#অমানিশা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-১৫
তখন শেষভোর। কৃষ্ণবর্ণীয় কাদম্বিনীর রাজ্যের পূর্বকিনার ঘেঁষে মুঠো মুঠো সিঁদুরগুঁড়ো স্ফুলিঙ্গের মতন ছলকে ছলকে পড়ছে। বিচ্ছুরিত অগোধ রক্তিম আলোর বর্ণখেলায় ক্রমশ মেতে উঠছে ঘরের সাদা মুক্ল, ধবল মেঝে। তখন ধীরে ধীরে সকাল হচ্ছে।
মুনতাহা ঘুম। গভীর ঘুম। বিছানার মাঝখানে সোজা হয়ে শুয়ে আছে তার ছোট্ট দেহ। ঘুমন্ত নিরুপমে আচ্ছাদিত মুখশ্রীতে তেরছাভাবে পড়েছে সূর্যের উত্তপ্ত রশ্নি। মাহতাব সাহেব ধীরপায়ে ঘরে ঢুকলেন। প্রথমেই বাতাসের বলে ফাঁক হয়ে যাওয়া পর্দা টেনে আলোর দুয়ারপথ বন্ধ করলেন। চোখের উপর ছায়া পড়লে মুনতাহা সামান্য নড়েচড়ে উঠে। গলার স্বর্ণের চেইনটা বেণিতে পেঁচিয়ে গেছে।
মাহতাব সাহেব মাথার কাছে বসলেন। না ডাকতেই পিটিপিট করে চোখ মেললো মুনতাহা। মিষ্টি একটা হাসিতে মন ভরে গেলো মাহতাব সাহেবের। আদুরে সম্বোধণের “আম্মা” ডাকে মেয়ের হাসি আরো গাঢ় করে মুখ নামিয়ে চুমু খেলেন কপালের ঠি ক মাঝখানটায়। বললেন,”এতো হাল্কা ঘুম তো তুই ঘুমাসনা। বুঝলি কি করে আমি এসেছি? রাতে ঘুম হয়নি?”
মুনতাহা এবারো হাসলো। উঠে বসে বলল,
—“আমি তোমার গন্ধ চিনি আব্বু। তুমি পাশে বসতেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো।”
দরজা খোলা। ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা বাদামী রংয়ের ব্যাগটা দেখা যাচ্ছে। ভেতরে কাপড়চোপড়, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মুনতাহা নিজেই গুছিয়ে দিয়েছে রাতের বেলা। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। হাসিটা মিলিয়ে গেলো। মলিন হলো চোখ। কন্ঠ হলো নিষ্প্রান,”তুমি এখনই চলে যাবে আব্বু? মাত্রতো সকাল হলো। একটু পরে যাও।”
—“বাস তো ছ’টায় মা। টি কিট কেটে ফেলেছিনা? স্ট্যান্ডে পৌছোতে সময় লাগবে তো। তোর ঘুম ভাঙাতে চাইনি। একটু দেখতে এলাম, উঠে গেলি। এখন, উঠেই যখন পরেছিস। দরজা টা আটকে দিয়ে যা। আয়।”
মুনতাহার মুখভঙ্গির উন্নতি হলোনা। মাহতাব সাহেব দাড়ালেন। মুনতাহা আবার একটু আবদার করল,
—“আব্বু তুমি তাড়াতাড়ি এসে পড়ো?”
মাহতাব সাহেব আবার ঝুঁকলেন। মাথার দু’পাশের হাত রেখে আবার চুমু খেলেন। মাথায়, কপালে পরপর কয়েকটা চুমু দিয়ে বললেন,
—“আচ্ছা ঠি কাছে, এখন কাঁদবিনা মা। যাওয়ার পরেও কাঁদবিনা।”
মুনতাহা মানলো। কাঁদলোনা। বাবার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলাই যেনো তার একমাত্র কাজ। নেমে গেলো বিছানা থেকে। ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখা ব্যাগটা নামালো। চেইন খুলতে খুলতে বলল,”একটু দাড়াও আব্বু, কিছু দিতে ভুলে গিয়েছি নাকি দেখে নেই।”
তখন সূর্যোদয়। পর্দা সরে গেছে আবার। মাহতাব সাহেব সেখানে দাড়িয়েই একবার জানলার বাইরে তাকালেন। আকাশের রক্ত- কৃষ্ণের মিশ্রণে চোখ ধাঁধালো। মূহুর্তেই।
কালো? সে তো শোকের প্রতীক! আর, লাল? লাল তো বিপদ! ঘোর শণি!
