বিয়ে পর্ব ৩০

0
180

#বিয়ে
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৩০

শায়লার নির্দেশে অদ্রি ঘরে এলো ধ্রুবকে ডাকতে। কিন্তু সেখানে ওকে পেলো না। বাড়ির ভৃত্য মতির কাছ থেকে জানতে পারলো ধ্রুবকে একটু আগে ছাদে যেতে দেখেছে। অদ্রি নিজের শাড়ি সামলে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে ওঠলো। অন্ধকার ছাদটাকে আলোকিত করেছে মস্ত বড় পূর্ণিমার চাঁদ। অদ্রি ধ্রুবকে কোথাও দেখতে পেলো না। ধীরপায়ে এদিকওদিক একটু খুঁজতে গিয়ে দেখলো ধ্রুব ফোনে কারো সাথে চেঁচিয়ে কথা বলছে। দেখে মনে হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে খুব রেগে আছে। অদ্রি যেতেই কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে তাকালো ধ্রুব। আর তখুনি ওর চোখমুখ কঠিন হয়ে ওঠলো। ফোন কেটে দিয়ে ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়ালো। গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— কি বলবে বলো!
অদ্রি ওর কন্ঠস্বর শুনে মিইয়ে গেলো। ইতস্তত করে বলল,
— আন্টি আপনার জন্য পাজামা-পাঞ্জাবি পাঠিয়েছেন।
ধ্রুব দুর্বোধ্য স্বরে বলল,
— কেন?
— পরার জন্য। সবাই পরবে।
ধ্রুবর কন্ঠস্বর মুহূর্তেই বদলে গেলো। বিরক্তিভাব ফুটে ওঠলো চোখেমুখে। বলল,
— সবাই পরলে আমাকেও পরতে হবে? আমি পরবো না। নিয়ে যাও এসব।
অদ্রি অবাক হয়ে বলল,
— কেন?
ধ্রুব দম্ভ নিয়ে বলল,
— তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। যাও এখান থেকে।
অদ্রি ভড়কালো। আড়ষ্ট কন্ঠে বলল,
— কিন্তু আন্টি তো কষ্ট পাবেন।
ধ্রুব ওর দিকে দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকালো,
— তুমি যাবে এখান থেকে নাকি আমি যাবো?
অদ্রি ভ্রু কুঞ্চন করলো। নির্লিপ্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
— আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন আমার সাথে?
— ঠিক আছে আমিই যাচ্ছি!
রেগে কথাগুলো বলে অদ্রির কথার জবাব না দিয়ে হনহন করে কোথাও চলে গেলো। অদ্রি ওর ব্যবহারে ভীষণ কষ্ট পেলো। শূন্য চোখে চেয়ে রইলো ওর যাওয়ার পথপানে।

