পরাণ দিয়ে ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ) পর্ব ৫

0
249

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ৫
#Jhorna_Islam

নূর হরলিক্সের কৌটা টা গাড়ির সামনে রেখে চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে বসে আছে। ভিতরে ভিতরে রাগে ফুঁসছে। সৌন্দর্য একের পর এক অপমান করে যাচ্ছে। একটা মানুষ কে এতো অপমান করা কি ঠিক? লোকটা একজন শিক্ষক হয়ে জানেন না একজন মানুষকে প্রতি নিয়ত এমনভাবে অপমান করলে মানুষটার মনে কিরকম প্রভাব পরবে।

ফাতিহার কোনো দিকে কোনো খেয়াল নাই,সে একমনে খাচ্ছে। মাঝে মাঝে আঙুল ও চা’টছে যেটার আওয়াজ হচ্ছে। নূরের বিষয় টা খুব ভালো লাগছে। কি সুন্দর করে মেয়ে টা খাচ্ছে।

কিন্তু লোকটার এটাও সহ্য হলো না। নূরের কোনো কিছুই মনে হয় সহ্য হয় না লোকটার। নূর এই লোকটার সাথে সারাজীবন কি করে কাটাবে ভেবে পায় না। এসব কিছু নিয়ে ভাবতে গেলেই নূরের কান্না পায়।

সৌন্দর্য কপাল কোচকে ফাতিহা কে বলে,,,আহ্ মাম কি হচ্ছে কি? এভাবে কেউ শব্দ করে খাবার খায়? খাবার খাবে নিঃশব্দে। আর তুমি কি করছো? কি রকম বা’জে সাউন্ড। আর এটা ব্যাড ম্যানার মাম।সাউন্ড পলিউশন হয়।

ফাতিহা সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে।তারপর মাথা নেড়ে খেতে থাকে।

নূর সৌন্দর্যের কথায় বো’কা বনে যায়। খাওয়ার আওয়াজে ও নাকি সাউন্ড পলিউশন হয়। এটাও শোনার বাকি ছিলো। তাই বলে কি লোকে তাদের শান্তি মতো খেতে ও পারবে না নাকি।আজব লোক।

আমাকে কি আজ বেশি সুন্দর লাগছে নাকি? এতো ছোট ছোট চোখ কে এমন বড় বড় করে দেখার কি আছে। ন’জর ট’জর লেগে গেলে তো সমস্যা। কে জানে আবার আমার ফ্রেশ মুখে ব্রন,টন আবার বের হলে।

নূর সৌন্দর্যের এরূপ কথায় চোখ সরিয়ে নেয়। মনে মনে ভেংচি কাটে। এএএ আসছে আমার রূপবতী পুরুষ মানুষ। উনাকে নজর লাগাতে আমার ঠে’কা পরছে।

আ-আমি মোটেও আপনার দিকে চোখ দেই নাই। আমতা আমতা করে বলে নূর।

তাহলে তুমি কি টে’রা নাকি মেয়ে? যে একদিকে তাকাও কিন্তু দৃষ্টি থাকে অন্য দিকে? এই তোমার আর কি কি দোষ আছে সব ক্লিয়ার করে বলোতো আমাকে।লিস্ট করে রাখি।সৌন্দর্যের এরূপ কথায় নূর বলে,,

— এসব আপনি কি বলছেন? আমি মোটেও টে’রা না।এই এই যে দেখেন আমার চোখ। বলেই নূর নিজের চোখের কাছে আঙুল নিয়ে চোখ দেখায় সৌন্দর্য কে। আর বলে,, আর শুনুন আমার চোখ মোটেও ছোট ছোট না।আমার ফেইসের সাথে আমার চোখ মানান সই। আপনি এসব বলে আমাকে একদম অপমান করতে পারেন না।

সৌন্দর্য একটা নদীর পাড়ে এনে গাড়ি থামায়। নূরের কান্ড দেখে সৌন্দর্য শব্দ করে হেসে উঠে।

সৌন্দর্যের হাসির শব্দে নূরের হুঁশ ফিরে।কি করেছে এতক্ষন ভাবলেই লজ্জা লাগছে।কি ভেবেছে লোকটা। নূর তারাতাড়ি নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়।

সৌন্দর্য ততক্ষণে গাড়ির ডোর খুলে বাইরে বের হয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে বলে মাম তোমরা ও বেরিয়ে আসো।

ফাতিহা নূরের কোল থেকে নেমে তারাতাড়ি বেরিয়ে আসে। নূর ও আস্তে ধীরে গাড়ি থেকে বের হয়। চার পাশে অনেক গাছ গাছালি।কি সুন্দর বাতাস।বাতাসে নূরের ওড়না দুলছে। ফাতিহা গাড়ি থেকে নেমে নূরের জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলো । নূর বের হতেই নূরের হাতের আঙুল ধরে গুটিগুটি পায়ে হাঁটতে থাকে।

জানো মাম্মা এটা না মি.ওয়াহিদের খুব পছন্দের জায়গা। বলেই নূরকে ফাতিহা এটা ওটা দেখাচ্ছে।

— আচ্ছা তাই নাকি? নূর জিজ্ঞেস করে।

— হুম আমরা প্রায়ই আসি।তবে বিশেষ কারণে।

— বিশেষ কারণ?

