#তুমি_আমার_স্নিগ্ধ_ফুল
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
#পর্বঃ৩৮ (শেষ)
পারফি রুমে এসে দেখলো ইয়ানা ইমার বেবেকি ঘুম পারিয়ে আস্তে করে শুইয়ে দিয়ে ব্লাংকেট গায়ে দিয়ে বুকের উপর হালকা করে চাপর মারছে যাতে ঘুম ছুটে না যায়। কিছুক্ষণ পর আলতো করে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো বাহিরে যাওয়া উদ্দেশ্যে।
ইয়ানা পিছু ঘুরতে কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো। কার সাথে ধাক্কা খেয়েছে দেখার জন্য উপরে তাকাতে পারফির মুখশ্রী ভেসে উঠলো। এতক্ষণ বেবি নিয়ে এতো বিজি ছিলো যে কখন রুমে পারফি এসেছে টের ও পায় নি।
পারফি কোনো কথা না বলে ইয়ানাকে আলতো করে জড়িয়ে বুকের মাঝে আগলে নিলো।
পারফির হঠাৎ কি হলো ইয়ানা বুঝতে পারলো না তাই পারফির পিঠে আলতো করে হাত রেখে বলল,
কি হয়েছে মিস্টার?
পারফি ইয়ানাকে ছাড়িয়ে পিছ থেকে ফের জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে বলল, কিছুনা।
কিছু না হলে হলে এমন করছো কেনো? ছাড়ো রেডি হতে হবে তো।
ইয়ানার কথায় পারফি ছাড়লো তো না এই আরো গভীর ভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আলতো করে ডাক দিলো, বিড়াল ছানা….
পারফির ডাকে ইয়ানার বুকের ভিতর ধুকপুকিয়ে উঠলো। কেনো যেনো এই ডাকটা শুনলে মনের ভিতর এক অন্যরকম ভালোলাগায় ছেয়ে যায়। ইয়ানা নিজেকে সামলে ছোট করে বলল, হুম…
বেবি খুব পছন্দ করো?
খুব খুব পছন্দ করি। আগেতো ওভাবে বেবি কাছে পাই নি বাট ইমা আপুর বেবি হওয়ার পর থেকে অদ্ভুত এক টাব অনুভব করি।
পারফি ইয়ানার ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে ইয়ানাকে ফের সামনে এনে দু গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,
বেবি লাগবে?
চকমে তাকালো ইয়ানা পারফির দিকে কথাটা শুনে। ঝংকার দিয়ে উঠলো পুরো শরীর। গলাটা ক্রমশ শুকিয়ে আসছে কেমন। ওদের মাঝে এখন সম্পর্কটা একদম স্বাভাবিক। বেবি নিয়ে ইয়ানা কথা উঠালে পারফি এক কথায় বলতো তুৃমি নিজেই এখন বেবি, ছোট বিড়াল ছানা। তোমার এখনো বেবি ক্যারি করার বয়স হয় নি তাই এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়াশোনায় মনোযোগ দেও। পড়ালেখা শেষ হলে তারপর বেবি প্লানিং করা হবে এর আগে না।
পারফি যে কিছুতে এতো তারাতাড়ি বেবি দিবে না তা খুব ভালো করেই ইয়ানার বোঝা হয়ে গিয়েছিলো তাই এই ব্যাপার নিয়ে তেমন কথা বলতো না। কিন্তু আজ পারফির মুখে নিজ থেকে বেবির কথা শুনে একদম থমকে গেলো ইয়ানা। কি বলবে পারফির কথার পৃষ্ঠে তা খুঁজে পেলো না।
পারফি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ওর মন বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো। পরক্ষণে বুঝেও নিলো ওর স্নিগ্ধ ফুলের মন। স্নিগ্ধ ফুল যেই লেভেল এর বেবি পাগল সেই হিসেবে এক কথায় এই যে এই মেয়ে বেবি নিতে রাজি হয়ে যাবে তা বেশ ভালো করেই জানে। কিন্তু ওর বিড়াল ছানা এখনো নিজেই বাচ্চা, এতো তারাতাড়ি বেবি নেওয়াটা প্রয়োজন মনে হলো না। সবে আঠারোতে পা দিয়েছে। আরেকটু বড় হোক তারপর বিড়াল ছানার মনের ইচ্ছে পূরণ করবে এর আগে না। এখন ওর ইচ্ছে পূরণ করতে গেলে উল্টো ওর ফুলের ক্ষতি টাই বেশি হবে। যে ফুলের গায়ে কখনো একটা ফুলের টোকা কউকে দিতে দেয় না সেখানে নিজে কিভাবে জেনেশুনে ওর বিড়াল ছানার এতবড় ক্ষতি করবে৷ এখনো যে ওর বিড়াল ছানার বেবি ক্যারি করার বয়স হয় নাই।
