মুঠোবন্দী লাজুকলতা পর্ব ২১

0
99

#মুঠোবন্দী_লাজুকলতা
#অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_২১

🍁
গম্ভীরমুখে ড্রয়িং রুমে বসে রাইফ। বাহির টা তার বিস্তৃত নীল আকাশের মতো শান্ত হলেও ভেতর উত্তাল ঢেউ এর মতোই অশান্ত। অস্থির হয়ে উঠেছে বক্ষপিঞ্জর। ডামাডোল বাজছে বুকের বা পাশে। ভেতর জুড়ে চরম উত্তেজনাও কাজ করছে তার। মীরা যদি না করে দেয় তবে কি করবে সে? কিভাবে মানাবে? মীরার এমন জবাবে সে কি রাগ করবে নাকি হৈচৈ করবে? নাকি শান্ত হয়ে বসেই থাকবে? মাথা শূন্য লাগছে তার। কিছুই জানে না সে, বোঝেও না এবং বুঝতেও চায় না। শুধু জানে তার শান্তি চাই, এই এক জীবনে শান্তি পেতে হলে মীরাকে তার চাই ই চাই।

শওকত রহমান বেরিয়ে আসলেন। সবার নজর গেলো উনার উপর। মূল আকর্ষণ এখন তিনি। কি জবাব হতে পারে মীরার? তার চেহারা দেখে তো বোঝা যাচ্ছে না একটুও। রাইফের নজর গেলো শওকত রহমানের পেছন পেছন আসা উর্মির উপর। মুখটা একেবারে শুকনো লাগছে, বিষন্ন হয়ে আছে। তাহলে কি! না না, অসম্ভব! যেখানে সে ভাবতেই পারছে না সেখানে মেনে নিবে কি করে? র/ক্তি/ম গম্ভীর চোখ দুটো নিস্তেজ হয়ে আসছে চিন্তায়। একবার পলক ঝাঁপটিয়ে আবার খুললো। শওকত রহমান বসে রাইফের দিকে একটু তাকিয়ে তার বড় চাচার পানে তাকালেন। ধাতস্থ গলায় বললেন,

-‘আলহামদুল্লিল্লাহ ভাইসাব। আমার আম্মাজান সম্মতি দিয়েছেন। যেখানে আমার আম্মাজানের কোনো অসম্মতি নেয় সেখানে আমারও কোনো অসুবিধা নেই। একটা পবিত্র সম্পর্কে আমরা এখন বাঁ/ধা পরতেই পারি।’

সমস্বরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো সবাই। রাইফের শুষ্ক হৃদয়ে শওকত রহমানের ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা কথাটা গ্রীষ্মের ত/পদা/হে হাঁসফাঁস অবস্থাকে হঠাৎ আসা এক পশলা বৃষ্টির মতো তার হৃদয়টা কে শীতল করে তুললো। এতোক্ষণের তী;ক্ষ্ণ য/ন্ত্র/ণা দেওয়া চাপা দীর্ঘশ্বাস টা অধর যুগল কিঞ্চিৎ ফাঁকা করে ছেড়ে দিলো ধীরে ধীরে। কপালের উপর জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছে নিলো বা হাতের উল্টো পিঠে। মীরার ময়াময়ী মুখটা দেখতে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছা হামলে পরলো মনের গহীনে। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়াও আদায় করে নিলো দ্রুত।
শওকত রহমানের কথার প্রেক্ষিতে হাসি ফুটেছে সবার মুখেই। ব্যাস্ত হয়ে পরেছেন যার যার মতো আনন্দ ভাগাভাগি করতে। উর্মিও বসে এক কোণায়। রাইফের চোখ চোখ পারতেই এক গাল হেসে দিলো। রাইফ মিছেমিছি রাগের আভা ফুটে তুললো মুখে। এই মেয়ে বড্ড পাঁজি হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। না জানি কার ঘাড়ে পরে ওর নাজেহাল করে ছাড়ে।
সানজিদা বেগম খুশিতে আত্নহারা। তিনি তো ভাতিজির এই উত্তরের জন্য কখন থেকে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে যাচ্ছেন। দ্রুত গিয়ে মিষ্টি এনে মিষ্টি মুখ করালেন সবাইকে।
রাজিয়া বেগম ছুটলেন মীরার রুমের দিকে। খুশিতে মীরাকে জড়িয়ে মিষ্টি একটা আদর দিতে ইচ্ছা করছে তার। মীরা মাত্র দাঁড়িয়েছে বিছানা থেকে তখনি পেছন থেকে কারো আচানাক স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো। পেছন ঘুরে রাজিয়া বেগমের হাস্যজ্বল মুখ দেখে সেও ছোট্ট একটা মুচকি হাসি ফোটাল মুখে। রাজিয়া বেগম কাছে টানলেন, ছোট্ট করে একটা চুমু বসালেন মীরার কপালে। মমতা ভরা কন্ঠে বললেন,

