#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_২৪
🍁
পরপর কে/টে গেছে এক সপ্তাহ। রাইফ এই ক দিন মীরার সাথে ফোনে যোগাযোগ করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। মীরার মুখ থেকে হু হা ব্যাতীত কিছুই বের করতে পারে নি সে। দেখা করতে চাইলেও মীরা নাকচ করেছে ইনিয়ে বিনিয়ে।
অবশেষে ধৈর্য হারা হলো রাইফ, এভাবে মীরাকে না দেখে থাকতে পারছে না মোটেও। মেয়েটা যে কেনো বোঝে না ওর অবস্থাটা? একটু দেখতেই তো চায় শুধু, কাছে তো এখনি টেনে নিচ্ছে না। এতো সংকোচের কি আছে? আজব!
রাইফ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই রাজিয়া বেগম কে জানিয়েছে আজ অফিস যাবে না। মীরাদের বাসায় যাবে বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে। কালকের মাঝেই মীরাকে তাদের বাসায় চায় তার।
রাজিয়া বেগম রাইফের কথাতে মুখের উপর কাঠকাঠ ভাবে অসম্মতি জানালেন। সামনে মীরার ফাইনাল পরীক্ষা। বিয়েটা তিনি পরীক্ষার পর ই করতে বললেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা, রাইফ এর এক কথা, এখনি বিয়ে করবে সে। পরীক্ষা তো আর আঁটকে রাখছে না সে। পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিবে৷ না করেছে কে? রাজিয়া বেগম রেগে গেলেন কিঞ্চিৎ, শক্ত কন্ঠে বললেন,
-‘সমস্যা কি তোর রাইফ? এখনি বিয়ে করতে হবে কেনো? মেয়েটার সামনে পরীক্ষা। এখন বিয়েটা হলে ওর পরীক্ষা খারাপ হতে পারে। আর একটা প্রস্তুতি আছে না? হুট করে বিয়ে করানো যায়? মীরাকে রাজ রানী করে ঘরে তুলবো আমি।’
রাইফ ছটফট করে পায়চারি করছে। একবার বসছে তো একবার হাঁটছে। অস্থিরতা স্পষ্ট ফুটে ওঠেছে তার ভাব ভঙ্গিমায়। কি করে বলবে তার সমস্যা কি। মাকে কি এখন বলা যায় যে মীরাকে না দেখলে তার ভালোলাগে না, ঘুম হয় না রাতে। অফিস করেও শান্তি পায় না। এসব মুখ ফুটেই বলতে হবে কেনো? বুঝে নিতে কি অসুবিধা? ছোট্ট শ্বাস ফেলে রাজিয়া বেগমের কাছে এসে বসলো রাইফ।
মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘যে আগে থেকেই রানী, সে সাজলেও রানী, না সাজলেও রানী। নতুন করে বানাতে হবে না আম্মা।’
রাজিয়া বেগম দমলেন না। মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার। সে নাহয় কোনো রকমে আনলো কিন্তু মীরাদের পরিবার এর কথাও তো ভাবতে হবে। নিজেকে শান্ত করে রাইফ কে মানাতে কোমল স্বরে বললেন,
-‘উনারা কি ভাববে আব্বা? উনাদেরও তো একটা প্রিপারেশন আছে তাই না?’
মায়ের কথা রাইফের মনঃপুত হলো না। এটা কোনো কারণ হলো? অদ্ভুত কারণ দিয়ে যাচ্ছে কখন থেকে।
ভ্রুকুঞ্চন করে অশান্ত ভঙ্গিতে বলল রাইফ,
-‘কিসের প্রিপারেশন আম্মা? তিন তলায় থেকে পাঁচ তলায় মেয়েকে পাঠাতে কিসের প্রিপারেশন? আনতে ঘোড়াও লাগবে না, হাতিও লাগবে না। কোলে করেই আনতে পারবো।’
-‘মুখে লাগাম দে বে/য়া/দব কোথাকার।’
রাইফ মায়ের ধমকে হাসি দিলো। দুহাতে জাপটে ধরে আবদারের স্বরে বলল,
-‘আম্মা, তুমি যাও প্লিজ। কথাতো বলে দেখো।’
-‘বুঝিস না কেনো?’