কথাগুলো ভেবে পারফি ইয়ানার গালে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল,
অরেকটু বড় হও বিড়াল ছানা তারপর তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ করবো। বেবি ক্যারি করার বয়স এখনো তোমার হয় নি। সত্যি বলতে আজ তোমার কোলে ইমার বেবি দেখে আমার মনে এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করেছি। যে অনুভূতিটা হয়তো তুমি আরো আগে থেকেই করেছো। কিন্তু জেনেশুনে তোমার কোনো ক্ষতি হোক সেই কাজ আমি কোনোদিন করবো না এতে মনের ভিতর যতো অনুভূতি আসুক। একটা মেয়ের কম করে হলেও বিশ বছরের আগে বেবি নেওয়াটা কতটা রিস্কি তাতো জানোই আর সেখানে তুমি সবে আঠারোতে পা দিয়েছো। আরেকটু বড় হও তখন তোমার সব ইচ্ছে পূরণ হবে বিড়াল ছানা। এখন তো তোমার একটা মাম্মা আছেই। তুমি আরো বড় হতে হতে না হয় এই মাম্মাটা নিয়েই হ্যাপি থাকো। সময় হলে তোমার নিজের মাম্মা/পাপাকে পেয়ে যাবে। কখনো এটা নিয়ে মন খারাপ কাবে না ওঁকে?
পারফি প্রতিটা কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো ইয়ানা। প্রতিটি কথায় মিশে আছে ওর জন্য গভীর ভালোবাসা। ভালোবেসে সব সময় আগলে রাখা। যেখানে এক বিন্দু পরিমাণ কষ্ট যাতে ওকে ছুতে না পারে সেই ভরসা দিয়ে আগলে রাখা। ইয়ানার চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠলো এই লোকটার এতো এতো ভালোবাসা পেয়ে। সব সময় ওর ভালো খারাপটা খুব যত্ন করে আদর করে ওকে বুঝিয়ে দিবে বকাঝকা না করে। জিনিস গুলো ভাবতেও মনের ভিতর একরাশ মুগ্ধতায় ভোরে ওঠে। ইয়ানা শক্ত করে পারফিকে ঝাপটে ধরে পারফির বুকে মাথা রাখলো। বুকে মাথা রেখেই সম্মতি দিলো বিষয়টা নিয়ে আর মন খারাপ করবে না কখনো।
ইয়ানার সম্মতিতে মুচকি হসলো পারফি। নিজেও শক্ত করে অর্ধাঙ্গিনীকে বুকের মাঝে আগলে নিলো। কিছুক্ষণ পর নিজ থেকে ছাড়িয়ে কপালে গভীর ভাবে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলল,
রেডি হয়ে নেও এবার। প্রীতি সেই কখন বলেছে রেডি হতে। অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
ইয়ানা মুচকি হেসে সম্মতি দিয়ে রেডি হতে লাগলো, পারফি ও রেডি হয়ে নিলো। তারপর এক সাথে দুজন নিচে নেমে গেলো। নিচে যেয়ে ইয়ানা ইমাকে ওর রুমে বেবির কাছে যেতে বললো। ইমার শরীরটা একটু খারাপ তার উপর এতো ছোট বেবি রেখে শপিংয়ে যাওয়া ওর জন্য সম্ভব হলো না।
ইয়ানারা গেলো সাথে শাহানা আর পিয়াসা বেগমকে ও নিয়ে গেলো।
সবার পছন্দ মতো কেনাকাটা করতে করতে রাত হয়ে গেলো। এক বারে বাহির থেকে ডিনার করে সবাই বাসায় ফিরলো। এতো এতো কেনাকাটা করে সবাই মোটামুটি টায়ার্ড তাই রেস্ট নিতে যে যার ঘরে চলে গেলো।
এভাবেই দেখতে দেখতে এক এক করে সব অনুষ্ঠান পালন করে অবশেষে বিয়ের দিন চলে আসলো। সকাল সকাল পার্লার থেকে লোক এসে পড়লো প্রীতিকে সাজানোর জন্য। সাজ কমপ্লিট হলো দুপুরে।
ইয়ানা সেই সকাল থেকে সবার সাথে কাজে হেল্প করছে। ভাইর বিয়ে বলে কথা চুপচাপ তো আর বসে থাকা যায় না। শাহানা বেগম সব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তাই তার পাশে থেকে টুকটাক কাজে সাহায্য করছে। তখন রিমা বেগম এসে ইয়ানাকে বলল,