— হ্যা যখন আমার অথবা মি. ওয়াহিদের মন খুব খারাপ থাকে তখনই আমরা এখানে আসি। আর আমাদের মন ভালো হয়ে যায় বলেই ফাতিহা লাফিয়ে উঠে।

ফাতিহার কথায় নূরের মনে কেন যেনো প্রশ্ন জাগলো। কিছু না ভেবে নূর ফাতিহা কে নিজের মনের প্রশ্ন টা জিজ্ঞেস করেই ফেলে।

আচ্ছা ফাতিহা আজ কার মন খারাপ? তোমার?

ফাতিহা নূরের দিকে তাকিয়ে বলে না তো।

— তাহলে,,,, তাহলে কি উনার? নূর সৌন্দর্যের দিকে আঙুল তাক করে জিজ্ঞেস করে।

— আরে না। তুমি খুব বোকা।নিজের মন খারাপ আর নিজেই জানো না? আজ তো তোমার মন খারাপ তাই আমরা এখানে এসেছি।ফাতিহা কথাটা বলেই দৌড়ে গিয়ে সৌন্দর্যের কোলে উঠে কারণ সে আইসক্রিম দেখেছে।

নূর ঐখানেই দাঁড়িয়ে বাপ বেটির দিকে তাকিয়ে রয়। আর ভাবতে থাকে তার মন খারাপ বলে এখানে তাদের পছন্দের জায়গায় নিয়ে এসেছে। না চাইতেও নূরের মন টা বেশ ফুরফুরে হয়ে যায় ফাতিহার কথা শুনে।

*******-**

ইসরাত গাড়ির পিছনের সিটে বসে একের পর এক গান গেয়ে চলেছে আস্তে নয় জোরে জোরে। গাড়ির ড্রাইভারের এখন গাড়ি চালানো রেখে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কান দিয়ে মনে হচ্ছে রক্ত বের হবে।কানে তুলু দিয়ে ও কোনো লাভ হচ্ছে না।মনে হচ্ছে কানে গুঁজে রাখা তুলো ভেদ করে মস্তিষ্কের ভিতর গিয়ে এই বেসুরা কন্ঠ স্বর গিয়ে বারি খাচ্ছে। একটা মানুষ এতো বাজে গান করে ড্রাইভার এই মেয়েটা কে না দেখলে বুঝতো না। ড্রাইভার মনে মনে ভাবছে আজকের পর থেকে আর কোনো দিন গানই শুনবে না।যেই গান ড্রাইভারের এতো প্রিয় অবসর সময় পেলেই গান শুনে সেটা আজ থেকে ব’য়:কট। কিছু বলতেও পারছে না মেয়েটা কে।স্যারের পরিচিত কেউ হবে কিছু বললে যদি আবার বিচার দেয় তাহলে সমস্যা। চাকরি নিয়ে টানাটানি হবে শেষে।

এরকম বা*জে গানের কন্ঠ স্বর হতে পারে কারো ড্রাইভার এই মেয়েকে না দেখলে জানতেই পারতো না। গাড়ি চালানো রেখে এখন উল্টো দৌড় দিয়ে পালাতে মন চাচ্ছে লোকটার। মনে মনে একটাই জিনিস চাচ্ছে কখন রাস্তা ফুড়াবে আর এই মেয়ে কে নামিয়ে দিয়ে নিজের কান দুটো রক্ষা করবে।

ইসরাতের গানে যে একজন বেহুঁশ হওয়ার পথে সেদিকে তার কোনো হুঁশ নেই। সে তার মনের আনন্দে গান গাইছে। আজ ইসরাতের এক্সাম খুব ভালো হয়েছে। এইদিকে বান্ধবীর ও কিছু একটা গতি হয়ে যাবে আজ। স্যার নিশ্চই তাদের সম্পর্ক টা সহজ করার জন্য আজ নিয়ে গেছে নূর কে। আহা পরাণের বান্ধবীটা ও মিংগেল হয়ে গেলো আর ঐ ব*জ্জাত তালা টা ইসরাতের এতো এতো ভালোবাসার এক কানাকড়ি ও বুঝলো না। বুঝবে বুঝবে যেদিন অন্য কেউ এসে এনট্রি নিবে তখন বুঝবে।এসব কথা ভাবতে ভাবতে ইসরাত গান গায়,,,,