বাড়ির পরিবেশ জমজমাট। আইয়ুব আলী এদিকওদিক বেসামাল পরিস্থিতি দেখলেই খানিকক্ষণ পরপর একে-ওকে ধমকে ওঠছেন। সবকিছু মিলিয়ে হুলস্থুল অবস্থা। আদিবার গায়ে হলুদে সকলে বেশ মজা করলো। সবাই এই ঘরোয়া আয়োজন উপভোগ করতে এলেও ধ্রুব আসেনি। সেজন্য মিহির গিয়ে কোথা থেকে ওকে ডেকে নিয়ে এলো। হাসিখুশিভাবে উদযাপনে মত্ত। অদ্রি এক কোণে বসে আছে, চুপচাপ। বাতাসে ওর খোলা চুল ওড়াওড়ি করছে। পরীর মতো দেখাচ্ছে ওকে। ধ্রুব বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারলো না, ওর হাসফাস লাগতে শুরু করলো। ফোন আসার অজুহাতে সে আবারও কোথাও চলে গেলো। তবে নাফি সকলকে ক্যামেরাবন্দী করে রাখলো। বেশ আনন্দ-উল্লাস, জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করে সবাই বেশ ক্লান্ত। আগামী দিন আবার বিয়ের আয়োজন। কালকের দিনটাও কেউ দম ফেলার সময় পাবে না একদম। সেজন্য সবাই যার যার মতো ঘরে বিশ্রাম নিতে চলে গেলো। ঘরে যাবার আগে শায়লা অদ্রিকে নিজের পাশে বসিয়ে জোর করে কিছু ফল-মিষ্টি, কেক খাইয়ে দিলেন। সব শেষ করে অদ্রি ওপরে চলে এলো। ভিড়ানো দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে গত রাতের মতোই অন্ধকার দেখতে পায়। অদ্রি আন্দাজে পা ফেলে ঘরে ঢুকে। সুইচ টিপে বাতি জ্বালায়। পুরোনো আমলের বিশাল একসেট সোফা ঘরের অর্ধেক কোণ দখল করে আছে, তার পাশে শোভা বাড়াচ্ছে বাহারি কিছু টব। সেই সোফায় চিৎ হয়ে শুয়ে বুকের ওপর বালিশ চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে ধ্রুব। অদ্রির দৃষ্টি স্থির হলো ওর দিকে। আপনাআপনি ভ্রুজোড়া কুঁচকে ওঠলো। ওর কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। এই তিনটে দিন ধ্রুব ওর সাথে একটা কথাও বলেনি এটাই ওর বুকে তীব্র এক দহন সৃষ্টি করেছে। কয়েক ঘন্টা আগে ছাদে
করা ধ্রুব’র ব্যবহার করেছে ওর মনে গেঁথে আছে।দেখলেই এড়িয়ে চলছে। কি এমন করেছে ও যে ধ্রুব এরকম করছে? অদ্রি গভীর ভাবনায় বুঁদ হয়। একটা সময় সে চেয়েছে ধ্রুব তার মতো থাকুক, সেও নিজের মতো। কিন্তু ধ্রুব’র ছোটখাটো কেয়ারিং, ওর ব্যবহারে দিনদিন যেভাবে অভ্যস্ত হয়েছে সেটাতে ও এখন প্রায় আসক্ত হয়ে গেছে। অদ্রি বালিশে মাথা রাখতেই ওর দম বন্ধ লাগে, ভাবনাগুলো বিচরণ ঘটায় মস্তিষ্কজুড়ে। মানুষের জীবনে এতো কষ্ট কেন? ক্ষণে ক্ষণে চাওয়া-পাওয়ার এতো বদল ঘটে কেন? নিয়ম মেনে ছোট্ট হৃদয়টা কেন চলে না? কেন অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে? ওর কেন এতটুকু সাহস জন্মায় না ধ্রুব এরকম।আচরণের পেছনের কারণ কি জিজ্ঞেস করতে?

