#প্রিয়তার_প্রহর (২য় পরিচ্ছেদ)
পর্ব সংখ্যা (১৫)
রাত বারোটা বেজে পাঁচ মিনিট। প্রিয়তা বসে আছে বিছানার মাঝ বরাবর। প্রহর এখনো ঘরে আসেনি। ঘড়ির কাটা টিকটিক শব্দ করে সময় জানান দিচ্ছে। প্রিয়তার অগোছালো লাগে নিজেকে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে থাকে বিছানায়। বারোটা দশে ঘরে ফিরে প্রহর। ছেলেটার গায়ে পাঞ্জাবি। চুলগুলো গোছালো প্রিয়তাকে এখনো জেগে থাকতে দেখবে আশা করেনি প্রহর। প্রিয়তাকে বসে থাকতে দেখে খানিক অবাক হলো সে। ভেবেছিল প্রিয়তা এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু না, প্রিয়তা তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছে অধীর চিত্তে। প্রহরকে দেখেই কেমন হেলেদুলে উঠল প্রিয়তা। লজ্জায় নত হলত মুখ।
প্রহর প্রিয়তার সম্মুখে এগিয়ে আসে। প্রিয়তা তন্ত্র পায়ে নামে বিছানা থেকে। খানিক ঝুঁকে ডান হাত দিয়ে প্রহরের দু পা ছুঁয়ে সালাম করে। বিষয়টা ভালো লাগে না প্রহরের। স্ত্রীর নত মুখের চিবুক দু আঙুল দ্বারা সোজা করে। স্ত্রীর পানে তাকিয়ে থাকে অপলক। প্রিয়তার চোখ জোড়া ফোলা ফোলা। কেঁদে চোখ-মুখ লাল করে ফেলেছে মেয়েটা। প্রিয়তার ডাগর ডাগর চোখে কষ্টের রেশ। ধক করে ওঠে প্রহরের বুক। প্রসাধনী ব্যবহার ব্যতিত অগোছালো স্ত্রী কে বড্ড নিষ্পাপ লাগছে প্রহরের নিকট। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে সে বলে,
” পায়ে হাত দিয়ে সালাম করবেননা। মুখে মুখেই সালাম দিবেন। মনে থাকবে?
প্রিয়তা মাথা নাড়ে। প্রিয়তার মাথা থেকে আঁচল সরে যায়। খানিক হেসে যত্নের সাথে আঁচলটা ঠিক করে দেয় প্রহর। প্রিয়তাকে বিছানায় বসিয়ে পাঞ্জাবির উপরের একটি বোতাম খুলতে থাকে। প্রিয়তা তাকিয়ে থাকে স্বামীর পানে। প্রশ্ন করে,
” এত দেরি হলো যে, কোথায় ছিলেন?
প্রহরের হাত থামে। ভড়কায় না ছেলেটা। মেকি হেসে বলে,
” কেন? আপনি কি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন?
প্রিয়তা থমকায়। পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে। প্রহর বুঝে যায় প্রিয়তার মনের কথা। প্রহরের জন্য অপেক্ষা করছিল মেয়েটা। বলতে পারছে না সংকোচে, লজ্জায় পাঞ্জাবিটা পাল্টে ডেনিম শার্ট গায়ে জড়ায় প্রহর। প্রিয়তার উদ্দেশ্যে বলে,
” শাড়িটা বেশ ভারী আর ঝকমকে। ঘুমোতে পারবেন না। চেঞ্জ করে আসুন।
প্রিয়তা লাগেজে থাকা প্লাজু আর ঢিলেঢালা লেডিস ডেনিম শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ছোটে। মুখ আর হাত পা ধুয়ে প্লাজু আর শার্ট পরেই বের হয় প্রিয়তা। গলায় জড়ায় সিল্কের ওড়না। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে প্রিয়তা থমকে যায়। এতক্ষণ জ্বলে থাকা বাল্বটা এখন নেভানো। পুরো ঘরটা অন্ধকার। গুমোট অন্ধকারে সামনে পা ফেলতেও ভয় লাগে প্রিয়তার। চঞ্চল হয় প্রিয়তার কায়া। এদিক ওদিক তাকিয়ে উপায়ান্তর না পেয়ে প্রহরকে ডাকে,
” প্রহর, কোথায় আপনি? এত অন্ধকার কেন?
