#আসল_সম্পর্ক
#পর্ব_১০
#ইশরাত_জাহান
রাতে প্রিয়তাকে কল দেয় অনুপম।প্রিয়তা কল রিসিভ করে।সাথে সাথে অনুপম বলে,”বউ।”
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসেনা।অনুপম আবার বলে,”ও বউ।”
এবার ওপাশ থেকে উত্তর আসে।”আমি তোর বউ না।আমি তোর বউয়ের বড় বোন।”বলে রুবিনা।
“ওহ বউয়ের ফোন শালীকা ধরেছে”।
রুবিনা তেতে উঠে বলে,”আমি তোর বয়সে বড়।”
“সম্পর্কে তুমি এখন আমার শালীকা। যাই হোক বউ রাগ করেছে।তার কাছে একটু দেও কথা বলবো।”
“লজ্জা করে না এসব বলতে। প্রিয়তা আমাদের সব বলেছে।তুই ওকে ডিভোর্স দিয়েছিস। আর কোনো কথা বলবি না রাখ ফোন।”বলেই কেটে দিলো।
অনুপমের আশা বিফলে গেলো।ভেবেছিলো মিষ্টি করে বউ বললে শুনবে।তারপর সব ভুল বুঝাবুঝি দূর করবে। তা না করে আরো বোনকে দিয়ে কথা শুনায়।
সারারাত ঘুমায় না অনুপম।সকালের দিকে চোখ লেগে আসে না তার।সকাল সকাল নামাজ পড়েই গ্রামে রওনা হয় অনুপমের বাবা মা। অনুপমকে বলে যায় না।ঘুম থেকে উঠে অনুপম দেখে বাবা মা চলে গেছে।মন খারাপ হয় তার।সারারাত একটি কথাও বলেনি।রাগ করে দরজা দিয়ে বসেছিলো তারা।রাতের খাবারও খায় নি।এখন কি না কথা না বলেই চলে গেলো।অনুপমও ব্যাগ গোছাতে লাগে।এবার বউকে মর্যাদা দিয়ে নিয়ে আসবে সে।
অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিলো অনুপম।রওনা দিলো গ্রামের দিকে।ঘণ্টা ছয় পর গ্রামে পৌঁছায়।মাগরিবের সময় হয়ে যায়।সারাদিনে শুধু সিঙ্গারা খেয়েছিলো।বাসায় এসে শুনে বাবা মা প্রিয়তাদের বাসায়।পাশাপাশি বাসা হওয়ায় অনুপম যায় সেখানে। প্রিয়তাদের বাসায় এসে দেখে সবাই মিটিং করছে। প্রিয়তাও আছে সেখানে।
অনুপম এসেছে দেখতে পেলো প্রিয়তা। অনুপমকে দেখে প্রিয়তার বাবা পলাশ মাহমুদ হুংকার ছাড়লেন।বললেন,”কি চাও তুমি?”
বিয়ের পর শশুরবাড়ি আজ প্রথম আসলো অনুপম।এসেই কি না শ্বশুরের কাছে হুংকার শুনতে হল।জামাই আদর সেই লেভেলের পেলো।অনুপম আমতা আমতা করে বলে,”প্রিয়তার সাথে কথা আছে আমার।”
“ও তোমার সাথে কোনো কথা বলবে না।তোমাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন তোমরা আলাদা।প্রিয়তা তো সই করেই দিয়েছে।এখন কি চাও?”
অনুপম বুঝলো শশুর তার মেয়ের সাথে কথা বলতে দিবে না।অনেক বার অনুরোধ করছে অনুপম।অনুপমের বাবা মা কিছু বলছে না।চুপচাপ বসে আছে।না পেরে অনুপম বলে ওঠে,”ওহে শশুর মশাই,আপনার কন্যা মানে আমার বউ যে এক হিন্দু ছেলেকে বিবাহ না করিয়া ডিভোর্স দিয়েছে এটা কি আপনি জানেন?”
হতবম্ব হলো প্রিয়তা।বাকিরাও চুপচাপ দেখতে থাকে।প্রিয়তা বলে ওঠে,”হিন্দু ছেলেকে বিয়ে না করে মানে কি?”
