুনতে লজ্জা লাগছে।সে উপায় না পেয়ে উপরে যেতে নেয় তখনি ইলিয়াস মির্জার এমন অবস্থা দেখে তার দিকে এগিয়ে যায় তুর কিন্তু তাঁর আগেই নিষ্প্রভ তুরকে বাঁধা দিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বলে,
‘তুমি যেও না,উনাকে একা সামলিয়ে উঠতে দেও।’
তুর তবুও যেতে নেই। নিষ্প্রভ তুরের হাত শক্ত করে ধরে রাখে।কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,
‘কথায় আছে না? মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি।এখন দেখছি ছেলের থেকে ছেলের বউয়ের দরদ বেশি।তোমাকে বলছি না,চুপচাপ থাকতে।’
আশা বেগম হাউমাউ করে কা’ন্না করছে।এতো বছর ধরে লুকিয়ে রাখা সত্য এভাবে সবার সামনে আসবে সে ভাবতেই পারছে না। এতোদিন ধরে সে বাড়িতে ও বাহিরে দু জায়গাতেই সমপরিমাণে রাজত্ব করেছে।তার রাজত্ব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। ইলিয়াস মির্জা কাঁপা কাঁপা হাতে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে।পুলিশকে ফোন করে ও গার্ডদের বলে বাড়ির মেইন গেট সব বন্ধ করে দিতে জেনো অ’প’রা’ধী কোনো ভাবে না পা’লা’তে পারে।খালেদ মনোয়ার এর যাওয়ার কোনো তাড়া নেই।বরং সে আরেকটা বো’ম ব্লা’স্ট করার মতো কথা বলল ফেলে। ইলিয়াস মির্জাকে বলে,
‘আপনার ছেলে আর তুরের বিয়ে কোনো কাকতালীয় ঘটনা না।সেই দিন যা হয়েছিল সব এই মহিলা আফসান ও তুরের মায়ের প্ল্যান। তুরের মা এদের হাতের গুটি মাত্র।এই মহিলা তুরের মাকে ব্ল্যা’ক’মে’ই’ল করে সব করাতো।ঠিক তেমন সেই দিন আফসানের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য এসব প্ল্যান করে ওঁরা তিন জন। কিন্তু ভাগ্য ভালো বলে আফসানের জায়গায় সেদিন অই রুমে কোনো ভাবে নিষ্প্রভ ঢুকে পড়ে যার জন্য বিয়েটা নিষ্প্রভের সাথে হয়।মেয়েটার ভাগ্য ভালো বলা চলে নয়তো এই মহিলা অই মেয়েকে দিয়েও ব্যা’ব’সা করাতো।’
শেষের কথা তুরকে দেখিয়ে দিয়ে বলে।তুরে মাথা ঘুরে,এক দিনে এতো গুলো সত্য সে মেনে নিতে হিমশিম খাচ্ছে।শরীরের ভার সামলাতে না পের পড়তে নেই তার আগেই নিষ্প্রভ ধরে ফেলে।তুর সে অবস্থায় নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে আছে তার মনোভাব বুজতে চেষ্টা করছে।
খালেদ মনোয়ার আবারও বলতে শুরু করে,
বরাবরের মতো আপনি নিষ্প্রভকে ভুল বুঝেন।কারণ এই মহিলাটা শুরু থেকেই নিষ্প্রভের নামে আপনার কানে বি’ষ ঢেলেছে আর আপনিও অল্প বয়সী বউয়ের প্রতি অ’ন্ধ হয়ে তার সব কথা সত্য বলে মেনে নেন।আজ তো বুজতে পারছেন এই মহিলা ভালোবেসে আপনার কাছে নেই, শুধু মাত্র টাকার জন্য আছে তা না হলে এই বয়সে এসেও আমার কাছে যায়? কতো মেয়ের জীবণ এই মহিলা ন’ষ্ট করেছে জানেন? আপনি ওকে পুলিশে তুলে দেওয়ার মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।ওর মতো মহিলার স্থান জেলে।
‘নিজের করা ভুল অন্যের মুখে শুনে ইলিয়াস মির্জার নিজের প্রতি ঘৃ’ণা হয়।সে আশা বেগমের কাছে যেয়ে তাঁর চুলের মু’ঠি ধরে বলে,