হঠাৎ ভয়ানক এক দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙে অদ্রির। নিজের অপারগতা নিয়ে ভাবতে বসে কখন যে ঘুমে তলিয়ে গেছে ওর মনে পড়লো না। গলাটা কেমন শুকিয়ে এসেছে। অদ্রি আশেপাশে পানির হদিস পেলো না। শরীর ভীষণ দুর্বল লাগছে, হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে, দ্রুতগতিতে ছুটছে। ও মনে করার চেষ্টা করলো স্বপ্নের বৃত্তান্ত! কিন্তু সবকিছু কেমন আবছা ধোঁয়াশা হয়ে মিলিয়ে গেলো। ধরা দিতে চাইলো না। তবুও সমস্ত জোর খাটিয়ে ওর মনে পড়লো এক শ’য়তানি হাসি, তার জীবন থেকে প্রিয় একজন খুব দূরে চলে যাচ্ছে, যেখান থেকে আর কখনো ফিরে আসা যায় না। অদ্রি একা দাঁড়িয়ে আছে শূন্য মরুভূমিতে, যেখানে ওকে খোঁজার মতো দ্বিতীয় কোনো মানুষ নেই। চারদিক শূন্য, অদ্রির করা আর্তচিৎকার কেউ শুনতে পাচ্ছে না। ভয়ংকর একাকিত্ব ওকে জাপটে ধরে গিলে নিচ্ছে অন্ধকার এক জগৎে। স্বপ্নের এটুকু অংশ মনে পড়তেই চোখ ভিজে ওঠলো অদ্রির। ঘুমের ঘোরে দুঃস্বপ্ন আর বাস্তব গুলিয়ে ফেলেছে একপ্রকার। বোধশক্তি লোপ পেয়েছে। ও হন্তদন্ত পায়ে বিছানা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। সোফায় শুয়ে থাকা ঘুমে মগ্ন ধ্রুব’র দিকে ছুটে গেলো। হাঁটু গেরে মেঝেতে বসে ভয়ার্ত কন্ঠ নিয়ে ডাকলো সে,
— শুনছেন আমার কথা…উঠছেন না কেন আপনি?
ধ্রুব রেসপন্স করলো না। সেজন্য দ্বিতীয়বার ধাক্কা দিলো ওকে। এবার অদ্রির ভেজা গলা ধ্রুব’র কান অবধি পৌঁছালো। ওঠে বসে একপ্রকার বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— দেখছো না ঘুমাচ্ছি? এভাবে ডাকছো কেন?
অদ্রি ধীরে ধীরে সিক্ত চোখের পাতা খুলে নির্নিমেষ চেয়ে থাকে ওর মুখের দিকে। নিজের হাতটা এগিয়ে ধ্রুব’র মুখে ছোঁয়ায়, যেন সবকিছু বাস্তব সত্যি কিনা অনুভব করছে! ওকে এরকম অদ্ভুত ব্যবহার করতে দেখে ধ্রুব ভ্রু কুঁচকালো,
— কি সমস্যা?
অদ্রি উত্তর দিলো না। ওর গলায় কথা আটকে যাচ্ছে। ধ্রুব এবার খেয়াল করলো অদ্রির গা কাঁপছে, ভেজা স্বর, চোখমুখে মিশে আছে ভয়ের রেশ। ও তৎক্ষনাৎ ওঠে বসলো। ব্যতিব্যস্ত গলায় প্রশ্ন করলো,
— কি হয়েছে তোমার? এই অদ্রি?
অদ্রির চোখ ঘোলাটে হয়ে এলো। শূন্য চোখে চেয়ে থাকে। ওর মুখটা আবারও ভীত হয়ে ওঠে। ধ্রুব ওকে এমন অস্থির হতে দেখে ভীষণ অবাক হলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে গিয়ে বসা ছেড়ে ওঠলো। কাঁধ ধরে অদ্রিকে মেঝে থেকে দাঁড় করালো। হাত টেনে ধরে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসালো। এরপর ক্রূর কন্ঠে বলল,
— রাতবিরেতে কি শুরু করেছো? হয়েছেটা কি বলবে তো?
অদ্রির নিশ্চুপ থাকায় ধ্রুব ক্রুদ্ধ হয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে ও ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। শুকনো গলায়
বলল,
–কোথায় যাচ্ছেন আমাকে ফেলে?
ধ্রুব চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
— জাহান্নামে!
অদ্রি আর্ত কন্ঠে বলল,
— যাবেন না, আপনি এখানেই থাকুন…
মাথার ভেতর এখনো সেই দুঃস্বপ্ন বিরাজমান। কিছুতেই আবছা স্বপ্নটা ওর মন থেকে মুছে যাচ্ছে না। কি ভয়ানক সেই স্বপ্ন, কি ভয়ানক ওই বিদঘুটে শ’য়তানি হাসি! অদ্রির বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। ও চায় না তাঁর জীবনে এরকম নিষ্ঠুরতম দুঃস্বপ্ন কখনো আসুক, বাস্তব হোক। কারণ ওর জীবনে এখন তো সেই মানুষটির জায়গা ধ্রুব দখল করেছে! এদিকে ওর এমন অভাবনীয় কান্ডে ধ্রুব হতবাক। ও আড়চোখে অবস্থা বোঝার চেষ্টা করলো। অদ্রির ঘন পল্লবজোড়া কাঁপছে। ধ্রুব’র ভীষণ রেগে থাকলেও অদ্রির কথা অমান্য করলো না। হয়তো কোনো দুঃস্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে, এসব বুঝিয়ে নিজেকে শান্ত করালো। নয়তো ওর একফোঁটা ইচ্ছেও নেই অদ্রির আশেপাশে থাকার।

