একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি -৯
নওরিনকে নামতে দেখে ওর কাজিন এগিয়ে এসে ওর ব্যাগটা নিলো।
আপু, এত দেরী করলে কেন। গেস্ট সবাই চলে এসেছে।
একটা ইন্টারভিউ ছিল৷ ওইটা শেষ করে এলাম।
আচ্ছা, পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে একটু গুছিয়ে তারপর সামনে যেতে বলেছে মা।
নওরিনের বিষয়টা পছন্দ হলো না। সে গুছিয়ে গেলে কি এমন সুন্দর লাগবে যে পাত্রপক্ষের পছন্দ হবে।
সে তো আহামরি সুন্দরী না। কিন্তু মামীর কথা না শুনলে বেয়াদবী করা হবে।
নওরিনের মামা একতলা বাড়ি করেছেন৷ সামনে গ্রীল দেওয়া বারান্দায় বেতের সোফা রাখা। আশফাক বের হয়ে ফোনে কথা বলছিল। সে দেখল, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে নওরিন পেছনে চলে যাচ্ছে। আশফাকের জন্যই মেয়ে দেখতে আসা। প্রথম দেখায় মেয়েটিকে বেশ ভালো লাগল।
অমিতই অমিত রাজ, বিষয়টা হজম করতে নওরিনের একটু কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এই মুহুর্তে কথা বলা যাবে না অমিতের সাথে৷ নওরিন বেশ বুদ্ধিমতী, তাই দুইয়ে দুইয়ে চার করতে তার সময় লাগে নি৷ অমিতের আচরন৷ মাথায় ক্যাপ দিয়ে আসা, সবই বুঝতে পারছে এখন। আর প্রভাবশালী টেলিফোন কলটা অমিতের কারসাজি হতেই পারে।
নওরিন অন্যমনস্ক হয়ে যায়।
সরাসরি সামনে আসতে হলো না নওরিনকে। খাবার সার্ভ করার সময় তাকে মামী ডেকে নিলেন। ইনফরমাল বা অনানুষ্ঠানিক বিষয়টা নওরিনের পছন্দ হলো।
খাবার টেবিলেই আশফাকের সাথে আলাপ হলো, আশফাক একটা বেসরকারি ব্যাংকে আছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে।
নওরিন চাকরির চেষ্টা করছে শুনে বেশ এপ্রিসিয়েট করল আশফাক।
খাওয়া শেষে নওরিনকে আশফাকের সাথে কথা বলতে বারান্দায় পাঠানো হলো।
আশফাক অপেক্ষা করছিল, নওরিন কফি নিয়ে এলো।
আপনার কফি।
কেমন আছেন?
জি ভালো।
আপনাকে অন্যমনস্ক লাগছে।
একটু টায়ার্ড আজ, একটা ভাইভা এটেন্ড করে এসেছি।
মামা জরুরি খবর না দিলে আজ বের হওয়ার মত শক্তি ছিল না৷
আচ্ছা। আপনার কষ্ট হলো!
তা একটু!
নওরিন, আমি সোজাসাপটা কথা পছন্দ করি। আমাদের দুজনের বিয়ের একটা কথা হচ্ছে। একেবারেই পরিবারের পছন্দে। আপনাকে আমার এটুকু সময়ে ভালো লেগেছে। আপনার মত জানতে চাই।
নওরিনের মনে হলো, অমিতের কিছু বলার আছে, কথাটা ওর শোনা উচিৎ। একই সাথে মনে হলো, এসব ভুলভাল ভাবছে নওরিন। অমিতের আবার কি বলার থাকবে। হয়তো পরিচয় পাবলিকলি দিতে পছন্দ করে না বলে ওর সাথে লুকিয়েছে।কোনো ক্ষতি তো করে নি!
নওরিন অন্যমনস্ক দেখে আশফাক বলল, আপনি সময় নিয়ে আমাকে জানাবেন। দ্বিধা করবেন না। রাতারাতি কাউকে পছন্দ হবারও কথা না।
আপনাকে ধন্যবাদ আশফাক, আমি আপনাকে জানাব। আমি আসলে একটু সেটল না হয়ে বিয়ে করতে চাইছিলাম না। কারো ঘাড়ে চড়ে বসা আমার খুবই অপছন্দ।
ঠিক আছে নওরিন, আপনি চাইলে আপনার সাথে কথা হবে আবারও। আপনি আমার ফোন নম্বর রাখুন।
নওরিন ফোনটা ব্যাগেই রেখেছে, এসে থেকে আর ধরা হয় নি। তাই নিজের নম্বরটা আশফাককে দিয়ে দিলো।
★★★
অমিত স্পটে পৌঁছে মেকাপ নিয়ে কাজে ডুবে গেল। কাজ শেষ হলো রাত তিনটায়।
রেস্টরুমে শুয়ে ফোন হাতে নিয়ে অবাক হলো, নওরিন একবারো ফোন করে নি! অন্তত একবার তো ফোন করতে পারত!
এত রাতে আর ওকে ফোন করা সমীচীন হবে না। কাল সকালে ফোন করে ওকে নিয়েই ঢাকা ফেরা যাবে৷ যদি সে ফিরতে চায়।
অমিতের জীবনসঙ্গী হিসেবে মিডিয়ার কোনো আর্টিস্ট পছন্দ নয়। বউ হবে একদম ব্যক্তিগত, ঘরোয়া! দিনশেষে ঘরে থাকবে যত্ন আর ভালোবাসা। জব করলে করতে পারে কিন্তু মিডিয়াঘেষা নয় একদম!
ব্যক্তিজীবন নিয়ে কখনো স্পটলাইটে আসতে চায় না অমিত, তবে এটাই এখন সব চাইতে সহজ উপায়, জীবন বেচে ভাইরাল হওয়া!
অমিত নওরিনের মত কাউকে চায় নিজের পাশে।
চলবে
শানজানা আলম