প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৩২

0
159

#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব__৩২

আজকে আবিদের ফুপিআম্মু শবনম চৌধুরী আমেরিকা থেকে ব‍্যাক করছে। এজন‍্যই আজ দুপুরে আবিদ দর্শিনী বের হয়ে যাবে চৌধুরী ভিলার উদ্দেশ্যে। শাহরিয়ার চৌধুরী আবিদকে ফোন করেছিলো আবিদের ফুপিআম্মু দেশে ফিরছেন। নাহলে আরো একদিন থাকার কথা ছিল আবিদের। তবে মুহতাসিম ভিলাতে আবিদ দেড়দিন ছিল। দীর্ঘ বিশবছর যাবত শবনম চৌধুরী ভীনদেশে অবস্থান করেছেন। এতোদিন ভীনদেশে অবস্থান করে কখনো ভেবে দেখেননি বাংলাদেশে ফেরার কথা। তবে নিজপুত্র সমতুল‍্য প্রাণপ্রিয় আবিদের বিয়ের খবর পেয়ে তিনি ছুটে আসছেন। শাহরিয়ার চৌধুরী ছোট বোনকে দেখতে পাবেন বলে আবেগপ্রবণ হয়ে আছেন। আবিদের ফুপিআম্মু আজ এয়ারপোর্টে ব‍্যাক্তিগত ভাবে আবিদের উপস্থিতি কামনা করেছে।এজন্যই তারা দ্রুত ফিরে আসছে। এদিকে ফুপিআম্মু আসবে জেনে; আবিদের উৎফুল্ল মনোভাব দেখে দর্শিনীর মধ্যে ভালো লাগা কাজ করছে। আশরাফ সাহেব মেয়ে জামাইকে একদিন থাকার জন‍্য বলেছে। কিন্তু আবিদ মানা করে দেয়। তার জীবনে ফুপিআম্মুর গুরুত্ব অনেক সেটারই বারংবার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে দর্শিনীর সামনে। দর্শিনী এই ব‍্যাপারটায় বরাবরের মতো নিশ্চুপ নির্বাক ছিল। আবিদ তার স্বামী; সে যেটা বলবে সেটা পালন করা স্ত্রী হিসাবে কর্তব্য তার। নাহলে নিজ পরিবারের সঙ্গে আরো দুটোদিন থাকার ইচ্ছে ছিল তার। তবে শবনম চৌধুরী সম্পর্কে জানার কৌতূহল রয়েছে দর্শিনীর। তাকে দেখার জন‍্যও উদগ্রীব দর্শিনী।

আবিদের মার্সিডিজ গাড়িটা মুহতাসিম ভিলার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মূলত শাহরিয়ার চৌধুরী পাঠিয়েছেন আবিদ দর্শিনীকে নিয়ে আসার জন‍্য। দর্শিনী নিজের পরিবারকে বিদায় জানিয়ে আবিদের সঙ্গে গাড়িতে চড়ে বসেছে। উদ্দেশ্য চৌধুরী ভিলাতে যাবে, তারপর সেখান থেকে এয়াপোর্টে। এদিকে বিদায়ের সময় প্রজ্জ্বলিনী আবিদকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করে বলে,

‘আমার বোন যেনো কখনো কষ্ট না পায়। আপনি তাকে আগলে রাখবেন আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী।’

আবিদ প্রজ্জ্বলিনীকে ইনশিয়র করে বলে,

‘দর্শিনী আমার সহধর্মিনী এমনটা কখনো হবেনা। আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো দর্শিনীকে হ‍্যাপি রাখার। তাকে কখনো কষ্ট পেতে দেবো না নিশ্চিত থাকুন।’

আবিদ,দর্শিনী পরবর্তীতে উজান প্রজ্জ্বলিনী দুজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে চৌধুরী ভিলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

