#প্রেম_পুকুর
[৭]
লেখনীতে মারিয়া মুনতারিন
আয়ান বন্ধুর চোখের দিকে গভীর চোখে তাকায়।মনে মনে আওড়ায়,”আমার বোনের সাথে শা*লা তুই এত কিছু করলি আমিই জানলাম না।”
আলতাফ সাহেব লায়লা কে বলল,”লায়লা তুমি একটু অনিকা কে নিয়ে আসোতো”।
অনিকার নাম শুনে আমানের চিত্ত পুলকিত হলো।
আয়ান চুপচাপ বসে আমানের কান্ড দেখছে।
কলেজ জিবনের একটা কথা মনে পড়ে গেল তার। তখন আয়ান আর আমান সবে ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। আমান কে যে মেয়েই পছন্দ করে না কেন আয়ান তাকে পটিয়ে নিতো।এমনকি শায়লা নামের একটা মেয়েকে আমানের অনেক ভালো লেগেছিল।বন্ধুকে সে এই ব্যাপারে জানালে আয়ান সেই মেয়েটাকে নিজ দায়িত্বে নিজের প্রেমিকা বানিয়ে নেয়।তাই আমান সেদিন আয়ানকে রাগ করে বলেছিল,”আমি এমন কাউরে গফ বানাবো দেখিস।তুই লাইন মারা তো দূরে থাক। আমার সাথে তাকে দেখলেই লজ্জা পাবি।”
আমান সত্যি সেটাই করেছে।তার নিজের বোনেরই প্রেমিক হয়েছে।
আয়ানের আকাশ পাতাল চিন্তার মাঝেই ড্রয়িং রুমে লায়লা অনিকাকে নিয়ে আসলো।
অনিকা আমানের দিকে চোখ তুলেও তাকাচ্ছে না কিন্তু আমান চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে তার প্রণয় কুমারীর দিকে। যাকে এবার সে চিরতরে নিজের করে নেবার জন্য এসেছে। আর তার প্রণয় কুমারী অভিমান দেখিয়ে দূরে যেতো পারবেনা।
অনিকাকে একদম আমানের মুখোমুখি বসানো হলো।অনিকা ভাবতেই পারছেনা ছেলেটা নিজের কথাকে এত তাড়াতড়ি সত্যি করে দেবে।
অতিরিক্ত অস্বস্তি হচ্ছে অনিকার কারন আমান একনজরে তাকিয়ে আছে তার দিকে।আর তার ভাই সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে ।
আমানের বাবা মা অনিকার সাথে কথা বলল। তাদের তেমন কিছু জানার নেই। মেয়েকে তারা আগে থেকেই চিনে।ছেলের জেদের কাছে হার মেনে এই রাত্রি বেলা তারা মেয়ে দেখতে এসেছে।
রাজিয়া বেগম চা মুখে দিতে দিতে বললেন,”আমার মনে হয় আমান আর অনিকাকে কিছুক্ষন একা কথা বলতে দেওয়া প্রয়োজন।”
রাজিয়া বেগমোর কথায় সবাই সম্মত হলেন।আমান যেন এই কথারই অপেক্ষায় ছিল।
অনিকা উঠতেই সেও অনিকার পিছন পিছন হাটা শুরু করল।
অনিকার রুমের ভিতরে আসার সাথেই আমান দরজা আটকে দিল।
অনিকার যেন নিশ্বাস আটকে গেল এমন অবস্থা তবুও কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,”দরজা কেন আটকাচ্ছ।”
আমান অনিকার কথায় পাত্তা না দিয়ে অনিকার মুখোমুখি এসে দারালো। অনিকার পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরে গেল এবার।
আমান শান্ত কণ্ঠে বলল,”আমার ফোন কেন ধরছিলেনা। আমি বলছিনা আমার দুরত্ব সহ্য হয়না।অভিমান কর যাই কর ফোন কেন বন্ধ করছো। এমন ব্যবস্থা করে যাবো আজকের পর কখোনো অভীমান করে দূরে যেতে পারবেনা।”
অনিকা ঘামতে শুরু করল।ছেলেটার জেদ সম্পর্কে অবগত সে। কিন্তু একদিনের মধ্য যে বিয়ের প্রস্তাব এনে হাজির হবে সেটা কল্পনাতেও আসেনি ওর ।
অবশ্য আমান একবার বলেছিল রাগ করে ছেড়ে চলে যেতে চাইলে ডাইরেক্ট বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে।
আর ও সেটাই করেছে।
আমান এগিয়ে এসে অনিকার কপালে চুমু একে দিল,”আমার বউ হবার জন্য প্রস্তুত হও।আমি প্রেমিক হিসেবে ভীষণ সভ্য ভদ্র কিন্তু আমি জামাই হিসেবে কিন্তু ততটাই অসভ্য অভদ্র হবো।”
