#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব__৪৩
ভার্সিটিতে ‘ল’ ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে দর্শিনীকে অনেক পছন্দ করে। ছেলেটি জানে দর্শিনী বিবাহিত তবুও! অন্যসবার মতো খবরটা দর্শিনীর কাছে পৌঁছে গেছে। তবুও দর্শিনীর কোনো মাথাব্যাথা নেই। মূলত দর্শিনী এদের নিয়ে ভাবতে চায়না। তাছাড়া সাফিন নামের ছেলেটি এখনো পযর্ন্ত তার সামনে এসে দাঁড়ায়নি। ফেন্ডদের ভাস্যমতে ছেলেটা তাকে দূর থেকেই নোটিশ করে। দর্শিনী এসব কথা আবিদকে বলেনি। আবিদ জানলে নিশ্চয়ই সাফিন নামের ছেলেটির অবস্থা খারাপ করে দিবে। তাছাড়া ছেলেটি যেহেতু তাকে ডিস্টার্ব করেনা। তাই দর্শিনী আপাতত আবিদকে জানাবেনা বলে ঠিক করেছে।
আজকে দর্শিনীর ভার্সিটি আছে। আবিদ তাকে পৌঁছে দিবে। দর্শিনী এজন্যই দ্রুত গোসল করে, মেরুন রঙের শাড়ি পড়ে তৈরি হয়ে নেয়। আবিদ সকাল সকাল শরীর চর্চা করে এসেছে। দর্শিনীকে এমন স্নিগ্ধ রূপে দেখে সে মৃদু হেসে এগিয়ে আসে। দর্শিনী আয়নায় দেখে আবিদ তাকে জড়িয়ে ধরতে আসছে। সে ততৎক্ষণাৎ দূরে সরে যায়।
‘আপনি ঘেমে আছেন, আবিদ! তাড়াতাড়ি গোসল করে ফ্রেশ হয়ে আসুন, নাহলে আমার ভার্সিটিতে দেরী হয়ে যাবে।’
আবিদ মাথা নাড়িয়ে মৃদু হেসে বলে,
‘অথচ তুমি, আমার ঘাম জড়ানো শরীর সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতে বউ! এখন আমার থেকে তোমার কাছে ভার্সিটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেলো, বউ?’
দর্শিনী আবিদের কথায় স্তব্ধ হয়ে গেছে। আবিদ কথাটা মজা করেই বলেছে। সে হাসতে হাসতে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আবিদ দীর্ঘসময় উষ্ণ গরম পানিতে শাওয়ার নিয়ে টাওয়েল পড়ে বের হয়। হঠাৎ-ই দেখে দর্শিনী বিছানায় বসে কাঁদছে। সহসা আবিদের হৃদয় কেঁপে উঠে। হঠাৎ কী হলো? দর্শিনীকে কাঁদতে দেখে সে এগিয়ে আসে। আবিদ, দর্শিনীর মুখটা কাঁপাকাঁপা হাতে আলতো করে ধরে বলে,
‘কী হয়েছে দর্শিনী? কাঁদছো কেনো?’
‘আ..আপনি…..’
দর্শিনী কান্নার তাড়নায় কথাটা বলতে পারছে না। ঐভাবেই আবিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আবিদ বুঝতে পারছেনা হঠাৎ-ই কী হলো? দর্শিনীর শরীরটা কান্নার জন্য মৃদু কাঁপছে। আবিদ দর্শিনীকে ধাতস্থ হতে সময় দিলো। দর্শিনী অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করার পর থামলো। আবিদ তার পাশে বসে জিগ্যেস করে,
‘এবার বলো কী হয়েছে?’
‘আমার কাছে আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আবিদ! কেনো বুঝেন না আপনি? ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য শাড়ি পড়ে তৈরি ছিলাম। তখন মজা করে দূরে সরে গেছি। আপনি ভাবলেন আমি আপনাকে গুরুত্ব দেইনা?’
কথাটা দ্রুত বলে দর্শিনী আবারো শব্দ করে কেঁদে ফেলল। আবিদ ভাবতে পারেনি দর্শিনী সেই কথাটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলবে। এতোক্ষণে আবিদের মস্তিষ্ক বিদ্রোহ ঘোষণা শুরু করেছে। আবিদ তড়িৎ গতিতে দর্শিনীকে বুকে জড়িয়ে বলে,
‘আরে বউউ, ওটা আমি মজা করে বলেছি। ওই কথার কোন ভিত্তি নেই। আমি জানিতো আমার বউয়ের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমি। থাক, আর কাঁদতে হবেনা! দেখি, মুখটা লাল হয়ে গেছে একদম।’
আবিদ দর্শিনীর কপালে পরম আদরে ঠোঁট ছোঁয়ায়। দর্শিনী আবারো আবিদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
‘আপনি আবার জিম করে আসুন! পুরোপুরি ঘেমে গেছেন এমন অবস্থায় চাই একদম। আপনাকে সেভাবেই জড়িয়ে ধরবো, দ্রুত যান!’
