হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ পর্ব ১০

0
153

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#পর্বঃ১০
#ফারিহা_খান_নোরা

‘তুরকে মেনে নে!’

নিষ্প্রভ অসহায় চোখে অনিকের দিকে তাকায়। মিনমিন করে বলে,

‘তুই তো সব জানিস।’

অনিক এবার কিছুটা রেগে গেল।তবুও শান্ত হয়ে বলল,

‘হ্যা জানি আর তার সাথে এটাও জানি তোর এই নিঃসঙ্গ জীবনে পাশে থাকার মত একটা নিঃস্বার্থ জীবণ সঙ্গী দরকার।যে বিনা স্বর্থেই তোর পাশে থাকবে শুধু খুশির দিন‌ই নয় কষ্টের দিনেও থাকবে। বন্ধু হিসাবে আমি চাই তোর জীবন সব সময় আনন্দে ভরে থাকুক।আর সেই আনন্দ তখনি থাকবে যখন তুরের মত একজন জীবণ সঙ্গী তোর পাশে থাকবে। নিয়তি তুরকে তোর দ্বারে এনে দিয়েছে।তুর মেয়েটা কিন্তু আসলেই ভালো ও অসাধারণ।লাইফে চান্স একবার ই আসে।তুই তুরকে ডিভোর্স না দিয়ে আপন করে নে।তোর ইচ্ছে করে না, তোর কাছের কেউ থাকবে।তোর নিজের একটা ফ্যামিলি হবে।তোর বাড়ির লোকদের নিয়ে চিন্তা ও ভয় করিস না। ভালো একটা জবের চেষ্টা কর তারপর তুরকে নিয়ে অই পরিবেশ থেকে আলাদা হয়ে যা।’

‘ইচ্ছে তো সবার‌ই হয় তাই বলে নিজের ভালো থাকার জন্য তুরের মত একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবণ নষ্ট করবো তুই বল।তার থেকে ভালো হবে তুরকে ছেড়ে দিবো।’

‘যা করবি ভেবে করবি।’

‘তুই জানিস আমার মনে হয় সেদিনের ঘটনা আফসান ও তার মা প্ল্যান করে ঘটিয়েছে।’

অনিক আগ্রহ নিয়ে বলে,

‘আমি আগেই ধারণা করেছিলাম এগুলা কাকতালীয় ঘটনা না।পুরোটাই সাজানো কিন্তু এতো ঝামেলার মধ্যে তোকে বলি নি। কিন্তু তুই কিভাবে বুজতে পারলি?’

নিষ্প্রভ অনেক কে নেশার ঘোরে আফসানের বলা সব কথা খুলে বলল।অনিক শুনে কিছুটা ভেবে বলে,

‘মানুষ নেশার ঘোরে সব সময় সত্য কথায় বলে।তুই শিওর থাক এসব কিছু ওদের প্ল্যান।আমার তো মনে হয় তুরের মা অই মহিলাটাও এর সাথে জড়িত।’

‘কিন্ত ওনারা প্ল্যান করে আফসানের সাথে বিয়ে দিতো কিন্তু আমার সাথে বিয়ে হয়েছে।আমার মনে হয় এই সমস্ত ঘটনায় তৃতীয় পক্ষের হাত আছে।’

‘তুই ঠিক বলছিস। আমি বলি কি তুই তুরকে ছেড়ে দেস না।তুই ছেড়ে দিলে আফসান মেয়েটাকে ছিঁ*ড়ে খাবে সাথে থাকবে তোর সৎ মা ও তুরের মা।’

কিন্তু আমার তো ও কে ছেড়ে দিতেই হবে।কারণ ওর পছন্দের মানুষ আছে। আমি আফসানের মা কে বলতে শুনেছি তুরের কোন প্রেমিক নাকি আফসান কে মে’রে’ ছে তুরের সাথে অসভ্যতামি করার জন্য।আমি ভাবছি সেই ছেলেটার হাতে নিজ দায়িত্বে তুরকে তুলে দিবো।’

অনিক রেগে নিষ্প্রভের পিঠে দুটো কি*ল বসিয়ে দেয়। নিষ্প্রভ ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে।অনিক গজ গজ করতে করতে বলল,

‘শা*লা মহান সাজতে চাও! জনদরদী তুমি? মাদার তে/রে/সা উপস সরি তুমি তো আবার মেল।তাহলে তুমি হবে স্বামী তে*রে*সা নিজের ব‌উকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আজ থেকে তোমাকে স্বামী তে/রে/সা উপাধিতে ঘোষণা করা হলো।’

‘হুয়াট!’

