পরাণ দিয়ে ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) পর্ব ৭

0
257

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৭
#Jhorna_Islam

নিজে কিছু না করেও যখন কোনো একটা অপবাদ মাথায় এসে পরে তখন সেই ব্যক্তিটাই বুঝতে পারে কেমন লাগে।আজ নূর কিছুতেই শান্তিতে এক্সাম দিতে পারছে না। মনটা কেমন উশখুশ করছে।চারপাশ থেকে যেনো অস্বস্তি গুলো নূর কে ঘিরে রেখেছে। খাতায় লিখছে আর মনে হচ্ছে এই বুঝি স্যার খাতা টান দিলো এই বুঝি আবার খাতার ভিতর থেকে আলাদা কোনো পেপার পাওয়া গেলো।
এই বুঝি স্যার আবার কথা শুনাবে।মনের অশান্তির জন্য নিজের খাতা নিজেই দুইবার চেক দিয়েছে। আজ আর ওয়াশরুমে ও যায় নি। আজ রিতা নেই তাও ভয় কাটাতে পারছে না।

কালকের ঘটনার পর সকলেই একটু বেশিই সতর্ক হয়ে গেছে। স্যাররা ও কড়াকড়ি গার্ড দিচ্ছে।

নূর লিখতে লিখতেই নিজের পাশে এসে কারো দাঁড়ানোর উপস্থিতি টের পায়। মনে মনে ভাবে স্যার হয়তো আজ নূরের দিকে বিশেষ নজর রাখছে। না চাইতেও নূরের চোখ স্যারের দিকে যায়। স্যার কে দেখে নূরের হাত থেকে কলম টা খাতার উপর পরে যায়। নূর শুকনো ঢুক গিলে চোখ সরিয়ে লিখায় মন দেয়। কেন যেন হাতটা সামান্য কাপছে। সৌন্দর্য কে আজ নূর আশা করে নি এখানে। সৌন্দর্য এখানে আসবে এটাই স্বাভাবিক তবুও নূরের কেমন লাগছে। না চাইতেও চোখ দুটো সৌন্দর্যের দিকে চলে যাচ্ছে।

সৌন্দর্য তখন নূরের বেঞ্চ বরাবর দাঁড়িয়ে পুরো ক্লাসে নজর বুলাচ্ছে।

নূর লিখতে পারছে না। লোকটার গায়ের কড়া পার্ফিউমের ঘ্রাণ নাকে এসে বারি খাচ্ছে। মাথা কেমন ভনভন করছে। নূর মন থেকে চাইছে সৌন্দর্য তার বেঞ্চের কাছ থেকে সরে যাক।অন্য দিকে তো কতো জায়গা আছে, ঐদিকে না দাঁড়িয়ে এখানে এসেই দাঁড়াতে হলো লোকটা কে। সব বাদ দিয়ে নূর লিখায় মন দেয় কিছুতেই তাকাবে না।দাঁড়িয়ে থাকুক যতক্ষন ইচ্ছে, তাতে নূরের কি। সবকিছু থেকে মনোযোগ সরিয়ে নূর লিখতে থাকে। কয়েক মিনিট পর সৌন্দর্যের বাজখাঁই স্বরে কিছু টা কেঁপে ওঠে।

হেই ইউ! তোমার সাহস কি করে হলো পিছনে ঘাড় ঘুরানোর? একটা স্টুডেন্ট কে বলে সৌন্দর্য।

সৌন্দর্যর ধমকে ছেলে টা কেঁপে ওঠে। এমনিতেই ছেলেটা একটু ভীতু টাইপের। ছেলেটা সৌন্দর্যের দিকে কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে তাকায়।

আনসার মি!

