#আসল_সম্পর্ক
#পর্ব_৩
#ইশরাত_জাহান
বিড়ালের সাথে কথা বলার ভিতরে প্রিয়তা এসেছে। শাড়ির আঁচলে হাত মুছে তাকালো অনুপম ও বিড়ালের দিকে।বিড়ালকে খাবার দিয়েছে অনুপম। তা দেখে নিজের ঘরে চলে গেলো।এখন একটু সাজবে প্রিয়তা।তারপর বাবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলবে।আজ প্রিয়তার বাবার জন্মদিন।প্রিয়তা এই দিনটিতে বাবার জন্য শাড়ি পড়ে থাকে।গ্রামে থাকতে বাবার সাথে ঘুরতো এই দিনে। আর শহরে পড়াশোনার জন্য আসার পর বাবার সাথে ভিডিও কলে থাকতো সারাদিন।
সাজগোজ শেষ করে খোঁপায় বেলায় ফুলের মালা দেয় প্রিয়তা।অনুপম এখনও ডায়নিংয়ে বসে আছে।প্রিয়তার ফোন ডায়নিং রুমে আছে।প্রিয়তা গেলো সেখানে।অনুপম এখনও দেখেনি প্রিয়তাকে।প্রিয়তা ফোন হাতে নিয়ে বাবাকে ভিডিও কল দিলো।(প্রিয়তার বাবা পলাশ মাহমুদ একজন স্কুল শিক্ষক।প্রিয়তার মা একজন গৃহিণী নাম রাবেয়া মাহমুদ।পলাশ মাহমুদ শিক্ষকতার জন্য অনেক নাম ডাক করেছেন নিজ এলাকায়।আগেকার সময় একজন মাস্টার মানে বিরাট কিছু ছিলো। সেই সূত্র ধরে লোকে তাকে এখনও সম্মান করেন।নিজের সুনাম করতে পারায় বোনকেও একই স্কুলে চাকরি করার সুযোগ করে দেন।অনুপমের মা একজন শিক্ষিকা।তার নাম পুরোভি।অনুপমের বাবা একজন পশু ডাক্তার।তার নাম অরুণ।)
প্রিয়তার বাবা ও মা একসাথে কল রিসিভ করলেন।মেয়েকে কয়েক মাস পর পরিপাটি দেখলেন পলাশ মাহমুদ ও রাবেয়া মাহমুদ।দেখেই চোখে পানি আসলো তাদের।পলাশ মাহমুদ চোখের পানি মুছে বললেন,”কেমন আছে আমার আম্মাজান?”
বাবাকে কাদতে দেখে প্রিয়তা হালকা ইমোশনাল হলো।বাবাকে বললো,”এভাবে জন্মদিনে কান্না করলে কি ভালো লাগে সন্তানের?আমি কত দূরে তোমাদের থেকে। কোথায় একটু বলবে কেমন লেগেছে আমাকে। তা না উল্টো কান্না করছো।”
মেয়ের কথায় হেসে দিলো বাবা মা।মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে দূরে থাকে।এতে বাবা মায়ের যে কি কষ্ট!শুধু তারাই বুঝে।জবাবে রাবেয়া মাহমুদ বলেন,”এটা যে আমার মেয়েকে দেখে সুখের কান্না মা।”
অনুপম ওদের কথা শুনলো।বুঝলো আজ মামুর জন্মদিন।পালন না করলেও তার মেয়েকে এই দিনে পরিপাটি দেখতে ভালোবাসেন তিনি।দুই মেয়ে তার।রুবিনা ও প্রিয়তা।দুই মেয়ে বাবার কলিজার টুকরা।রুবিনার বিয়ে হয়ে একটি ফুটফুটে ছেলে আছে।আজ রুবিনা শাড়ি পরে ছেলেকে ছোট পাঞ্জাবি পড়িয়ে বাবার বাড়ি এসেছে।পলাশ মাহমুদ এর বোন সন্তান সব একই জায়গায়।শুধু প্রিয়তা দূরে।এজন্য প্রিয়তার জন্য আলাদা অনুভব।
প্রিয়তার কথার মাঝে রুবিনা আসে।বোনকে দেখে বলে,”হ্যা রে বোন!তোর বর আজকে পাঞ্জাবি পড়েনি?তোর দুলাভাই তো এখন অফিসে।একটু পর আসবে।বলেছি পাঞ্জাবি পড়ে বাসায় আসবে। তা নাহলে আজ বাড়িতে না খাইয়ে রাখবো।”
রুবিনার এমন কথা শুনে অনুপম সাথে সাথে ঘরে দৌড় দিলো।যেয়ে নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়লো।একটু পর রুবিনা কথা বলতে চাইবে তার সাথে।এটা প্রায়ই হয়।তাই পাঞ্জাবি পড়ে নিলো।প্রিয়তা বোনের কথা এড়াতে হালকা হেসে বললো,”আচ্ছা আমাদের পুস্কু সোনা কোথায়?ওকে তো দেখছি না।পাঞ্জাবি পড়েছে ও?”