নিষ্প্রভ চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে চিৎকার করে বলে।অনিক নিজের কানে দুই আঙ্গুল দিয়ে বলে,

‘এতো জোরে চিল্লানি দেস কেন।মনে হচ্ছে আমি তোর ব‌উকে ভেগে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছি।’

নিষ্প্রভ এবার আর‌ও রে*গে যায়।রে*গে যাওয়ার ফলে তাঁর চোখ জোড়া লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।সে উচ্চ কন্ঠে বলে উঠে,

‘এই তোর সমস্যা কি বল তো।তুই সব সময় সব কিছুর মধ্যে আমার ব‌উকে টেনে আনিস কেন? খবরদার সব কিছুতেই ওকে টেনে আনবি না।’

‘যাহ্ বাবা এই ব‌উ মানিস না ছে/ড়ে দিবি তাও আবার ব‌উয়ের পছন্দের মানুষের হাতে তুলে দিয়ে নিজেকে স্বামী তে/রে/সা/র খেতাব নিবি এখন আবার আমি টানলেই দোষ।বলছি অন্য কারো হাতে তুলে যখন দিবিই তাহলে আমার হাতেই তুলে দে।বিশ্বাস কর আমি তোর ব‌উকে নিজের ব‌উয়ের মতোই আদর যত্ন করবো। অন্যের ব‌উ ভেবে একটুও অবহেলা করবো না।’

অনিক ইনোসেন্ট ফেস করে কথা গুলো বলতে দেরি কিন্তু তার পিঠে দুই তিনটা কি/ল প/ড়/তে দেরি হলো না।অনিক ব্যা’থা’য় কুকিয়ে উঠলো। এরমধ্যে নিষ্প্রভের ফোন এলো সে ফোন ধরার আগে বিরবির করে বলল,

‘শা/লা!’

অনিক নিজের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

‘শা/লা না দোস্ত সতীন বল।যদিও এটা মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিন্তু আমরা না হয় ছেলে সতীন হলাম কি বলিস? আমরা আমরাই তো!’

নিষ্প্রভ বিরক্তিকর চোখে একবার অনিকের দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলতে শুরু করে। টেইর্লাস এ দেওয়া তুরের ড্রেস গুলো রেডি হয়েছে ওগুলো নিয়ে আসতে বলছে। নিষ্প্রভ জানে অনিক ফান করছে তাকে রা’গি’য়ে দিতে তবুও ব‌উকে নিয়ে এসব শুনতে ভালো লাগছে না তার। নিষ্প্রভ অনিক কে বলল,

‘থাক আসি!’

অনিক নিষ্প্রভের কাঁধে হাত রেখে অত্যান্ত শীতল কন্ঠে বলল,

‘যাকে নিয়ে বন্ধুর ফান ই সহ্য করতে পারছিস না।তাকে অন্য কারো হাতে তুলে দিবি বা ছেড়ে দিবি কিভাবে? শোন বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেন তুরকে তুই মনে জায়গা দিতে শুরু করেছিস।’

অনিকের কথা শুনে নিষ্প্রভ গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত হয়।অনিক বলে,

‘এতো ভাবতে হবে না।বিশ্বাস না হলে তোর ব‌উকে আমার কাছে দিয়ে যা। আমি খুশি মনে বলতে চাই,

“আমার ব‌উ আমার ব‌উ,
বন্ধুর ব‌উ ও আমার ব‌উ।”

‘শা/লা তুই আর ভালো হবি না। চোখ তুলে তোর বিছানার তলায় রেখে আসবো।তখন আমার ব‌উয়ের দিকে নজর কেন,নিজের ব‌উকেও দেখতে পারবি না।’

বলেই নিষ্প্রভ রে’গে গজগজ করতে করতে চলে যায়।অনিক অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে আর জোরে জোরে বলে উঠে,

‘বন্ধু তুমি ভাঙবা তবুও মচকাবে না।’

_____________

রাত দশটা! নিষ্প্রভ শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে তুর শুয়ে আছে।নিষ্প্রভ ব্যাগ গুলো বেডের একপাশে রেখে দেয়। তুর নড়েচড়ে উঠে বসে, নিষ্প্রভের কেন জানি তুরকে অস্বাভাবিক লাগছে। নিষ্প্রভ গলা খাঁকারি দেয় তুরের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তবুও তুর আগের মতই নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে থাকে। নিষ্প্রভ তুরের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে,

‘তোমার কি বেশি শরীর খারাপ।ব্যাথা কি বেশি করছে চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।?’

