সূর্যোদয় পর্ব ১০

0
106

#সূর্যোদয়
#পর্ব_১০
#কারিমা_দিলশাদ

২২.
আগে একসময় মনে হতো বছর তো যায়ই না। একটা বছর যেতে কতসময় লাগে। আর এখন চোখের পলকেই সময় কেটে যায়। হাওয়ার মতো মাসের পর মাস চলে যায়। দিনের পর দিন চলে যায়।

সামনে ঐশীর অনেক কাজ। কালকে থেকে কাজগুলো গুছিয়ে নেওয়া শুরু করতে হবে। তার নাচের ক্লাসটা বেশ ভালো চলছে। স্টুডেন্টের সংখ্যা বেড়েছে। এখন আর ওই ছোট্ট রুমটাতে তার চলে না। তাছাড়াও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিয়ত।

আশেপাশের সবাই ফ্যামিলি নিয়ে থাকে। মিউজিকের আওয়াজে তাদের সমস্যা হয়। যদিও খুব উচ্চ আওয়াজে কখনোই মিউজিক বাজানো হয় না, তবুও আশেপাশের মানুষদের সমস্যা হয়। মিউজিক বাজবে মালিককে বলেই নিয়েছিল…. তাছাড়াও বিষয়টা ঐশীর নিজের বিবেকেও বাঁধে। আর তা বাদেও গলির মুখে ব’খাটেদের আড্ডা চলে সারাক্ষণই। প্রথম প্রথম যখন তার স্টুডেন্টরা ইভ’টিজিং এর শিকার হয়। তখন গার্ডিয়ানরা বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করে। তার প্রতিকার হিসেবে ঐশী বা তার ফ্রেন্ডরাই সবসময় একসাথে তাদের আনা নেওয়া করে। সেখানের পরিবেশটাও ডান্স ক্লাসের জন্য উপযুক্ত নয়।

তাই ঐশী ওই রুমটা ছেড়ে দিয়ে একটা বড় রুম নিবে ঠিক করেছে। টাউনহলের ওইদিকে বেশ কিছু রুম দেখে এসেছে আজকে। একটা রুম তার বেশ পছন্দ হয়েছে। বেশ বড়সড় আর জায়গাটাও পার্ফেক্ট। আশেপাশে বেশিরভাগই সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন। নিরিবিলি জায়গা হওয়ায় মিউজিকেও সমস্যা হবে না। নিরিবিলি হলেও নিরাপদ। সাধারণ মানুষ প্রায়সয় যাতায়াত করে। পুলিশি টহলও বেশ ভালো। স্টুডেন্টরাও ফ্রী ভাবে যাতায়াত করতে পারবে। বাজেটও হাতের নাগালে। অলরেডি দুটো ব্যাচ হয়ে গেছে তার। সামনের মাস থেকে নতুন আরেকটা ব্যাচ শুরু করবে। বেশ ভালো চলছে ডান্স ক্লাস।

আর জীবন? সেটাও ভালোই৷ ভাইয়ের সাথে কোনো কালেই তার অন্যান্য আর দশটা ভাই বোনের মতো সম্পর্ক ছিল না। আর তার বাবা মা ডান্স ক্লাস শুরু করার পর থেকেই তারসাথে কথা বলে না একদমই৷ খেতেও ডাকে না কেউ৷ তার খিদে লাগলে সে নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে খাবার পেলে খেয়ে নেয়, নাহলে নিজে কিছু একটা বানিয়ে নেয়।

কি একটা পরিবার তার হ্যা!! ভেবে হাসিও পায় কষ্টও লাগে। সারাক্ষণ কিছু করতে পারবে না, কিছু করে না, বসে বসে খায় হেনতেন বলে বলে খোঁটা দিবে। আবার কিছু করার অনুমতিও দিবে না। তাতে তাদের স্ট্যাটাস ডাউন হয়ে যাবে। কি এমন স্ট্যাটাস আছে তাদের? হ্যা তার বাবার আয় রোজগার বেশ ভালো। গড়পড়তা মিডল ক্লাস ফ্যামিলি থেকেও বেশ ভালো আয় রোজগার। কিন্তু সে সবসময় গরিবিয়ানা হালাদই দেখে আসছে ছোট থেকে। সে তো জানতো তারা গরিব। তার বাবার আয় রোজগার ভালো না। বাট বড় হওয়ার পর বুঝতে পারে না। বেশ ভালো আয় তার বাবার।