তুমি এবার যেয়ে রেডি হয়ে নেও আমি আপাকে সাহায্য করছি। রিমা বেগমের প্রথমে একটু মন খারাপ হয়েছিলো প্রীতিকে তার ছেলের বউ করে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু প্রীতিকে তারা বিয়ে দিলো তার ননদের ছেলের সাথে। পরক্ষণে আবার মন খারাপটা কাটিয়ে নিলো এই ভেবে যে ননদের ছেলে আর নিজের ছেলের ভিতর পার্থক্য আর কিসের। দুজনেই তো তার ছেলে, সাথে শাফিনকে তিনি নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসে তাই মন খারাপ কাটিয়ে সব কিছু হাসিমুখে মেনে নিলো।
রিমা বেগমের কথায় শাহানা বেগমের খেয়াল হলো আসলেই তার মেয়েটা সকাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। সবাই রেডি হয়ে গেছে আর তার মেয়ে রেডি হয় নাই সেই দিকটা কাজের প্রেশারে খেয়াল এই ছিলো না। খেয়াল হতে জোর করে ইয়ানাকে রেডি হতে পাঠিয়ে দিলো।
ইয়ানা প্রথমে চলে গেলো প্রীতিকে দেখতে। কাজের জন্য সকাল থেকে মেয়েটাকে একটু সময় ও দিতে পারে নাই। প্রীতির কাছে আসতে দেখতে পেলো লাল টুকটুকে লেহাঙ্গে পড়ে পরী সেজে ওর জানের বেস্টু ওরুফে ননদিনী বসে আছে। ইয়ানা মুচকি হেসে প্রীতির কাছে এগিয়ে যেতে প্রীতি গাল ফুলিয়ে বলল,
এতক্ষণে তোর সময় হয়েছে আসার? এখন আর আসা লাগবে না তোর।
ইয়ানা প্রীতিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,
রাগ করিস না জানু সকাল থেকে কাজে বিজি ছিলাম তাই এখানে আসার সময় হয় নি।
হয়েছে এখন এক্সকিউজ দেওয়া লাগবে না। বড় হয়ে গিয়েছিস না? এখনো রেডি না হয়ে কাজ করে যাচ্ছিস। এখন চুপচাপ এখানে বোস তোকে তারা সাজিয়ে দিবে।
ইয়ানা একবার পার্লারের লোকদের দিকে তাকিয়ে বলল,
এই না না আমি এতো ভারী মেকআপ তাদের থেকে নিতে পারবো না। তুইতো জানিস এই আমি ভারী মেকআপ করি না তার থেকে বরং আমি নিজেই সিম্পল ভাবে সেজে নিবো।
চুপ কর পার্লারের লোক সাজাবে দেখে যে ভারী মেকআপ করাবে তা তোকে কে বলেছে? সিম্পল ভাবেই তোকে সাজিয়ে দিবে এখন চুপচাপ বস এখানে।
প্রীতির জোরাজোরিতে অগত্য ইয়ানার সাজতে বসতে হলো। প্রীতি বলে দিলো সিম্পল করে ওকে সাজিয়ে দিতে তাই পর্লারের লোকরা তাই করলো। সাজানো হলে পার্পেল কালার একটা শাড়ি পড়িয়ে দিলো সুন্দর করে। শাড়িটা পারফি চয়েস করে দিয়েছিলো। সাজ কমপ্লিট হতে প্রীতির সাথে আরো কিছু সময় কাটিয়ে রুমে আসলো ইয়ানা। রুমে আসার আগে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে পারফিকে খুঁজলো কিন্তু কোথাও দেখা মিললো না। বোনের বিয়েতে এই লোকটা নিঃশ্বাস নেওয়ার ও সময় পাচ্ছে না। সেই ফজরের পর রুম থেকে বের হয়েছিলো তারপর আর দেখা মেলে নি। অবশ্য ইয়ানা নিজেও মোটামুটি বিজি ছিলো কাজে ভাইর বিয়ে বলে কথা।
ইয়ানা রুমে এসে শুনতে পেলে ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে। বুঝলো যে পারফি আছে ভিতরে এই জন্যই তখন বাহিরে কোথাও পায় নি।
ইয়ানার ভাবনার মাঝে ওয়াশরুম থেকে বের হলো পারফি। তাকালো ইয়ানা সেদিকে, সদ্য গোসল করাতে লোকটাকে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে। সেই সাথে মুখে ফুটে উঠেছে ক্লান্তির ছাপ। কয়টা দিন থেকে প্রচুর ধকল যাচ্ছে লোকটার উপর দিয়ে। পারফির ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ইয়ানা একটা তোয়ালে নিয়ে পারফির মাথা ভালো করে মুছে দিতে দিতে বলল,
এতো প্রেশার কেনো নিচ্ছো নিজের উপরে? কাজ করার জন্য তো কতো লোক রাখা আছে। এই কয়দিনে নিজের কি হাল করেছো তা দেখেছো একবার?
