তুমি ছিলে বলেই পর্ব ২১

0
166

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ২১
#দিশা_মনি

স্নেহা তার ১৫ লাখ টাকা ফেরত পেল। তার মনে শান্তি যেন ফিরে এলো। এখন টাকা ব্যবহার করেই সে দীপ্রর কাছ থেকে নেয়া ঋণের টাকা ফেরত দেবে। একইসাথে কুদ্দুস মিয়ার টাকাও সে এখন ফেরত দিতে পারবে। টাকা হাতে পেতেই স্নেহা রওনা দিল দীপ্রদের বাড়িতে। আজ সর্বপ্রথম সে দীপ্রকে টাকাটা ফেরত দেবে। সে চায়না তাদের কাছে কোন ঋণ রাখতে যা নিয়ে তারা পরবর্তীতে কথা শোনানোর সুযোগ পায়।

এদিকে দীপ্রদের বাড়িতে সাজ সাজ রব। আজ দীপ্ররা সপরিবারে ইশাদের বাড়িতে যাবে। দিলারা খাতুনের খুশি আজ আর ধরে না। সব কিছুর তদারকি আজ তিনিই করছেন। স্নেহা দীপ্র দের বাড়িতে এসে কলিং বেল চাপলো। তার কিছু সময় পর দিলারা খাতুন এসে দরজা খুলে দিলেন। স্নেহাকে দেখে তিনি চরম বিরক্তি নিয়ে বললেন,
“তুমি আবার এসেছ আমাদের বাড়িতে। তোমার কি কোন লজ্জা নেই?”

“দীপ্র ভাইয়াকে ডেকে দিন। আমার ওনার সাথে কথা আছে।”

“কি কথা আছে আমার ছেলের সাথে হ্যাঁ? আমি কিছু বুঝি না ভেবেছ? নিশ্চয়ই আবার ওর কাছে হাত পাতবে। শোনো আমার ছেলে দাতা হাতিম নয় যে তোমাকে সবসময় সাহায্য করবে। এখন দূর হও তো।”

এরইমধ্যে দীপ্র সেখানে উপস্থিত হয়ে যায়। সে বলে ওঠে,
“কি হয়েছে আম্মু? এত চেচামেচি করছ কেন?”

“এই দেখ না, এই মেয়েটা আজ আবার সাহায্য চাইতে চলে এসেছে। কি মনে করেছে টা কি বুঝতে পারছি না।”

স্নেহা দীপ্রর সামনে এসে তার হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দিয়ে বলে,
“আমি কোন সাহায্য চাইতে আসিনি। আপনাদের থেকে যে ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলাম তা ফেরত দিতে এসেছি। আমরা আপনাদের মতো এত ধনী নই ঠিকই কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের কোন আত্মসম্মান নেই। বারবার লোকের কাছে হাত পাতি না আমরা।”

বলেই স্নেহা চলে যেতে উদ্যত হয়৷ দীপ্র তাকে পিছু ডেকে বলে,
“এত টাকা হঠাৎ কোথায় পেলি তুই?”

দিলারা খাতুন বলে উঠলেন,
“বুঝতে পারছিস না? এসব মেয়েদের কি ব্যবসার অভাব আছে নাকি? জার**জ মেয়েরা আর কত ভালো হবে।”

স্নেহা আজ আর সহ্য করতে পারলো না। দিলারা খাতুনের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আপনি নিজের মুখে লাগাম লাগান চাচি। আপনি যদি আপনার বড় না হতেন তাহলে আমি…”

“তাহলে কি করতে তুমি? দেখেছিস দীপ এই মেয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আমাদেরই হুমকি দিচ্ছে।”

স্নেহা দিলারা খাতুনের এমন ব্যবহারে ভীষণ রেগে যায়। সে রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
“একজন নারী হয়ে আপনি আমার সম্পর্কে যে ধরণের মন্তব্য করেছেন তা শোভনীয় নয়। আপনি নারী জাতিকে কলংকিত করেছেন। তবে কি জানেন তো এই পৃথিবীতে কোন কিছুর প্রতিবাদ থেকে আমরা বঞ্চিত হই না। ভালো কাজের যেমন ভালো ফল পাই তেমনি খারাপ কাজের পরিণামও আমাদের ভোগ করতে হয়। আজ আপনি আমাকে যেভাবে অপমান করলেন দেখবেন একদিন আপনাকে এর থেকেও হাজারগুণ বেশি অপমানের শিকার হতে হবে।”

“তোমার তো সাহস কম নয়। আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকেই অভিশাপ দিচ্ছ। এক্ষুনি বের হও।”

“যাচ্ছি আমি। আপনাদের বাড়িতে থাকার জন্য তো আর আসিনি।”

বলেই স্নেহা বেরিয়ে যায়। স্নেহা চলে যেতেই দিলারা খাতুন দীপ্রর সামনে নাটক করে বলতে লাগলেন,
“দেখলি তো ঐ মেয়ের কি দুঃসাহস। আমাকে কিভাবে অপমান করল। তুই ওকে কিছু বললি না কেন?”

“আমি কেন কিছু বলব আম্মু? তোমার কি দরকার ছিল ওকে এমন জঘন্য কথা বলার? একটা মেয়ের কাছে তার চরিত্র কতটা গুরুত্বপূর্ণ তুমি জানো না? কারো সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে একটু ভেবে তো নাও। শুধু শুধু ব্যাপারটাকে অতিরঞ্জিত করছ কেন?”