‘কী বলছো? ওই কথাটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেনো? এখুনি যাও, ফ্রেশ হয়ে আসো! তোমাকে পৌঁছে আমি অফিসে যাবো।’
‘নাহ! আপনাকে আমি ঘামাক্ত অবস্থায় জড়িয়ে ধরবো, তারপর ভার্সিটিতে যাবো আবিদ!’
‘দর্শিনী, এবার আমার দেরী হচ্ছে! তোমাকে আর আদিবাকে পৌঁছে দিয়ে আমাকে যেতে হবে। একটু বুঝো প্লীজ। আচ্ছা সরি, আমার উচিত হয়নি ঐকথাটা বলা। এবার ফ্রেশ হয়ে আসো। কান্নাকাটি করে কী হাল বানিয়েছো নিজের, আল্লাহ!’
.
আবিদ, দর্শিনী আদিবার জন্য বেশকিছুক্ষণ ধরে গাড়িতে অপেক্ষা করছে। আদিবার কোচিং আছে আজকে। ওকে কোচিং এর জন্য নামিয়ে আবিদ দর্শিনীকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিবে। তারপর নিজের গন্তব্যে পৌঁছাবে। অথচ এই দুজন এতো লেট করল। আবিদ বারবার ঘড়িতে সময় দেখছে। ইশশ, কতো দেরী হয়ে গেলো আজ! ঠিক সেই সময় আদিবা হন্তদন্ত হয়ে দৌঁড়ে আসে। আদিবা গাড়িতে বসতেই আবিদ রওনা দেয়। পথিমধ্যে আদিবা দর্শিনী নানান কথাবার্তা বলতে থাকে। আবিদ অতটা গুরুত্ব না দিলেও সবকথা তার কানে যাচ্ছে।
একটা সময় পরে আবিদ খেয়াল করে একটা কালো গাড়ি তাদের গাড়িকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছে। একবার‚ দুইবার, এভাবে বারবার! আবিদ ভ্রু কুঁচকে ফ্রন্ট মিররে তাকায়। তার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে। সে দ্রুত কিছু একটা ভেবে, অগোচরে পুলিশকে ইনফর্ম করে দেয়। তাছাড়া তার বিশ্বস্ত গার্ডসদের আসতে বলে। কিছুক্ষণ পরে ওদের গাড়িটা লোকালয় থেকে দূরে যেতেই কালো গাড়িটা সরাসরি সামনে চলে আসে। একটুর জন্য তাদের এক্সিডেন্ট হয়নি। আবিদ এক্সিলেটরে চাপ প্রয়োগ করে সজোরে ব্রেক করে বসে। দর্শিনী আদিবা দুজনেই অনেক ভয় পেয়ে যায়! আবিদ তৎক্ষণাৎ বলে উঠে,
‘ঠিক আছো, তোমরা?’
আদিবা, দর্শিনী নিজেদের সামলে নেয়! আদিবা হঠাৎ-ই ক্রুদ্ধ হয়ে বলে,
‘ঠিক আছি, কিন্তু সামনের গাড়িটার কী সমস্যা? মেন্টাল অ্যাসাইলাম থেকে পালিয়েছে নাকি?’
আবিদ কিছু একটা ভেবে বলে,
‘গাড়ি লক করে দিচ্ছি গাড়ি থেকে কেউ বের হবেনা, বুঝেছো?’
দর্শিনী চিন্তিত হয়ে বলে,
‘এরা কী গুন্ডা-মাস্তান? আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আপনি কোথাও যাবেন না।’
‘আমাকে জানতে হবে, এরা কী চায়? তোমরা চুপচাপ গাড়িতে থাকো!’