‘দুঃচরিত্রা মহিলা! তুই আমার সাথে এমনটা কিভাবে করলি? তোকে আমি বিশ্বাস করে নিজের ছেলেকে অবধি দূরে সরিয়ে দিয়েছি আর সেই তুই কিনা আমার বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলি? বে’ই’মা’ন, ন’ষ্ট মহিলা।আরে তোর থেকে একজন ব্যা* ও ভালো আছে। তাঁরা জীবিকার তাগিদে এসব করে আর তুই! তোর কিসের অভাব বল? তুই আমার ছেলেকে আমার থেকে সরিয়ে দিয়েছিস কাল নাগিনী।তোকে আমি শেষ করে দিবো।’
আশা বেগম ব্যা’থা’য় চিৎ’কা’র করে উঠে।অই অবস্থাতেই ইলিয়াস মির্জার পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘আফসানের বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে দয়াকরে তুমি আমায় ক্ষমা করে দেও। আমি জেলে যেতে চাই না।আমাকে ধরিয়ে দিও না। আমি আর এসব করবো না।’
ইলিয়াস মির্জা গ’র্জে উঠে আশা বেগমকে থা’প’ড়া’তে থাকে আর বলে,
‘খবরদার আমাকে আফসানের বাবা বলে ডাকবি না।তোর মুখে এই ডাক জেনো আমি আর না শুনি।ন’টি কোথাকার তোর আফসানের বাবা এখানেই দাঁড়িয়ে আছে তাঁকে বল।আর কি করবি না তুই হ্যা? এখনো কিছু করা বাকি রেখেছিস তুই বল? তোকে ছেড়ে দিলে আমি আমার বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে যাবো।’
এরমধ্যে পুলিশ চলে আসে। ইলিয়াস মির্জা আশা বেগমকে নিয়ে যেতে বললে আশা বেগম হঠাৎ করে দৌড়ে এসে একটা পুলিশের থেকে রি’ভ’ল’বার নিয়ে নিষ্প্রভের দিকে তাক করে বলে,
‘আমাকে যেতে দিন নয়তো এই ছেলেকে গু’লি করে দিবো।যেখানে আমার ছেলে ও আমি এই বাড়িতে থাকতে পারবো না,সেখানে এই ছেলে রাজত্ব করবে এ আমি কিছুতেই হতে দিবো না।’
ইলিয়াস মির্জা, খালেদ বার বার আশা বেগম কে রি’ভ’ল’বার নামাতে বলে এসব পা’গ’লা’মি থামাতে বলে।তুর নিষ্প্রভের খুব কাছে ছিলো ভ’য়ে কাঁ’প’ছে ,তার কলিজা শুকিয়ে আসছে। নিষ্প্রভ নিজের কাছে থেকে তুরকে ধা’ক্কা দিয়ে দূ’রে ফে’লে দেয়। আশা বেগম এবার নিষ্প্রভকে ভালো ভাবে টার্গেট করে। অন্য পুলিশ তার রি’ভ’ল’বার তাক করে আশার দিকে। আশা লক্ষ করে সেই পুলিশকে রি’ভ’ল’বার রাখতে বলে আর তাকে যেতে দিতে বলে নয়তো নিষ্প্রভকে গু’লি করে দিবে। পুলিশ গুলো কথা না শুনে চারিদিকে থেকে ঘিরে ধরে।এদিকে নিষ্প্রভ নড়তে পারছে না, একটু উনিশ থেকে বিশ হলেই তার মৃ’ত্যু আজ অবধারিত।নিচে পড়া তুরের বেদনাদায়ক মুখটা বার বার তার চোখে ভাসছে। আচ্ছা আজ এই গু’লি’তে সে মা’রা গেলে তুর কি কান্না করবে, তারজন্য কষ্ট পাবে নাকি অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করে তাঁর সংসার করবে!’
এসব ভাবতে ভাবতে একজন কনস্টেবল আশা বেগমের দিকে এগিয়ে আসতে নেয় ঠিক তখনই আশা বেগম তাঁর টার্গেট অনুযায়ী নিষ্প্রভের মাথা বারাবর গু’লি ছোড়ে।বি’ক’ট শব্দে মির্জা বাড়ির সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।’
চলমান।
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।