তুর এবার নিষ্প্রভের দিকে নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

‘ক‌ই না ত। আমি ঠিক আছি জাস্ট একটু ব্যা’থা আছে রেস্ট করলেই ঠিক হয়ে যাবে।’

‘আমার কেন জানি মনে হলো তুমি ঠিক নেই। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তুমি এই গুলো দেখো সব ঠিকঠাক আছে কি না।’

নিষ্প্রভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথা গুলো বলে চলে যায় ওয়াশরুমে।মেয়েটার শরীরটা এমনি খারাপ, হতে পারে তুরের হয়তো বাড়ির জন্য মন খারাপ নয়তো পার্সোনাল কারণে।তুর তাকে নিজের কেউ ভাবতে পারছে না বলে বলতে চাইছে না হয়তো।থাকুক ও নিজের মত।

তুর নিষ্প্রভের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একবার শপিং ব্যাগ গুলোর দিকে তাকায়।তার এসব বের করতে একটুও ইচ্ছে করছে না।যেখানে মানুষটাই তার নয় সেখানে এসব জিনিস দিয়ে সে কি করবে।মনটা তার বিষিয়ে রয়েছে রাতের সেই ঘটনার পর থেকে।কিছুই ভালো লাগছে না।তার জীবণটা এমন না হলেও পারতো।আশা বেগমের বলা কথা গুলো তার ছোট্ট হৃদয়ে বিশাল দাগ কেটেছে।হয়তো অপ্রত্যাশিত ভাবে স্বামীর সাথে তার হৃদয়ের সন্ধিক্ষণ হবার আগেই বিচ্ছেদ হতে চলেছে।

তখন আশা বেগম নিষ্প্রভকে ছেড়ে দিতে তুরকে গহনা টাকা অফার করে।তুর অবাক হয়ে যায় এতোদিন তাঁর মাকে আশা বেগম এসব অফার করেছে তার মা র্নিদ্বিধায় আশা বেগমের সাথে তাল মিলিয়েছে সেজন্য আশা বেগম হয়তো মায়ের মতো মেয়েকেও লোভী ভেবেছে তা না হলে কি এমন অফার দিবে কিন্তু তুর তো লোভী মেয়ে না।হ্যা একদিক থেকে সেও লোভী তবে সেটা ভালোবাসার,টাকার নয়।

আশা বেগমের কথা শুনে তুরের মে’জা’জ ভিতরে ভিতরে দপদপ করে জ্ব’লে উঠে।তবুও শান্ত কন্ঠে বলে,

‘আপনার কথায় আমি নিষ্প্রভকে ছাড়বো কেন?’

আশা বেগম হেসে বলে,

‘তোমার ভালোর জন্য।’

তুর অবাক হয়ে বলে,

‘কেমন ভালো?’

আশা বেগম এবার তুরকে বুঝানোর চেষ্টা করে সেজন্য তুরের পাশে বসে মাথায় হাত রেখে বলে,

‘দেখো মা তুমি আমার বান্ধবীর মেয়ে আমি তোমার খারাপ চাই না।অতীতে আমি তোমাকে আমার ছেলের ব‌উ হিসাবে চাইতাম কিন্তু এখন তুমি আমার সতীনের ছেলের ব‌উ। তবুও আমার বান্ধবীর মেয়ে তাই বলছি তুমি নিষ্প্রভকে ছেড়ে দেও।এই বাড়ির অর্থ সম্পদ দেখছো না? সব কিছুর মালিক আফসান হবে নিষ্প্রভ কিন্তু কিছুই পাবে না।এ বাড়ি থেকে এখনি বের করে দিলে ওকে রাস্তায় থাকতে হবে।এমন একটা ছেলের সাথে তুমি সারাজীবন কিভাবে কাটাবে এর থেকে ভালো আমার টাকা ও গহণা গুলো নিয়ে তুমি ওকে ছেড়ে দেও আর নিজের জীবণ গুছিয়ে নেও।’

তুর এবার ভীষণ রে’গে যায়।কি’ড়’মি’ড় করে বলে,

‘আপনি আমাকে লোভী মনে করছেন? নিষ্প্রভ আর যাই করুক ও আপনার ছেলের মতো অ’মা’নু’ষ নয়।আর নিষ্প্রভের মত এমন একটা মানুষের সাথে রাস্তায় কেন গাছতলায় থাকতেও রাজি আমি।’

