#প্রেম_পুকুর
[১১]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন
রোজ আকাশে সূর্য উঠতে দেখি আবার সন্ধ্যায় সূর্যকে অস্ত যেতেও দেখি। এই দেখাদেখির মাঝে আমাদের জীবন থেকে অনেকটা সময় চলে যায়।জীবনের এই উত্থান পতনের শেকলে আমরা সবাই জড়িয়ে।
দেখতে দেখতে অনিকা আর আমানের বিয়ের দিন চলে এসেছে। বেশ জমকালো আয়োজনে সাফোয়ানদের বাসার ছাদে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে।
শিমু আর অনিকার কাজিনরা অনিকাকে গায়ে হলুদের জন্য প্রস্তুত করছিল।
মাঝেমধ্যে দু’একটা দুষ্টুমিও করছে অনিকার গাল বার বার রাঙা হয়ে যাচ্ছে তাতে ।
শিমু অনিকার গাল টেনে দিয় বলল,”ননদী তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আমান ভাই তোমাকে দেখল অজ্ঞানই হয়ে যাবে।
রুমে উপস্থিত সবাই খলখলিয়ে হেসে উঠল।
অনিকার মুখ আবারো লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল।
“হয়েছে আর লজ্জা পেয়োনা।”
__________
সাফোয়ানের বাসার ছাদ অনেকটা বড় হওয়ায় আয়োজন খুব সুন্দর ভাবেই করা হয়েছে।একপাশে খাবারে ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আরেক পাশে নাচ গান ও অনিকাকে বসানোর জায়গা করা হয়েছে।
সাফোয়ান তার স্ত্রীর দেখা সকাল থেকে এই পর্যন্ত পায়নি। বড় ভাই হিসেবে ব্যাস্ততা একটু বেশি বলতে গেলে।
এখোনো গোসল করা হয়নি ওর।
সব কিছু সুন্দর ভাবে হয়েছে কিনা আবারো দেখে নিলো। একমাত্র বোন বলে কথা কোন রকম ত্রুটি রাথা যাবেনা।
আয়ান রান্নার দিকটা সামলাচ্ছে। দাদী এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে তদারকি করছে সব ঠিক হচ্ছে কিনা। লায়লা বেগম রান্না কাজকর্ম অতিথি আপ্যায়ন সব মিলিয়ে সেও ভীষণ ব্যাস্ত।
দুপুরের দিকে অনিকাকে সম্পূর্ন প্রস্তুত করে শিমু নিজে তৌরি হতে চলে যায়।
মোটামাটি ননদের বিয়ে উপলক্ষে সে এসেছে সাত দিন আগে ঢাকা থেকে আর সাফোয়ান এসেছে বিয়ের তিন দিন আগে।
আসার পর থেকে সাফোয়ান ও ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে একমাত্র বোন বলে কথা দু ভাইয়ের নয়নের মণি।
শিমু নিজেদের রুমে এসেছে ফ্রেস হতে বিছানার ওপর একটি শপিং ব্যাগ দেখে অবাক হলো। সেটা খুলবে কি খুলবেনা সেটা ভাবতে ভাবতেই সাফোয়ান রুমে এসে পরল শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে। ঘর্মাক্ত শরীর শার্টের ওপরের দু’টো বোতাম খোলা ।
সাফোয়ান এসেই ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় বসে পররল।শিমু কে ইশারা করল এসি পাওয়ার বাড়িয়ে দিতে। শিমু তাই করল।
তবুও সাফোয়ানের গরম না কমায় একটানে শার্ট খুলে ফেললো। শিমু তা দেখে দ্রুত কাবার্ড এর কাছে গেল পোশাক নিয়ে ওয়াশ রুমে যাবার জন্য।
“ওদিকে কি করছো তুমি?।”
“শাড়ি নিচ্ছি এখন ফ্রেস হওয়া প্রয়োজন অনিকা কে মেহেদী দেওয়া হচ্ছে মেহেদী শুকালে ওকে গোছলে নিয়ে যেতে হবে।সেই পর্যন্ত ভাবছি আমি ফ্রেস হয়ে নেই।”
সাফোয়ান এগিয়ে গিয়ে শিমুর পিছনে গিয়ে দারালো।শিমু কাবার্ড আটকিয়ে পিছনে ঘুরতে সাফোয়ানে প্রশস্ত বুকে ধাক্কা খেল।
শিমু চলে যেতে চাইলে সাফোয়ান দুইহাত দিয়ে কোমড় আকরে ধরল।
সাফোয়ান শিমুর থুতনিটা একটু উচু করে ধরল।
“আমার থেকে এতো পালাই পালাই কর কেন?”