স্যার আ-আসলে আমার কোয়েশ্চেন পেপার টা বাতাসে উড়ে পিছনে চলে গেছে।

ছেলেটির কথায় সৌন্দর্য এগিয়ে আসে। চেক করে দেখে সত্যি পিছনের ছেলের পায়ের কাছে পরে আছে প্রশ্ন টা। সৌন্দর্য ঐ ছেলেটা কে উঠাতে বলে।ছেলেটা তুলে সৌন্দর্যের কাছে দেয়। সৌন্দর্য হাতে নিয়ে ভালো করে চেক করে কোনো লিখা আছে কিনা। সত্যি উড়ে এসেছে? নাকি তুমি পিছনে দিয়েছো?

না-না স্যার।বিশ্বাস করুন একদম না। ছেলেটি মনে হয় একদম কেঁদেই দিবে এমন ভাব। সৌন্দর্য ছেলেটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন দিয়ে দেয়। নেক্সট টাইম সবকিছু যেনো সামলে রাখে বলেই সামনে টিচারের কাছে গিয়ে কথা বলতে থাকে।

নূর খাতায় লিখতে লিখতে আড় চোখে সৌন্দর্যের দিকে তাকায়। লোকটা গম্ভীর মুখে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কি যেনো বলছে নিচু গলায়। কিছু সময় পর সৌন্দর্য হল থেকে চলে যায়। যেতে যেতে নূরের দিকে এক পলক তাকাতে ভুলে না। নূর সব ভুলে এক্সাম দেওয়ায় মন দেয়।

—————————–
বিকেলে দুইজন টিউশনি থেকে বাড়ি যাচ্ছে। ইসরাতের খুব খিদে লেগেছে বলতে গেলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়ার শখ জেগেছে মনে। কিন্তু নূর ম্যাডাম কিছুতেই যাবে না। বেচারি ইসরাত বলতে বলতে নিজের গলা শুকিয়ে ফেলেছে নূর কিছুতেই রাজি হচ্ছে না ।

প্লিজ বোন চল, এই চল না বার্গার খেতে খুব মন চেয়েছে ইয়ার। দেখ আমার পেট বার্গারের নাম শুনেই আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে খাওয়ার জন্য। দেখ কেমন ডাকছে বলেই ইসরাত নূরের হাত নিয়ে নিজের পেটে রাখে।

নূর ইসরাতের পেট থেকে হাত সরাতে সরাতে বলে,এটা বার্গারের নাম শুনে নয়,তোর এমনিতেই খিদে লেগেছে। আর তুই নাম দিচ্ছিস বার্গারের।

চল দোস্ত। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।

নূর আর কি করবে রাজি না হয়ে পারলো না। এই মেয়ে টা এসব চাইনিজ, টাইনিজ খাওয়ার জন্য এতো পাগল। অগত্যা রাজি হয় যেতে।

আচ্ছা ঠিক আছে চল।(নূর)

সত্যিইইই? বলেই ইসরাত লাফিয়ে উঠে।

না।আমি গেলাম বলেই নূর হাঁটা ধরে।

এই না না দোস্ত চল।তোকে এতো এতো থ্যাংকস বলেই নূরের গালে টুপ করে চুমু বসায়।

নূর ইসরাত বলেই চিল্লিয়ে উঠে। তার এসব একদম পছন্দ না। শরীর কেমন গুলিয়ে আসে।

ইসরাত নিজেকে সামলে বলে,,সরি সরি দোস্ত এক্সাইটেডে ভুলে গেছি। তারপর মনে মনে বলে,,আমি দেওয়ায় তোমার এলার্জি না? যখন সৌন্দর্য স্যার দিবে তখন এমন করে দেখো তোমার কি অবস্থা করে হুহ।

দুইজন একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে ভিতরে নিরিবিলি একটা টেবিল খুঁজে বসে।ইসরাত দুইজনের জন্য বার্গার অর্ডার করে।
খাবার আসতে একটু সময় লাগবে। এরমধ্যে ইসরাতের একটা কল আসে তার কাজিন নাকি এসেছে কি একটা দিতে। পাঁচ মিনিটের জন্য বাইরে যেতে হবে।নূরকে বলে ইসরাত চলে যায়।

