একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি -২
অমিত ধানমন্ডিতে শ্যুটিং শেষ করে পূবাইল চলে গেল। সেখানে শ্যুটিং শেষ করতে করতে বেশ রাত হয়ে গেল। ফেরার পথে মাথায় মধ্যে নওরিন এসে ভর করল। কেমন হলো ওর পরীক্ষা, কিভাবে জানা যাবে! আজ তো পরীক্ষা ছিল, কাল নিশ্চয়ই তাকে ধানমন্ডিতে পাওয়া যাবে না। তাহলে, কোথায় খুঁজবে নওরিনকে!
খুবই ভুল হয়েছে, ওর ফোন নম্বরটা নেওয়া দরকার ছিল।
রিয়াজুল-
জি স্যার?
ধানমন্ডিতে একটা অফিস আছে, সেভ দ্যা ন্যাচার। ওখানে আজ একটা পরীক্ষা হয়েছে, একটা মেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, নাম নওরিন। আমার ওই মেয়েটার ইনফরমেশন দরকার৷ ইনফরমেশন বলতে তার ফোন নম্বর হলেই হবে।আর কিছু জানতে হবে না।
ওকে স্যার। কাল অফিস আওয়ারে আমি চেষ্টা করব।
চেষ্টা বলতে কোনো কথা নেই। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, এখানে সব কিছুই করা সম্ভব। তুমি আমার জন্য কাজটা করবে অবশ্যই।
জোর দিয়ে বললেও ভরসা পেলো না অমিত। খুবই ক্ষীণ সম্ভবনা নওরিনকে খুজে পাওয়ার।
কালকে কি কি এপয়েনমেন্ট আছে?
স্যার, কালকে এফডিসিতে সকাল দশটায় কল টাইম। ডাবিং আছে একটা। রাত্রে চ্যানেল সেভেনে একটা টক শো আছে। লাইভ। ওরা তো অনেক প্রচার করেছে স্যার, অনেক দর্শক থাকে এই শো তে।
আচ্ছা। আমি সকালে এফডিসিতে চলে যাব। তুমি তথ্য জোগাড় করে আমার সাথে দেখা করবে। ওকে?
ওকে স্যার।
অমিতের ঘুম আসছে, ঘুমের মাঝে সে স্বপ্ন দেখল, সে অনেক দৌড়াচ্ছে।
নওরিন একটা লাল শাড়ি পরে তার সাথে দৌড়াচ্ছে।
স্বপ্ন বদল হলো নওরিন এসে ডাকছে, এই যে আপনার তো শ্যুটিং আছে, উঠুন!
ঘুম ভেঙে গেল। নওরিন না, রিয়াজুল ডাকছে, বাসা চলে এসেছে।
★★★
নওরিন থাকে একটা ফ্ল্যাটে, সেখানে এক আপা কয়েকটা মেয়েকে ভাড়া দিয়েছে সিট করে।
হোস্টেলের মত, তবে হোস্টেল না। মেস বলা যায়৷
বর্তমানে তার অবস্থা বেশ খারাপ। মাস্টার্স শেষ হয়েছে গতবছর। এখন অবধি চাকরি বাকরি কিছু জোগাড় হয় নি। দুটো টিউশনি করে আর বাসা থেকে পাঁচ হাজার টাকা আনে। বাসা ভাড়া, খাওয়ার টাকা দিয়ে আর কোনো টাকা থাকে না হাতে। চাকরির এপ্লিকেশন করতে করতে হাত ফাঁকাই থাকে।
সহজ সমাধান হিসেবে আব্বা বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছেন। সেটা অবশ্য আরো চার বছর আগে থেকে। নওরিন নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করবে না।
তাই বিয়ে হয় নি। কিন্তু বিয়ের বাজারে মাস্টার্স করা মেয়ের থেকে অনার্স পড়া বা কলেজে পড়া মেয়েরা ভালো পজিশনে থাকে। যত ভালো ভালো পাত্র মানে ব্যাংকার কিংবা সরকারি চাকুরে, সবাই কমবয়েসী বউ খোঁজে নয়তো নিজের মত সরকারি চাকুরে মেয়ে খোজে। কোথাও চালের ব্যবসায়ী কুদ্দুস কিংবা বয়স হয়ে যাওয়া মতিন, বা ডিভোর্সি আক্কাস এরকম প্রপোজাল আসে, শুনলেও নিজেকে অনেক ছোটো মনে হয়।
ভালো বিষয় হচ্ছে, তার পরীক্ষাটা ভালো হয়েছে। এখানে বেতন ত্রিশ হাজার টাকা শুরুতেই। মাঠে ঘাটে কাজ আছে, সেটা কোনো সমস্যা না। চাকরি মানেই নিজের টাকা, নিজের টাকা মানেই নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত!
রাতে খাবার মেনু হচ্ছে বেগুন ভাজি আর ডাল।
বেগুন ভাজি মানে গোল গোল চাক বেগুন না। মনে হয় ভ্যানে শেষ হয়ে যাওয়া সবজি গুলো সস্তায় পেয়ে জুবেদা আপা কিনে এনেছে, সেটায় তেল কম দিয়ে ভেজে ফেলেছে। পরিমানে একটা চায়ের কাপের পিরিচে যতটুকু ধরে তার হাফ দিয়েছে। ডালের কোনো চিহ্ন বাটিতে দেখা যাচ্ছে না। হলদে হয়ে যাওয়া পানিটা ডাল বলে চালানো হচ্ছে। একটা ডিম ভাজলে ভালো হতো।
কাঁচা মরিচ ডলে কয়েক লকমা ভাত গালে পুড়ে দিয়ে নওরিন নিজের রুমে গিয়ে বসল। রুম বলতে একটা ছোটো চৌকি আর একটা টেবিল। এক রুমে তিন জন। দম ফেলার জায়গা নেই। বারান্দা পাশে কিন্তু বারান্দা ভরা সবার কাপড় নেড়ে দেওয়া।
দুপুরে দিয়ে দেওয়া খাবারটার জন্য মন কেমন করছে। দুপুরের কথা মনে হতেই নওরিনের অমিতকে মনে পড়ল। লোকটা বেশ আলাপি ছিল, অভদ্র নয়। কার সাথে যেন খুব মিল আছে, নওরিন মনে করতে পারল না।
চলবে
শানজানা আলম
রিচ দেখে কান্না পাচ্ছে। কি দুরবস্থা!