এ যেনো এক আশ্চর্য কালোরক্তের ভোর।
–
দুপুরের দিকে কলিংবেল বাজলো। মুনতাহা দরজা খুলতেই আরশাদকে দেখা গেলো দাড়িয়ে থাকতে। পরণে শুধু ট্রাউজার। খালি গা। গলায় তোয়ালে। ভেজা চুলের পানি কাঁধে পড়ছে। কাঁধ থেকে বাহু, বুক, সবখানে।
মুনতাহা কপাল কুঁচকে চোখ নামালো। ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল,”আপনি বাসায় থাকেন থাকেন। বাহিরে বের হলেও এমন উদোম গায়ে ঘুরেন কেনো?”
আরশাদ সরু চোখে তাকালো। ভ্রু উচিয়ে বলল,
—“গোসল করলাম মাত্র। ভেজা গায়েই জামা পড়বো?”
—“তো গা মুছতে পারেননা? তোয়ালে গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন কেনো?”মুনতাহার পাল্টা প্রশ্ন। কন্ঠে কিন্চিৎ তেজ।
আরশাদ যেনো আকাশ থেকে পড়ল। বিস্ময় নিয়ে বলল,”আপনি তো দেখি রাগও করেন মুনতাহা।”
মুনতাহা উওর দিলোনা। উপরতলা থেকে কে যেনো নামছে। সিঁড়ির ভাঙার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মুনতাহা সরে দাড়ালো চটপট। ঢোকার জায়গা দিয়ে বলল,”ভেতরে আসেন, মানুষ দেখবে।”
আরশাদ ঢুকলোনা। মনে পড়ল, সেই সন্ধ্যা। সে ফাইল দিতে এসেছিলো, আর মেয়েটা ফাইল নিয়েই মুখের উপর দরজা আটকে দিয়েছিলো। ধুম!
উপরতলা থেকে দুটো মহিলা নেমে এলো। ভাড়াটিয়া। একবার তাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে দ্রুতবেগে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলো। মুনতাহা স্পষ্ট দেখলো তাদের চোখে পরিহাস। আরশাদ আড়চোখে দেখলো। মহিলাদুটো নিচে নেমে যেতেই সেদিনকার মতোই দরজায় ঠেস দিয়ে বলল,
—“আপনার মনে আছে মুনতাহা? আপনি একদিন আমার মুখের উপর দরজা আটকে দিয়েছিলেন?”
মুনতাহা বিশ্রিভাবে মুখ কুঁচকালো। বলল,
—“আপনি ঢুকবেন? কি ভাবলো উনারা। ছিহ!”
আরশাদ ঘাড় বাঁকালো,”কি ভাববে? বাসায় প্রত্যেক তলায় তলায় গুড়ো গুড়ো বাচ্চারা পর্যন্ত দু’তিনটা করে বিয়ের মিষ্টি খেয়েছে। সবাই জানে আমরা বিবাহিত। এত ভাবাভাবির তো কিছু দেখছিনা।”
—“তবুও….ধ্যাত! আপনি আসেননা। বাইরে দাড়িয়ে থাকবেন নাকি?”
আরশাদ ঢুকতে ঢুকতে বলল,
—“আপনি আমাকে কি বলেছিলেন প্রথমদিন মনে আছে?”আব্বু বাসায় নেই। পরে আসেন।” আজকেও তো আব্বু বাসায় নেই। আর আপনি আমাকে ঢোকার জন্য জোর করছেন। সময় কথা বলে। দেখেছেন?
ইশ! আপনি এতো বদলে গেলেন মুনতাহা।”শেষের কথাটায় ঠাট্টার সুর। মুনতাহা পূর্বের স্বর টেনে বলল,
—“আমি মোটেও জোর করিনি আপনাকে।”
—“করেছেন।”
মুনতাহা দরজা আটকাচ্ছে। আরশাদ ঘরের দিকে তাকালো। পড়ার টেবিলে খাতাপত্র খোলা। বলল,”পড়াশোনা করছিলেন নাকি?”