প্রহরের উত্তর আসে না। হঠাৎই শীতল এক শক্তপোক্ত হাত প্রিয়তার পেটে বিচরণ করতে থাকে। প্রিয়তার গলায় আর পেটে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে সান্নিধ্যে আগলে রাখে অবয়বের প্রশস্ত বুকের সাথে। প্রথমে ভয় পেলেও খানিকক্ষণ দম নিয়ে বড় বড় শ্বাস ফেলে প্রিয়তা। পারফিউমের ঘ্রাণটা ভিষণ চেনা চেনা লাগে। গভীর স্পর্শ আঁকা মানুষটাকে চিনতে অসুবিধে হয় না প্রিয়তার। ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে অনায়াসে। হাত দুটোর উপর প্রিয়তা তার নরম হাত চেপে ধরে। প্রশান্তিতে চোখে বুজে বলে,
” ভয় পেয়েছিলাম তো।
প্রহর মুখ গুঁজে প্রিয়তার ঘাড়ে। ওষ্ঠ ছোঁয়ায় নিবিড় ভাবে। কেঁপে উঠে প্রিয়তা। ছটফট করে বাহুবন্ধন থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। অস্থির লাগে প্রিয়তার। হৃদস্পন্দন থামে। স্বেদজল গড়ায় ললাট বেয়ে। প্রহর হাতের বন্ধন ছিন্ন করে পিছন থেকে পুনরায় জড়িয়ে ধরে প্রিয়তাকে। প্রিয়তার ঘাড়ে মাথা রেখে ফিসফিসিয়ে বলে,
” আমি ছাড়া আপনাকে ছোঁয়ার সাধ্যি কার?
প্রিয়তার ভালো লাগে এই গভীর আলিঙ্গন। কিন্তু এ আলিঙ্গনের সময়সীমা দীর্ঘ হয় না। প্রিয়তাকে ধীরে সুস্থে বিছানায় বসায় প্রহর। রঙ বেরঙের মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে ঘরের সর্বত্রে। অতঃপর প্রিয়তার পিঠের দিকে এসে শুয়ে পরে নির্বিকার চিত্তে। প্রিয়তাকেও ইশারায় শুতে বলে পাশে। প্রিয়তা বাধ্য মেয়ের মতো প্রহরের পাশে শোয়। প্রহর কাছে টানে প্রিয়তাকে। স্ত্রীর মাথায় হাত বুলায়। শক্তপোক্ত এক হাত রাখে প্রিয়তার নরম গালে। দীর্ঘ সময় ধরে চুমু খায় ললাটের মাঝখানে। জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে খানিকক্ষণ। প্রিয়তার কান্না পায়। চোখের পাপড়ি ভিজে আসে। আব্বুর মৃত্যুর বিষয়টা তাকে ভেঙে দিয়েছে। আনন্দ উল্লাস সব যেন কেড়ে নিয়েছে। প্রহরের চোখ জোড়া বন্ধ। নিঃশব্দে কাঁদে প্রিয়তা। শব্দ করে না কোনো। মোমবাতি গলে নিভে গিয়েছে মাত্র। পুরো ঘরটা আবারও অন্ধকার হয়েছে। এই অন্ধকারে প্রিয়তা মন ভরে কাঁদে। শ্বাস ফেলে ঘর ঘন। প্রিয়তার পেটে শক্ত হাতের বিচরণ গাঢ় হলো হঠাৎ। প্রিয়তা হকচকিয়ে তাকায় প্রহরের পানে। প্রহর চোখ বুজেই বলে ওঠে,
” আর কাঁদবেন না প্রিয়তা। অনেক তো হলো।
প্রিয়তার হাত পৌছায় প্রহরের পিঠে। প্রহর চোখ খুলে প্রিয়তার দিকে সম্মোহনী দৃষ্টি ফেলে। প্রিয়তার নাকে নাক ঘঁষে। লজ্জায় জুবুথুবু হয় প্রিয়তা। নিচু কণ্ঠে বলে,
” আপনি কি করে বুঝলেন আমি কাঁদছি?
