কোন সুতোয় বাঁধবো ঘর পর্ব ২০

0
218

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২০

শেফালী বেগম চলে যাওয়ার পর,ইরহা একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো।সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে, চোখ থেকে নিজের অজান্তেই টুপটুপ করে আশ্রু গড়িয়ে পরছে।নওশাবা নিজের মায়ের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুখ দিয়ে কেমন শব্দ বের করছে,তার অস্পষ্ট শব্দ হয়তো বলতে চাইছে,তুমি কাঁদছো কেন মা’!
ইরহা,নওশাবাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,কেন এমন হলো আমার সাথে?এখন তাদের ভুল বুঝতে পারলো, তাতে কি আমার সাজানো সংসার ফিরে পাবো? নাকি আমার মেয়ে ফিরে পাবে তার বাবার আদর। সমাজের কটু কথা না হয় বাদই দিলাম।
‘ফরিদা বেগম নিজের মেয়ের কাঁধে হাত রেখে বলেন,মা’রে ভাগ্যে কি আছে কেউ জানেনা। আমরা যদি আগেই বুঝতে পারতাম জামাই এমন হইবো তাইলে কি তোর বিয়ে সেখানে দিতাম! সব বাপ,মা’ সবচেয়ে ভালো ছেলের কাছে দিতে যায়। কিন্তু চকচকে আপেলের ভেতরের খবর তো কেউ জানেনা। এসব নিয়ে আর ভাবিস না, জীবন হলো বহমান নদী,সে থামতে জানেনা চলতেই থাকে।তার চলমান শ্রোতে কখনো একুল ভাঙে ও কুল গড়ে।

‘ইরহা চোখের পানি মুছে, ফরিদা বেগমকে বলল,নাও তোমার নাতনীকে একটু সুজি খাওয়াও আমি রুমে ঠান্ডা করার জন্য রেখে আসছি।
ফরিদা বেগম নওশাবাকে নিয়ে চলে গেলেন। ইরহার চুল বতাসে বেশ এলোমেলো হয়ে গেছে হাত দিয়ে চুলগুলো খোঁপা করবে এমন সময় আবার কলিং বেল বেজে উঠলো।
‘ইরহা কোনমতে চুলে প্যাচ দিয়ে উঠে দরজা খুলল।

সমানের মানুষ টিকে দেখে রেগে গেলো,বিরক্তি নিয়ে বলে আপনি!

✨সকালের রোদ ছড়িয়ে দুপুর হচ্ছে, নাদিম এখনো ঘুমাচ্ছে,আজকে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে, সারাদিন শ্বশুর বাড়ি থেকে বিকেলে বাসায় যাবে৷
‘নিশাত এসে নাদিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে,দিতে বলে,তা শ্বশুর বাড়ির বেড বুঝি এতোই আরামদায়ক যে আমার বর বেড ছেড়ে উঠতেই পারছে না?
‘নাদিম এক হাত দিয়ে নিশাতকে টান দিয়ে নিজের বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,জান আমার কাল রাতের পর থেকে মনে হচ্ছে আমি নতুন বিয়ে করেছি,তুমি আমার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। তোমাকে এত্তো এত্তো ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।
‘তো আমি তো নতুন বউ-ই মাত্র দুই বছরে কি আমি পুরোনো হয়ে গেছি!
‘এতো আদুরে কথা বললে,এই দিনদুপুরে কিন্তু… আর কিছু বলার আগেই নিশাত নিজের হাত দিয়ে নাদিমের মুখ চেপে রেখে বলে,আপনি এতো ঠোঁট কা’টা জানা ছিলো না।
‘এখন থেকে জেনে নাও।
‘নিশাত হুট করে নামিদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে পরে বলে,তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা করুন। সকালের নাস্তা দুপুরে করলে, দুপুরের খাবার রাতে খাবেন! এরপরে কিন্তু আজকেও থেকে যেতে হবে।
‘আনরোমান্টিক বউ আমার। মুডের চৌদ্দটা বাজিয়ে দিলো। তবে জানো আজকে নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। তোমাকে আমি এই রুপেই দেখতে চেয়েছিলাম।
‘একটু দেরি হয়ে গেলো,,তোমার মনের মত হতে, তবে এখন থেকে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না, যে এটা সত্যি আমি! নিজেকে এমন ভাবে উপস্থাপন করবো।
‘লাভ ইউ বউ।
‘হেট ইউ বর, তাড়াতাড়ি উঠে পরুন
‘এই এটা কিন্তু ঠিক হলো না। লাভ ইউ টু বলে যাও।
‘এহহহ কচু বলবো।
‘নিশাত রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সত্যিই আজ নাদিমের কাছে জীবনটা নতুন মনে হচ্ছে। এতোদিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।