সকাল সকাল চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙলো অদ্রির। পাশে ধ্রুব নেই। চারপাশ আলোকিত। রোদে ঝিকমিক করছে জানালার কপাটগুলো। অদ্রি ফ্রেশ হয়ে ঘর থেকে বের হলো। নিচে নামতেই টেবিলে বসে নাস্তা খেতে দেখলো ধ্রুবকে৷ শায়লা ওকে দেখে টেনে চেয়ারে বসালেন। অদ্রির গত রাতের স্বপ্ন আর নিজের করা কীর্তির কথা মনে হতেই দিনের আলোয় ওর কেমন লজ্জা লাগতে শুরু করলো। ধ্রুব’র দিকে আড়চোখে তাকাতেই দেখলো ও এমনভাবে খাচ্ছে যেন অদ্রি নামক কারো অস্তিত্ব এই ধরাতে নেই। অদ্রির অভিমান হলো, নিজের খাওয়ায় মন দিলো।

বিয়ে বাড়ির আমেজে গত রাতের কথাগুলো খানিকক্ষণের জন্য মস্তিষ্ক থেকে সরলো অদ্রির। আত্মীয়স্বজন, মেহমানে বাড়ির প্রতিটি ঘরই প্রায় পূর্ণ। পার্লার থেকে আদিবাকে সাজানোর জন্য দুজন মেয়ে এসেছে। সেজন্য অবশেষে রোকেয়া বেগমের ঘরেই সাজানোর ব্যবস্থা করা হলো। অদ্রি বসে ওদের সাজানো দেখছিলো। রোকেয়া বেগম ওকে নিজের কাছে ডাকলেন। অদ্রি গিয়ে বসলো তার পাশে। রোকেয়া বেগম চিন্তিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন,
— মুখচোখ শুকাই গেছে ক্যান গো বউ? খাওনদাওন করোস না নাকি? শরীর এত হুকনা কেন তোর?
অদ্রি বলল,
— ঠিকমতোই খাচ্ছি নানু। তোমার পায়ের ব্যথাটা এখন কেমন?
— ওইঠা দাঁড়াইতে কষ্ট হয়, নয়তো দেখতি নাতনির বিয়াতে কি আনন্দটাই না করি।
অদ্রি হাসলো। রোকেয়া বেগম কৌতুক করে বললেন,
— তো আমার নাতি তোরে আদরযত্ন করে নি? বিয়া হইসে অতদিন হইয়া গেসে পোলাপান হইবো কহন? আবার গোসসা করিস না। তোর নাকি আবার অনেক গোসসা?
অদ্রি ভীষণ লজ্জা পেলো। অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নিচু
করে ফেললো। পার্লারের দুটো মেয়ে আর আদিবাও হাসছে। রোকেয়া বেগম ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন ওদেরকে। অদ্রিকে নিচু স্বরে বললেন,
— অত গোসসা থাকলে জীবন চলবো নি? আমার নাতিডারে কষ্ট দিস না।
অদ্রি এবার মুখ তুলে চাইলো। ভ্রু কুঞ্চন করে জিজ্ঞেস করলো,
— আমি এত গোসসা করি তোমাকে কে বললো?
— আমার কালাচাঁনে।
অদ্রি মুখ বাঁকা করলো। এরপর বলল,
— তোমার কালাচাঁন নিজেই তো গোসসা করে বসে আছে। আমার নামে কেন বিচার দেয়? আমি তো এখন ঝগড়া করি না….
রোকেয়া বেগম টিপ্পনী কেটে বললেন,
— শোন, পোলা মানুষ এক-আধটু গোসসা করবোই।
তুই হের বউ, রাগ ভাঙাইবি। আবার তুই রাগ করলে হেয় রাগ ভাঙাইবো। এরপর আদর-সোহাগ করবি। শেষ কাহিনী। এইডাই তো স্বামী-স্ত্রীর মেলবন্ধন। তয় দুইজনই যদি বাঁইক্কা বইয়া থাকোস তাইলে সংসারের গাড়ি আর চলবো না। মাইঝখানো আবার সতীন আইয়া বইয়া থাকবো….
অদ্রি থমকালো,
— সতীন মানে?
রোকেয়া বেগম বোঝানোর সুরে বললেন,
— দুইজন যদি দুইজনের কাছে মন খুইলা কথা না কইতে পারে তাইলে কার কাছে কইবো? জামাই আরেকটা বিয়া করবো। তুই তো বউ হের লাগি আমি পোলাগো কান্ডকীর্তিডা কইতাছি…
অদ্রি মুখগম্ভীর করে কথাগুলো শুনলো। এরপর মিনমিন করে বললো,
— ওনি তো আর এমন না তাইনা?
রোকেয়া বেগম গর্বের সহিত বললেন,
— তা ঠিকই কইসোস। লাখে একটা চাঁন আমার…

অদ্রিও তার কথার সাথে একমত হয়ে মাথা দুলাতে লাগলো!

