একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি -১৩
নওরিনের ট্রেনিং শুরু হয়েছে। নতুন চাকরি ভালোই লাগছে। সকালে সেশন শুরু হয়, লাঞ্চ ব্রেক তারপরে আবার সেকেন্ড সেশন।
কিছু হোমটাস্ক থাকে, সেগুলো করতে হয়।
আশফাকের সাথে আর কথা হয় নি। আশফাক ফোন করল বেশ কিছুদিন পরে একদিন সন্ধ্যায়
কেমন আছেন নওরিন?
ভালো, বেশ ভালো, আপনি?
আমি ভালো আছি৷ খুব ব্যস্ত মনে হয়, একবারো ফোন করলেন না?
না তেমন কিছু নয়, ট্রেনিং সেশন চলছে এখন।
আপনার মায়ের সাথে কথা হলো৷ খুব ভালো লাগল। চলুন একদিন লাঞ্চে কোথাও বসি।
নওরিন ইতস্তত করে, না মানে বলছিলাম, ট্রেনিং চলছে এখন আসলে একটু ঝামেলা হয়ে যায় বের হওয়া।
বেশ তো৷ ছুটির দিনে চলুন?
আচ্ছা দেখা যাবে।
নওরিন তাড়াতাড়ি ফোন রাখতে চায়। ফোন রাখার পরে মনে হলো, সে কেন এই রকম করছে, অমিত তো তাকে এমন কিছু বলেনি।
ভাবতে ভাবতে অমিতের পেজে ঢু মারল।
অমিতের পেজে ব্যাংককের বেশ কিছু চিলিং ছবি দেওয়া আছে, সুইমিং পুলে, নায়িকারাও আছে সেখানে৷ বেশ খোলামেলা পোশাকে। এসব দেখে সারাদিন হিরোদের সাধারণ মেয়ে ভালো লাগে না। তাকেও লাগবে না বা লাগে নি।
সিনেমার যে নায়িকা, অদিতি, এর সাথে অমিতের বেশ কিছু ঘনিষ্ট ছবি পোস্ট করা হয়েছে, অমিত অদিতি জনপ্রিয় জুটি।
।নওরিনের মনটা খারাপ হয়ে যায়৷ সেলিব্রিটি কারো পার্টনার হওয়া ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেওয়ার মত, কি দরকার জীবনটাকে এত জটিল করা।
নওরিন আধঘন্টা পরে আশফাককে ফোন করল।
শুক্রবারে বসি কোথাও?
আশফাক সানন্দেই রাজী হয়ে গেল।
অমিত আসলে নিজের মত করে সময়ই পায় নি নওরিনকে ফোন করার। ব্যাংককে রুম শেয়ার করে থাকতে হচ্ছে আরো দুজন সিনিয়র আর্টিস্টের সাথে।
নওরিনের সাথে কথা বলতে হলে, একটু নিরিবিলি স্পেস প্রয়োজন৷
একটু ব্রেক পেয়ে অমিত বের হয়েছে কিছু কেনাকাটা করবে বলে। নিজের পরিবারের জন্য শপিং করার সময় নওরিনের কথা মনে হলো। তাই নওরিনকে ফোন করল।
নওরিন তখনও অমিতের পেজ স্টক করছিল৷
কি খবর? কি করছ?
তেমন কিছু না৷
কেমন কিছু?
আরে তেমন কিছু না।
একটা টেক্সট করতে পারতে?
আপনি তো ব্যস্ত, এজন্য বিরক্ত করিনি!
তুমি বুঝলে কি করে বিরক্ত হবো?
সেটাও একটা কথা, মনে হলো আর কি! কাজ হলো? কবে ফিরবেন?
ভিডিও কল করা যাবে?
হুম, আমি অফ রাখব?
ওকে।
অমিত ভিডিও কলে নওরিনকে মার্কেট, জায়গা দেখিয়ে কথা বলল বেশ কিছুক্ষণ।
ঠিক আছে নওরিন, এখন রাখছি।
কবে ফিরবেন, বললেন না তো?
কেন, আমাকে মিস করছ?
নওরিন বলল, মিস করার কি কথা? মিস করছি না।
কিন্তু আমার মনে হয় মিস করছ।
না৷ এমনিই জিজ্ঞেস করেছি।
শুক্রবারে ফিরব৷
আচ্ছা।
আসবে এয়ারপোর্টে?
না না, আমি আসব না।
অমিত হেসে বলল, তিনটার পরে ল্যান্ড করার কথা। চলে এসো।
শুক্রবারে আমার কাজ আছে।
কি কাজ?
আছে।
মনে হয় আন্দাজ করতে পারছি।
নওরিন উত্তর দিলো না৷
তোমার সেই ব্যাংকারের সাথে দেখা করবে, তাই তো?
নওরিন কিছু বলল না।
ঠিক আছে নওরিন, রাখছি এখন, কেমন?
ওকে। টেক কেয়ার!
বাইই!
অমিত মনে মনে ভাবল, কি করবে অমিত, বিয়ের কথা বলবে নওরিনকে? নাকি যোগাযোগ বন্ধ করে দেবে?
পরক্ষণেই ভাবল, বাঙালি ছেলেমেয়েদের একটা সমস্যা আছে, কোনো ছেলে বা মেয়ের সাথে একটু ঘনিষ্ঠতা হলেই সেটাকে প্রেম ভালোবাসা বা বিয়ের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়। কেন, এর বাইরে কি কোনো সম্পর্ক হতে পারে না?
নওরিন তো বন্ধুও হতে পারে। ওকে নিয়ে কেন অন্য কোনো সম্পর্কেই যেতে হবে।
সমস্যাটা কি আসলে? নওরিন বিয়ে করুন, ভালো থাকুক, অমিতের ক্যারিয়ারের এই পয়েন্টে বিয়ে করাটা ঠিক হবে না৷ আরো দু চার বছর সময় নিতে হবে অমিতকে।
এই মুহুর্ত থেকে নওরিনকে নিয়ে অমিত আর বাড়তি কিছু ভাববে না। নওরিন শুধুই বন্ধু, ইটস ফাইনাল।
ডান?
-ওয়েল ডান অমিত, নিজেকে নিজে স্বান্তনা দিলো অমিত।
চলবে
শানজানা আলম