ইয়ানার কথার জবাব না দিয়ে পারফি আচমকা ইয়ানার কোমড় আঁকড়ে ধরে ইয়ানাকে কাছে টেনে নিলো।
পারফির ঠান্ডা হাতের স্পর্শ কোমড়ে লাগতে কেঁপে উঠলো ইয়ানা৷
তা দেখে পারফি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল,
আমাকে পাগল করার জন্য এই লুকে আমার সামনে হাজির হয়েছো?
পারফির কথায় ইয়ানা লজ্জামাখা হেসে বলল,
হয়েছে এখন আর পাগল হওয়া লাগবে না, দেখি ছাড়ো রেডি হয়ে নেও আমি সাহায্য করছি।
পারফি ছাড়লো না আস্তে করে এগিয়ে গিয়ে আলতো করে ইয়ানার অধরে অধর ছুঁয়ে দিলো। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো ইয়ানা। কিছুক্ষণ পর পারফি ইয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে গালে হাত রেখে বলল,
খুব সুন্দর লাগছে আমার বউজানকে।
পারফির কথায় হাসলো ইয়ানা কিন্তু কিছু বললো না। তারপর পারফিকে তারা দিয়ে রেডি হতে বলল, সাথে নিজেও হেল্প করলো রেডি হতে।
—————————
অনেক অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে প্রীতি হয়ে গেলো একান্ত শাফিনের। কেমন জানি সব কিছু প্রীতির কাছে সপ্নের মতো লাগছে। ঘন্টা খানেক আগে ওদের বিয়ে সম্পন্ন হলো। সময় হয়ে গেলো বিদায়ের পালা। অন্য পাঁচটা বিয়ের বিদায়ের মতো এই বিয়ের বিদায়টা হলো না। অন্যসব বিয়েতে বিদায়ের বেলা সবার চোখে লেগে থাকে পানি। প্রিয় জন ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। আর প্রীতির বেলায় হলো অন্য। কারো মুখে কষ্টের রেশ মাত্র নেই কারণ এটা অন্যসব বিয়ের মতো বিদায় না। প্রীতি তো আর দূরে কোথায় বিদায় হয়ে যাচ্ছে না। নিজের বাড়িতেই থেকে যাচ্ছে। শুধু আজকের পর থেকে ঘরটা চেঞ্জ হয়ে গেলো। আগে ছিলো চৌধুরী বাসায় আর আজ থেকে থাকবে শিকদার বাসায়। পাশাপাশি বাসা এক ছাঁদ টপকে আরেক ছাদে চলে যাওয়া যায় সেখানে আবার কিসের বিদায়। অন্য পাচটা বিয়ের মতো গাড়িতে চরে প্রীতির শশুর বাড়ি যাওয়া হলো না। পাশাপাশি বাসা হওয়াতে পায়ে হেঁটেই বিদায় নিতে হলো।
বিদায়ের সময় প্রীতি পিয়াসা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
আম্মু তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না। কোথায় মেয়ের বিদায় দিতে এসে একটু কান্না কাটি করবা তানা দাঁত কেলিয়ে হাসছো।
প্রীতির কথায় সবাই এক সাথে হেসে উঠলো। শাফিন প্রীতির কথায় বলে উঠলো তুই এতো ভালোবাসিস তাহলে তোর চোখের পানি কোথায়? যেখানে কান্না করে গড়াগড়ি খাবি তা না করে নাচতে নাচতে শশুর বাড়ি যাচ্ছিস।
শাফিনের কথায়ও আরেকবার হাসির রোল পড়ে গেলো। প্রীতি ঠোঁট উল্টে পাশে পারফির দিকে তাকিয়ে বলল,
দেখছো ভাইয়া তোমার বন্ধু আমাকে খোঁচা মেরে কথা বলছে।
বোনের কথায় পারফি রাগ করার ভান করে শাফিনকে বলল,
কতবড় সাহস আমার বোনকে খোঁচা মেরে কথা বলিস। যা তোর কাছে আমার বোনকে দিবোই না।
পারফির কথায় ইয়ানা বলল,
এহ্ বললেই হলো নাকি বোন দিবে না? আমার ভাইর বউকে তারাতাড়ি আমার ভাইর হাতে তুলে দেও আর নাহলে আমার ভাইর বোন ও কিন্তু শশুর বাড়ি যাবে না।