“শুধু হিন্দু না এ তো বিবাহিত হিন্দু।সই করার আগে চোখ কোথায় ছিলো?ইগোর সাথে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে গিলেছিলি?এই দেখ কাগজ।”বলেই প্রিয়তার দিকে পেপার এগিয়ে দেয়।
প্রিয়তা পেপার দেখে অবাক। এটা তো অন্যদের।তারপরও প্রিয়তার অভিমান যায় না। কাল যে রুহির সাথে দেখা করেছিলো।ইম্পর্ট্যান্ট কথার নাম করে।তারপর আবার মিষ্টি মিষ্টি হাসি দিয়ে বিয়ের কথাও বলেছিলো।ওসব তো আর মিথ্যে না।প্রিয়তা রেগে বলে ওঠে,”ওহ আচ্ছা!ভুল ডিভোর্সের পেপার বলে সংশোধন করতে চাও।সমস্যা নেই।সবাই যখন সত্যি কথা জেনেই গেছে এখন আসল ডিভোর্সের ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।”
প্রিয়তার বাবাও মেয়ের কথায় রাজি হলেন।বললেন,”হ্যা আমি আমার মেয়ের ডিভোর্স করিয়ে আবার বিয়ে দিবো।ধুমধাম করে বিয়ে হবে ওর।বোন আমাদের সম্পর্ক রক্ষা করতে চাইলে ছেলেকে নিয়ে চলে যা।”মিসেস পুরোভিকে উদ্দেশ্য করে বলেন।
অনুপমের বাবা মা অনুপমকে জোর করে নিয়ে যেতে লাগে।অনুপম যেতে চায় না।অনুপম বারবার বলছে,”আমি আমার বউয়ের সাথে একবার কথা বলবো।আসামিকে কথা বলার সুযোগ দিতে হয়।আমাকেও দেওয়া উচিত।বউ আমার একবার কথা শোন।”
কে শোনে কার কথা।অনুপমের বাবা ও রুবিনার বর মিলে পাঁজাকোলা করে নিয়ে যায় অনুপমকে।এমনি সারাদিন না খাওয়া তার উপর দুজন পুরুষ তাকে ঠেলছে।না পেরে অনুপম বউ বউ করতে থাকে।কিন্তু লাভ হয়না।এদিকে মিসেস পুরোভি ভাইকে(প্রিয়তার বাবা) বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেস্ট অফ লাক জানায়।মনে তাদের প্ল্যান সাকসেস।
বাসায় এসে অনুপম সোফায় বসে থাকে মন খারাপ করে।সামনে তার বাবা মা দাড়িয়ে আছে।বকাঝকা করতে থাকে।মিসেস পুরোভি বলে,”ছেলে হয়েছে বাপের মত।নিষ্কর্মা একদম।বউ সামলে রাখতে পারে না।বউ যা বলে আগ্রহ দিয়ে শুনে।তোর বউ তোকে বলেছিলো রুহির কথা আর তুইও রাজি হয়েছিলি।তোর বাপও এমন করেছিলো।ডিভোর্স দিবো ডিভোর্স দিবো।এখন ছেলেও এক।”
“একটু ভুল আছে আম্মু।তোমাদের বেলায় বাবা ডিভোর্স দিবো বলেছিলো।আমাদের বেলায় আমি না প্রিয়তা বলেছিলো। আর প্রিয়তা আমার সাথে এডজাস্ট করতে পারেনি।আমিও ভেবেছিলাম আমাদের সম্পর্ক এগোবে না।ওই আগে ডিভোর্স ডিভোর্স করে।রুহিকে ওই ডেকে আনে।আমি তো রুহির সাথে কথাও বলতাম না।ডিভোর্সের কথা উঠেছিলো তখনও রুহির সাথে কন্টাক্ট অফ রাখি।তখন আমি রুহির প্রতি বেশি দুর্বল ছিলাম।কারণ এই সম্পর্কের মূল্য বুঝে উঠতে পারিনি।কিন্তু এখন তো সব ঠিক করেছি।”
ছেলের কথায় মিস্টার অরুণ লজ্জা পায়।শেষমেশ কিনা তার উপরেও দোষ আসলো।মা ছেলে মিলে বোঝাপড়া করছে মাঝখানে টানছে তাকে।
মিসেস পুরোভি বলে,”চুপ কর তুমি। যা করেছো এখন তা ভুগতে থাকো।দোষ তোমাদের দুজনেরই আছে।আমি আর একটি কথাও শুনবো না। কাল পরশুর ভিতরে ডিভোর্স পেপার রেডি করা হবে।তুমি ডিভোর্স দিয়ে ঢাকা চলে যাবে।ইদ্দত পালন করে আমরা প্রিয়তার নতুন বিয়ে দিবো।তুমি ওই রুহিকে বিয়ে কর।”বলেই চলে গেলো।উল্টোদিকে ফিরে ঠোঁট চেপে হাসলেন।
অনুপম বেচারা মিনমিন করে বলতে লাগলো,”ডিভোর্স এখনও দিতে পারলাম না বউ কি না করবে ইদ্দত!বাবা মা হয়েছে এক আমার।ভাইয়ের মেয়ের প্রতি টান বেশি।ছোটবেলা থেকেই দেখছি প্রিয়তা যা যা পছন্দ করবে তাই ওকে দেওয়া হবে।ওকে বানিয়েছে নিজের মত।তবে আমিও কম না।আমার বউকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না।আসল সম্পর্কের মূল্য আমি এবার দিয়েই ছাড়বো।”
চলবে,
(।)