✨রবিন সোফায় বসে আছে, রুবি রবিনের সামনে খাবার দিয়ে বলে,খেয়ে নাও ভাইয়া,চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতদিন ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করোনি।
‘রবিন নিম্ন স্বরে বলল,আমার পাশে একটু বসবি?
রুবি রবিনের পাশে বসলো, রবিন রুবির দিকে না তাকিয়ে রুবির হাতটা ধরে বলে,পারলে ভাইকে ক্ষমা করে দিস।আর আজ থেকে মায়ের খেয়াল রাখিস। আমার কিছু হয়ে গেলে কখনো আমার খোঁজ নিবি না৷ মনে করবি আমার কর্মের ফল।রবিন নিজের পকেটে থেকে বেশ কিছু টাকা বের করে রুবির হাতে দিয়ে বলে,তোর আর মায়ের খেয়াল রাখিস৷ মনে করবি এই পৃথিবীতে তোর ভাই আর নেই।
‘রুবি কেঁদে দিয়ে বলে, কি বলছো তুমি এসব!তুমি ভেবো না সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার রাস্তা বের করবো৷
‘আর কিছু ঠিক হবে না। সব আমি নিজের হাতেই শেষ করে দিয়েছি। আমার মেয়েটা আজ আমার কারণে বাবার পরিচয় থেকে বঞ্চিত। যেদিন আমার রাজকন্যা পৃথিবীতে আসলো,সেদিন আমি তার থেকে সব কেড়ে নিলাম। কিভাবে করলাম আমি! রুবি বিশ্বাস কর আমি খারাপ কাজগুলো করেছি এটা ঠিক। কিন্তু লামাকে বিয়ে করতে চাইনি৷ তবে কথায় আছে, পাপ তার বাপকেও ছাড়েনা। আমাকেও আমার পাপ ধ্বংস করে দিলো৷ আমি কিভাবে আমার রুবিকে ছেড়ে এরকম একটা মেয়ের পিছু ছুটলাম?
‘যা হয়েছে ভুলে যাও।আজকে রাতটা আমাদের বাসায় থেকে যাও।আমরা সবাই মিলে একটা সলিউশন ঠিক বের করতে পারবো।
‘আমি ঠিক করে নিয়েছি আমি কি করবো। তেরা ভালো থাকিস আমার যা হয়ে যাক। যে খেলায় আমি নেমেছি সেখান থেকে ফেরার রাস্তা বন্ধ।
‘একটা ভুলের মাশুল গুণতে যেয়ে তারচেয়ে আরো বড় ভুল করো না। জীবন একটাই ভুল শুধরে ঠিক পথে ফিরে এসো। আর তুমি ছাড়া আমাদের আপন আর পৃথিবীতে কেউ নেই, অন্তত আমাদের জন্য ফিরে এসো।
‘রবিন বললো,তোর হাতে খাইয়ে দিবি আজ?
‘রুবি হাত ধুয়ে রবিনকে খাইয়ে দিলো। রুবির মনের ভেতর কেমন হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে খুব বাজে কিছু হবে। চোখের কার্নিশ গড়িয়ে নোনাজল পরছে৷ শেফালী বেগম দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন। তার মনেও শান্তি নেই, কেন যেন মনে হচ্ছে তার ছেলেকে শেষ দেখা দেখছে।
খাবার খেয়ে রবিন নিজের মায়ের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,পারলে আমকে ক্ষমা করে দিও মা। রুবির দিকে তাকিয়ে বলে,তোর ভাবিকে একটা কল করবি! একটু জিজ্ঞেস কর আমার মেয়েটা বাবা বলতে পারে নাকি?
‘রুবি একটা ভিডিও অন করলো,যেখানে নওশাবা অস্পষ্ট শব্দে বাবা, বা বা বা করছে। রবিন মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে বলে,কেন আমি তোর মায়ায় আরো আগে জড়ালাম না। আমার দুনিয়ায় বেঁচে থাকার আর কোন অধিকার নেই।
‘নিজেকে সামলে নে ভাইয়া।
‘ভিডিওটা আমার মোবাইলে সেন্ট করে দিস। মা’য়ের আর তোর খেয়াল রাখিস। কথা শেষ করে দ্রুত পায়ে বের হয়ে গেলো।
‘লামা নিজের মা বোনের সাথে দেখা করতে এসেছে,
‘তুই এখান থেকে চলে যা আর কখনো আমাদের সামনে আসবি না।
‘মা’আমি নিজের জন্য একটা সুন্দর জীবন চেয়েছি এটাই কি আমার দোষ? আর এই গরীব জীবনে তোমরা অনেক ভালো আছো?লামা নিজের ব্যাগ থেকে টাকার বান্ডিল বের করে বলে,এই দেকো,সুখ কেনার চাবি। নাও কত চাও নাও।
‘ তুই এখান থেকে চলে যা। না তোর টাকা আর না তুই, কোনটাই আমার দরকার নেই। তোরমত মেয়ে আমার জন্য মৃত।
‘হ্যা, হ্যা চলে যাচ্ছি,ভুলেই গিয়েছিলাম, কু’কু’রের পেটে ঘী হজম হয় না।
‘লিজা বললো, আপু আমরা দরিদ্র তবে তোরমত বিবেকহীন না। জানিস তো বিবেকহীন মানুষ প’শুর মত। তাই যেই বাক্যটা আমাদের জন্য ব্যাবহার করলি, সেটা তোর সাথেই বেশি যায়। বাড়িতে যা তবে মুখ ডেকে বের হোস। মানুষ কিন্তু থুথু নিক্ষেপ করবে।
‘লামা লিজার গালে থাপ্পড় দেয়ার জন্য হাত উঠালো, লামার মা,লামার হাত আটকে দিয়ে বলে,এই সাহস করবি না৷ আমার মেয়ের শরীরে আঘাত তোর মত কেউ করতে পারবে না। দূরহ চোখের সামনে থেকে।
‘মেয়ে মানুষ সম্মান হলো লজ্জায়, তুই তো টাকার কাছে তোর লজ্জা বিক্রি করে দিয়েছিস৷ লজ্জাহীন মেয়ে আর খোসা ছাড়া কলা দুটোরই কোন মূল্য নেই বাজারে।
‘লামা চলে আসলো, বের হতে হতে খেয়াল করলো অনেকেই তার দিকে কেমন দৃষ্টিতে যেনো তাকাচ্ছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here