চৌধুরী ভিলাতে পৌঁছাতেই অনুসা বেগম ছেলে আর বউমাকে নিয়ে মেতে যায়। আজকে মেয়েরা সবাই বাড়িতে থাকবে। শুধু আবিদ, আরহান, শাহরিয়ার চৌধুরী আবিদের ফুপির উদ্দেশ্যে এয়ারপোর্টে যাবে। আবিদ, দর্শিনী নিজেদের রুমে চলে যায় শাওয়ার নিতে। দর্শিনী শাওয়ার নিয়ে আবিদের দেওয়া মেরুন রঙের একটা শাড়ি পড়ে আয়নায় দেখতে থাকে। ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙ, কোমড় পযর্ন্ত মসৃণ কালো বাদামি চুল, দর্শিনীর চুলগুলো জন্মগত ভাবেই এমন মসৃণ সুন্দর। তার লাল ঠোঁট, কালো বাদামি সংমিশ্রণে চোখের মনি, লম্বাটে সুদর্শন শরীর, সবকিছু আবিদের পছন্দের। দর্শিনী নিজে পুরোটাই আবিদের পছন্দের। সে আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখতে থাকে তাকে কী আজকাল বেশিই সুন্দর দেখাচ্ছে? হয়তো! আবিদ যখনই তাকে সুদর্শিনী বউ বলে ডাকে; দর্শিনীর বলতে ইচ্ছে করে তাহলে আপনি আমার সুদর্শন স্বামী। আপনাকে পেয়ে আমি ভাগ‍্যবতী আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী।

তাদের বাসর রাতে আবিদ তাকে মেরুন শাড়িটা উপহার স্বরূপ দিয়েছিল। দেনমোহরের নগদ একলক্ষ‍্য টাকা, অনেক গুলো শাড়ি, হীরের ছোট্ট পেনডেন্ট। যেটা অসুবিধা ছাড়া সবসময় পড়ে থাকা যাবে। আবিদ বলেছিল দর্শিনীর জন‍্য ছোট্ট পেনডেন্ট আর শাড়ি পড়াটা বাধ‍্যতামূলক। দর্শিনীকে শাড়িতে দেখলেই আবিদ যেন মাতাল প্রেমিক পুরুষ হয়ে যায়। তার সুদর্শিনী বউকে সবসময় আদর করতে মন চায়। আবিদের প্রত‍িটা আদর, আকুতি সবকিছু দর্শিনীর অভ‍্যাসে পরিনিত হয়েছে। দর্শিনী আবিদের কথায় সেইদিন লজ্জা পেয়েছিল। পরবর্তীতে আবিদের সংস্পর্শে ভালোলাগার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছিলো দুজনে। সেদিনের কথা ভাবলে প্রচন্ড লজ্জা পায় প্রিয়দর্শিনী। নিজেকে আয়নায় দেখতে খেয়াল করে আবিদ ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। পড়নে কালো প‍্যান্ট, ইন করা ব্লুশার্ট, সবুজ নীল মিশ্রণে টাই একদম ফিট। আবিদের হঠাৎ দর্শিনীর দিকে চোখ পড়ে। দর্শিনীকে মেরুন রঙের শাড়িতে দেখে স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর সম্মোহনী দৃষ্টিতে এগিয়ে আসে। সে দর্শিনীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ঐভাবেই কাঁধে, গলায় পরপর কয়েকটা চুমু খায়। তীব্র নেশালো সম্মোহিত কন্ঠে বলে,

‘কী চাও? আমাকে মে’রে ফেলতে চাও বউ?’

দর্শিনী আবিদের সংস্পর্শে চোখ বন্ধ করে নেয়। আবিদের গাঢ় নিঃশ্বাস দর্শিনীর শরীরে আছড়ে পড়ছে। দর্শিনী কেঁপে উঠে। আবিদের শরীর থেকে কড়া পারফিউমের স্মেল আসছে। তার খুবই পছন্দের স্মেলটা এটা। দর্শিনী মুচকি হেসে বলে,

‘উহুম।’

‘তবে আমি মাতাল হচ্ছি কেনো?’

দর্শিনী পিছনে ঘুরে আবিদের চোখে চোখ রেখে বলে,

‘জানিনা, ম‍্যাজিস্ট্রেট সাহেব।’

আবিদ ঠোঁট কামড়ে হাসে। দর্শিনীর কোমড় ধরে দূরুত্ব ঘুচিয়ে দেয়। আবিদ দর্শিনীর সামনের কিছু চুল কানে গুজে দেয়। দর্শিনী সরে আসতে চাইলে আবিদ দুষ্টু হেসে টুপ করে কপালে চুমু খায়, তারপর গালে, একে একে পুরো মুখে। অবশেষে গভীর আলিঙ্গনে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। দর্শিনী ছাড়াতে গিয়েও ব‍্যার্থ হয় পরবর্তীতে দর্শিনী আবিদের চুল আঁকড়ে ধরে আবিদকে সঙ্গ দেয়। কিছুক্ষণ পর আবিদ ঠোঁট ছেড়ে দুষ্টু হেসে বলে,

‘জাননননন! কেমন লাগছে এখন?’

