একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি পর্ব ১৪

0
120

একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি -১৪
শুক্রবারের জন্য নওরিন একটা প্রিপারেশন নিয়েছে। একটা গাঢ় নীল রঙের শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজেছে, হাত ভরে কাঁচের চুড়ি পরেছে, চোখে কাজল দিয়েছে। চুলগুলো খোঁপা করে নিয়েছে।

শেষ মুহুর্তে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হলো, বেশ ছিমছাম লাগছে নওরিন৷ এতদিন মনে হতো, চোখে মুখে কালো ছাপ পড়ে গেছে, চাকরি হওয়ার পরে টেনশন কমেছে, রাতে ঘুম হচ্ছে। চেহারায় লাবণ্য ফিরে এসেছে। লাবণ্য মনে হতেই অমিতের কথা মনে হলো।

অমিত আসবে আজ! এয়ারপোর্টে যেতে বলেছিল।
কিন্তু নওরিন না করেছে। কিন্তু আশফাক অপেক্ষা করছে। নওরিনকে যেতে হবে আশফাকের সাথে দেখা করতে।

আশফাক অপেক্ষা করছিল। নওরিনকে দেখে হাসল। নওরিনের মনে হল, আগের দিন আশফাককে ভালো করে দেখা হয় নি। আশফাক দেখতে খারাপ নয়। মোটা ফ্রেমের চশমা আর ইন না করে পরা শার্টে ভীষণ ভালো লাগছে দেখতে।

দুজন কেউই কোনো কথা বলছিল না৷
নিরবতা ভাঙল আশফাক, নওরিন, লাঞ্চের অর্ডারটা করে ফেলি?

নওরিন বলল, ঠিক আছে।

কি খাবেন বলুন?

একটা কিছু হলেই হয়।

আচ্ছা – আশফাক হেসে অর্ডার করে দিলো।

নওরিন, আমার বিষয়ে কিছু জানার আছে?
নওরিন জিজ্ঞেস করল, আপনার কোনো।পছন্দ ছিল? প্রেম?

আশফাক একটু অবাক হয়ে বলল, ছিল। বলার মত নয়, এরকম সবারই থাকে। একটু থেমে বলল, আপনার কোনো পছন্দ আছে, আমাকে জিজ্ঞেস করলেন?

নওরিন বিড়বিড় করে বলল, আছে।

কি বললেন?

নওরিন স্থির হয়ে বললে, না সম্পর্ক নেই আসলে, একজনকে ভালো লাগত।

আশফাক নিশ্চিন্ত হয়ে হাফ ছেড়ে বলল, আচ্ছা। আজ আপনাকে দেখে ভেবেছি আমাদের বিষয়টা অনেকটাই পজেটিভ।

নওরিন বলল, হ্যা। পজেটিভ।

নিজেকে মনে মনে স্বান্তনা দিলো নওরিন, অমিত স্টার৷ ওর সাথে দৈবক্রমে আলাপ হলেও সে কখনো প্রেম বিয়ের মত বিষয়ে নওরিনকে নিয়ে ভাববে না।
নওরিনেরও এই ভাবনা থেকে সরে আসা উচিত।

★★★

এয়ারপোর্টে নেমে অমিত কেন যেন নওরিনকে খুঁজল। মনে হচ্ছিল নওরিন আসবে হয়তোবা। কিন্তু নওরিন আসেনি। অমিতের যুক্তি চিন্তা সব লোপ পেয়ে প্রচন্ড রাগ হতে লাগল। ফোনের এয়ারপ্লেন মোড অফ করা হয় নি, নওরিন তো তাকে খুঁজে পাবে না। দ্রুত অফ করে ফোন করল নওরিনকে।

নওরিনের সামনে লাঞ্চ এসেছে সবে।
নওরিন ফোনটা পেয়ে বিব্রতবোধ করল। কিন্তু ইগনোর করতে পারল না।

নওরিন, তোমাকে আমি এয়ারপোর্টে থাকতে বলেছিলাম না?

হ্যা মানে, ইয়ে মানে…

মানে মানে করছ কেন?

নওরিন বলতে পারল না, যে নওরিন বলেছিল ওর কাজ আছে।

ওহ বুঝতে পেরেছি, গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বসে আছে সামনে। খুব ভালো এনজয় ইওর টাইম।

অমিত ফোন কেটে দিলো।

নওরিনের মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। আর খেতে পারল না।

আশফাক জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে নওরিন? কোনো সমস্যা? খাবার ঠিক আছে?

নওরিন বলল, খাবার ঠিক আছে, শরীরটা হঠাৎ খারাপ লাগছে, কিছু মনে না করলে আমি উঠি?

আমি পৌঁছে দেই?

না ঠিক আছে, আমি যেতে পারব।

শুক্রবার পথঘাট ফাঁকা। এত দ্রুত কি এয়ারপোর্টে পৌছানো যাবে? আর এতক্ষণ কি অমিত বসে থাকবে?
অমিতকে তো ফোনে পাওয়া যায় না।

নওরিন কি একটা ফোন করবে, নাকি চলে যাবে?

ভাবতে ভাবতে অমিত ফোন করল আবার।

কোথায় তুমি?

ধানমন্ডিতে।

কত নম্বর? কোন রেস্টুরেন্ট?

নওরিন নাম বলল।

শোনো, আমি একটা বাড়ির এড্রেস দিচ্ছি। তুমি ওখানে চলে যাও। আমি ফোন করে দিচ্ছি। গিয়ে অপেক্ষা করো, আমি আসছি!

বাড়ি?

কেন ভয় করছে?

নওরিন উত্তর দিলো না।

অমিত বলল, আমার মা আছে, বাবা আছে, ভাই বোন সবাই আছে, কেউ তোমাকে খেয়ে ফেলবে না। তুমি গিয়ে অপেক্ষা করো, আমি চলে আসব উইদিন হাফ এন আওয়ার।

নওরিন হতভম্ব হয়ে ভাবতে লাগল, এসব কি হচ্ছে আর নওরিনই বা কি করছে!

চলবে

শানজানা আলম

“হিজলের ফুল জলে ভাসা ভুল ” সংগ্রহ করতে আপনার এড্রেস আর ফোন নম্বর ইনবক্সে দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here