কোন সুতোয় বাঁধবো ঘর পর্ব ২১

0
199

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২১

আপনার সাহসতো কম না বাসা পর্যন্ত চলে এসেছেন?
‘আপনি এমন কেন? দরজায় অতিথি দাঁড়িয়ে আছে কোথায় তাকে ভেতরে নিয়ে বসতে দিবেন, তা-না করে ঝগড়া করছেন? ভেতরে আসতে দিন, ঠান্ডা মাথায় দুটো কথা বলি।
‘আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! একে তো হুট করে চেনা নেই জানা নেই একজনের বাসায় চলে এসেছেন।আবার বলছেন ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো। এক্ষুনি চলে যান, নয়তো ত্রিপল নাইনে কল করবো।
‘আশ্চর্য আমি কি অপরাধী নাকি? এসেছে সু সংবাদ নিয়ে। আপনার বাসায় আপনি ব্যাতিত মুরুব্বি যারা আছে ডাকুন।আঙ্কেল আন্টি এনারা কোথায়?
‘ইরহা দরজা বন্ধ করে দিতে চাইলে। জারিফ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে আন্টি, আন্টি বলে ডাকাডাকি শুরু করলো।
‘ফরিদা বেগম সামনের রুমে এসে অনেক সময় ধরে জারিফের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, তোমাকে তো চিনলাম না বাবা!
জারিফ ফরিদা বেগমের কোল থেকে নওশাবাকে কোলে নিয়ে বলে, আন্টি আমি এই সুইট,কিউট বাচ্চাটার হবু চাচ্চু।
‘কি বলো বাবা, তোমার কথা তো কিছুই বুঝলাস না!
‘মা এই লোক পাগল, দ্রুত আমার মেয়েকে দিন।তাড়াতাড়ি দিন৷
‘এই একদম ঝগড়া করবেননা৷ আন্টি আমি সুস্থ একজন মানুষ। আপনার এই অসুস্থ মেয়ের জন্য আমার ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
নওশাবা জারিফের শার্টের বাটন নিয়ে খেলায় ব্যাস্ত।

‘এসব তুমি কি বলো বাবা? আমার ডিভোর্সি মেয়ে আমার এক বাচ্চার মা।মাস ঘুরলো সবে ডিভোর্সের এহনি বিয়ের প্রস্তাব?
‘ আন্টি আমার ভাই আপনার মেয়েকে পছন্দ করে,সব জেনেই ও বিয়ে করতে রাজি।আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার এই কিউট সদস্যকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে নাম কি ওর?
‘নওশাবা
‘বাহহহ ভারি মিষ্টি নাম তো। তাহলে আন্টি আমরা পাঁকা কথা বলি।
‘আচ্ছা তোমার ভাই কি করে?
‘জরিফ একটু চুপ করে থেকে বলে, বিজনেস আমাদের ফ্যামিলি বিজনেস আন্টি।
‘বাসায় আর কে কে আছে তোমাদের?
‘বাসায় কে কে আছে বলতে,আমি আর আমার ভাই,বাবা,মায়ের মৃত্যুর পর আমরাই আছি আমাদের।
“ইরহা ট্রেতে করে চা আর বিস্কুট সাজিয়ে এনে বলে,এতো কথা বলছেন, আগে চা টুকু খেয়েনিন৷ আপনার জন্য স্পেশাল জাপানি চা।
‘এসবের কোন দরকার নেই, আমার আপনার সাথে একটু কথা ছিলো।
‘কথা তো কত বলতে পারবো আপনি চা পান করুন।
নওশাবাকে আমার কাছে দিন।

নওশাবে কোলে নিয়ে বলে, মা তুমি একটু রুম থেকে নওশাবার মাম পট-টা এনে দাও তো। আমি ততক্ষণ ওনার সাথে কথা বলি৷
‘ফরিদা বেগম চলে যেতেই ইরহা বলে, চা যত গরম খাওয়া যায় তত মজা৷ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে দয়া করে পান করুন।
‘জারিফ চায়ে প্রথম চুমুক দিতেই পুরো মুখ জ্বলে উঠলো। সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করছে বেসিন কোন দিকে।

ইরহা নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আর ভাবছে এতো কষ্টকরে ব্লেন্ডারে কাঁচামরিচ ব্লেন্ড করে তার সাথে পানি মিশিয়ে সেই পানি ছাকনী দিয়ে ছেকে নিয়ে দু’ধ আর চা পাতি মিশিয়ে স্পেশাল জাপানি চা বানালাম। এই চুমুক তো গিলতেই হবে।
‘ঝালে জারিফে চোখে পানি চলে এসেছে। সামনে তাকিয়ে দেখে এক গ্লাস শরবত রাখা দ্রুত গ্লাস উঠিয়ে এক ঢোক গিলতেই খবর হয়ে গেলো৷ নাক ঠোঁট লাল হয়ে গেছে। শরবতেও ট্যাংয়ের সাথে মরিচের গুড়ো মিশিয়ে দিয়েছিল।
‘ঝালে কথাও বলতে পারছে না। চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে। কোনমত বলল আপনার মত দস্যি মেয়েকে কোনদিন আমার নিরীহ ভাইয়ের বউ করবো না।
‘আপনার ভাই তো ভালো কথা আর কোন পুরুষের ছায়াও পরতে দেবো না আমার জীবনে৷ ভালোয় ভালোয় চলে যান।

জারিফের রাগ আর কন্ট্রোল করতে না পেরে বলে,ছেলেদের ছায়া পরতে দেবেন না সেটা আগে মনে ছিলো না! একটা হাঁটুর বয়সি ছেলের সাথে রিলেশন করতে পারেন আর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি বলে নাকানিচুবানি খাওয়াবেন।মেয়েরা মায়ের জাত তাই সম্মান করি। নয়তো এর ফল আপনাকে বুঝিয়ে দিতাম। বলেই লম্বা লম্বা পা’ফেলে চলে গেলো জারিফ।
‘ইরহা বোকার মত তাকিয়ে থেকে বলে, কি বলে গেলো?

