#প্রিয়তার_প্রহর
পর্ব সংখ্যা (১৬)
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ
প্রিয়তা,
তোমার নামের মতোই তুমি মিষ্টি। তোমায় তাই তো খুব প্রিয় প্রিয় লাগে। হুট করেই প্রেমে পড়েছি তোমার। মারাত্মক ভাবে আটকে গিয়েছি। ছোটাছুটি করেও লাভ হচ্ছে না, বরং ফেসে যাচ্ছি তোমার মায়ায়। তুমি আমায় চিনবে না। আমি তোমার নাড়ি-নক্ষত্র বলে দিতে পারবো। লেখা গুলো হয়তো অগোছালো। কিন্তু আমি এই লেখাটায় নিজের সমস্ত ভালোবাসা উজার করে দিয়েছি। উইল বি ইউ আর মাইন প্রিয়তা?
সকালে ঝড় ঝাড়ু দিয়ে কিছু চিপসের প্যাকেট ফেলতে গিয়ে দরজার বাইরের ফ্লোরে একটি কাগজ দেখতে পেল প্রিয়তা। আশপাশে চোখ বুলিয়ে কাগজটির মালিককে খুঁজতে চেষ্টা করলো সে। কাউকে না দেখে কাগজটা হাতে তুলে নিল প্রিয়তা। আজকাল সব কিছুতেই সন্দেহ আর ভয় হয় প্রিয়তার। এই কাগজটা খুলতেও ভয় হচ্ছিল খুব। তবে কাগজের কোণায় “প্রিয়তা” অর্থাৎ নিজের নাম দেখে অবাক হলো প্রিয়তা। কাগজে লেখা বাক্য গুলো আওড়াল। চট করে হাসি পেল প্রিয়তার। ঘটনাটাকে প্র্যাঙ্ক বলে মনে হলো। কাগজের মালিককে খোঁজার চেষ্টা অবধি করলো না। যে ভালোবাসে সে সামনাসামনি বললো না কেন? প্রিয়তাকে অবাক করতে চাইছে লোকটা? প্রিয়তা যেন লোকটার জন্য চিন্তা করে এটাই চাইছে? প্রিয়তা ভাবল কিছুক্ষণ। যার প্রিয়তাকে দরকার সে প্রিয়তার এমন গা ছাড়া স্বভাবে ব্যথিত হবে। লোকটা আবার ও চিঠি লিখবে হয়তো। একসময় নিজেই এসে ধরা দেবে। প্রিয়তা খুঁজবে না তাকে।
গতকাল রাতেই ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছে প্রিয়তা। বাজার সদাই ও করেছে কিছু কিছু। পরিক্ষার ফি দিতে গিয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছে প্রিয়তার। সে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে পরিশ্রমী ব্যক্তিরা কেন এত সহজে টাকা ভাঙতে চায় না। প্রিয়তার পুরো এক মাসের পরিশ্রমের টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। অল্প কয়েক টাকাই অবশিষ্ট আছে তার কাছে।
আরহামকে সব বুঝিয়ে সুঝিয়ে ভার্সিটির জন্য বের হলো প্রিয়তা। শীতের কারণে শাল জড়িয়েছে গায়ে। সকাল আটটা বেজে এখন বারো মিনিট। কুয়াশা দেখা যাচ্ছে অদূরে। কাছে গেলেই হারিয়ে যায় সেই কুয়াশা। শিশির ভেজা গাছগুলোতে জীবন্ত লাগে।
প্রিয়তা অটো স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াল। বার্ষিক পরিক্ষা অতি নিকটে। গোটা এক মাসে পড়াশোনাতে তেমন মন দেয়নি প্রিয়তা। কুসুমের পেছনে আর কোচিংয়ে থাকা স্টুডেন্টদের পিছনে অনেক সময় দিয়েছে সে। এখনের সব ক্লাসগুলোতে মনোযোগী হতে হবে। প্রিয়তা ঘড়ি দেখে নিল আবার ও। মনে পরল ট্র্যাকিং ডিভাইসের কথা। রিকশা নেই বাইরে। ঠান্ডায় কারোই বোধহয় বের হতে ইচ্ছে করবে না এখন। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে প্রিয়তার সর্দি লেগেছে। ব্যাগে টিস্যূ রাখতে হচ্ছে সর্বক্ষণ।