গরিবিয়ানা চলাফেরায় তার সমস্যা নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে মাত্র চারজন মানুষের ছোট্ট ফ্যামিলি হওয়া সত্যেও এতো টাকা যায় টা কই? এমনও না তার বাবা লুকিয়ে লুকিয়ে বিরাট ব্যাংক ব্যালেন্স তৈরি করছে তার পরিবারের জন্য। কি করে তা ঐশীর খুব ভালো করে জানা আছে। ঐশী তার বাবাকে খুব ঘৃ’ণা করে খুব। একজন বাবা এবং একজন পুরুষ দুই হিসেবেই খুব ঘৃ’ণা করে।
আর তার মহান মা। মা নাকি মমতাময়ী হয়। ছেলে মেয়ের আশ্রয় হয়। আর তার মা তার জন্য ডাই’নির প্রতিরুপ। মানুষের সামনে তার মায়ের কতো বোঝদার কথাবার্তা।

“ মেয়েদের জীবনের কোনো মূল্য নাই। কর্মছাড়া কি ছেলে কি মেয়ে কারো কোনো মূল্য নাই। কর্ম থাকলে মেয়েরার একটা আলাদা সম্মান থাকে। আমি তো আমার মেয়েরে বলি যে কোনো একটা কর্ম কইরা খা। কই পাবেন… সারাদিন খালি শুয়ে বইসে থাকা ছাড়া কোনো কাম নাই। কোনো একটা গুণই নাই আমার মেয়ের মধ্যে। ব্লা ব্লা ব্লা………..”– এসব ঐশীর মায়ের কথা।

এসব শুনে মনে হয় আহ্ কত্তো সাপোর্টিভ মাদার। যেকোনো একটা কর্ম করে কর্মজীবী হলেই হলো। আর তার সেই সাপোর্টিভ মাদারের ভাষ্য সে এখন বাইরে ন**গিরি করে কামাই করে।
যেহেতু ঐশী এখন আয় রোজগার করছে তাই সে চেয়েছিল সংসারের কোনো একটা খরচা উঠাতে। সে গিয়ে যখন তার বাবা মা’র কাছে এই প্রস্তাবটা রাখে তখন তার মা এসব বলে। ঐশীর রোজগার করা টাকা ন*ষ্ট টাকা। আরও কতশত বি’শ্রী বি’শ্রী গা’লিগালাজ করলো। অথচ কয়দিন আগেও প্রায় সময় পাশের বাসার এক আপুর উদাহরণ দিত। যে গান শিখাতো। তার টাকায় ওই আপুদের সংসার চলতো।

বিষয়টা হচ্ছে কেবল মুখের কথা। মুখে মুখে কতো কথাই তো বলা যায়৷ কিছু মানুষ আছে না মুখে মুখে কথা বলেই বিশ্ব হাসিল করে ফেলে। তার মাও সেই দলের মানুষ। উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট। সব সহ্য করা গেলেও চরিত্র নিয়ে কথা কখনো সহ্য করা যায় না। আর নিজের মা হয়ে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে এসমস্ত কথা কিভাবে বলে? এমন মাকে কি আদোও সম্মান করা যায়? কেবল জন্ম দিয়েছে বলেই সব খু’ন মাফ? কে বলেছিল তাকে জন্ম দিতে? এখন তাকে অ’পমান, অব’হেলা, অ’সম্মান করলেই জন্মদাতা বলে সেসব কথা কোনো ম্যাটার করবে না এটা কোন আইনের কথা? কোন হাদিসে লেখা আছে সন্তানকে এসমস্ত কথা বলা যাবে?