ফরিদা বেগম এসে বলে,এসব কি ঠিক হলো ইরহা?ছেলেটাকে দেখে ভদ্রই মনে হয়। কেন শুধু শুধু ছেলেটাকে নাজেহাল করলি?পুরো কথাটা শুনেতো নিবি যে কি বলতে চায়? হতে পারে অন্য কাউকে ভেবে তোর ঠিকানা বা আমাদের বাসায় চলে এসেছে?

‘ইরহা রাগের মাথায় এসব করলেও এখন মনে মনে অনুতপ্ত হচ্ছে। আসলেই একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো।

✨নিশাত আর নাদিমের বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ন’টা বাজলো।
নিশাত সবার সাথে হেসে হেসে কুশল বিনিময় করছে।

‘ফরিদা বেগম অবাক হলেও মুখে কিছু প্রকাশ করলেননা৷ অন্য সময় নিশাত বাপের বাড়ি থেকে ফিরলে তিন চারদিন কারো সাথে ঠিক ভাবে কথাই বলতো না।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷

লাবিবা সোফার রুমে পড়তে বসেছে। ইরহা নিজের রুমে মেয়ের সাথে দুষ্টমি করছে। যে যার মত ব্যাস্ত।

লাবিবা পড়ার ফাঁকে ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকতেই চোখে পরলো। রাতুল একটা মেয়ের সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়েছে৷ লাবিবার চোখ থেকে অশ্রু ঝড়তে লাগলো। চোখ বন্ধ করতেই রাতুলের সাথে বিভিন্ন স্মৃতি ভেসে উঠলো চোখের সামনে। হুট করে পড়া ছেড়ে কিচেনে এসে ছু’ড়ি নিয়ে নিজের ডান হাতের রগে টান দিলো। সাথে সাথে র’ক্তের ছড়াছড়ি। চিৎকার করে বলে,তুমি আমাকে ঠকিয়েছো এটা আমি মানতে পারবো না৷
লাবিবার চিৎকার শুনে ইরহা, ফরিদা বেগম, নাদিম নিশাত সবাই ছুটে এলো।

নাদিম দ্রুত লাবিবাকে কোলে তুলে নিলে, নিশাত নিজের ওড়না লাবিবার কা’টা জায়গায় বেঁধেদিলো৷ কোনমতে কষ্ট করে লাবিবা বলল,আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর কিছু বলতে পারলো না।


জারিফ রাতুলের রুমে এসে বলে,ওই মেয়েকে ভুলে যা৷ এতোকিছুর পর ওই মেয়েকে বিয়ে করার প্রশ্নই উঠে না৷ ওই মেয়েকে ভুলে যা তোকে ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করাবো৷ এবার এসব থেকে বের হয়ে ঘুমা।
জারিফ এসব বলে চলে যেতেই রাতুল ওর ক্লাসমেট সনিয়ার সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে রাতুল মুচকি মুচকি হাসছে আর বলছে, এবার দেখি তুমি কি করে জেলাস না হও। এবার ঠিক তুমি ইনবক্সে আসবে,আর তখন তোমাকে জিজ্ঞেস করবো আমার ভাইয়ার সাথে এসব করার সাহস তুমি কোথায় পেলে? ভালোবাসো না বিয়ে করবে না, সুন্দর করে বলে দিলেই পারতে! আমার ভাইয়ার সাথে বাজে ব্যাবহার করার সাহস তোমার কি করে হলো এই উত্তর আমাকে দিতেই হবে?


লামা নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে, বসে হাউমাউ করে কাঁদছে। কে বা কারা লামার ন্যাুড ভিডিও নেট দুনিয়া ছেড়ে দিয়েছে। আর এসব মানেই মূহুর্তে ভাইরাল। কতজনের সাথে রাত যাপন করেছে কে এই কাজটা করলো। একা একা বাড়িতে অন্ধকারে বসে থেকে অনেক কান্নাকাটি করে ভাবে আমি এই মুখ আর কাকে দেখাবো কিভাবে সমাজে চলবো? রবিন ও আমাকে জায়গা দেবে না। মা,বোন দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলে, তাহলে এ জীবন রেখে আমি কি করবো? আমার কাছে এখন একটাই রাস্তা খোলা আর সেটা ছাড়া কোন পথ নেই। আমি যা পাপ করেছি তার শাস্তি কি এতোটাই ভয়ানক যে আমার জীবন ছাড়া এর মূল্য চুকানো যাবে না! সবাই আমাকে ছিহহহ ছিহহ করবে।
রবিন প্রায় বাড়ির কাছে আসতেই রুবেলের মেসেঞ্জার থেকে রবিনের কাছে কিছু ভিডিও বার্তা এলো৷ নিচে লেখা…. ব্রো ব্যাবসা মন্দা বলে,বউ দিয়ে রমরমা ব্যাবসা চালাচ্ছো আমাদের বললে তো বাহিরের কাস্টমারের কাছে ভাবিকে যেতে হতো না৷ আর এভাবে মানসম্মান শেষ করতে হতো না৷
ভাবি কিন্তু অনেক হট৷ তুই চাইলে আমি এখনো রাজি টাকা যা লাগে দেবো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here