আশপাশে তাকিয়ে প্রিয়তা অটো খুঁজল। রিকশায় গেলে ভাড়া বেশি নেয়। এখানে অটো নেই। প্রিয়তা ভাবল সামনেরটুকু হেঁটে যাবে। কিন্তু তাতে বিঘ্ন ঘটল প্রহরের আগমনে। প্রহরের পরণে আয়রণ করা পুলিশের পরিচ্ছন্ন পোশাক। মাথায় বাইকের হেলমেট। হাতে চকচকে কালো ঘড়ি। কোমড়ে ছোটখাটো বন্দুক গুঁজে রাখা। মুখে অমায়িক হাসি। প্রিয়তা থমকাল। প্রহর বাইক থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কোথায় যাচ্ছেন প্রিয়তা।
প্রিয়তা হাসল। পুলিশম্যানকে দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায় তার। লোকটার মাঝে হয়তো জাদু আছে। লোকটার নজরকাড়া হাসিতে প্রিয়তা সবসময় বেকায়দায় পরে। নজর বুলিয়ে প্রিয়তা বললো,
” ভার্সিটিতে যাচ্ছি। ইমপরট্যান্ট ক্লাস আছে। অটোই খুঁজে পাচ্ছি না। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
” এলাকা টহল দিতে।
” ও আচ্ছা।
প্রহর আশপাশে নজর বুলিয়ে বাইকের আয়নায় মুখ দেখল। চাপ দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললো,
” চলুন আপনাকে পৌঁছে দিই।
প্রিয়তা নিজেও আশপাশে তাকাল। জাফরের
লোকটাকে দেখে প্রিয়তা উঠে পড়ল বাইকে। দুরত্ব মেপে বসল। হেলমেট পরে নিল। আনইজি ফিল করলো প্রিয়তা। ব্যাগটা কোলে রাখল। বাইকর আয়নায় প্রিয়তার এমন দুরত্বে বসার বিষয়টা খেয়াল করলো প্রহর। হাসল একটু। বললো,
” আমার গায়ে তো গন্ধ না। দুরত্ব কমিয়ে বসুন। পরে যাবেন প্রিয়তা।
প্রিয়তা থতমত খেল। বললো,
” আমি ঠিক আছি চলুন।
” আমি কিন্তু দ্রুত গতিতে বাইক চালাই। পড়ে গেলে আমাকে দোষ দিবেন না
“আপনি না পুলিশ? পুলিশ হয়ে জোরে বাইক চালান?
” জনগন করলে দোষের। পুলিশদের দোষ নেই বুঝলেন। ধরে বসুন প্রিয়তা। ওয়ার্ন করছি।
প্রিয়তা দুরত্ব কমাল। হাত রাখল প্রহরের কাঁধে।প্রহর বাইক স্টার্ট দিল। জাফরের লোকটা পিছনে আসছে না। হয়তো প্রহরের চোখে ধরা পরার ভয়েই আসছে না। প্রিয়তা নেমে যেতে চাইল। কি মনে করে যেন থেকে গেল। পুরোটা পথ চুপ রইল দুজন।
______________
কিবোর্ডের খটখট টাইপিংয়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দশ জন পুলিশ একত্রে সার্চ করছে জাফরের তথ্যগুলো। কোনোকিছুই সার্চ করে আয়ত্বে আনা যাচ্ছে না। গতকাল তানিয়া বা ইহান এমন কাউকে পায়নি যে খলিলের আসল মুখোশ সম্পর্কে জানে। শেষমেশ হতাশ হয়ে ফিরে এসেছে ইহান আর তানিয়া।
একটি কাগজে ইহান এঁকে চলেছে কিছু একটা। মাঝে মাঝে ভাবছে কিছু কথা। অনবরত ঠোঁট নারাচ্ছে সে। দাগ টানছে খাতার এপাশে ওপাশে। প্রহর স্যার নেই থানায়। ফিরতে উনার একটু লেট হবে। সব দায়িত্ব ইহানকে পালন করতে হচ্ছে। তানিয়াকে সর্বক্ষণ ল্যাপটপে নজর রাখতে হচ্ছে, সার্চ করতে হচ্ছে।
মেইন করিডোরে একজন অর্ধবয়স্ক কনস্টেবল এলো। সবাইকে একত্রে কাজ করতে দেখল লোকটা। তানিয়ার উদ্দেশে বললো,
” তানিয়া ম্যাম।
তানিয়া চোখ সরাল ল্যাপটপ থেকে। ইহান ও কাজে বিরতি নিলো। আড়চোখে তাকাল কনস্টেবলের দিকে। তানিয়াকে কি বলছে তা শুনতে চাইল বোধহয়। তানিয়া বললো,
” বলুন। কিছু হয়েছে?
” আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে। আমি বলেছি আপনি বিজি। কিন্তু উনার নাকি অনেক জরুরী কথা আছে আপনার সাথে। বললো উনি আপনার ফিয়ন্সি।
তানিয়া ভড়কাল। আবির কখনো এখানে আসে না। বলতে গেলে আবিরের থানায় আসা পছন্দ করে না তানিয়া। যেজন্য বিয়ে ঠিক হবার পর পরই তানিয়া এ ব্যাপারে আবিরকে সচেতন করেছে। হঠাৎ আবিরের এখানে আসার কারণ বুঝতে পারল না তানিয়া। ইহানের দিকে চাইল একটু। ইহান তানিয়ার ভাষা বুঝল। অনুমতি দিল যেতে। তানিয়া শার্টের কলার ঠিক করে দ্রুত পা চালাল।
আবির দাঁড়িয়ে আছে থানার বাইরে। আবিরের উচ্চতা তানিয়ার চেয়ে অধিক। ফর্সা গায়ের রং। গায়ে সাদা শার্ট। হাত ঘড়িতে সময় দেখছে ছেলেটা।
তানিয়া এগিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি এখানে?
” তোমাকে কখন ডেকেছি? এতক্ষণ লাগে?
” আমি আপনাকে থানায় আসতে নিষেধ করেছিলাম আবির। কেন এসেছেন?
” আমার সাথে এখন যাবে তুমি। কথা আছে।
” গুরুত্বপূর্ণ একটা কেস হাতে পেয়েছি। আপনার কথায় এখান থেকে গেলে চাকরি থাকবে? প্রহর স্যারও আজ থানায় নেই।
“যাবে তুমি?
” না।
” সত্যিই আঙ্কেলের বিয়ে দিচ্ছো?
” হ্যাঁ দিচ্ছি।
” আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি তানিয়া। শ্বশুরের বিয়ে হবে ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে। তোমার এটা কি শুরু করেছো? আমার কলিগরা জানলে..
” আমার লজ্জা লাগছে না। বাবার ভালো চাইবো আমি।
” তুমি যদি এমন অবাধ্যই থাকো সরি টু সে আমি বিয়ে করবো না তোমায়।
” আপনাকে বিয়ে করার জন্য কি আমি লাফাচ্ছি? নাকি আপনি আমাকে বিয়ে না করলে আমি মরে যাবো? বাবার বিয়েটা ফাইনাল। পাত্র-পাত্রী দুজনেই রাজি। আপনি কেন এসবে এসে নিজেকে ছোট করছেন?