” আমি বুঝি আপনাকে প্রিয়তা।
প্রিয়তার চোখ পুনরায় অশ্রুসিক্ত হয়। বলে,
” আব্বু কেন চলে গেল বলুন তো? আব্বু হয়তো আমার উপর রাগ করে আছে। ভাবছে আমি তার মৃত্যুতে শোকাহত নই। স্বামী, সংসার নিয়ে আনন্দে আছি খুব।
” এমনটা ভাববেন না প্রিয়তা। ঘুমান। অনেক রাত হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পরবেন। বি স্ট্রং প্রিয়তা। এখনো অনেক কিছু জানা আপনার বাকি। ঘুমোন
” ঘুম আসছে না তো।
” আসবে। আমি আদর দিই?
প্রিয়তা দ্রুত প্রহরের বুকে মুখ লুকায়। লাজে রাঙা হয় প্রিয়তার মুখশ্রী। চোখ বুজে ততক্ষণাৎ। বলে,
” ঘুমোচ্ছি, ঘুমোচ্ছি।
_______
সকাল সকাল ব্যাগ ভরতি বাজার এনেছে আজিজ। বাড়িতে বেশ হৈ চৈ হচ্ছে। আজিজ তার সন্তানের আগমনে বেশ আনন্দিত। কোনো কাজই বাদ রাখছে না সে। খাইরুন নাহার এর ব্যবহার বদলেছে। প্রীতির সাথে সর্বক্ষণ ভালো আচরণ করেন মহিলা। প্রীতিকে কোন কাজই করতে দিতে চান না। বাড়ির সব কাজ নিজের হাতেই করেন। প্রীতি চাকরি ছেড়েছে গতকাল। শরীর আজকাল ভালো যায় না তার। অফিসে তার অনুপস্থিতির পরিমাণ বেড়েছে। অফিসে কাজ করতে গিয়েও ঝামেলা হয় বেশ। এদিক ওদিক একটু হাঁটাহাটি করলেই যেন দম বেরিয়ে আসে। অফিসের সব কলিগ গত কয়েকদিন ধরে বলছিল চাকরি ছেড়ে বাড়িতে বসতে। আর গত দুদিন ধরে আজিজ আর খাইরুন নাহার ও জোড়াজুড়ি করছিলেন চাকরি ছাড়ার জন্য। শেষমেশ সন্তান আর নিজের অসুস্থতার কথা মাথায় রেখে গতকাল চাকরিটা ছেড়েছে প্রীতি। বাড়িতে আরাম করছে। খাইরুন নাহারের নাতি-নাতনির প্রতি ভালোবাসার কারণে আগলে নিয়েছেন প্রীতিকেও। সর্বদা প্রীতির খেয়াল রাখছেন তিনি। আজিজ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে স্ত্রীকে খুশি রাখার। প্রীতির আজকাল নিজেকে সুখী সুখী লাগে। অনাগত সন্তানের প্রতি ভালোবাসা যদিও বাড়েনি, তবুও সবার ভালো ব্যবহারের আশায় প্রীতি সন্তানকে নিয়ে ভাবছে আজকাল। তবে নতুনত্ব খুঁজে পাচ্ছে না, এটা যেন হবারই ছিল। প্রিয়তার সাথে দেখা করার ইচ্ছেটাও ঝেঁকে বসেছে প্রীতির। আরহাম কেমন আছে? কতটুকু লম্বা হয়েছে ছেলেটা? প্রিয়তার জীবন কেমন চলছে? জানতে ইচ্ছে হয় প্রীতির। সময় হয় না দেখতে যাওয়ার। শুনেছে প্রিয়তা ফিরেছে। এখানেই আছে মেয়েটা। আরিফের মৃত্যুর সংবাদ শুনেছে প্রীতি। কেঁদেছে খানিক। মন খারাপ হয়েছে প্রচণ্ড। তবে লাশ দেখতে যেতে পারেনি সংসার হারানোর ভয়ে। আজিজ যদি জানতে পারে প্রাক্তন স্বামীর লাশ দেখতে অতদূর ছুটে গিয়েছে প্রীতি, তবে যাচ্ছে তাই বলে গালমন্দ করবে।
আজিজের ডাকে ধ্যান ভাঙে প্রীতির। হাত মুখ ধুয়ে বাইরে আসে। বাজার-সদাই রান্নাঘরে রাখছেন খাইরুন নাহার। প্রীতি বাইরে আসায় আজিজ বলল,
” কি কি রান্না হবে চটপট মাকে বলো। তোমার মনের মতো সব রান্না হবে। আমার বাচ্চা তৃপ্তি করে খাবে।
হাসে প্রীতি। এগিয়ে এসে বলে,
” তোমার বাচ্চার কি আমার পছন্দের খাবার ভালো লাগবে?