-‘আমি যে কি খুশি হয়েছি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না মীরা। আমার একটা মেয়ে পেলাম আমি।
মেয়ে না থাকার আফসোস আমার আর নেই।’

মীরা কি বলবে ভেবে পেলো না। কথার প্রেক্ষিতে একটা মিষ্টি মুচকি হাসি ফেরত দিয়ে চুপচাপ থাকায় উত্তম মনে করলো সে।

________

সবাই নৈশভোজে বসেছে এক সাথে। হরেক রকম সুস্বাদু খাবারে ডাইনিং ভর্তি। খাদিজা বেগম খাবার পরিবেশন করছেন। কখন কার কি দরকার তাতেও নজর রাখছেন।
মীরা অনুপস্থিত। এক সাথে খাওয়ার জন্য ডেকেছিলো সবাই, কিন্তু মীরা অনুরোধ করেছে সে পরে খাবে। শওকত রহমান মেয়ের মনের অবস্থা বুঝে আর জোর করেননি।

আনন্দ ফুর্তি, হাসি ঠাড্ডা, খোশ গল্প চলছে অনেক ক্ষণ। এতো কিছুর ভেতর মীরা একবারও তার নিজস্ব রুমের বাহিরে আসে নি। মীরার কেমন যেনো আজ খুব সংকোচ হচ্ছে রাইফের সামনে আসতে। এইতো সন্ধ্যায় ও রাইফের প্রতি স্বাভাবিক ছিলো তার অনুভূতি। কিন্তু এখন যেনো পাহাড়সম লজ্জা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে তাকে। নাম না জানা কিছু অনুভূতি মনের কোণায় বাসা বেঁধেছে। এই অনুভূতি গুলো য/ন্ত্র/ণা দিচ্ছে না ঠিকই, আবার তাকে স্বাভাবিক থাকতেও দিচ্ছে না। অনুভূতি গুলো স্পষ্ট জানান দিচ্ছে, মীরা আজ রাইফের নজরে নজর রাখতে পারবে না কিছুতেই।

__________

রাজিয়া বেগম বিদায় বেলায় শওকত রহমানের কাছে আবদার করে বসেছেন মীরাকে আংটি পরিয়েই রেখে যাবেন তিনি। শওকত রহমান প্রথমে দ্বীধায় ভুগছিলেন অনেক। তার একমাত্র বোন জামাই কে রেখে কিভাবে এই কাজ টা সম্পন্ন করবেন। আত্নীয় স্বজনকে বলার ও তো একটা ব্যাপার আছে। অবশেষে ফোনে উর্মির বাবা যখন জানালেন তিনি আসছেন তাদের বাসায়, তখন দ্বীধা খানিকটা কে/টে গেলো তার। সম্মতি রাখলেন রাইফের আম্মার প্রস্তাবে।

রাজিয়া বেগমের পাশেই জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে মীরা। তার পাশেই সামান্য ব্যবধান রেখে বসেছে রাইফ। বলিষ্ঠ দেহের পুরুষটা দাম্ভিকতার সহিত মাথা উঁচু করে বসে থাকলেও মীরা নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে যথাসম্ভব। মাথা তার অবনত। হালকা গোলাপি রঙের ওড়নার কোণা খুঁটিয়ে যাচ্ছে নিরবে।