” ওউ, আচ্ছা। তাহলে আমাদের বিয়ে ক্যানসেল? শোনো তানিয়া একেঅপরের প্রতি সম্মান না থাকলে সম্পর্ক টিকে না। তুমি আমার মতামতে গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে অসম্মান করছো। বিয়ে না হলে তোমারই ক্ষতি হবে। লোকে বলবে তোমার বিয়ে ভেঙেছে। তোমার বাবা তো সবাইকে জানিয়েছে আমার সাথে তোমার বিয়ের কথা।
তানিয়া রেগে গেল ভিষণ। দ্রুত থানায় ঢুকে পরল। কাজে মনোযোগ দিল আবার ও। আজকে রাতে খলিলের বাড়িতে আক্রমণ করবে পুলিশরা। সেই প্রস্তুতি চলছে থানায়। এই ঘটনায় কত জন আহত আর কতজন নিহত হবে কেউ জানে না? এদিকে আবিরের এমন কথা শুনে মেজাজ খারাপ হলো তানিয়ার। সবটায় কিভাবে নিজেকে সামলাবে বুঝতে পারছে না তানিয়া।
——
রাত বারোটা বেজে দশ মিনিট। চারদিকে কুয়াশা। গা শিরশির করছে তানিয়ার। খড়ি দিয়ে জ্বালিয়ে রাখা আগুনের মাধ্যমে হাতে তাপ দিচ্ছে তানিয়া। মৃদ্যু কেঁপে উঠছে তানিয়ার ঠোঁট। নাক লাল হয়ে আছে ঠান্ডায়। মাঝে মাঝে হাঁচি ও দিচ্ছে। আবহাওয়ার এইরুপ পরিবর্তনের কারণে অনেকের ঠান্ডা লেগেছে। তানিয়ার ঠান্ডার ধাঁচ নেই। এত রাতে বাইরে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার কারণেই এমন হচ্ছে। তারা সবাই এখন আছে জঙ্গলে। চারপাশে কেবল গাছপালা। ত্রিশ জন পুলিশ একত্রে এসেছে এখানে। বাকিরা আসার সাহস করেনি। তানিয়ার গায়ে শাল বা জ্যাকেট নেই। যেই ব্যাগে শাল ছিল সেই ব্যাগ থানাতেই ভুলে রেখে এসেছে সে। যার ফল স্বরুপ ঠান্ডায় কাঁপতে হচ্ছে এখন। গা বরফের ন্যায় জমে যাচ্ছে।
প্রহর আর ইহানের গায়ে জ্যাকেট। সকলেই বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়েছে। জাফর আর খলিলের লোকজন খুব ধুর্ত আর ভয়ঙ্কর পুলিশের গায়ে গুলি ছুঁড়তে সময় নিবে না তারা। ইহান প্রহরের সাথে কথা বলতে বলতে তানিয়ার দিকে চাইল। চেয়েই রইল। প্রহর তা দেখে হাসল একটু। ইহানের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
” না গেলে হয় না ইহান? আমাদের রেখে অন্য এলাকায় যাবি? ভালো লাগবে তোর?
ইহান হাসল। মনোমুগ্ধকর হাসি ছেলেটার। ব্যথা সমূহ বুঝলো প্রহর। ঘাঁটিয়ে দেখল না শুধু। ইহান চুলে হাত বুলিয়ে বললো,
” দুরত্ব বেড়ে গেলে কি ভালোবাসা কমে? একই শহরে তো আছি নাকি? মাঝে মাঝে আসবো। দেখা হবে।
” তানিয়াকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে না তোর? কেন যাচ্ছিস তাহলে? ভালোবাসিস বলে দে।
ইহান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলো। বিস্ময়ে বিমূঢ় চোখে তাকিয়ে রইল। আশপাশে তাকিয়ে অন্যের উপস্থিতি আছে কিনা দেখল ইহান। প্রহরের কলার টেনে কাছে এনে বললো,
‘ তুই জানিস?
” জানবো না? হেসে বললো প্রহর।
” কিভাবে জানিস?
” সিক্সথ সেন্স।
ইহান আর প্রহর দুজনেই হাসল। ফোঁস করে শ্বাস টানল। কিছু বললো না। এগিয়ে এলো তানিয়ার সামনে। আগুনের পাশে বসে পড়ল। তানিয়ার দিকে তাকিয়ে রাগী কণ্ঠে বললো,
” জ্যাকেট কই তোমার? বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটে কি শীত মানবে? কোনো আক্কেলজ্ঞান নেই তোমার?
তানিয়ার মুখ নত হলো। নম্র কণ্ঠে বললো,
” থানায় জ্যাকেটটা ফেলে এসেছি স্যার। তখন তো বুঝিনি এত লেট হবে মিশনে যেতে।
” তুমি মিশনে যাবে না তানিয়া। বাড়ি যাও।
” মানে কি?
‘ মানে তুমি যাবে না।
” কিন্তু কেন? আমি কি করেছি?
” রিস্ক আছে তানিয়া। বুঝো একটু। বাড়ি যাও। যেও না যা আমাদের সাথে। বিপদ হলে?
” আপনি বন্ধু হিসেবে আমাকে ট্রিট করছেন স্যার। আপনাকে অনুরোধ করছি, আমাকে আপনার জুনিয়র কলিগ ভাবুন আর সঠিক শিক্ষাই দিন। ভয় পেয়ে দূরে সরতে চাই না আমি। আপনি তো কখনো কাউকে এমন বলেন না।
ইহান হার মানল। বললো,
” বেশ। আমার পেছন পেছন থাকবে সবসময়। বুঝলে?