এহেন কথায় রুষ্ট হয় আজিজ। খেঁকিয়ে বলে,
” পছন্দ হবে না কেন? তোমারই তো গর্ভে আছে সে। তুমি যা খাবে তাই তো ওর পেটে যাবে নাকি। মায়ের পছন্দ-ই তো অনাগত সন্তানের পছন্দ।
প্রীতি কয়েক পদ খাবারের নাম বলে। খাইরুন নাহারের হাতে হাতে কাজ করতে প্রীতি এগিয়ে যায় রান্নাঘরে। খাইরুন নাহার সব সবজি গুছিয়ে কিচেন ড্রয়ারে রাখছিলেন। প্রীতিকে এগিয়ে আসতে দেখে বললেন,
” তুমি আবার আইতে গেলা ক্যান কউ তো? আমি কি সব করবার পারি না? আগে একাই একশো জনের লাইগা রান্দন করছি।
প্রীতি শসায় কামড় বসিয়ে বলে,
” আপনি তো আগে বলতেন আপনার শরীর ভালো যায় না। এজন্যে এলাম।
হাসেন খাইরুন। বলেন,
” আমার নাতি আইবো শুইনাই আমার রোগব্যাধি চইলা গেছে। কোনো রোগবালাই নাই এহন।
প্রীতি হাসে। গা ম্যাজ ম্যাজ করছে খুব। বেরিয়ে আসে রান্নাঘর থেকে। লজ্জাস্থানে কিছুটা ভেজা ভেজা অনুভব করে। দ্রুত ওয়াশরুমে ছোটে প্রীতি। লজ্জাস্থান থেকে বের হওয়া তরল রক্তে একটুখানি ভিজে যায় শাড়ির নিচে থাকা বস্ত্র। অবাক হয় সে। প্রেগন্যান্সির সময় পিরিয়ড হবার তো কথা নয়। আগে এমনটা হলে স্বাভাবিক ভাবেই নিতো বিষয়টা। কিন্তু এখন এমন তরল দেখে ভয় পেল প্রীতি। চিন্তিত হলো বেশ।
_____
প্রিয়তা যে এ বাড়ির নতুন বউ তা সে অনুভব করতে পারছে না। মনে হচ্ছে এ যেন নিজেরই বাড়ি। চোখ মেলে সর্ব প্রথম প্রিয় পুরুষের দিকে নজর যায় প্রিয়তার। প্রহর তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। চুলগুলো ছেলেটার অগোছালো হয়ে চোখে এসে পড়েছে। ঘুমন্ত মুখখানা ভারী সুন্দর লাগছে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় স্বামীর পানে। প্রিয়তা নজর ফেরায় না। তাকিয়ে থাকে সময় নিয়ে। খানিকক্ষণ পর উঠতে নিলেই পেটে প্রহরের হাতের বন্ধন গাঢ়ভাবে দমবন্ধ হয় প্রিয়তার। ভ্রূ কুঁচকায় ফেলে। মিছে বিরক্তি নিয়ে বলে,
” আপনি তাহলে ঘুমোননি? অভিনয় করছিলেন?