“ওহ, এখন তো সব দোষ আমার। আমি তো সব দোষ করেছি। তুই শুধু আমার দোষটাই দেখলি আর ঐ মেয়ে যে আমাকে এত কিছু বলল সেটা কিছু না?”

“আম্মু এখন আমরা একটা যায়গায় যাচ্ছি। এখন কি এসব ঝামেলা না করলেই নয়? তুমি আর আমাকে এব্যাপারে কিছু বলো না। আর পারলে নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করো। সবসময় এত বাড়াবাড়ি ভালো লাগে না।”

★★★
হাসপাতালের করিডোরে উদ্বিগ্নতার সাথে পায়চারি করছেন রাজীব চৌধুরী। ভিতরে রাহাতের চিকিৎসা চলছে। একজন ডাক্তার বাইরে এলে তিনি এগিয়ে গিয়ে তাকে শুধান,
“আমার ছেলের অবস্থা এখন কেমন?”

“আগের থেকে বেটার। তবে ক্ষতগুলো বেশ গভীর। ঠিক হতে সময় লাগবে৷ দেখে মনে হচ্ছে কেউ খুব বা’জে ভাবে পি**টিয়েছে। কিন্তু ওনার এই অবস্থা হলো কিভাবে?”

রাজীব চৌধুরী থতমত খেয়ে যান৷ সত্যিকারের ঘটনা তো এভাবে সবার সামনে বলা যাবে না। তাই তিনি বললেন,
“কলেজে মা**রামারি করতে গিয়ে এই হাল।”

★★
নিপুণ থম মে**রে বসে আছে বেলকনিতে। তার মধ্যে আজ একটু অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে। কিছুই ভালো লাগছে না৷ এরমধ্যে হঠাৎ করে সে ভীষণ শীত অনুভব করতে লাগল। মাথাও ভীষণ ব্যাথা করছিল৷ তাই সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। তার শরীরের উষ্ণতা বাড়তে লাগল। নিপুন বুঝতে পারল তার জ্বর এসেছে। গত কয়দিন থেকে তার উপর দিয়ে যা স্ট্রেস যাচ্ছে তাতে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। নিপুন কম্বল গায়ে টেনে নিয়ে গোঙাতে লাগল। কিছু সময় পর রুদ্র ঘরে এলো। নিপুণকে এভাবে গোঙাতে দেখে সে হতবাক হয়ে গেল। ছুটে গিয়ে টেনে বসল নিপুনের পাশে৷ নিপুনের মাথায় হাত দিয়েই সে বুঝতে পারল তার জ্বর এসেছে। রুদ্র ভীষণ অস্থির হয়ে উঠল। দ্রুত ডাক্তারকে ফোন করে খবর দিল। শুধু ডাক্তারকে দেখেই ক্ষান্ত হলো না সে। নিজে নিপুনের মাথায় জলপট্টি করতে লাগল। নিপুন এমতাবস্থায় গোঙাতে গোঙাতে বলছিল,
“আমায় মুক্তি দিন। আমায় যেতে দিন এখান থেকে। আমার একটুও ভালো লাগছে না।”

রুদ্র নিপুনের মাথায় চরম আবেশে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“আর বেশিদিন তোমায় অপেক্ষা করতে হবে না। আমি নিজে থেকেই তোমায় মুক্তি দেব। কিন্তু তার আগে যে আমার অনেক জরুরি কাজ বাকি আছে।”

★★★
রাজীব চৌধুরী রাহাতের পাশে এসে বসলেন। অনেক আগেই রাহাতের জ্ঞান ফিরেছে। রাহাত নিজের বাবাকে কপট রাগ দেখিয়ে বলতে লাগল,
“তুমি এতকিছুর পরও চুপ করে থাকবা ড্যাড? ভাইয়ার বাড়াবাড়ি কিন্তু এবার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে৷ ও কিনা শেষপর্যন্ত একটা বাইরের মেয়ের জন্য আমাকে এভাবে মা**রল। এজন্যই সবাই বলে পর কখনো আপন হয়না।”

“রাহাত! কি বলছ তুমি এসব?”

“ঠিকই তো বলছি আমি। ঐ রুদ্র চৌধুরী তো আমার নিজের ভাই নয়। তোমার রক্ষিতার মেয়ে ও। অথচ আমি তোমার বিয়ে করা বউয়ের ছেলে হলেও তুমি আমার থেকে বেশি ওকে গুরুত্ব দাও। এজন্যই তো নিজের পরে ওকে এমপি বানিয়েছ।”

“আর কোনদিন যেন তোমার মুখে আমি এমন কথা না শুনি। তোমরা দুজনেই আমার সন্তান। আমার কাছে তোমরা দুজনেই সমান।”

“যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তুমি ভাইয়াকে কেন সবসময় সমীহ করে চল? ওর এত বাড়াবাড়ি কেন সহ্য করো।”

“সব সময় এত উত্তেজিত হয়ে থাকলে হয় না। রুদ্র ঠান্ডা মাথায় কাজ করে সবসময়। আজ যদিওবা যা করেছে সেটা রাগের মাথায় ছিল। যাইহোক, এই ব্যাপারটা সামলাতে হলে আমাদেরও ঠান্ডা মাথায় চাল চালতে হবে।”

“কি করবো টা কি তাহলে আমরা?”

“আমি ইতিমধ্যেই সব প্ল্যান সাজিয়ে নিয়েছি। তুমি শুধু একবার সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে চলো তাহলেই সব দেখতে পারবে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

[দিলারা খাতুনের ব্যাপারে কিছু সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে যান ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here