#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১০
#Jhorna_Islam
❝ডু ইউ ওয়ান্ট ডিভোর্স? ❞
সৌন্দর্যের এই একটা বাক্য নূরের কানে মনে হয় বারবার প্রতিদ্ধনিত হচ্ছে। এমনিতেই শরীর নাড়াচাড়া করতে পারছে না তারউপর এমন বাক্য কান ঝাঝড়া করে দিয়েছে। পুরো শরীর অবশ হয়ে গেছে। মনের কোণে খারাপ লাগা কাজ করছে।মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে ঘুম ভাঙলেই সব শেষ।
কি হলো বলো? আমার কথার আনসার দাও। তুমি কি চাও বিয়ে থেকে মুক্তি পেতে চাও তুমি?
সৌন্দর্যের এইরূপ কথায় নূরের খুশি হওয়ার কথা, সেতো বিয়েটা মন থেকে মানতেই পারেনি।অসহ্য হয়ে উঠেছিলো সব তাহলে আজ কেন এতো খারাপ লাগছে? কেন মনের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না নূর। না চাইতেও চোখের কার্ণিশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।
তুমি যদি ডিভোর্স চাও তাহলে শুনে রাখো,,, সৌন্দর্যের কথা বলার মাঝে নূর দুই চোখ বন্ধ করে নেয়।বার বার এই ডিভোর্স শব্দ টা শুনতে একটুও ভালো লাগছে না আর না এরপর সৌন্দর্য কি বলে তা শোনার জন্য শক্তি পাচ্ছে।
তুমি যদি ডিভোর্স চাও তাহলে শুনে রাখো আমি সৌন্দর্য ওয়াহিদ তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছি না।তোমাকে এই সৌন্দর্যের সাথেই সারাজীবন কাটাতে হবে, সেটা তুমি চাও বা না চাও। কানে ভালো করে ঢুকিয়ে নাও কথাটা তোমার জীবনে একটাই পুরুষ থাকবে সেটা হচ্ছি আমি।
সৌন্দর্যের কথায় নূর যেনো থমকে যায়। এতোক্ষনের দ্রুত হার্টবিট যেনো স্বাভাবিক হতে থাকে।
সৌন্দর্য নূরের চোখের পানি নিজের আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে দূরে ছিটকে মারে।নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,
❝ এই চোখের পানি এমন ভাবে নষ্ট করো না পরাণ।তুমি কাঁদবে চোখ দিয়ে পানিও পরবে তবে সেটা সুখের কান্না, কষ্টের জন্য না।❞
আহ্ পুরো শরীর যেনো জুরিয়ে গেলো।শীতল হাওয়া বইছে মনে হচ্ছে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে নূর৷ এতো শান্তি লাগছে কেন? আচ্ছা সত্যি শুনছে তো নূর? পরাণ? লোকটা কি তাকে পরাণ বলে ডাকলো? নূরের মনে হচ্ছে এই জীবনে প্রথম কোনো কথা শুনলো যেটায় এতো প্রশান্তি।
সৌন্দর্য নূরের কানের কাছ থেকে মুখ সরিয়ে নূরের চোখের দিকে দৃষ্টি দেয়। নূর ও চোখ মেলে তাকায়। সৌন্দর্য নূরের মুখে ফু দেয়। নূর চোখ বন্ধ করে নেয় , তারপর ধীরে ধীরে পিটপিট করে চোখ খুলে চোখে চোখ রাখে।নূরের এসব কান্ড দেখে সৌন্দর্য মুচকি হাসে। নূর সেই টোল পরা হাসির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।এই প্রথম এতো সুন্দর অনুভূতির উপভোগ করছে নূর। হার্টবিট যেনো ঘন্টার মতো আওয়াজ তুলছে, আচ্ছা এতো জোরে জোরে লাফাচ্ছে লোকটা কি টের পাচ্ছে?
সৌন্দর্য নূরের দুই সাইড থেকে নিজের হাত গুলো সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নিজের ভাজ করে রাখা শার্টের হাতাটা আরেকটু টেনে ঠিক করে নেয়।চুলে হাত ঢুকিয়ে এলোমেলো চুল সেট করে নেয়। নূরের দৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্য ও ঐ লোকটার থেকে সরছে না।লোকটার প্রতিটি কর্মকান্ড আর্ট বলে মনে হচ্ছে। নূরের সাথে এসব কি হচ্ছে নূর নিজেও বুঝতে পারছে না।
এরমধ্যে ক্যাবিনে ডাক্তার প্রবেশ করে। সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে নূরের কাছে যায়। নূর কে আরেকবার চেক-আপ করে জানায় বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে।তবে নিজের শরীর যত্ন নিতে হবে খুব ভালো করে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া ও টেনশন ফ্রি থাকতে হবে।
সৌন্দর্যকে রিসেশনে গিয়ে যা যা ফর্মালিটি আছে সব পূরণ করে আসতে বলে ডাক্তার চলে যায়।
ডাক্তার এসে এতকিছু বলে গেলো নূরের খেয়াল কই সেতো একজনের মাঝে আঁটকে গেছে।
আমি তোমায় বলেছিনা মিসেস ওয়াহিদ একদম আমার দিকে এমন করে তাকাবে না? আমার বউয়ের একান্ত মানুষটার উপর কারো নজর লাগুক সেটা আমি চাই না। (সৌন্দর্য)
নূর অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। চোখ মুখ কোচকে বন্ধ করে রাখে। এরমধ্যে নিজের হাতে আবার হাতের স্পর্শ পায়।
আ-আমি মোটেও আপনার দিকে অমন করে তাকিয়ে ছিলাম না। আর আ-আপনি আ-আমার হা-হাত ছাড়ুন, হাত ধরেছেন কেন?