নূর একা একা বসে আছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। এখন ব্যাগ থেকে বই নিয়ে পড়তে ও মন চাচ্ছে না।বসে বসে নখ খোঁচাচ্ছে। এরমধ্যে পরিচিত কন্ঠ স্বর শুনতে পায়।তবে সব সময়ের মতো রাগী,গম্ভীর, ঠাট্টার সুর না। হাস্যরত কন্ঠ স্বর।

নূর কর্ণারের টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে যা ভেবেছিলো তাই। সৌন্দর্য বসে আছে কয়েকজন লোকের সাথে। সকালের সেই রূপ এখন আর নেই পুরো ভিন্ন। পোশাক-আশাক মুখের এক্সপ্রেশন। কি সুন্দর করে হেসে হেসে কথা বলছে। ভার্সিটির স্টুডেন্টরা এখন এই সৌন্দর্য কে দেখলে নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যেতো।দিন আর রাতের তফাত যেনো এ।

নূর কিছুতেই চোখ সরাতে পারছে না। এমন করে আগে কখনো সৌন্দর্য কে দেখা হয় নি।এমনকি কোনো ছেলেকেই দেখা হয়নি।

কি সুন্দর লোকটা কে দেখতে। যেমন চেহারা,তেমন এটিটিউড।নীল রংয়ের শার্টে কি সুন্দর মানিয়েছে। সুন্দর শরীরে নীল রং টা ফুটে আছে। হাতা গুলো স্লিভ করা হাতের র’গ গুলো ও ভাসমান। ছেলে মানুষের বুঝি এতো সুন্দর হতে হয়? কই নূর তো এতো সুন্দর না সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে নূর নিজের হাতের দিকে তাকায়। নিজের চেহারায় হাত বুলায়। সৌন্দর্যের পাশে কেমন নিজেকে তুচ্ছ লাগছে।

সৌন্দর্য নূরকে লক্ষ করে নাই নাকি করেছে কে জানে।হয়তো বুঝতে ও পারছে না কেউ একজন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে দেখছে।

নূরের সৌন্দর্য কে দেখে মনে মনে আওড়ায় ,,

❝ সৌন্দর্য এক অদ্ভুত অনুভূতি,
চোখের মুগ্ধতায় উড়ে বেড়ানো নীল প্রজাপতি। ❞

নূরের ভাবনার মাঝেই ইসরাত এসে বসে। কিন্তু নূরের কোনো সারা শব্দ নেই একই ভাবে তাকিয়ে আছে। নূরের তাকানো লক্ষ করে ইসরাত ও তাকায়।কিন্তু কোথাও কিছু দেখতে পায় না। একটা ওয়েটার শুধু টেবিল পরিষ্কার করছে। ঐখানে এমন করে তাকিয়ে থাকার কি আছে ইসরাত বুঝলো না। নূরের সামনে তুড়ি বাজায়। নূর ঘাবড়ে গিয়ে ইসরাতের দিকে তাকায়।

কি দোস্ত কি হয়েছে? আর ঐদিকে কি?(ইসরাত)

ক-কই কি হয়েছে? বলেই আবার ঐদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। আশ্চর্য হুট করে হাওয়া হয়ে গেলো নাকি। তারপর ইসরাতের কথা ভেবে নূর হাফ ছাড়ে ভালো হয়েছে দেখেনি। দেখলে কি বিব্রত পরিস্থিতিতে পরতে হতো।

কিছু না এমনি তাকিয়ে ছিলাম।

ইসরাত আর কথা বাড়ায় নি।দুইজন বার্গার আসলে খেয়ে বেরিয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে।

এরমধ্যে নূরের ফোনে মেসেজ আসে। নূর বেশি পাত্তা দেয় নি। রাতে সকল কাজ,পড়াশোনা শেষ করে ঘুমানোর সময় ফোন হাতে নেয় নূর এলার্ম সেট করার জন্য। তখন আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ দেখে ক্লিক করে দেখার জন্য।

“কারো দিকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে নেই নজর লেগে যায়। আর আমার দিকে তো একদম না কারণ আমার একটা হা’বা’গো’বা বউ আছে। ”

#চলবে??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here