-‘কি বুঝবো আম্মা? তোমার কি একটু মায়া দয়া হয় না। উপযুক্ত ছেলেটা মুখ ফুটে বিয়ের কথা বলছে। বাবা থাকলে এরকম কখন ও হতো না। আমি বলার আগেই ব্যাবস্থা করে দিতো।’
জায়গা মতো কো/প দিয়ে রাইফ মন খারাপের ভাব ধরে চুপ করে রইলো। রাজিয়া বেগম স্বামীর কথা মনে হতেই আবেগাপ্লুত হলেন। স্মৃতি চারণ এ ব্যাস্ত হলেন। ছেলের বিয়ে নিয়ে কতোই না শখ ছিলো উনার। মন গলল রাজিয়া বেগমের। রাইফ আঁড়চোখে একবার দেখলো মাকে। চেহারা পাল্টে গেছে, ইতিবাচক সিদ্ধান্ত মনে করে বিস্তর হাসি ফুটল তার মুখে।
_____________
ড্রয়িং রুমে রাজিয়া বেগম এর সাথে খাদিজা বেগম খোশ মেজাজে গল্প করছেন। শওকত রহমান ও ছিলেন এই আড্ডায়। আসরের সালাত আদায় করতে মসজিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গিয়েছেন কিছুক্ষণ আগে।
মীরার পরিবার রাজিয়া বেগমের আকস্মিক আগমকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলেন। একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে তারা, আসবেন তো অবশ্যই। কিন্তু রাজিয়া বেগম ভণিতা ছাড়াই শওকত রহমান এবং খাদিজা বেগমকে জানিয়েছেন কালকের মাঝেই মীরাকে তার পুত্রবধূ করতে ইচ্ছুক। রাইফের কথা চিন্তা করে শওকত রহমান কে মিনতিও করেছেন রাজি হওয়ার জন্য।
শওকত রহমান দোটানায় ভুগছিলেন অনেক ক্ষণ। একটা মাত্র মেয়ে তার। বিয়েটা তিনি ধুমধাম করেই দিতে চান। কিন্তু এতো দ্রুত কিভাবে সব কিছুর আয়োজন করবেন তিনি? রাজিয়া বেগম ও ছাড়ছেন না কিছুতেই। কিছু বুঝে ওঠতে না পেরে ফোন করলেন বোন সানজিদা বেগম এবং মীরার বড় মামাকে। শলা পরামর্শ করে শওকত রহমান এক দিনের সময় চেয়ে নিলেন রাজিয়া বেগমের থেকে। বিবাহের দিন ধার্য করলেন এক দিন পর। রাজিয়া বেগমও খুশি হলেন, উনারও তো সময় দরকার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। সম্মতি জানালেন শওকত রহমান কে। বিয়ের তারিখ ধার্য হলো অবশেষে।
শওকত রহমান মসজিদ থেকে ফেরার সময় রাইফের সাথে দেখা হলো রাস্তার মোড়ে। কুশলাদি বিনিময় করে তিনি জোর করে বাসায় এনেছেন হবু জামাতা কে। রাইফের ও অবশ্য ইচ্ছে ছিলো, অনেক দিন হলো মীরাকে দেখে না। এই সুযোগে এক নজর দেখা হলে মন্দ হয় না।
দুপুরের খাওয়া শেষে সেই যে ঘুম দিয়েছিলো মীরা, একেবারে বিকেল পাঁচটায় সজাগ পেয়েছে। হাই তুলে চোখ মুখ ডলে উঠে বসল। বেড সাইডে সুইচ টিপে অন্ধকার রুমটা কৃত্রিম আলোয় আলোকিত।
বালিশের পাশে রাখা সুতি ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। আসরের সালাত আদায় করবে ভেবে অজু করতে যেতে চেয়েও ও দিকে আর পা বাঁড়ালো না মীরা। অনেক ক্ষণ ঘুমানোর ফলে মাথাটা ভার ভার হয়েছে। ঘুম ঘুম ভাব কাটানো দরকার। কড়া লিকারের এক কাপ রঙ চা ই পারে মাথাটা সতেজ করে তুলতে। সিদ্ধান্ত নিলো চা বানানোর জন্য চুলায় পানি দিয়েই বরং সে নামাজ পড়বে। নামাজ ও হলো, চা ও হলো। সময়টাও বেঁচে গেলো।