বোনের কথার উত্তরে রুবিনা একটু অবাক হলো।তবে বেশি পাত্তা না দিয়ে বললো,”ও আর কি করবে?দুপুর হয়েছে ঘুমোচ্ছে।একটু পর উঠবে।”
রুবিনার কথার মাঝে অনুপম ডায়নিংয়ে আসলো।প্রিয়তা তাকালো অনুপমের দিকে।দামী পাঞ্জাবি সুন্দর কারুকাজ করা।নিচে তাকিয়ে হেসে দিলো প্রিয়তা।এত সুন্দর পাঞ্জাবির সাথে কি না পুরনো কোচকানো লুঙ্গি। এ যেনো নানা দাদাদেরকে প্রমোট করছে।বোনের হাসি দেখে রুবিনা বললো,”কি রে বোন!এত হাসছিস কেনো!মজার কিছুই তো বলিনি আমি!”
বোনের কথার কি উত্তর দিবে সে।সে তো হেসেই চলেছে।অনুপম ক্ষেপে গেলো যেনো।হাসির কি আছে।পাঞ্জাবির সাথে কি লুঙ্গি পড়া যায় না!প্রিয়তার থেকে ফোন নিয়ে রুবিনার সাথে কথা বললো অনুপম,”আসসালামু আলাইকুম আপু।ভালো আছো তুমি আর তোমরা?”
রুবিনা সালামের উত্তর দিলো,”ওয়া আলাইকুমুস সালাম।ভালো আছি আমি ও আমরা সবাই।তোমরা ভালো আছো তো?”
অনুপম বললো,”হ্যা ভালো আছি।জামাই বাবু কোথায়?আসেনি এখনও!”
জবাবে মুখ কুচকালো রুবিনা।বললো,”আর কোথায় থাকবে সে? অফিসে আছে এখন।পুরনো হয়ে গেছি না আমি।ছেলে হয়েছে এখন।আগের মত ভালোবাসা নেই।”
বউয়ের অভিযোগ শুনে ফেললো রুবিনার বর আলেক।মাত্র ঢুকলো বাসায়।হাফ ডে অফিসে ছিলো।এসেই বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে অবাক সে।সে তো প্রতিদিন তার বউকে কত কিছুই না দেয়। এখনও তার ভিতর পুরনো প্রেম ভেসে আসে।কাছে গেলেই তার বউ উল্টো বলে,”ইশ বুড়োর কি ঢং!ছেলে হয়েছে একটা।সেদিকে নজর আছে তার।”
আর এখন কি না তার নামেই মিথ্যা অপবাদ।
মুখ গোমড়া করে আলেক বললো,”পারলে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে!আজও আসার সময় তোমার জন্য বেলি ফুলের মালা আনলাম।তোমার খোঁপায় দিবো বলে।ভালোবাসা আমার কমেনি।কমেছে তোমার।”
আলেকের কথা শুনে অনুপমের নাকে যেনো এবার বেলি ফুলের ঘ্রাণ আসলো।অতঃপর তাকালো প্রিয়তার দিকে।দেখলো আজ প্রিয়তা খোঁপায় বেলি ফুলের মালা দিয়েছে।বেশ মানিয়েছে প্রিয়তাকে।
আলেক এসে কথা বললো অনুপমের সাথে।এক ফাঁকে বললো,”ভাইরা ভাই আজ তো আমরা ফ্যামিলি ফোটো তুলবো।তোমরাও আপাদত সিঙ্গেল অবস্থায় তুলো।বাচ্চা হয়ে গেলে এই সুযোগ মিস হয়ে যাবে।”
লজ্জা পেলো অনুপম ও প্রিয়তা।মুখে কিছু বললো না।আরো কিছু আড্ডা দিয়ে কল কেটে দিলো।
প্রিয়তা কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো।তারপর মিনমিন করে বললো,”আমার কিছু ছবি তুলে দিবে।”
অনুপম নিজের দিকে তাকালো।তার নিজেরই কেমন যেনো লাগছে।এবার ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকালো প্রিয়তা।অনুপম দেখলো ব্যাপারটা।বললো,”এত হাসতে হবে না।আমি লুঙ্গি পাল্টিয়ে আসছি।ছাদে চল ছবি তুলবো।ওখানে খোলা আকাশের নিচে সুন্দর লাগবে।”
বলেই ঘরে গেলো অনুপম।প্রিয়তা আয়নায় নিজেকে পরখ করলো।ঠিক আছে সবকিছু।পাশে তাকিয়ে দেখলো বিড়াল এখনও আছে।বিড়ালকে কোলে নিয়ে বললো,”চল আজ প্রথম ছাদে যাবো আমি।এই কলেজ আর বাসা করতে করতে বাইরে যাওয়া হয় না।আমার সাথে তুইও চল।”
বলতে বলতে ও অনুপম আসলো।এবার যেনো পারফেক্ট অনুপম এসেছে। নীল পাঞ্জাবি,কালো জিন্স,মাথা চুলগুলো স্পাইক করা আর চোখে চশমা।প্রিয়তাকে জিজ্ঞাসা করলো,”ছবি তুলতে পারিস ঠিকমতো?”