তার জায়গায় অন্যে কেউ হলে কে কি করতো তা তার জানা নেই। তবে সে তার মা বাবাকে কক্ষনো ক্ষমা করতে পারবে না কক্ষনো না।
কেবল আজ না। সে তার মাকে কখনো কোনো কিছু দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। ছোটবেলায় স্কুলে প্রথম হলেও একটা বিষয়ে কেন ৯৮ পেল, কেন একটা বানান ভুল গেল, এসবের জন্যও প্রথম হওয়া সত্যেও বাসায় এসে মা’র খেয়েছে। এ+ পেলেও গোল্ডেন এ+ কেন পেল না তা নিয়েও মা’র খেতে হয়েছে। আর তার বাবা এসব দেখেও কখনো কিছু বলে নি। যদিও এসব নিয়ে বাবা তাকে খুব একটা কিছু বলে না। তবে কখনো তার মায়ের এসব বিষয়ে প্রতিবাদও করে নি। এখন পর্যন্ত পান থেকে চুন খসলেও তার গায়ে হাত তুলা হয়।

ধুরররর! ভালো একটা মুড ছিল। ভাবতে ভাবতে কই থেকে যে কই চলে গেল তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ভালো জিনিস বেশিক্ষণ সে ভাবতেই পারে না। ভালো জিনিস ভাবতে ভাবতে আবার সেই অন্ধকার জীবনের মাঝে ডুবে যায়৷ এই অন্ধকার কাটিয়ে কখনো নতুন সূর্যের দেখা পাবে কি না তা তার জানা নেই। তার জানা নেই আদোও তার জীবনের সূর্যোদয় হবে কি না।

যাইহোক এবার শুয়ে পড়া দরকার। পরীক্ষা আছে কালকে একটা। আবার কালকে অনেক কাজও আছে।

২৩.
সকাল সকাল কিছু না খেয়েই বেরিয়ে পড়েছে ঐশী। একটা ইনকোর্স পরীক্ষা আছে তার।

পরীক্ষা দিয়ে ঐশী, আশা, কবিতা আর অনিক গেল রুমটার জন্য এডভান্স দিতে। সেখান থেকে রুমটা আবার দেখতে গেল। কোথায় কি করবে, কোথায় কি লাগাবে, রাখবে সেটার জন্য মনে মনে একটা ছকও কষে নিল ঐশী। তারপর সবাই মিলে পার্কে গিয়ে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে কিছু কেনাকাটা করতে যায়। এরপর ঐশীর ফ্রেন্ডরা যার যার বাসার উদ্দেশ্য চলে গেলে ঐশী তার ডান্স ক্লাসের উদ্দেশ্য চলে যায়।

ডান্স ক্লাস থেকে সোজা টিউশনিতে চলে এসেছে ঐশী। এটা সেই টিউশনি যার মাধ্যমে জয়ের সাথে ঐশীর বিয়ের বিষয়ে কথা হয়েছিল। ইলোরা ইয়াসমিনের কলিগের মেয়ে এবং তার দেবরের ছেলে মেয়েকে পড়ায় ঐশী। এরমধ্যে মৃধা নবম শ্রেণির ছাত্রী। অথৈই আর আয়ান এরা দ্বিতীয় শ্রেণির দুটো কিউট কিউট বাচ্চা ছেলে মেয়ে।

টিউশনিটা সে ছাড়ে নি। এর দুটো কারণ। এক, সব টিউশনি ছেড়ে দিলে তার নিজের ভবিষ্যতেই সমস্যা হবে। এখন এদেরকে পড়ানোতে তার বেসিকটা মজবুত হচ্ছে। দুই, এখান থেকে টাকাটাও বেশ ভালো পায়। মোটামুটি একের ভিতর সব হওয়ায় এই টিউশনিটা আর ছাড়ে নি সে।

আজ মৃধাদের পড়াতে গিয়ে দেখে বাসায় এলাহি কান্ড। অনেক মানুষ তাদের বাসায়। এরমধ্যে দুইজনকে দেখে সে বেশ চমকে যায় সে।………..

#ক্রমশ ……….
[ কপি করা নিষেধ। তবে শেয়ার করতে পারেন।

আজকের পর্বটা হয়তো অনেক বোরিং লাগবে বাট৷ গল্পের স্বার্থে লিখতে হলো। কিছু পরিস্থিতি বর্ণনা করা আবশ্যক।
আর কিছু বলার ছিল। আপনারা কেউই গঠনমূলক মন্তব্য করেন না। কেবল Next, next, next,n….. করেন।
গল্পের পরের পর্ব তো আমি দিবই। Next কমেন্ট না করলেও দিব। এসব কমেন্ট না করে যদি আপনারা আপনাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন, ভুলত্রুটিগুলো শুধরে দেন তাহলে আমি উৎসাহ পাব এবং ভুলটা ঠিক করে নিতে পারব। আপনারা আপনাদের মতামত প্রকাশ করুন প্লিজ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here