#সূর্যোদয়
#পর্ব_২৮
#কারিমা_দিলশাদ
৭৬.
জয় হয়তো চলে গেছে। ঐশী দরজা বন্ধ করে হাঁটুতে মাথা রেখে বসে বসে কাঁদছে। কেন কাঁদছে কোন কারণে তা তার জানা নেই। তবে তার মন খুলে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল তাই কাঁদছে। অনেক সময় কেন করছি, কি করছি এই ভাবনাটা না ভাবায় ভালো।
সে জানে না তার সাথেই কেন এমন হয়? ঐশী বিয়ের জন্য মোটামুটি মনস্থির করে ফেলেছিল। কিন্তু বারবার সেখান থেকে ঠুকর খাচ্ছে। মারুফের যে পরিবার, তাতে তার সাথে সংসার করা অসম্ভব। আর জয়! ব্যাটা একটা খচ্চর। এতদিন অন্য একটা মেয়ের জন্য কেঁদে কে’টে ম’রে গেছে। ওই মেয়েকে ছাড়া অন্য কাউকে সে ভালোবাসতে পারবে না ভংচং আরও কতকিছু। এখন আল্লাহ জানে এমন কি হয়ে গেল যে সে ঐশীর জন্য পাগলা দিওয়ানা হয়ে যাচ্ছে।
ফাল’তু লোক। এই লোক বিয়ের পর যে অন্য কারো জন্য পাগল হবে না তার কি গ্যারান্টি? এটাকেও সে বিয়ে করতে পারবে না। জেনে বুঝে কেই বা কুয়ো’য় ঝাপ দিতে যাবে। এর থেকে ভালো সিংগল থাকুক। ঐশীর মাথা ঝিমঝিম করছে। এখন গিয়ে তার একটু গোসল করা দরকার। তাহলে যদি ভালো লাগে।
৭৭.
জয় নিজের বিছানায় চার হাত পা মেলে ঝেলে শুয়ে আছে। তার মনে ভালো লাগা এবং খারাপ লাগার সংমিশ্রণ। ঐশী অন্য কাউকে ভালোবাসে না পছন্দ করে না। এটা তার জন্য লটারি পাওয়ার মতো খুশির। আর সে ঐশীকে তার মনের কথা বলেও দিয়েছে। যদিও সে এভাবে বলতে চায় নি। তবে ওই সময় ঔ পরিস্থিতিতে তার মাথায় এছাড়া আর কিছু আসছিল না। তার মনে হয়েছে এখনই বলে দেওয়া ভালো।
ঐশী এভাবে মুখের উপর না করে দিল এতে তার কিছুটা মন খারাপ। যদিও সে জানতো এমন কিছুই হবে। তারপরও তার খারাপ লাগছে। তবে সবচেয়ে বেশি মন খারাপ ঐশীর হাত-মুখের আঘাতগুলো দেখে। স্পষ্ট এগুলো মা’রের দাগ। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এভাবে কে মে’রেছে মেয়েটাকে? কেনই বা মে’রেছে?
৭৮.
এরমধ্যে ইলোরা ইয়াসমিন জয়ের রুমে আসে। তিনি এসেছিলেন জয়কে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে। কিন্তু জয়কে এভাবে হাত পা ছড়িয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। ছেলেকে এভাবে দেখলেই তিনি চিন্তায় পড়ে যান। তিনি গিয়ে জয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“ কি রে এভাবে শুয়ে আছিস কেন? কাপড়টাও তো চেঞ্জ করিস নি।”
জয় মায়ের হাত ধরে বসিয়ে দেয় তাকে। তারপর তার কোলে নিজের মাথা রাখে। ইলোরা ইয়াসমিনও হেসে জয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন। ইলোরা ইয়াসমিন জয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই বলেন,
“ কি নিয়ে এতো ভাবছিস বলতো? মাকে বলা যাবে?”
“ আমার ঐশীটা ভালো নেই মা। ওকে কে যেনো খুব বাজেভাবে মে’রেছে। দাগ পড়ে গিয়েছে একবারে। কে মা’রলো ওকে আর কেনই বা মা’রলো বলো তো। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা।”
ইলোরা ইয়াসমিনের মুখে হাসি ফুটে উঠে সাথে চিন্তা আর খারাপ লাগাও। এতো বড়ো মেয়েকে কেউ কেন মা’রতে যাবে? তারপরও সে সবটা নিজের মাঝেই চেপে রেখে বলেন,
“ তোর ঐশী মানে? তুই কি প্রেম করছিস ওর সাথে?”
“ না। প্রেম করছি না। তবে ঐশী আমার। আমি ওকে ভালোবাসি মা। আমার ওকে চাই মা।”
“ চাই মানে? খালি তুই চাইলেই হলো। এমনভাবে চাইছিস যেন ও বাজারের কোনো সবজি। ওই মেয়েরও তো তোকে চাইতে হবে। ওই মেয়ে চায় তোকে? রাজি হবে?”
জয় এবার মায়ের মুখের দিকে অসহায় নজরে তাকায়। বলে,
“ ও রাজি না মা। ও আমাকে চায় না। কিন্তু আমার ওকে চাই মা। আমি তো ওকে সুখে রাখতে পারবো বলো। আমি আর কাউকে ওকে আঘাত করতে দিব না। একদম কষ্ট দিব না। ওর জীবনটা আমি খুশিতে ভরিয়ে দিতে চাই মা।”
“ তুই কি এসব কৃতজ্ঞতা থেকে করছিস?”
“ মানে?”