নিজের হাতের চকচকে আংটি টা খুলে মুঠোয় নিলেন রাজিয়া বেগম। রাইফ কে ইশারায় ডেকে তার হাতে দিলেন আংটিটা। হাস্যজ্বল কন্ঠে বললেন মীরার হাতে পরিয়ে দিতে। রাজিয়া বেগমের কথা শুনে মীরা আরষ্ঠ হলো, ভীষণ ভাবে কেঁপে উঠলো তার কোমল তনুমন। কোলের উপর রাখা হাত দুটো জড়িয়ে নিলো আনমনে।
রাইফের সংস্পর্শ পেতে চলেছে সে। প্রথম ধা/ক্কা লাগাটা অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও এই প্রথম জেনে শুনে, সুস্থ মস্তিস্কে আংগুলে আংগুল স্পর্শ হবে দুজনের। মীরার ঘাম ছুটলো ভেবেই। ধ্ব’কধ্ব’ক করে কাঁপছে আত্মা। রাইফ স্থির বসে। দুই আংগুলের সাহায্যে ঘুরাচ্ছে আংটিটা। মীরার দিকে আড় চোখে তাকালো একবার। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে সরু দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করল তার গুটিয়ে যাওয়া লাজুকলতা কে। এই যে মেয়েটার ফর্সা কোমল হাত দুটো কাঁপছে রাইফের স্পর্শ পাওয়ার ভ’য়ে তা কি এই মেয়ে বুঝতে পারছে! বুঝলে নিশ্চয়ই লুকিয়ে ফেলত এতোক্ষণে। রাইফ মৃদু হাসলো। মীরার লজ্জা মিশ্রিত আদল যে রাইফ এর বক্ষপিঞ্জর এফো/ড় ওফো/ড় করে তোলে তা কি সে আদ্যও বোঝে!

রাজিয়া বেগম তাগদা দিলেন রাইফকে। রাইফ সোজা হয়ে পিঠ টান টান করে বসলো। স্বভাব বশত চুল গুলো ব্যাকব্রাশ করে হাতটা প্যান্টের পকেটে ঢুকালো। রাজিয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-‘আংটি টা ওর হাতে হবে না আম্মা। আর আংটির চেয়ে তোমার চুড়ি দুটো সুন্দর বেশি। ওটা তুমিই পড়িয়ে দাও।’

সুচতুর ভাবে মীরার অস্বস্তি থেকে রেহায় দিলো রাইফ। ধীরে ধীরে হালকা হলো মীরা। রাইফের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে ভালো লাগাও কাজ করলো তার। রাজিয়া বেগম ছেলের কথায় যুক্তি আছে ভেবে আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন না। হাতের চকচকে স্বর্ণের চিকন বালা দুটো খুলে মীরার কোমল হাতে পড়িয়ে দিলেন। জ্ব/লজ্ব/ল করছে মীরার হাতে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে৷ বালা দুটো যেনো ওর হাতের ই অপেক্ষায় ছিলো সম্পূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশের।

আত্নীয়তার বন্ধনে আব,দ্ধ হয়ে খোশ গল্পে মেতে উঠছে যার যার মতো। রাইফ সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে মীরার কাছাকাছি এলো আরেকটু। বেখেয়ালি মীরা, রাইফের হঠাৎ কাছে আসাতে থমকে গেলো। মীরার ভ/য় মিশ্রিত মুখের পানে তাকিয়ে রাইফ চাপা স্বরে ফিসফিস করে ডেকে উঠলো,

-‘মীরা’

মীরা ঘন পাপড়ির আঁখি পল্লব তুলে তাকালো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দিলো,

-‘জ্বী’

রাইফ আরেক বার দেখে নিলো সবাইকে। নাহ, কেউ তাকিয়ে নেই তাদের দিকে। কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে নে/শা/লো কন্ঠে বলল,

-‘আমাদের প্রথম স্পর্শ টা আমাদের ব্যাক্তিগত হোক। তোমার অনুভূতি গুলো আমি আরো নিকট দেখে উপলব্ধি করতে চাই। এই কাঁপাকাঁপা কোমল হাতে আমার অধর ছোয়াতে চাই শক্ত করে।’

কান গরম হলো মীরার। লজ্জায় তৎক্ষনাৎ নুইয়ে নিলো মাথা। উড়না টেনে আড়াল করলো গোলাপি আভা ফুঁটে ওঠা মুখাবয়ব। কাঁপা কাঁপা হাত দুটো লুকিয়ে ফেলল ওড়নার ভেতর। মীরার আড়াল করা লাজুক মুখশ্রী দেখার লোভ হলো রাইফের। সময় নিয়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে গলা খাঁকারি দিতেই মীরা বেখেয়ালি নজর আবারও রাইফের দিকে ঘুরে গেলো। রাইফ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো খানিক ক্ষণ। মীরা নজর ঘুরিয়ে নিবে সে সময় আকস্মিক রাইফের ঠোঁট গোল হলো, ফু দিলো মীরার চোখে মুখে। মীরার পুরো শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে গেলো। নেত্র পল্লব বন্ধ হলো সয়ংক্রিয় ভাবে।

চলবে…

আজকের পর্ব কেমন লাগলো জানাবেন। ভালোবাসা নিবেন💛💛

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here