রুমের দরজা খুলে লম্বা একটা হাই তুলল মীরা। কোমড় ছাপানো খোলা চুল গুলো দু হাতের সহিত খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে আনমনে হাঁটা ধরলো কিচেনে।
দু হাতের কার সাজিতে চুল গুলো পেঁচিয়ে গুজে দিলেই খোঁপা বাধা শেষ হবে এমন মুহূর্তে হাত আঁটকে গেলো, ছোট্ট ছোট্ট পায়ের কদম থেমে গেলো সোফায় বসে থাকা রাইফ কে দেখে। মীরা আ/তং/কিত হলো, বিস্ময় ভরা চেহারায় তাকিয়ে রইলো। অসম্ভব, উনি এখানে কেনো থাকবেন? দেখার ভুল ভেবে বিরক্তিতে অন্য দিকে তাকাতেই গলা খাঁকারির শব্দ শুনে চমকে উঠলো, কেঁপে উঠলো জোরেসোরেই। হাতে ধরে রাখা খোঁপার বাঁধন আগলা হলো কয়েক হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা রাইফ কে দেখে। ধীরে ধীরে কোমড় ছাপানো দীঘল কালো চুল গুলো জায়গা করে নিলো পুরো পিঠ সমেত। দু গালের পাশ দিয়েও জায়গা করে নিলো ঘাড় সমান ছোট চুলগুলো।
সেই সুপরিচিত ঘ্রাণ পাচ্ছে মীরা। তড়িৎগতিতে মস্তিস্ক জানান দিলো এটা তার দেখার ভুল নয়, এটা সত্যি। হুলুস্থুল করে ওড়না টেনে মাথায় জড়ালো।
রাইফ তাকিয়েই আছে এক দৃষ্টিতে। মীরার কাঁধ বেয়ে কোমড় ছুঁয়ে দেওয়া চুল দেখে বিমোহিত হয়েছে সে। মীরার এমন রূপ যে তার অজানা। এই ঘুম কাতুরে ফোলা ফোলা স্নিগ্ধ মুখটাও তার অদেখা।
মীরা খুব করে চেষ্টা করছে কিছু বলতে কিন্তু রাইফের হঠাৎ সাক্ষাতে সব কিছুই গুলিয়ে যাচ্ছে। রাইফ ই প্রথম কথা বলল। ওড়না ভেদ করে কোমড়ের দিকে বেরিয়ে আসা চুল গুলো আরেকবার দেখে মীরার নজরে নজর আব/দ্ধ করলো। গম্ভীর গলায় নিবিড় কন্ঠে বলল,
-‘তোমার এই মোহনীয় রূপ টা আমার ভেতরটায় কাল বৈশাখী ঝ/ড় তুলেছে মীরা। বিশ্বাস করো, অবাধ্য ইচ্ছে গুলো হামলে পরেছে। গগণ বিদারী চি/ৎকার করে বলছে চুল গুলো ছুঁয়ে দিতে। ফোলা ফোলা চোখ দুটোয় ওষ্ঠ ছোঁয়ার প্রচন্ড লো’ভ হচ্ছে আজ।
রাইফের চাপা স্বরে বলা কথা গুলো মীরার হৃদয় নাড়িয়ে দিলো। ভয়ে আড়ষ্ঠ হলো। লোকটা কি বলছে এসব? ভয় ভয় চেহারা লুকিয়ে চেহারায় স্বাভাবিকতা ফুটিয়ে মাথা নাড়ালো, যার অর্থ এমন কাজ করবেন না, ভুলেও না।
রাইফ জ্বল জ্বলে হাসি দিলো মীরার এমন চেহারায়। দীর্ঘদেহী পুরুষটা কিঞ্চিৎ ঝুঁকলো মীরার দিকে। চাপা স্বরে ফিসফিসিয়ে বলল,
-‘আর দুটো দিন, রেডি থেকো মীরা। আমি ছাড়বো না তোমাকে, সত্যি ছাড়বো না।’
চলবে…..
(পাঠক গণ, আমি আজ ভীষণ লজ্জা পাচ্ছি। আপনারাও লজ্জা পান কেমন🤭)
ওহ হ্যাঁ আরেকটা কথা, মন্তব্য করবেন একটু