নিজের কথা শেষ করে আমান ড্রয়িংরুমে চলে গেল।আর অনিকা সেখানেই মূর্তির মতো দাড়িয়ে রইল।কিছুক্ষন সময় গড়ালো তার পর অনিকা ধীর পায়ে হেটে গিয়ে এসে সবার সাথে বসল।
আর একটি বারের জন্য ভুলেও আমানের দিকে তাকালোনা।
_____________
ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বিছানায় আবিস্কার করল শিমু।কিছু মনে করার চেষ্টা করলো।
ভাবল সে তো গাড়িতে ছিলো বিছানায় এলো কিভাবে। মনে পড়লো কাদঁতে কাদঁতে গাড়িতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা।
তাহলে কি সাফোয়ান তাকে নিয়ে এসেছে।কিন্তু কেমন করে নিয়ে এসেছে কোলে করে নয়তো।ভাবতেই শিমুর কান গরম হয়ে গেল।শেষমেশ ওই লোকটার কোলে উঠেছে ও।
নিজেকে নিজেই কতক্ষণ বকাঝকা করল।
তার ভাবনার মাঝেই সাফয়ান ওয়াসরুম থেকে বের হলো চুল মুছতে মুছতে।
শিমু সেদিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে নিলো। মনে মনে ভাবলো এতোবড়ো দামড়া ছেলে একটা মেয়ের সামনে কিভাবে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর সেন্ডোগেন্জি পরে দাড়িয়ে থাকতে পারে এর কি লজ্জা নেই।
সাফোয়ান শিমু দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিলো।শিমুর যেনো সেই হাসিতে গা জ্বলে গেল।
সাফোয়ান ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলে চিড়ুনি চালাতে চালাতে বললো,”প্রায় তিন ঘন্ঠার রাস্তাতো ঘুমিয়ে এলেন। এখোনও কি ঘুমানোর প্লানিং আছে নাকি।
শিমু সাফোয়ানের কথার উওর দেবার প্রয়োজন বোধ করলো না। চুপচাপ উঠে নিজের পোশাক নিয়ে ওয়ামরুমে চলে গেল।
সাফোয়ান শিমুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,”ঘুম থেকে উঠেই ঝাঝ লবঙ্গ ঝাঝ
দেখানো শুরু করে দিয়েছে”।
_______
আমানের পরিবার একটু আগেই চলে গেছে।
অনিকা বসে বসে দাত কামড়াচ্ছে।আলতাফ বিয়ে সম্পর্কে তেমন কিছু জানায়নি আমানের পরিবারকে শুধু বলেছে, “দেখেন ভাই হুঠ করেই তো বিয়ের মতো এতো বড়ো কাজ সম্পন্ন করা যায়না তার জন্য সময় প্রয়োজন।আর ছেলে মেয়েদের ও আরেকটু নিজেদের জানার বোঝার প্রয়োজন। আর আমার বড় ছেলে আজকেই ঢাকা গেছে।আমি চাচ্ছিলাম আরেকটু সময় নিতে।”
সিরাজ ও আলতাফের কথার ওপর কোনো কথা বলেনি। তারাও কিছু সময় দিয়ে গেছেন বিয়ের সম্পূর্ন প্রস্তুতির জন্য।
আয়ান পুরো ড্রয়িং রুমে পায়চারী করছে।
অনিকা ভাইয়ের অবস্থা দেখে মেঝেতে নক খুঁটছে।
আয়ান অনিকার পাশে গিয়ে বলল,”তুই আমার ওই বোকা বোনটানা,যাকে আমি প্রেমের প ও সে জানেনা।”
আবার জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলল,”আর আমন ও তো আমার ছোটকালের সেই বলদ বন্ধু টা। যে নাকি ভজা মাছ উল্টে খেতে জানেনা।”
নিজের কথা শেষ আয়ান আহাম্মকের মকো বসে রইলো। তার এত দিনের হিসেব সব উল্টো হয়ে যাচ্ছে।
রাজিয়া বেগম এসে সোফার ওপর বসলেন।মনে মনে তিনি একটু সাফোয়ান শিমুর প্রতি রাগান্বিত। তাই পরিবারের কারো সাথেই তিনি প্রয়োজন ব্যাতীত কথা বলছেননা।
লায়লা বেগম সকল খাবার উদ্দেশ্য ডাকলেন।
অনিকা ধীর পায়ে হেটে গিয়ে কাবার টেবিলে বসল।ধীরে ধীরে সবাই গিয়ে টেবিলে বসে পড়লে।
লায়লা বেগম খাবার সার্ভ করতে করতে বললেন,”সাফোয়ান আমায় কল করেছিল। ওরা কোন সমস্যা ছাড়াই বাসায় ভালো ভাবে পৌছে গেছে।”
চলবে,,,,