“ এই যে ওর কথা তোকে স্বাভাবিক জীবনে আসতে সাহায্য করেছে। এই কৃতজ্ঞতা থেকে তুই ওকে বিয়ে করতে চাইছিস কি না তাই বলছি।”
“ না মা। আই লাভ হার৷ কেন কবে তা জানি না। বাট আই লাভ হার।কোনো কৃতজ্ঞতা থেকে না। ”
“ ভালো করে ভেবে দেখে। তুই কিন্তু এর থেকেও অনেক ভালো মেয়ে পাবি।”
জয় একথা শুনে মায়ের কোল থেকে ঝট করে উঠে পড়ে। আর অবাক হয়ে বলে,
“ তুমি এসব কি বলছো মা? আমি তো কাউকে আপন করে নিতেও চাইতাম না। ইভেন এখনও চাই না। কেবল ঐশীকে ছাড়া। আমি ওকে ভালোবাসি। সত্যি ভালোবাসি মা। তাই আমি ওকে আপন করে নিতে চাই। ওকে ছাড়া আমার চলবে না। কিছুতেই চলবে না।”
“ এই ভালোবাসা কয়দিনের শুনি…”
“ সারাজীবনের মা। তুমি যেটা মিন করছো ওমন কিছু না। ও আমার ক্ষণস্থায়ী কোনো আবেগ না মা। ও আমার জন্য সত্য। আমি ওকে ভালোবাসি দ্যাটস ইট মা।”
ইলোরা ইয়াসমিন ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। ছেলেটা তার কবে এতো বড় হয়ে গেল। এই তো কয়েকদিন আগেও তো তার আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াতো। জয় ছোটবেলায়ও খুব একটা জিনিসের জন্য বায়না করতো না। করলেও সবসময় মাথা নিচু করে মিনমিন করে সেটা বলতো। সেই ছেলে আজ মাথা উঁচু করে তার ভালোবাসার জানান দিচ্ছে। পুতুলকে যখন চাইতো তখন কান্না করতো। একটা অসহায়ত্ব ছিল তখন। তবে আজ জয়ের মাঝে সে এক কঠিন স্বত্তা দেখতে পারছে। যেন না পেলে সে ঐশীকে যেভাবে হোক নিজে আদায় করে নিবে। ইলোরা ইয়াসমিন ভান করে হালকা শক্ত কন্ঠে বলে,
“ মায়ের সামনে ভালোবাসার কথা বলছো। লজ্জা করছে না?”
জয় তার মায়ের দিকে তাকায়। তারপর মুখ ফুলিয়ে আবার মায়ের কোলে মাথা দিতে দিতে বলে,
“ আর তুমি যে শুনছো, তার বেলায়? তুমি আমার বন্ধু মা। আই লাভ ইউ।” — বলেই মায়ের হাতে একটা চু’মু খায়।
ইলোরা ইয়াসমিন তৃপ্তির হাসি হাসে। জয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
“ যা ফ্রেশ হয়ে আয়। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে। ”
“ ওহুম। আরেকটু থাকি। তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।”
ইলোরা ইয়াসমিনের ভিতর থেকে আজ একটা চাপ বেরিয়ে গেল। জয়ের অনুভূতি সম্পর্কে সে অবগত ছিলেন। সিওর হলেন সেদিন রাতে যেদিন জয় সিয়াম আর ফয়সালকে তার মনের কথা বলছিল। সেদিন সে সবশুনে নেয়। এরপরের দিনই সে ঐশীর বাবার সাথে কথা বলার জন্য মনস্থির করে ফেলেছিলেন। কিন্তু পরে ভাবলেন, না। এবার তিনি আর কিছু করবেন না। তিনি চেয়েছিলেন জয় যেন নিজের মুখে এই কথাগুলো বলে। না চাইতেই কিছু পেয়ে গেলে আর সেটার কোনো মূল্য থাকে না। এবার জয়কেই বলতে হবে। জয়কেই সেটা আদায় করে নিতে হবে।
৭৯.
“ বাহ্। খুব ভালো মা, খুব ভালো। সব আদর তুমি তোমার ছেলেকেই করো। আমি তো বানের জলে ভেসে এসেছি না?”
স্মৃতির কথায় জয় আর ইলোরা ইয়াসমিনের ধ্যান ভাঙে। জয় একনজর স্মৃতিকে দেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। আর বলে,
“ হ্যা। তোকে ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি আমরা। দেখিস না এইজন্যই তো তোর শরীর থেকে গন্ধ বেরোচ্ছে।”
ইলোরা ইয়াসমিন জয়ের বাহুতে হালকা করে একটা চ*ড় বসিয়ে দেয়। আর স্মৃতিকে কাছে আসতে বলেন।স্মৃতি এসে জয়কে একটা চিমটি মে’রে ইলোরা ইয়াসমিনের বুকে জায়গা করে নেয়।
দুই সন্তানকে বুকে জড়িয়ে তিনি অনুভব করলেন তিনি সুখী। খুব সুখী কেবল তার হারানো সঙ্গীর কমতি। যে কমতি কখনো মিটবার নয়। তবুও তিনি যথেষ্ট সুখী। আর ওদিকে জয় আর স্মৃতির খুনসুটি তো চলছেই।
#চলবে
( কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে চাইলে শেয়ার করতে পারেন।
ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। চেক করতে পারি নি। তাই ভুল থাকতে পারে। আর আমার জন্য দোয়া করবেন যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারি। আমার অবস্থা খুব একটা ভালো না। দোয়া করবেন সবাই। ধন্যবাদ।)