ভাই বোন ভাই বোনের খুনসুটিতে সবার হাসতে হাসতে পেট ব্যথার উপক্রম হয়ে গেলো। ওরা চারজন এমন খুনসুটিতে মেতে রইলো আর এদিকে পিয়াসা, শাহানা, ইতি বেগম, ইসহাক আহমেদ, শরিফ শিকার, আর পাভেল চৌধুরী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়েদের খুনসুটি দেখতে লাগলো। আজ কারে মুখের হাসি যেনো বাঁধ মানছে না। সবার মুখে আজ হাসি লেগে আছে যেই হাসি হলো এক তৃপ্তির হাসি।
অবশেষে খুনসুটির মাঝে প্রীতিকে নিয়ে সবাই শাফিনদের বাসায় প্রবেশ করলো। সবাই মিলে গল্পের আসর বসিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে রাত বারতে প্রীতিকে নিয়ে শাফিনের রুমে দিয়ে আসলো। আর গেট বাঁধলো ইয়ানা, ইমা, রাফি আরো কিছু মামাতো ফুপাতো ভাইবোন মিলে। এগুলোর মাঝে পারফি ছিলো না। শত হলেও বোনের বাসর ঘরের গেট তো আর ভাই হয়ে বাঁধতে পারে না। এই যাত্রায় পারফির হাত থেকে শাফিন বেঁচে গেলো কিন্তু বাকি যেই বিচ্ছুরা গেট ধরেছে এদের থেকে কি আদো বাঁচতে পারবে?
কিছুক্ষণ পর আসলো শাফিন। এতসময় পারফির সাথে ছাঁদে ছিলো। ছাঁদ থেকে এসে রুমে যেতে গিয়ে পড়ে গেলো বিপাকে। এ নিয়ে একধাপ যুদ্ধ হয়ে গেলো। অবশেষে সবার কাছে হার মেনে সবার দাবি মিটিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো। শাফিন রুমে ঢুকে দরজা আটকে ধপাস করে যেয়ে বেডে শুইয়ে পড়লো। এতক্ষণ যুদ্ধ করে যেনো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এমন একটা ভাব।
এদিকে প্রীতি লম্বা ঘোমটা টেনে বসে থেকে এতক্ষণ লাল, নীল বেগুনি হচ্ছিলে লজ্জায়। শাফিন এসে ঘোমটা তুলবে তখন লজ্জায় কি করবে না করবে তাই ভেবে লজ্জায় লাল, নীল হচ্ছিলো। এইদিকে শাফিন এগুলো কিছু না করে ধপাস করে শুয়ে পড়েছে তা দেখে প্রীতির লজ্জা হওয়ায় মিশিয়ে গিয়ে ভর করলো সেই আগের ডাইনি রুপ।
রাগে ফুঁসে উঠে প্রীতি এক টানে মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে শাফিনের দিকে কিছুটা ঝুকে শাফিনের পাঞ্জাবির কলার টেনে ধরে বলল,
আমি এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে ইয়া লম্বা ঘোমটা টেনে তোমার জন্য বসে আছি আর তুমি এসে ঘোমটা তো তুললে না এই উল্টো এসে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়েছো। এই তোমাকে এখানে আসতে বলেছে কে? যাও এই মুহূর্তে রুম থেকে বেড়িয়ে যাবে।
প্রীতির কাজে শাফিন ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ও ইচ্ছে করেই তখন এভাবে শুয়ে পড়েছিলো ওর ক্ষ্যাপাটে বউটাকে ক্ষেপিয়ে দেওয়ার জন্য। আর হলো ও তাই অবশেষে ওর ক্ষ্যাপাটে বউ ক্ষেপেছে। কেনো যেনো প্রীতিকে না ক্ষেপাতে পারলে ওর পেটের ভাত হজম হয় না তাই বাসর রাত এও ক্ষ্যাপাতে ছাড়লো না।
প্রীতি এখনো শাফিনের দিকে কিছুটা ঝুকে ওর কলার টেনে ধরে আছে তা দেখে শাফিন হাত ধরে টান দিয়ে প্রীতিকে নিজের উপরে ফেলে দিলো।
আকস্মিক কাজে প্রীতি কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।
শাফির প্রীতির ঘবড়ানো মুখের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললে তুই তাহলে কি চাচ্ছিলি তোর ঘোমটা উঠিয়ে তোর লজ্জামাখা মুখ দেখে বেসামাল হয়ে যাই? পারবি তো সামলাতে একবার বেসামাল হয়ে উঠলে?