রাস্তায় একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট হওয়ায় বরপক্ষের পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় শেষ বিকেল। সকলের চিন্তিত মুখে এতক্ষণে স্বস্তি নেমে এলো। অস্থির পরিবেশ চারপাশে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই ছোটাছুটি করছে। এদিকে অদ্রি নিজের শাড়ি সামলাতে ব্যস্ত। মেরুন রঙের শাড়িটিতে ও বেশ আনইজি ফিল করছে। ওকে
দেখে ধ্রুব তার হাতে থাকা স্প্রাইটের বোতলটা দুমড়েমুচড়ে ছুঁড়ে ফেললো পাশের টেবিলে। এরমধ্যে খুব দ্রুত বিয়ে পড়ানো, খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হলো। এখন দু-পক্ষের মধ্যে আলাপচারিতা চলছে। বরপক্ষের দুজন জোয়ান ছেলে ঐশী, ফ্লোরাদের পিছু লেগেছে। ওদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করছে। ছোটখাটো হালকা ঝগড়াও চলছে৷ বউ বিদায়ের হৃদয়বিদারক মুহূর্ত চলে এলো। কান্নাকাটির হিড়িক পড়ে গেলো সবার মাঝে। আদিবার বিদায় শেষ হতেই একেএকে সব মেহমানরা বিদায় নিতে লাগলো। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বাড়িটি কেমন ফাঁকা হয়ে গেলো।

ঐশী, নাফিরা আদিবার সাথে গেছে। ফ্লোরা এমন পরিবেশে ভিড়, হুল্লোড় পরিবেশে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দুবার বমিও করেছে। এখন আপাতত ঔষধ খেয়ে ঘুমে বিভোর। বাড়িতে অনেক কাজ জমে গেছে, অদ্রিও শায়লা আর মামীদের সাথে কাজে হাত লাগালো। কারো বারণ শুনলো না। সব কাজ শেষ করতে গিয়ে রাত বারোটা বেজে গেলো। বাইরে প্রচন্ড জোরে বৃষ্টি ঝরছে। বাতাস বইছে তীব্রবেগে। অদ্রি এখনো চেঞ্জ করেনি। এককাপ চা খেয়ে ঘরে এলো অদ্রি। ভীষণ ক্লান্ত। ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ি থেকে পিন খুলতে শুরু করলো। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেলো। অদ্রি একটা মোম জ্বালিয়ে নিলো। কিছু সময় পর! হন্তদন্ত পায়ে, আধভেজা মাথা নিয়ে ধ্রুব ঘরে ঢুকলো। হলুদাভ আলোয় অদ্রিকে এভাবে দেখে ওর মস্তিষ্কের নার্ভগুলো কেমন সচল হয়ে ওঠলো। চোখজোড়া জ্বলে ওঠলো। তীব্র ক্রোধ,
ক্ষোভ নিয়ে ধ্রুব এগিয়ে গেলো অদ্রির দিকে। অদ্রি তখনো ওকে খেয়াল করেনি।
অন্ধকারে নিজের উন্মুক্ত পেটে পুরুষালি হাতের
অবাধ্য বিচরণ টের পেলো অদ্রি হঠাৎ। ও হিম হয়ে গেলো। ভীত হয়ে কম্পিত কন্ঠস্বরে বলে ওঠলো,
— ক কে?
ধ্রুব ততক্ষণে ওর গ্রীবাদেশে মুখ ডুবিয়েছে। ক্রোধিত গলায় তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
— আমাকে কখনোই ভালো লাগে না তোমার তাইনা?

[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কালকের আবহাওয়া সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই অবগত, যে কারণে আমি গল্প দিইনি।]

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here