উওর এলো,”হু।”
ঘন্টাখানেকের মধ্য বইপত্র, জামাকাপড় সমেত মুনতাহাকে নিজের ঘরে নিয়ে এলো আরশাদ। বলে দিলো ও বাসায় যেতে না। এখানেই থাকতে। মুনতাহা দিরুক্তি করেনি।
–
মুনতাহা খুন্তি ধরতেই আনতারা না না করে উঠলেন,”এ্যাই না, তুমি পারবানা আম্মু। আমি করছি। তুমি ঘরে যাও।”
মুনতাহা বোকা বোকা চোখে তাকালো। একটু বুঝ হবার পর থেকেই রান্নাঘরের সাথে বিশেষ সখ্যতা তার। একটু আধটু রান্না শেখার পর থেকে আর বাসায় কোনো খালা আসতে মানা করে দিয়েছিলো সে। খালার রান্নার থেকে নিজের রান্নাই ভালো লাগে। কতশত হাত পুড়েছে। আঙুল কেটেছে। বাবা ধমকে ধমকে বলেছে রান্নাঘরে যেতে না তবু সে গিয়েছে।
আনতারা খুন্তি নিয়ে নিজেই পেঁয়াজ ভাজছেন। মুনতাহা মিনমিন করে বলল,
—“আমি পারি মা।”
—“না, না, তেল ছিঁটবে। ঘরে যাও। ঘুমাও গিয়ে একটু। আরশাদ চলে আসবে একটু পর। একা একা লাগছে?”
মুনতাহা হকচকালো। দৃষ্টি বাঁচিয়ে চোরাকন্ঠে বলল,”নাহ্, না তো।”
রান্নাঘরের ভ্যাপসা গরমে ছাইরঙা শাড়ি পরিহিত ঘর্মাক্ত রমণীকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য যেনো বষীভূত হয়ে গেলো আরশাদ। পুরুষচোখের লাজহীন মনি যেয়ে সরাসরি আটকালো লালরঙা ভিজে ওঠা ব্লাউজে, কোমড়ের পিছের অনাবৃত অংশে, কাঁধে আচঁল উঠানো উন্মুক্ত উদরে, পিঠভর্তি ঘামের নহরে।
আরশাদ চোখ নামালো। তার বউটা সুন্দর মাশআল্লাহ।
এমন না মুনতাহা শাড়ি পরেনা। সে প্রায় প্রায়ই শাড়ি পরে থাকে। বিছনাজুড়ে আচঁল বিছিয়ে ঘুমিয়ে থাকে। কখনো কখনো ঘুমের ঘোরে আচঁল খসে পরলেও আরশাদ তুলে দেয়না। ঘুম ভাঙলে নিয়ম করে লজ্জা পায় মেয়েটা। আরশাদ তখন অনিচ্ছায় হলেও কাজে ডুবে থাকে। সেই লজ্জা পাওয়াটা তার দেখা হয়না। কিন্তু সে জানে মেয়েটা লজ্জা পায়। খুব লজ্জা পায়। এতো লজ্জা, লজ্জাবতী গাছও পায়না।
মনে মনে শাড়ি পোশাকটাকে সবচাইতে অশালীন পোশাকের তকমা লাগিয়ে এগুলো আরশাদ। গলা বাড়িয়ে ডাকে,
—“মুনতাহা? একা একা কি করছেন? আম্মা কোথায়?”
মুনতাহা তড়িঘড়ি করে আচঁল নামায় কাঁধ থেকে। উল্টোদিকে ফিরে ছিলো বলে বুঝতেই পারেনি পেছনে কেও আছে। আরশাদ সুক্ষ্ন চোখের দেখে তার ঠোঁটকাঁপানো লজ্জা। মুনতাহা আমতাআমতা করে বলে,”একা একা না, মা ছিলো সাথেই। এইযে, একটু আগে ঘরে গেছে।”
—“কি করছেন?”
মুনতাহা বঁটির দিকে তাকায় একবার। মুখ তুলে উওর দেয়,”শসা কাটছিলাম।”
—“কাটা হলে ঘরে আসেন।” সংক্ষিপ্ত কথাটা বলে একমূহুর্ত দাড়ায় না আরশাদ। ঘরে ঢোকার আগে একবার ড্রইংরুমের সোফায় চোখ যায়। সাবিনা বেগম বসে আছেন। মুখ থমথমে। আরশাদের দিকেই নিবন্ধ চোখজোড়া। আরশাদ খেয়াল করেনি। দাদু এখানেই ছিলো এতক্ষণ।
—“কি হয়েছে দাদু? কিছু বলবে?”