দর্শিনী এতোক্ষণ পরে যেন প্রাণ ফিরে পেল। সে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। দর্শিনী বুঝতে পারছে আবিদ ইচ্ছে করে তাকে পিন্চ করছে। সে আবিদকে বলে,

‘সবসময় দুষ্টুমি ভালো লাগে না।’

আবিদ হাসতে থাকে। দর্শিনীর হাস‍্যজ্জ্বল মুখে মৃদু রাগ দেখে বলে,

‘আমি জানি তোমার ভালো লেগেছে, জান! তাই এভাবে বলোনা। আবিদ শাহরিয়ার কিন্তু কাছে রাখতে জানে আবার দূরে সরিয়ে দিতেও জানে।’

আবিদ হেসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো ঠিক করে নেয়। দর্শিনী আঁচরানোর ফলে উঠে পড়া কয়েকটি চুল ডাস্টবিনে ফেলে রুম থেকে বের হয়ে আসে। সে জানে আবিদ এমনই, তার সঙ্গে এতোক্ষণ রুমে থাকলে তার মাথায় কখন কী দুষ্টুমির ভুত চেপে বসবে। এজন্য সে নিচে চলে যায়।
.

ইতিমধ্যে আবিদ, বাবা, ভাইয়ের সঙ্গে রওনা দিয়েছে। এদিকে শাশুড়ির সঙ্গে নানান কথায় শবনম চৌধুরী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছে দর্শিনী। শবনম চৌধুরী একটু বদরাগি, কঠোর, স্পষ্টভাষী, মুখের উপর অপমান করে চুপ করিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন তিনি। আগে অবশ্য এমন কঠোর ছিলেন না তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কেমন একরোখা টাইপের হয়ে গেছেন শবনম চৌধুরী। দর্শিনী, আদিবা, পুস্পিতা রান্নাঘরে টুকটাক আড্ডা দিচ্ছিলো আর অনুসা বেগমকে সাহায্য করছিলো। কথায় কথায় পুস্পিতা বলে উঠে,

‘দর্শিনী তুমি কিন্তু সত্যি লাকি। আবিদ ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে ফুপি আসছে কতবছর পরে। স্পেশালি তোমাকে দেখতে, তবে আমার বিয়ের সময় ফুপি উপহার পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন না। ভিডিও কলে দেখেছেন আমাকে।’

পুস্পিতার কথায় দর্শিনী সহাস‍্যে বলে,

‘এবার আসছেন তো! আমাকে আর তোমাকে একসঙ্গে দেখে নেবেন ফুপিআম্মু।’