প্রিয়তা বিড়ালকে কোলে নিয়েই বললো,”কেনো পারবো না?খুব ভালো পারি। চলো তুমি ছাদে।দেখবে সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে দিবো।”
অনুপমের ক্যামেরা হাতে নিয়ে ছাদে গেলো দুজন।সাথে বিড়াল ছানা ছিলো।ছাদে দু একজন মানুষ ছিলো।এই বিল্ডিংয়ের মানুষ জানে অনুপম বিয়ে করে বউ এনেছে।কিন্তু বউকে দেখেনি অনেকে।ঢাকা শহরের লোকজন এমন।নিজের মত থাকে।কেউ কারো খোঁজ খবর নেয় না। অনুপমকে তাই চিনে না কেউ আবার প্রিয়তা!তবে মাঝে মাঝে প্রিয়তাকে দেখেছে তারা।কিন্তু অনুপমের বউ এটা জানতো না।যাতায়াতে যা দেখে।আজ এই দুজনকে একসাথে দেখলো তারা। বর নীল রঙের পাঞ্জাবি ও বউ রানি গোলাপী রঙের শাড়ি।দুজন পারফেক্ট সাজ দিয়েছে।প্রতিবেশী এক দম্পতি গেলো তাদের সাথে কথা বলতে।তারাও নতুন এসেছে।পরিচিত হলো তারা।ভালো লাগলো দুই জোড়া দম্পত্তির।এরাও গ্রাম থেকে আসা।ফ্রী মাইন্ডেড লোকজন।
অবশেষে কথা শেষ করে ছবি তুলতে শুরু করলো।অনুপম প্রিয়তার ছবি তুলে দিয়েছে। আর প্রিয়তা অনুপমের ছবি তুলে দিয়েছে।এমন সময় অন্য দম্পতিরা তাদের এক করে ছবি তুলে দিলো।বেশ দূরে দূরে ছিলো তারা।ছবি ভালো আসছে না দেখে তারা বললো,”একটু কাছাকাছি হন আপনারা।ভাই একদিকে তো ভাবী আরেক দিকে।এরকম হলে তো ভালো মানাবে না।”
অনুপম আগালো প্রিয়তার দিকে।কিছু ছবি তুললো।তারপর যে যার ঘরে চলে আসলো।বিড়ালটি চলে গেলো তার নিজ মালিকের কাছে।
ঘরে এসে প্রিয়তা তার ঘরে যাবে এমন সময় অনুপম বললো,”কাল মা বাবা আসবে।মায়ের তো ডিসেম্বরের ছুটি পড়েছে।এছাড়া স্কুলের ঝামেলা থাকে।তুই পারবি তো রান্না বান্না করে সবকিছু ম্যানেজ করতে?”
প্রিয়তা বললো,”ফুফু আম্মা হয় আমার।আমি পারবো না কেনো?খুব ভালো পারবো।তুমি টেনশন নিও না।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনুপম বললো,”কাল তোকে আমার ঘরে শিফট হতে হবে।মা বাবাকে এত তাড়াতাড়ি সব জানাতে চাই না।আসা করি বুঝতে পারছিস তুই?”
প্রিয়তা বুঝলো অনুপমের ব্যাপার। সে নিজেও তো বাবা মাকে কিছু বলেনি।এত তাড়াতাড়ি বলতেও চায় না।এই ভাইবোন মিলে না আবার তাদের বিচ্ছেদে ঝামেলা করে।তাই বললো,”আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু তুমি একটু স্পেস রাখার ব্যবস্থা কর।”
অনুপম স্মিত হাসলো।বললো,”হয়ে যাবে ব্যাবস্থা।”
বলেই চলে গেলো দুজন দুই ঘরে।
চলবে,