সাবিনা বেগম হতাশ কন্ঠে বললেন,”এতটুকুন বউটারে কে আপনে কইরা কয়?”
আরশাদ হাসে। কয়েককদম এগিয়ে কাছাকাছি যেয়ে কন্ঠ নামিয়ে বলে,”চাঁদ বলে কথা দাদু, সম্মান তো করতেই হবে।”
–
বিছানায় হেলান দিয়ে হাঁটু ভেঙে বসা মুনতাহা। কোলে বই। খুব সম্ভবত কোনো ইংলিশ নোভেল পড়ছে। হাঁটুতে ঠেস দিয়ে পেটের উপর দাড় করানো বইটা, বিধায় নামটা দেখা যাচ্ছে না।
চুলগুলো এখনো খোলা। বাঁধার উদ্দেশ্য নেই বোধহয়। ঘড়িতে খুব রাত। চোখে ঘুম নেই মুনতাহার। আরশাদ বারান্দা থেকে এলো। দরজা বন্ধ ছিলো। সিগারেটের ধোঁয়ায় কাঁশতে থাকে মুনতাহা।
ঘরে টেবিল ল্যাম্প জ্বালানো। হলদে আলোয় ছাইরঙা চাঁদ। প্রিয় মানুষকে নাকি সবাই নীলে দেখতে পছন্দ করে। কিন্তু তার চাঁদটাকে তো ছাইরঙেই মানিয়েছে। আকাশের চাঁদটার রং রুপালি বলেই হয়তো।
ওয়াশরুমে যেয়ে মুখ ধুয়ে এলো আরশাদ। বেরিয়ে দেখলো মুনতাহা তখনও বইয়ের কালো অক্ষরে চোখ বুলাচ্ছে। তার দিকে তাকানোর সময় কই?
আরশাদ গা থেকে শার্টটা ছাড়িয়ে বালিশের পাশে রাখলো। মুনতাহা আড়চোখে তাকালো একবার। আরশাদ সটান হয়ে শুয়ে পড়লো পাশে। মিনিটের ব্যাবধানে উঠে ল্যাম্পের সুইচ চাপতে চাপতে বললো,
—“বই রাখুন, সকালে পড়েন। বাতি নিভিয়ে দিলাম।”
বাতি নিভে গেলো। মুনতাহা অন্ধকারে থম ধরে বসে রইলো কিছুক্ষণ। আরশাদ কপালে হাত ঠেকিয়ে চোখ বুজেছে। মুনতাহা বইটা বন্ধ করে পাশে ঝুঁকে পাশের টেবিলের ড্রয়ার খুললো। ড্রয়ের আটকে ঘুরবে তার আগেই বুঝলো একটা দীর্ঘদেহী উষ্ণতায় আবৃত হয়েছে সে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার ঠোঁটের উপর হাত রেখে হাতের পিঠেই চুমু খেলো আরশাদ। মুনতাহা আচঁল খামছে ধরলো। শরীরের পশম শিরশিরিয়ে উঠলো সেই অস্পর্শ চুমুতেই।
–
গভীর রাত। আরশাদ বুকে ভর দিয়ে ঘুমাচ্ছে। শ্রান্ত- অবশান্ত দেহ। আচমকাই ঘুম ভাঙলো। চকিতে চোখ মেললো সে। মুখে হতভম্বতা, ভয়, আশঙ্কা। ঘাড় গলা ভিজে উঠেছে।
নাহ্, এইতো…মুনতাহা তো ঘুমাচ্ছে পাশেই। আরশাদ এলোমেলো চেয়ে রইলো, উঠে বসলো। টেবিল থেকে গ্লাসভর্তি পানি নিয়ে ঢকঢক করে গিলে নিলো পুরোটা। মুনতাহা গভীর ঘুম।
আরশাদ বুকের চাদরটা ঠিক করে দিলো, বারদুয়েক মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। মেয়েটা ক্লান্ত। শুয়ে পড়লো আরশাদ।
ঘরটা খুব অন্ধকার। আলো নেই। কিচ্ছু নেই। নৈশব্দ্যর মতো নিশ্বাস বাড়ি খাচ্ছে ইটের দেয়ালে। মুনতাহা ডাকলো,”আব্বু?” সাড়া এলোনা। মুনতাহা আবার ডাকলো,”আব্বু কই তুমি?” এবারো সাড়া নেই। মুনতাহা ভয় পেলো। আঁধার হাতরিয়ে হাতরিয়ে চিৎকার করে উঠল,”আব্বু?”