শাফিনের কথায় প্রীতির হুশ আসলো। এতক্ষণ বোকার মতো কাজ করে এখন ফেঁসে গিয়েছে। সাথে শাফিনের এমন লাগাম ছাড়া কথায় কান দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো। শাফিনের উপর থেকে সরে যেতে চেয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
ছ..ছাড়ো…. তোমা….
আর কিছু বলার আগে শাফিন প্রীতির মুখে আঙুল দিয়ে কথা আটকে দিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
আজ কোনো ছাড়াছাড়ি নেই জান। তুমি নিজ থেকেই কাছে এসেছো তাহলেতো ছাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এ বলে আস্তে ধীরে হরিয়ে গেলো প্রীতির মাঝে। পেয়ে গেলো পূর্নতা আরো একটা ভালোবাসার।
———————————–
গভীর রাত চারেদিকে নিস্তব্ধতায় ঘেরা। আর এই নিস্তব্ধতার মাঝে ছাঁদে রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পারফি আর পারফির বুকে মাথা রেখে পারফিকে ঝাপটে ধরে দাঁড়িয়ে আছক ইয়ানা।
দুজনের মাঝে নীরবতা বিরাজমান। নীরবতা ভেঙে পারফি ডেকে উঠলো,
বিড়াল ছানা…
হুম,,,
ভালোবাসি খুব আমার স্নিগ্ধ ফুল। একান্ত আমার ব্যক্তিগত স্নিগ্ধ ফুল।
ইয়ানার পারফিকে আরো দৃর ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
আমিও খুব ভালোবাসি আমার নীলমনি। খুব খুব ভালোবাসি তোমায়। এভাবে সারাজীবন ভালোবেসে তোমার বুকের মাঝে থাকতে চাই।
সব সময় এই বুকের ভিতর আগলে রাখবো আমার স্নিগ্ধ ফুল এ বলে পারফি ইয়ানাকে শক্ত করে বুকের মাঝে আগলে নিলো।
এভাবেই পূর্ণতা পেলো পারফি ইয়ানা আর শাফিন প্রীতির ভালোবাসা। পৃথিবীর সকল ভালোবাসা এভাবেই যেনো পূর্ণতা পায়।
#সমাপ্ত
দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো গল্পটা। জানিনা কার কাছে কতটুকু ভালো লাগেছে গল্পটা। কিন্তু এই গল্পটা লিখে সবার কাছ থেকে সত্যি অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এন্ডিং পার্ট দিয়ে দিলাম দেখে কেউ মন খারাপ করো না। যে কোনো জিনিস এর এই শুরু থেকে শেষ আছে। শুরু করলে শেষ তো করতেই হবে তাইনা? এটা আমার লেখা সব চেয়ে বড় গল্প। এতো এতো দিন ধরে গল্পটা লিখে তোমাদের থেকে এতো এতো ভালোবাসা পেয়ে গল্পটার প্রতি অন্যরকম একটা মায়া জন্মে গেছে। এন্ডিং পার্টটা দিতে আমার ও খুব খারাপ লাগছে। খুব মিস করবো পারফি ইয়ানা আর শাফিন প্রীতির জুটি টা।
সবাই ভালো থাকো সুস্থ থাকো এই দোয়া করি। আবার নতুন গল্প নিয়ে কবে আসবো তা ঠিক জানিনা। এতদিন ফ্রী ছিলাম তাই রেগুলার গল্প দিতে পেরেছি। কয়েকমাস পর আমার পড়াশোনা শুরু হয়ে যাবে তখন হয়তো লেখালেখির এই সুযোগটা অতোটা থাকবে না। সবাই দোয়া করো আমার জন্য। কারো সাথে কোনো ভুলত্রুটি যদি করে থাকি তাহলে ক্ষমা করি দিও। সবাই ভালো থেকো আল্লাহ হাফিজ।