শিমু ভ্রুজোড়া কুচকে নিল।
সাফোয়ান শিমুর কুচকে যাওয়া ভ্রু দ্বয়ের মাঝখানে নিজের ওষ্ঠ স্পর্শ করালো।
শিমু মনের জেগে ওঠা প্রশ্ন সাফোয়ান আর করতে দিলোনা।
নিজেই উত্তর দেবার ভঙ্গিতে বলল,”এই সব আপনি টাপনিতে আমার রোমান্টিক ফিল আসেনা। পরের বউ পরের বউ মনে হয়। নিজের বউকে তুমি বলতে ভীষণ শান্তি বুঝলা। ”
সাফোয়ান শিমুর কপালের দিকে আরেক বার এগুতে গেলেই শিমু সাফোয়ান কে ছাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠল,”দূরে থাকুন। ”
“বউর থেকে আমি আর দূরে থাকতে পারছিনা। ”
সাফোয়ানের অকপটে উত্তরে শিমু স্তব্ধ এ লোকটা এত নির্লজ্জ কেমন করে হলো?
সাফোয়ান বিছানার ওপর থেকে ব্যাগটা এনে শিমুর হাতে ধরিয়ে দিল।
“এটা পরে নাও অনেক খোজাখোজির পর এটা পছন্দ হয়েছে আমার। ”
শিমু সাফোয়ানের সাথে আর ভালো মন্দ কথা বলল না এই ভয়ে লোকটা যদি আবার ঠোটঁ কাটা কথা বলে ফেলো।
অতি দ্রুত শপিং ব্যাগটা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল।
সাফোয়ান সে দিকে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে উঠল,”বউকে পটানোর থেকে মশারি টানানে সহজ।”
সাফোয়ানের নিজেরো ফ্রেস হওয়া প্রয়োজন তাই সে আয়ানের রুমের দিকে ফ্রেস হতে চলে গেল।
আয়ান একগাদা পান্জমী বিজানার ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। কোনটা পরবে সেই নিয়ে সে ভীষণ কনফিউজড।
সাফোয়ান আয়ানের কর্মকাণ্ড দেকে বিরক্ত হয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেল,”এগুলো কি করছিস তুই।”
আয়ান হতাশ হয়ে উত্তর দিল,”ভাইয়া আমি একটাও সিলেক্ট করতে পারছিনা। ”
সাফোয়ান আয়ানের পিঠে চাপর দিল জোড়ে করে।আয়ান ব্যাথায় আহ্ শব্দ করে উঠল।
“তুই দিন দিন মেয়েদের স্বভাবের হয়ে যাচ্ছিস এত ড্রেস কেও একসাথে নামায়। ইডিয়ট।”
“ভাইয়া কি করি বল মেয়েদের ইমপ্রেস করতে হবে। না হলে আমার আর বিয়েই হবেনা।”
“তুই কি বড় হবিনা।”
“আমি তো ছোট হয়েই রইলাম কয়েকদিনপর ছোট বোনের বাচ্চা মামা বলে ডাকবে।”
“হয়েছে আর আফসোস করিস না। আমি ওফ ওয়াইট রঙের একটা পান্জমী পরি আর তুই গাঢ় খয়েরি রঙের পান্জমী টা পরবি ওকে।”
“হুম এবার ঠিক আছে তাহলে তুমি দাড়াও আমি ফ্রেস হয়ে আসি।”
“দ্রত বের হবি কিন্তু ।”
______________
শিমু বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে বিছানায় শাড়িটা মেলে ধরল।ওফ হোয়াইট রঙের একটি শাড়ি আর মাঝে সুতোর কাজের হলুদ টকটকে ফুল।আর ব্লাউজটা শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে ফুল হাতা দিয়ে বানানো হয়েছ।
শিমু সাফোয়ানের রুচির প্রশংশা না করে পারলোনা। ভীষণ সুন্দর একটা শাড়ি এটা।
সাফোয়ানের এই হুটহাট সারপ্রাইজ দেওয়ার অভ্যাস ভীষণ ভালো লাগে ওর।
চুল দ্রুত হেয়ার ড্রায়ার দ্বারা শুকিয়ে হাত খোপা করে নিলো। শাড়িটা সুন্দর করে পরা শেষে আয়নার সামনে নিজের ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।
