“স্যার, নেক্সট সিন ঘন্টাখানেক দেরী হবে, খুবই সরি স্যার, রাবেয়া আপা আসতে পারেন নি। ওনার শরীরটা ভালো না” – ডিরেক্টরের সহকারী জুনায়ের খুবই নম্রভাবে অমিতকে পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করল।
অমিত একটু বিরক্ত। এই মুভির শিডিউল সে অনেক কষ্ট করে বের করেছে, শুধুমাত্র এনায়েত ভাইয়ের জন্য। এনায়েত ভাইয়ের হাত ধরে সে বাংলা সিনেমার রূপালি দুনিয়ায় পা রেখেছে। এখন টপ হিরোদের মধ্যে একজন হলেও অতীত ভুলে যায় নি অমিত।
অমিত রাজ ঢাকাই চলচ্চিত্রের উদীয়মান তারকা। লাস্ট তিনটা সিনেমাই সুপার ডুপার হিট।
এখন তার শিডিউল বিক্রি হচ্ছে অর্ধকোটি টাকায়। পরিশ্রমও হচ্ছে। কোনো সময় নেই নিজের জন্য, সকাল থেকে গভীর রাত অবধি খাটনি। টাকা যেমন আসছে, কষ্টও হচ্ছে। তিনটা মুভির এডভান্স দিয়ে ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট নিয়েছে। টয়োটা হেরিয়ার গিফট পেয়েছে এক প্রোডিসারের কাছ থেকে।
অমিত উঠল। এনায়েত ভাই চোখ বন্ধ করে বসে আছেন।
বস- অমিত ডাকল
এনায়েত হোসেন চোখ মেলল।
ওহ অমিত, কি খবর, বলো?
বস, পরের সিন লেট হবে? আমার তো সন্ধ্যায় পূবাইলে শ্যুট আছে। জ্যাম পড়ে গেলে কেমনে যাব?
আজকে প্যাক আপ করলে ঝামেলা হবে?
এনায়েত হোসেন বললেন, সময় লাগবে না। রাবেয়া আপার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না৷ এতদিনের সম্পর্ক, বাদ দিতেও পারছি না। একটু কনসিডার করো, দেখো।
কতক্ষণ লাগবে বস?
ওনাকে আনতে গাড়ি পাঠিয়েছি, আসতে যতক্ষণ লাগে।
মগবাজার থাকেন না উনি?
হু।
মগবাজার থেকে ধানমণ্ডি, দুপুর বেলা, সময় লাগবেই।
অমিত বলল, আমি একটু হেঁটে আসি লেকের পাড় থেকে তাহলে। এর মধ্যে এলে ফোন দিয়েন।
তুমি এত পপুলার ফেস এখন, পাবলিকলি হাটবা?
ভাই, মেকাপ আছে, চিনতে পারবে না পাবলিক। ক্যাপ সানগ্লাস তো আছেই।
লাঞ্চ করছ? কি খাইবা বলো৷ আনিয়ে দেই?
লাঞ্চ নিয়ে আসছি বস, কড়া ডায়েট৷ ঘাস লতাপাতা খাই।
তুমি তো মিয়া নায়িকাদের মত মেইনটেইন করতেছ!
এনায়েত ভাই আর অমিত দুজনেই হাসল একসাথে।
অমিতের সেক্রেটারি রিয়াজুল এগিয়ে এসেছে, স্যার, গাড়ি বের করতে বলব?
অমিত বলল, না, পরে। সিনটা হোক। আমি হেঁটে আসি।
আমি আসব?
না। দরকার নেই।
অমিত বের হয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা যাক। নিজের জন্য কোনো সময় পাওয়া যায় না আজকাল।
লেকের পাড়ে হাঁটতে হাঁটতে অমিত বেশ কিছুটা পথ সামনে চলে এলো।
একটা ভ্যানে করে কোনো খাবার বিক্রি হচ্ছে। আশেপাশে অনেকেই ওয়ানটাইম প্লেটে নিয়ে খাচ্ছে।
একটা মেয়ে হাতে একটা শিট নিয়ে আর একপ্লেট খাবার নিয়ে একপাশে সরে বসেছে।
একটা কফিকালারের সুতি সালোয়ার কামিজ পরা, চুলগুলো পেছনে পাঞ্চ করা। চোখে চশমা আছে।
অমিত মেয়েটা যে বেঞ্চে বসেছে, সেখানেই বসল।
মেয়েটা তাকে খেয়াল করে নি। বোধহয় কোনো পরীক্ষা টরীক্ষা আছে৷
মেয়েটা একমনে শিটটায় চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। খাবারে তেমন নজর নেই।
অমিত জিজ্ঞেস করল, খিচুড়িটা কেমন?
মেয়েটা চোখ তুলে বলল, ওহ৷ মুখে দিতে ভুলে গেলাম৷ দেখছেন, একটা পরীক্ষা আছে তিনটা থেকে।
এখন বাজে দুইটা, কোথায় পরীক্ষা?
এই তো, কাছেই অফিস।
চাকরির পরীক্ষা?
হ্যা। এনজিও।
আচ্ছা।
মেয়েটাই বলল৷ আমি নওরিন, আপনি?
আমি?
অমিত ভাবল, নাম কি বলবে, পরক্ষনেই বলল, আমি অমিত।
মেয়েটা ভুরু নাচিয়ে বলল, অমিত রয়, শেষের কবিতার অমিত নাকি?
অমিত বলল, হলে মন্দ হতো না, কিন্তু আমি ব্যরিস্টারও নই, আর আমার লাবন্য কেতকী কেউ নেই।
নওরিন হেসে ফেলল। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগল। খিচুড়ি খেতে পারেন। স্বাদ মোটামুটি।
ঠিক আছে, ধন্যবাদ। জায়গাটা রাখুন, কেউ এসে দখল না করে। আমি নিয়ে আসছি।
অমিত উঠে নিয়ে এলো,খিচুড়ি একটা ভর্তা আর ডিম।
ঠিকই বলেছেন, চলে মন্দ না।
নওরিন বলল, অমিত আপনি কি করেন?
খ্যাপ দেই!
মানে?
ওই আর কি, পাকাপাকি কিছু না, কাজ পেলে করি আর কি।
আচ্ছা। আমি উঠব, আলাপ হয়ে ভালো লাগল।
নওরিন উঠতে উঠতে বলল।
একটা বাচ্চা এসেছে, নওরিন খাবারটা দিয়ে দিলো তাকে। অমিত বলল, আমিও উঠব।
সে কী, আপনি তো খেলেনই না।
না ঠিক আছে। কোথায় যাবেন, চলুন আমিও এগুবো।
-এই তো, সেভ দ্য ন্যাচার, এখানেই অফিস।
আচ্ছা আচ্ছা।
নওরিন আর অমিত লেকপাড় থেকে রাস্তায় উঠল। বিদায় নিয়ে দুজনে দুই দিকে চলে গেল।
নওরিন চলে যাওয়ার পরে অমিতের মনে হলো, মেয়েটার ফোন নম্বরটা রাখলে মন্দ হতো না। আজকাল সবার সাথে গল্প করতে ভালো লাগে না। মেয়েটার সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগছিল।
– একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি-১
শানজানা আলম
ধারাবাহিক গুলো আসবে, এটা ছোটো একটা গল্প, ৫/৬ পর্বের।