এটা বলেই আবিদ গাড়ি লক করে, কাচ বন্ধ করে বেরিয়ে যায়। আদিবা দর্শিনী ইতিমধ্যে ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলেছে। দর্শিনী গাড়ি থেকে বার কয়েক আবিদকে ওই গাড়ির কাছে যেতে নিষেধ করে। কিন্তু আবিদ শোনেনি এজন্য দর্শিনী আবারো শব্দ করে কেঁদে ফেলে।
আবিদ সরাসরি গাড়ির কাছে যেতেই চার-পাঁচজন বের হয়ে আসে। তাদের হাতে ধারালো সব অস্ত্র ছিল। আবিদ ভাবলেশ হীন! সে জানতে চায় লোকগুলো কে? কেনো এভাবে পিছনে পড়ে রয়েছে। আবিদের অগোচরে শত্রু শত্রু খেলা হচ্ছে। অথচ মানুষটা কে আবিদ জানেনা। তবে সে জানতে বড্ড আগ্রহী! এদিকে দর্শিনী গাড়ির মধ্যে দেখে সবটা দেখছে। ছেলেগুলোর হাতে ধারালো অস্ত্র দেখে তাদের ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। আবিদ একাই বিনা অস্ত্রে ওদের কাছে গেছে। আদিবা দর্শিনী দুজনেই ভয়ে কাঁপছে। দর্শিনী বারবার আল্লাহকে ডাকছে। আবিদ ছেলেগুলোকে দেখে বয়স আন্দাজ করে ফেলেছে। সবাই কম বয়সী ছেলে! আবিদ কিছুক্ষণ আগে পুলিশ ইনফর্ম করেছে। সে বুদ্ধি করে ছেলেগুলোকে বিজি রাখতে বলে,
‘কী চাও, তোমরা? কে পাঠিয়েছে তোমাদের? শোনো তোমাদের যত প্রেমেন্ট করা হয়েছে, আমি তার থেকে দ্বিগুন করবো। তোমরা আমার সঙ্গে কাজ করো। আমি তোমাদের সাহায্য করবো।’
ছেলেগুলো সবাই আবিদের কথায় একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কিছু কথা বলে নেয়। আবিদ ঈগলের ন্যায় তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের গতিবিধি পরোক্ষ করতে থাকে। ছেলেগুলো নিজেদের মধ্যে কথা বলে আবিদের উদ্দেশ্যে বলে,
‘আপনার হয়ে কাজ করলে আমরা লাভবান হবো ঠিকই, কিন্তু আমাদের পরিবারকে হারাতে হবে। সেটা আমরা কেউই চাইনা। তাছাড়া আপনাকে না মেরে আমরা ম্যামকে নিয়ে যেতে পারবো না। স্যার আমাদের ছাড়বে না! তাই আপনাকে মরতে হবে।’
আবিদ হতভম্ব হয়ে শুনল সবটা। সবকিছু তাহলে দর্শিনীকে ঘিরে রাগে আবিদের শরীরের রগ গুলো ফুঁটে উঠল। সে ছেলেগুলোকে ভালো কিছু অফার করেছিল। তারা সেটা ফিরিয়ে দিলো। তাই আবিদের এখন আফসোস নাই। এদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আবিদ একাই যথেষ্ট। কিন্তু তাদের কাছে অস্ত্র রয়েছে। আবিদ তাদেরকে ডিসট্র্যাক্ট করতে বলে,
‘বেশ, সাহসী তোমরা! বুঝতে পারছি মারপিটে পারদর্শী কিন্তু আমাকে মারার জন্য এতোসব অস্ত্র! তোমরা কী ভিতু নাকি? যুদ্ধকৌশল জানোনা? আমি বিনাঅস্ত্রে তোমাদের সঙ্গে লড়বো কীভাবে? সাহসী যেহেতু তবে বিনাঅস্ত্রে আমাকে আক্রমণ করো।’
আবিদের কথায় ছেলেগুলো ভাবুক হয়। তাদের মধ্যে লিডার টাইপ একজন ছেলে দুইজনকে বলে আবিদকে অস্ত্র ছাড়া আক্রমণ করতে। আবিদ ঠিক এটাই চাইছিল। কোনমতে পুলিশ আসা অব্দি তাদেরকে অস্ত্র ছাড়া প্রতিরোধ করতে। এখন ছেলেগুলো জেদের বসে আবিদের কথায় তাচ্ছিল্যতার সঙ্গে হেসে, অস্ত্র ছাড়া লড়াই করবে! তাদের ধারণা তারা পাঁচ-ছয় জন যথেষ্ট আবিদকে অস্ত্র ছাড়া ঘায়েল করতে।
ছেলেগুলোর মধ্যে দুইজন আবিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে আবিদ একজনকে লাথি দিয়ে ফেলে, অন্যজনকে চড়-থাপ্পড় দিতে লাগল। অন্যদিকে মাটিতে পড়ে যাওয়া ছেলেটা উঠে দাঁড়ালে, আবিদ দুইহাত দিয়ে দুজকে থাপ্পড় দিতে দিতে দূরে সরিয়ে দেয়। ততক্ষণে পুলিশের গাড়ি চলে এসেছে। ছেলেগুলো ভয় পেয়ে গাড়িতে চড়ে বসে। লিডার ছেলেটা গাড়িতে চড়ে বসার আগে আবিদের দিকে ছুরির আঘাত করে বসে। আবিদ হাত দিয়ে প্রতিরোধ করতে গিয়ে হাতের তালুতে আঘাত পায়। পরবর্তীতে আবিদ ছেলেটির বুকে লাথি দেয়। ছেলেটি মাটিতে আঁছড়ে পড়ে। ততক্ষণে পুলিশ এসে ছেলেগুলোকে ধরে ফেলে।
#চলবে
[ সবাই ভুলত্রু’টি মানিয়ে নিবেন প্লীজ ]