পুস্পিতা হেসে জবাব দেয়,

‘হুম।’
.
এয়ারপোর্টে শবনম চৌধুরী আবিদকে দেখে খুবই ইমোশনাল হয়ে পড়েছেন। আবিদও ফুপিকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ কান্না করেছে। আজ প্রায় বিশবছর পর আবিদকে দেখছেন শবনম চৌধুরী। তিনি যখন আমেরিকার উদ্দেশ্যে চলে যান আবিদ তখন ছোট ছিল। শবনম চৌধুরীর নিজের সন্তান না হলেও ভাইয়ের ছেলেকে নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি মনে করতেন। আবিদের যেমন ফুপিআম্মুকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয়েছিল। শবনম চৌধুরী সেমভাবে কষ্ট পেয়েছেন কিন্তু তিনি নিরুপায় ছিলেন। সবাইকে ছেড়ে থাকতে হয়েছিল তার। এমনকি পিছুটান যেন বাঁধা নাহয় এজন্য আগে তেমন যোগাযোগ করেননি আবিদের সঙ্গে। আবিদ সম্পূর্ণ যুবক হওয়ার পর থেকে তিনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আবিদ কতো শতবার বলতো দেশে ফিরে আসতে তিনি সবসময় শাত্বনা দিতে বলেছেন, তোমার বিয়ের সময় ফিরবো। নিজে দাঁড়িয়ে তোমার পছন্দ মতো মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবো। অথচ আবিদের বিয়ে হয়ে গেছে তিনি আজ এসেছেন। আবিদ অবশ্য দর্শিনীর ছবি আগেই দেখিয়েছিলো শবনম চৌধুরীকে তিনিও পছন্দ করেছিলেন। অপছন্দ করার কোন স্কোপ ছিলোনা তার। দর্শিনীকে সবাই পছন্দ করবে এটা অতি স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি মৃদু রাগ করেছেন আবিদের উপর, এয়ারলাইন্সের উপর, ভাইয়ের উপর সবার উপর। দুদিন আগেই তিনি আসার জন‍্য অনেক ট্রাই করেছিলেন। ভিসা, টিকিট এসব নিয়ে লেট হয়ে গেছে। এত সবকিছুর মধ‍্যে আবিদের বিয়েটা তিনি মিস করে গেলেন। তবে আবিদ চেয়েছিল তার বিয়েতে ফুপি উপস্থিত থাকুক। আবিদ আশা করেছিল কিন্তু এমনটা হয়নি। আবিদ শবনম চৌধুরীকে বলে,

‘দরকার পড়লে দর্শিনীকে আবার বিয়ে করে তোমার শখ পূরণ করবো। তবুও রাগ করোনা ফুপিআম্মু।’

শবনম চৌধুরী আবিদের উপর সন্তুষ্ট হোন। আবিদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

‘থাক আর বিয়ে করতে হবেনা আমার বাবাটাকে। চলো ফুপিআম্মুকে প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। তাকে দেখার জন‍্যই এখানে এসেছি দেরী একদম সহ‍্য হচ্ছে না আমার।’

শবনম চৌধুরী ভাই শাহরিয়ার চৌধুরী জড়িয়ে কিছুক্ষণ কান্না করেন। আরহানও ফুপিকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়, শবনম চৌধুরী বলেন সবাই ইমোশনাল হয়ে গেছে, আর কান্না করতে হবে না। আমি এসেছি তো নাকি? শবনম চৌধুরী অবশ্য অনেকবার আসফির কথা জিগ্যেস করছেন। অবশেষে তারা চৌধুরী ভিলার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

বাড়িতে পৌঁছে শবনম চৌধুরী ড্রয়িংরুমের সোফায় শরীর এলিয়ে দেন। অনুসা বেগম ড্রয়িংরুমের সবগুলো এসি ছেড়ে দেন। এতোদুর জার্নি শেষে নিজের ‍বাড়িতে অবস্থান করতে পেরে শবনম চৌধুরী প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নেন। যে মানুষটাকে ভুলতে এতগুলো মানুষকে তিনি কষ্ট দিয়েছিলেন, তার প্রতি আজ বিন্দুমাত্র সহনুভূতি নেই শবনম চৌধুরীর। তবে হ‍্যাঁ ভালো যেহেতু বেসেছিলেন; এজন্য এখনো শ্রদ্ধাবোধ সামান্যতম জীবিত আছে। সবটা ভুলে তিনি নিজেকে কঠোরভাবে প্রদর্শন করতে চেষ্টা করেন। আসলে কতটুকু সফল তিনি জানেন না। তবে সবাইকে ছেড়ে, ভালোবাসাকে হারিয়ে তিনি ভিতরে ভিতরে ভগ্ন প্রায়। সবাই তার কঠোর রূপটা দেখেন কিন্তু ভিতরে তিনি কতটা ভঙ্গুর কেউ দেখতে পায়না। অবশ‍্য তিনি চায়ও না কেউ দেখুক। তিনি হয়তো বেদনা দায়ক অতীত, প্রগাঢ় একাকীত্ব নিয়েই জীবনটা পার করবেন।

শবনম চৌধুরী সোফার একপাশে দর্শিনীকে বসিয়ে অপলক দেখতে থাকেন। মেরুন রঙের শাড়িতে মাথায় কাপড় দেওয়া নম্র, সুশীল, ভদ্র, সুদর্শিনী মেয়েটিকে দেখে তিনি তাজ্জব হয়ে আবিদের প্রাণে চায়। আবিদ ঠোঁট কামড়ে হেসে হ‍্যাঁ সূচক ইশারা করে। শবনম চৌধুরী দর্শিনীর থুতনি উঁচু করে বলে,