চোখ বুজেই হাসে প্রহর। প্রিয়তার বিরক্তি ভাব কাটে। অপলক চেয়ে থাকে প্রহরের হাসির পানে। লোকটা এত সুন্দর কেন? কেন এত মাদকতা এই মানুষটা ঘিরে? প্রহর বলে ওঠে,
” ঘুমোলে কি জানতে পারতাম আমার স্ত্রী আমাকে এত ভালোবাসে? এত চোখে হারায় আমাকে।
হেচকা টানে প্রিয়তাকে নিজের বুকের উপরে তুলে প্রিয়তার বক্ষদেশে চুমু আঁকে প্রহর। প্রিয়তা লজ্জায় মূর্ছা যায়। সরে আসে ততক্ষণাৎ। মেঝেতে দাঁড়িয়ে বলে,
” বাজে বকবেন না। ফ্রেশ হবেন। উঠুন জলদি।
প্রিয়তা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে দৌঁড়ায়। পনেরো মিনিট বাদে ফিরে আসে ঘরে। প্রহর তখনো শুয়ে আছে। বিরক্ত হয় প্রিয়তা। ব্লাউজের উপরে বড়সড় ওড়না জড়িয়ে বলে,
” বের হন ঘর থেকে। শাড়ি পড়বো।
প্রহর ওঠে বিছানা ছেড়ে। ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। বলে,
” আমি যে আপনার স্বামী তা কি ভুলে যাচ্ছেন?স্বামীর সম্মুখে কিসের এত লাজ?
রাগে চোখ পাকায় প্রিয়তা। প্রহর উঠে বাইরে চলে যায়। প্রিয়তার হাসি পায় ভিষণ। আজ তাদের ঘুরতে যাবার প্ল্যান আছে। তাইতো ইউটিউব দেখে শাড়িটা পড়তে চাইছে সে।
______
বারবার ঘড়ি দেখছে ইহান। তানিয়া ঘুমোচ্ছে। বেশ সকাল সকাল তানিয়ার বাড়িতে এসেছে ইহান। তানিয়ার ঘুম ভাঙতে চায়নি সে। তাই বসে আছে বিছানার পাশের চেয়ারে। তানিয়ার চোখে চশমা নেই। বদ্ধ চোখ জোড়ার মণি নড়চড় করছে। ইহান পুনরায় ঘড়িতে সময় দেখে। ইহানের পরণে ট্রাউজার আর টি শার্ট। তানিয়ার ঘুম থেকে ওঠার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ইহানের ও ঘুম পায়। বুকে দু হাত গুঁজে বসে থাকে।
সময় গড়ায়। দুপুরের দিক ঘুম থেকে উঠে তানিয়া। বিছানায় বসে বড়সড় হাই তোলে। হাত পা এদিক ওদিক মেলে অলসতা কাঁটায়। ঘোলাটে চোখের কারণে দেখতে পায় না ইহানকে। পুনরায় ঘুমোতে যাবার প্রস্তুতি নিতে নিলেই ধমকে ওঠে ইহান। চেঁচিয়ে বলে,
” ফারদার আর ঘুমোবে না। কটা বাজে ইডিয়ট। কোনো ডিসিপ্লিন নেই তোমার।
হঠাৎ ইহানের এমন কঠিন বাক্যে ভয় পায় তানিয়া। হকচকিয়ে যায়। দ্রুত চশমা চোখে এঁটে ইহানের দিকে তাকিয়ে ভড়কায় তানিয়া। হন্তদন্ত হয়ে পরণে থাকা প্লাজু পায়ের কব্জিতে টেনে আনে। বলে,
” আপনি এখানে? আমি কি স্বপ্নটপ্ন দেখছি নাকি?
ইহান বিরক্ত হয় তানিয়ার এমন অহেতুক কথাবার্তায়। বলে,
” মাথাটা কি গেছে নাকি? এত এত কথা বলো তোমার গলা ব্যথা করে না? কিভাবে পারো?
” আপনি কিভাবে পারেন এত রাগারাগি করতে? এত চেঁচাতে? আপনার মাথা কি কোনোদিন ঠান্ডা থাকে না?
কথা বাড়ায় না ইহান। তানিয়ার সাথে কথা বলার মানে ঝগড়াঝাঁটি করা। এটা আপাতত চাইছে না ইহান। রাগ কমিয়ে গাম্ভীর্য বজায় রেখে ইহান বলে,
” বাড়ি চলো।
হাসে তানিয়া। খানিক ভাব নিয়ে বলে,
” নিতে এসেছেন আমায়? এত প্রেম?
” আম্মা তোমাকে মিস করছে। সেজন্য নিতে এসেছি। আমার কি অত ঠ্যাকা?
” সে যাই হোক, কোলে তুলে নিয়ে যেতে হবে। নইলে যাবো না।
চলবে?
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