মাথা নাড়ল তানিয়া। ইহান নিজের জ্যাকেট খুলে তানিয়ার হাতে দিল। বুঝে নিল তানিয়া।পড়ে নিল মস্ত বড় জ্যাকেটটা।
___________
বিরাট বড় বাড়ি। চারপাশে গাছপালাতে ঢেকে আছে যেন। মটমট করে গাছের পাতা ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে পায়ের চাপে। সবার মনোযোগ বাড়িটির দিকে। আক্রমন করলেই প্রতিপক্ষদের থেকেও আক্রমণের মুখোমুখি পরতে হবে। জায়গাটা খুবই নির্জন। পেঁচা ডাকছে বারবার। ঝিঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। নির্জনতায় ভয়ঙ্কর একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রাত একটার সময় এমন আক্রমণ কোনো পুলিশ করে? দেশের শত্রুরাই এমন ভাবে আক্রমণ করে। তবে খলিল র জাফরের যে ক্ষমতা তার বিন্দুমাত্র ক্ষমতা পুলিশের নেই। তাই লুকিয়ে পেছন থেকে আক্রমণ করছে হচ্ছে।
প্রথমে প্রহর দাঁড়িয়ে আছে। এরপরেই ইহান আর ইহানের পেছনে বন্দুক দু হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে তানিয়া। বুক কাঁপছে তার। এই ঠান্ডায় রুহ্ কেঁপে উঠছে। পা ফেলতেও ভয় হচ্ছে খুব।ইহান পেছনে তাকিয়ে তানিয়াকে লক্ষ্য করলো। মেয়েটা ভয় পাচ্ছে বোধহয়। ভয় ইহান আর প্রহরের ত হচ্ছে। কিন্তু তারা ভয় বুঝতে গেলে বাকি সবাই পিছিয়ে পড়বে।
ইহান বাড়ির পেছনে গেল। প্রহর সামনে এসে দরজার সামনে কান পাতল। চারদিক দিয়ে বাড়িটি ঘিরে ফেলল পুলিশ টিম। কয়েকজন পাইপ বেয়ে ছাদে উঠল। ভেতরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে আক্রমণ করবে ভেবেছে প্রহর আর ইহান। পদক্ষেপ নিতে হবে কৌশল খাটিয়ে। একটা শব্দ হলো বাড়ির পাশে। তানিয়া ভয় পেল। পেছন থেকে ইহানের শার্ট খামচে ধরলো সে। ভয়ে থিতিয়ে গেল। এত বড় একটা মিশনে সে কখনো আসেনি। প্রথম বলে এত ভয় লাগছে তানিয়ার। ইহান চোখ দ্বারা আসস্ত করল তানিয়াকে। তানিয়া থামল। ভয় দূর করার চেষ্টা করলো। বাড়ির ভিতর থেকে গুলির বিকট শব্দ ভেসে উঠল। তানিয়া দ্রুত স্থান ত্যাগ করে দেয়ালের আড়ালে লুকাল। ইহান এগিয়ে গেল তানিয়াকে রেখে। একেক করে গুলি ছুড়ল দু পক্ষই। গাছগাছালি কেঁপে উঠল বোধহয়। বোমা ছুড়ল পুলিশের দিকে। সবাই নিজেদের জায়গা ঠিক করে নিল। দেয়ালের আড়ালে একজনকে দেখতে পেয়ি তানিয়া লোকটার পায়ে গুলি করলো। চেঁচিয়ে উঠল লোকটা। প্রহর একের পর এক গুলি ছুড়ল গাছের আড়াল থেকে। দুজন পুলিশ অফিসার আহত হলো। প্রহর হুট করে চেঁচিয়ে উঠল দ্রুত ফোন বের করলো পকেট থেকে। প্রিয়তাকে কল করলো। তিনবার রিংয়ের পর ঘুমুঘুমু কণ্ঠে প্রিয়তা কল ধরল। হ্যালো বলার সময়টুকু দিল না প্রহর। বললো,
” আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন থানায় আসুন। ও বাড়িতে বিপদ হতে পারে প্রিয়তা। আমি রিস্ক নিতে চাইছি না। আরহামকে নিয়ে সরে যান আল্লাহর দোহাই লাগে।
চলবে?