এর মাঝেই সাফোয়ান আবার রুমে প্রবেশ করল।
শিমু শাড়ি গায়ে পড়ে বোকার মতো দারিয়ে আছে কি করবে বুঝতে পারছেনা।
শুতি শাড়ী হওয়ার জন্য শিমু একা হাতে সেগুলো ঠিক করতে পারছেনা।
সাফোয়ান ধীর পায়ে হেটে গিয়ে শিমু পায়ের কাছে বসল।শিমু সাফোয়ান দেখে একটু দূরে সরে যেতে চাইলো।
সাফোয়ান চোখের ইশারায় চুপ করে দাঁড়াতে বলল।তারপর খুবই সপ্তপর্ণে নিজের স্ত্রীর কুচি গুলো ঠিক করতে লাগলো।তার পর উঠে গিয়ে আচঁলের কুচি টা করে দিয়ে সেপ্টি পিনের সাহায্য আটকে দিল।
শিমু কে ঘুরিয়ে দেখলো কয়েকবার তার পর ম্যাকাপ বক্স থেকে হালকা গোলাপি কালার লিপস্টিক নিজে শিমুকে ঠোঁঠে পড়িয়ে দিলো।
চোখে হালকা কাজল ও দিয়ে দিলো।
চুলের কাঠিটা খুলে চুলের বাধন মুক্ত করে দিল।পিঠ জুড়ে একঝাক কালো কেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরল।
সাফোয়ান সেগুলোকে সুন্দর করে আচড়ে খোলা রেখে দিল।
স্ত্রীর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।
অতঃপর মাথা আচঁল দ্বারা ডেকে দিলো।
“তোমার এই সুন্দর কেশ দেখার অধিকার শুধু আমার আছে অন্য কারোনা।”
শিমু তার প্রিয় সুদর্শন পুরুষের কথা শুনে মুগ্ধ হলো।
তার প্রিয় পুরুষটা কত যত্নশীল আর দায়িত্ববান স্ত্রীর প্রতি তার কত নিখাদ ভালোবাসা।
এই পুরুষটা শরীর ছোয়ার আগে তার মন ছুয়ে দিয়েছে কজন পুরুষ পারে নিজের স্ত্রীকে এরকম করে ভালোবাসতে।
আজকে তার নিজকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে ।
স্বামী স্ত্রীর পবিত্র ভালোবাসা শুধু শারীরিক চাহিদায় সিমাবদ্ধ থাকেনা। এটা দুজন মানুষের সার্বিক প্রয়োজনের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
কিন্তু অনেক যুগলই এর প্রকৃত অর্থ বুজতে পারেনা যার জন্য সংসারে লেগে থাকে অশান্তি আর বিতৃষ্ণা।
শিমুর মনে হলো তার সুদর্শন পুরুষটাকে বেশি সুদর্শন লাগছে।তার মনে ভয় হচ্ছে যদি অন্য কেও তার পুরুষটির দিকে নজর দেয়।
“আপনি একটু নিচু হবেন সাফোয়ান”।
সাফোয়ান বউয়ের এক কথায় নিচু হয়ে দাড়ায়।
শিমু তিন কুল পড়ে সাফোয়ানকে ফু দেয়।
সাফোয়া শিমু কাণ্ড দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,”তুমি আমাকে ফু দিচ্ছো কেন?”
“যেন কারো বদ নজর না লাগে।”
সাফোয়ান মুখের কোনে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে,”সে তো আমার ওপর তোমার কবেই লেগে গেছে ।”
শিমু মেকি রাগ দেখিয়ে চলে যেতে চায়। কিন্তু
সাফোয়ান যেতে দেয় না। নিজের স্ত্রী কে নিজের দিকে ঘুরায়।
প্রথম বারের মতো নিজ স্ত্রীর ঠোটঁ উষ্ণ স্পর্শ করায় কেপেঁ উঠে শিমুর সমস্ত শরীর স্বামীর থেকে প্রথম এমন উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে শিমু মূর্ছা যায় লজ্জায়।
আর মাথা তুলে তাকায় না।
নিচ থেকে রাজিয়া বেগম শিমুকে ডাকছিল। শিমু আর এক মুহুর্ত দেরি করে না নিচের দিকে ছুট লাগায়।
সাফোয়ান শিমুর লজ্জা রাঙা মুখ দেখে অমায়িক একটা হাসি দেয়।
চলবে,,,,