—“আলো জ্বালান। আলো জ্বালান।” রুদ্ধ কন্ঠ।
মুনতাহা ধরফরিয়ে উঠে বসেছে। আরশাদ মাত্র দু’চোখ এক করেছিলো। মুনতাহার চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলো আবার। মুনতাহা উদ্ভ্রান্তের মতো বাহু ঝাঁকিয়ে বলল,”আলো নেই কেনো? আলো জ্বালাননা।”
আরশাদ উঠে বসলো, ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিলো। হলদে আলোয় ভরে উঠলো ঘর। মেয়েটা কাঁপছে রীতিমত। খিঁচুনি রোগীর মতো হাত- পা কাঁপছে। একপলক আরশাদের দিকে চেয়ে বুকের চাদরটা খামছে ধরলো সে। থমকানো কন্ঠে বলল,”আমার ফোন কোথায়? আমার ফোন..আব্বু।”
আরশাদ জ্ঞানশূন্যর মতো চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নরম গলায় বলল,”খারাপ সপ্ন দেখেছেন? এইতো আমি, কিচ্ছু হয়নি।”
মুনতাহা অসহায়ের মতো চাইলো। এদিক ওদিক দেখে বুকের পাশ ঘেঁষে বলল,
—“আব্বু… আমি আব্বুকে…আমি ডাকলাম। আব্বু শুনলোনা।….আমার ফোনটা দিননা।”
আরশাদ গলা পরিষ্কার করল। একহাতে জড়িয়ে ধরলো মুনতাহাকে। ঘড়ি দেখে বলল,” ভোর চারটা বাজে মুনতাহা। এখন ফোন করবেন? আংকেলের সাথে তো রাতেই কথা হলো।”
—“আমি কথা বলবো।”মুনতাহা কেঁদে উঠলো।
আরশাদ মানা করলোনা আর। বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে তক্ষুনি ফোন দিলো মুনতাহা। দুবার রিং হয়ে হয়ে কেটে গেলো। মুনতাহা ফোঁপাচ্ছে তখন। আরশাদ নিজেও খানিকটা শঙ্কিত।
তৃতীয়বারে ফোন ধরলেন মাহতাব সাহেব। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন,”হ্যাঁ, আম্মা? কি হয়েছে, ঠিক আছিস?”
মুনতাহা কেঁদে কেঁদেই ডাকলো,”আব্বু, আব্বু তুমি…”কথা বলতে পারলোনা।
মাহতাব সাহেব চিন্তিত কন্ঠে বললেন,”কাঁদছিস কেনো? দেখি, আরশাদ কে দে। কি হয়েছে?”
ফোন কেটে বাতি নিভিয়ে দিলো আরশাদ। মুনতাহাকে শুইয়ে দিয়ে বলল,
—“ঘুমান, আংকেল ঠিক আছে। বেশি চিন্তা করছেন, সেজন্যই সপ্নে উল্টোপাল্টা দেখছেন মুনতাহা। নিশ্চিন্তে ঘুমান তো। আমি আছি।”
মুনতাহা ঘুমিয়ে পড়লো কিছুক্ষণের মধ্যই। বাইরে তখন ভোর হয়ে গেছে।
মুনতাহা ঘুমালেও আরশাদ ঘুমালোনা। বাকিটা রাত স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়েই কাটলো তার। কানে অবিশ্রাম বেজে চলল, স্বপ্নে শোনা সেই ডাহুক পাখির ডাক। বিরহের করুণ ডাক। অবচেতন মস্তিষ্ক খুঁজে বেড়ালো সপ্নের ব্যাখ্যা।
আরশাদ চোখের পাতা এক করতে পারলোনা। কিছুতেই পারলোনা।
~চলবে~