কি সব বলছিস নূর? কি তাকাস নি আর হাত ছাড়তে কেন বলছিস তুই? (ইসরাত)
নূর সৌন্দর্যের জায়গায় ইসরাতের কন্ঠ স্বর শুনে মাথা ঘুরিয়ে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে মুখে জোর পূর্বক হাসি আনার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বলে,, আ-আসলে হয়েছে কি ইসু আমার মনে হয়েছে অন্য কোনো লোক ধরেছে তাই মানে ইয়ে।
হয়েছে হয়েছে তাই আর ইয়ে মানে মানে করতে হবে না। অন্য কোনো লোক নাকি নিজের বর ধরেছে ভেবেছিস তা খুব ভালো করেই জানি আমি।
নূর মনে মনে বলে,, হ্যা সব সময় একটু বেশিই জানিস। মুখে আর কিছু বলে না চুপ হয়ে যায়। এমনিতেই ভালো লাগছে না কিছু। বাড়িতে কি কেউ কিছু জানে না নাকি? কেউ তো আসলো না। এতোটাই পর করে দিয়েছে? মেয়ে অসুস্থ জেনেও আসছে না দেখতে। অভিমানে দু-চোখ আবার ও ভরে আসে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকে ইসরাত কে বলে,,,,ইসু?
হ্যা দোস্ত বল,, এখন তোর কেমন লাগছেরে? ঠিকঠাক আছে না সব? সব দোষ আমারই কেন যে তোকে নিয়ে বের হলাম, আর কেনই বা ফুচকা খেতে গেলাম ঝাল দিয়ে। আমার মাথা থেকে একদম বের হয়ে গেছে তোর সমস্যার কথা। আর তুইও কম কিসে?
—– ইসু এসব কথা রাখ। বাড়ির কাউকে যে দেখছি না?
—– আসলে তো দেখবি। কেউ তো এখানে নাই।
— নূর চুপ হয়ে যায়।
— কি দোস্ত মিউট হয়ে গেছিস কেন?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
— আরে তোর বাড়িতে কেউ জানেনা। জানলে নিশ্চয়ই এতক্ষনে হাসপাতালে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলতো আংকেল।পাগল মেয়ে না জেনে সব সময় তুই অভিমান করিস। আগে সব জেনে তারপর অভিমান করতে হয়।
নূর ইসরাতের কথা শুনে কি যেনো ভাবতে বসে।
নূরকে সৌন্দর্য বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। অবশ্য নূরের সাথে ইসরাত ও ছিলো। ইসরাত কয়েকবার সৌন্দর্য কে বাড়িতে আসার কথা বলে কিন্তু লোকটা বারবার ইসরাতের কথা এড়িয়ে গেছে। নূরদের বাড়িতে আসা নিয়ে লোকটার কি সমস্যা বুঝলো না নূর।অবশ্য নূর ঐ সময়ের পর থেকে মুখে তালা লাগিয়েছে একটা কথা ও বলেনি।
সৌন্দর্য ঔষধ গুলো বুঝিয়ে দিয়ে খুব দ্রুত চলে যায়। ইসরাত আর নূর বাড়িতে প্রবেশ করে। নূর না করে দিয়েছে এসব ঘটনা নিয়ে কোনো কিছু বলতে। এখন যখন ঠিক আছে শুধু শুধু বলে কেন টেনশনে ফেলবে।
নূরের মা নূরের চেহারা দেখে বেশ বিচলিত হয়ে গিয়েছিল। দুইজন মিলে এটাওটা বলে কাটিয়ে দেয়। সারা বিকেল নূরের সাথে থেকে সন্ধার আগে আগে বাড়ি চলে যায় ইসরাত।
””””””””””””””””””””’
রাতে তারাতাড়ি খাবার খেয়ে তারপর ঔষধ খেয়ে শুয়ে পরে নূর। শরীরের উপর একটু বেশিই অত্যাচার করে ফেলেছিল এই কয়দিন তার ফল পাচ্ছে। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে চোখের পাতায় ঘুম এসে ভর করে।
কিন্তু ঐযে কারো সুখ কি কারো সহ্য হয় নাকি? নূরের এতো সুন্দর ঘুমের বারোটা বাজানোর জন্য মোবাইল টা কর্কশ শব্দে বেজে ওঠে। নূর ফোন টা কেটে দেয়। আরো কয়েকবার বাজতে থাকে। নূর ততক্ষণে ঘুমিয়ে কাঁদা। মোবাইলে টুংটাং শব্দ করে চলেছে। নূর এসবের শব্দ শুনে অতিষ্ট হয়ে ঘুম টা আবার ছুটে যায়। ঘুমের মাঝেই ফোনটা হাতে নেওয়ার চেষ্টা চালায়,কিন্তু ততক্ষণে মোবাইলই একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। সারাদিন চার্জে লাগানো হয় নি।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে ও নূরের আজ বেশ দেরি হয়ে যায়। আজ ভার্সিটি বন্ধ তাই কোনো প্যারা নেই। নূর আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯ টা বেজে গেছে। কি মনে করে ফোনটা হাতে নেয়। ফোন হাতে নিয়ে দেখে বন্ধ হয়ে আছে। চার্জে ফোন লাগিয়ে অন করতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে কল আর মেসেজের ছড়াছড়ি। সবগুলো ঐদিনের ঐ অপরিচিত নাম্বার থেকে এসেছে।
লাস্ট মেসেজ টা এমন,,,আমাকে এমন করে ইগনোর করার ফল তুমি পাবে অবুঝ বালিকা।
#চলবে,,,,?