‘মাশআল্লাহ আবিদ! আসলেই সুদর্শিনী বউ পছন্দ করেছো। ছবির থেকে অনেক বেশি প্রিটি লাগছে।’

শবনম চৌধুরীর কথায় সবাই সন্তুষ্ট হয়। নাহলে অনুসা বেগম ভয় পাচ্ছিলেন। শবনম চৌধুরী যথেষ্ট স্মার্ট, সুন্দর তবে দর্শিনীর ভয় করছে তার সামনে বসে থাকতে। কথাবার্তায় কেমন কঠোরতার ছোঁয়া। শবনম চৌধুরী একদৃষ্টিতে তাকে পরোক্ষ করছে। দর্শিনীর চেহারাটা কারো কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছে তাকে। আজ এতবছর পর এমনটা হওয়ার কারণ কী? তিনি দ্রুত চোখ সরিয়ে নেন মুখে হঠাৎ গম্ভীরতা ফুটিয়ে তার অপরপাশে পুস্পিতা, আদিবাকে দেখতে থাকেন। তিনি যখন দেশ ছাড়েন আদিবার তখন জন্মই হয়নি; তিনি আদিবাকে বরাবর ভিডিও কলেই দেখে আসছেন। হঠাৎ তিনি হাত বাড়িয়ে আদিবাকে ডাকেন। আদিবা এগিয়ে আসলে শবনম চৌধুরী তাকে জড়িয়ে কপালে চুমু এঁকে দেয়। পুস্পিতাকেও মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। শবনম চৌধুরী চার পাঁচটা ল‍্যাগেজ এনেছেন। সেখানে সবার জন‍্য উপহার সামগ্রী রয়েছে। তিনি আদিবার জন‍্য নতুন ড্রেস, মেকআপ কিটস, বিদেশী ঘড়ি এনেছেন। অন‍্যদিকে দর্শিনী, পুস্পিতা, অনুসা বেগমের জন‍্য বিদেশী শাড়ি তাছাড়া নানান মেয়েলী বিদেশী কসমেটিকস সামগ্রী। ভাই, ভাইপোদের জন‍্য বিদেশী পান্জাবী, দামী ব্র‍্যান্ডের ঘড়ি, পারফিউম সেটসহ অনেক কিছু। সবশেষে তিনি আবিদের বউয়ের জন‍্য স্পেশাল একটা উপহার নিয়ে এসেছেন। সুন্দর কারুকাজ খচিত ডাইমন্ডের ভারী নেকলেস। যেটা ইউএস ডলারে ওয়ান লাখ ইউএসডি এবং বাংলাদেশী টাকায় এককোটি টাকা সমমূল‍্য মানের। তিনি আরহানের বিয়ের সময় টাকা পাঠিয়েছিলেন পুস্পিতার পছন্দ মতো উপহার কিনে নেওয়ার জন‍্য। তবে এতো দামী নয়। শবনম চৌধুরী দর্শিনীর জন‍্য নিজে পছন্দ করে এনেছেন। অনুসা বেগম, পুস্পিতা, আদিবা, এমনকি দর্শিনী নিজেও স্তব্দ এতো সুন্দর দামী নেকলেস দেখে। শবনম চৌধুরী নিজে দর্শিনীকে নেকলেসটা পড়িয়ে দেয়। আবিদ সহ সবাই মুগ্ধ হয়ে দর্শিনীকে দেখতে থাকে। ডাইমন্ডের চকচকে নেকলেসটা দর্শিনীকে প্রচন্ড মানিয়েছে। সবাই খুশি হয়েছে ঠিকই; কিন্তু পুস্পিতা মনে মনে একটু কষ্ট পেয়েছে। শবনম চৌধুরী তার জন‍্যও ডাইমন্ডের নেকলেস এনেছেন কিন্তু দর্শিনীর মতো এতো গর্জিয়াস নয়।

#চলবে

[ একবার রি’চেক করেছি তারপরেও ভুলত্রুটি থাকলে, সবাই মানিয়ে নিবেন প্লীজ আর অবশ্যই রেসপন্স করবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here