‘শোনো মেয়ে এসব আবেগ দিয়ে জীবণ চলে না। আমি জানি নিষ্প্রভ তোমাকে মেনে নেয় নি। তোমাদের আজ হলেও ডিভোর্স হবে কাল হলেও হবে তাই ভালোই ভালোই আমার কথা মেনে নিয়ে চলেও যাও।এতে করে টাকা গুলো পাবে যা দিয়ে তোমার ভবিষ্যত কিছুটা হলেও ভালো হবে।’

‘এটা আমাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার।আপনাকে আমার এতো ভালো নিয়ে ভাবতে হবে না।’

তারপর টাকা ও গহনা গুলো আশা বেগমের হাতে তুলে দিয়ে বলে,

‘এগুলো নিয়ে এখনই আমাদের রুম থেকে বেরিয়ে যান।’

আশা বেগম রে/গে গ’র্জে উঠে এইটুকু মেয়ের এতো বড় সাহস তাকে অপমান ভালো বুঝে বুঝাতে এসেছিলো কিন্তু এই মেয়ের এতো দেমাক।রে’গে গিয়ে বলে,

‘দুই দিনের মেয়ে হয়ে এতো তেজ।আরে তোর মা তো লোভী তুই কেমন তাও জানা আছে। ভালো চাইছিলাম বলে বুঝাতে এসেছি এই বাড়ি থেকে চলে যেতে।থাক তুই এখানে আফসান যখন ছিঁ’ড়ে খাবে তখন তোর এই দেমাক কোথায় যাবে দেখবো নি। তখন তোর নিষ্প্রভ ও তোর দিকে তাকাবে না।’

আশা বেগম হন হন করে চলে যায় আর ভাবতে থাকে সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল এবার বাঁকাতে হবে।তুর স্তব্ধ হয়ে যায় তার মুখ থেকে কোনো কথায় বের হয় না।এমন পরিস্থিতিতে সে আগে কখনো পড়ে নি।
_______________________________

নিষ্প্রভ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখ তুর মুখ ভার করে বসে আছে আর শপিং ব্যাগ গুলো তার সামনে ওভাবেই পড়ে রয়েছে ঠিক যেভাবে সে রেখে গিয়েছিল।নিষ্প্রভ তুরকে বলল,

‘এখনো এসব বের করো নি।বের করে দেখো।’

তুর না চাইতেও একে একে বের করতে শুরু করে।প্রথমে শাড়ির সাথের জিনিস গুলো বেড়িয়ে আসে তারপর পাঁচটা থ্রিপিস। নতুন তিনটা প্যাকেট দেখে তুর ভ্রু কুঁচকে নিষ্প্রভের দিকে তাকায়। নিষ্প্রভ তুরকে খুলতে ইশারা করে।তুর খুলে অবাক হয়ে যায় ভিতরে গর্জিয়াস তিনটা থ্রিপিস। একটা মেরুন ও ঘিয়ে রঙের মিশ্রণে সুতার সুক্ষ কাজ করা থ্রিপিস যার ওড়নাটা ভীষণ সুন্দর।আরেকটা সি গ্রীন রঙের টিস্যু থ্রীপিস অন্যটা ব্লাক র্জজেট এর উপর গোল্ডেন জরি দিয়ে কাজ করা থ্রীপিস তিনটাই তুরের অসম্ভব সুন্দর লেগেছে।তবুও তার মনে স্বস্থি খুঁজে পাচ্ছে না।তুর জিজ্ঞেস করে,

‘এই গুলো?’

‘আমার পছন্দ হলো তাই তোমাকে না বলে কিনে নিলাম আগের গুলো ত বানাতে দেওয়াই ছিলো সেজন্য ফিটিং এর কোনো সমস্যা হয় নি।এগুলোও তার সাথে দিয়ে দিলাম তোমার পছন্দ হোক বা না, হোক এগুলো একবার হলেও আমার সামনে পড়বে।’

নিষ্প্রভের কথায় তুর অবাক হয়ে বলে,

‘এতো কিছুর কি প্রয়োজন ছিলো দুইদিন পর সেই তো ডির্ভোস‌ই দিবেন।’

চলমান।

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আগের পর্ব গুলোর থেকে এই পর্বটা বেশ ব‌ড়‌ দিয়েছি।দয়াকরে মন্তব্য বড় করে করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here