❝প্রেমে পরিয়া গেলাম ফাঁসিয়া,
করতে হবে এবার বিয়া।
সোনার ই চান পিতলা ঘুঘু,
যাবে কোথায় পালাইয়া!❞

ইসরাত গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। এরমধ্যে কিছু একটা দেখতে পেয়ে জোরে চিল্লিয়ে উঠে। ড্রাইভার কে তারাতাড়ি গাড়ি থামাতে বলে। ইসরাতের চিল্লানীতে ড্রাইভার তাল হারিয়ে জোরে ব্রেক করে।

ড্রাইভার কিছু বলার আগেই ইসরাত গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। ড্রাইভার কে কিছু বলতেও দেয় নি। এই নিয়ে ড্রাইভার ও মাথা ঘামায় নি নেমে গেছে ভালো হয়েছে। কান দুটো একটু রক্ষা পেয়েছে। নয়তো এই মেয়ের বাড়ি পর্যন্ত যেতে যেতে হয়তো আর কানেই শুনতে পেতো না।

ড্রাইভারের খুশিতে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে ইসরাত দৌড়ে এসে বলে দিয়ে যায় গাড়ি নিয়ে যেনো এখানেই থাকে।একটু পর ইসরাত আসতেছে। যেমন দৌড়ে ইসরাত এসেছে আবার তেমন ভাবে দৌড়েই চলে যায়। ড্রাইভার ইসরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কানে হাত দিয়ে বসে থাকে।

ইসরাত গাড়ি থেকে তালহা কে দেখতে পায়। শুধু তালহা কে না সাথে একটা মেয়ে ও আছে। দুইজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছে।

একজন দাঁত কেলিয়ে হাসছে আর সেই হাসিতে মুগ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও আরেকজনের কলিজায় গিয়ে বিঁধছে।

তালহা হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে মেয়েটার সাথে কি নিয়ে যেনো কথা বলছে।ইসরাত কাছাকাছি এসে কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে কিন্তু ভালো মতো কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। কি সব যেনো বলছে,, আছে, আমি দিবো,চিন্তা আরো কি কি।

ইসরাত এদের হাসি মাখা কথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। কিছু না ভেবেই ইসরাত তালহা আর মেয়েটার সামনে গিয়ে হাজির হয়।

হুট করে কেউ সামনে আসায় তালহা আর মেয়েটা ভরকে যায়। তালহা তো ইসরাতের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

ইসরাত কোমড়ে হাত দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকায়।

তালহা ঢুক গিলে মনে মনে ভাবে হয়ে গেলো।যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধা হয়। আর সময় পেলো না আসার।কি তা/ন্ডব চালাবে কে জানে।

তালহা কে অবাক করে দিয়ে ইসরাত নিচে বসে পরে। আহাজারি করতে করতে বলে আমার সংসার শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো গোওও। বিয়ের আগে সতীন বের হইছে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ইসরাত।

তালহা প্রথমে বোঝার চেষ্টা করে কি হচ্ছে কি এখানে। পরে মাথা কাজ করতেই তারাতাড়ি ইসরাত কে উঠতে বলে।

ইসরাত কি হচ্ছে কি এসব? পা’গল হয়ে গেছো তুমি? কি করছো এসব রাস্তার মধ্যে? লোককে হাসাচ্ছো। উঠো বলছি। উঠো।

আমার সব শেষ করে দিয়ে এখন উঠতে বলছেন? আমি উঠবোনা বলেই বিলাপ করতে থাকে।

তালহা এবার একটু রা’গেই বলে তুমি কি উঠবে?

আমি উঠবো না।ভাগ্যিস সৌন্দর্য স্যার আমাকে এই দিক দিয়ে পাঠিয়েছে নয়তো আমিতো কিছুই জানতে পারতাম না।

তালহা কথাতে,রাগে কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।ইসরাত একই ভাবে বসে আছে। কোনো উপায় না পেয়ে তালহা সৌন্দর্য কে ফোন দিয়ে বলে,,ভাই আমাকে বাঁচা নয়তো গ’ণধো’লাই খেতে হবে। সব খুলে বলে তালহা সৌন্দর্য কে।

সৌন্দর্য দশ মিনিটের মাঝে জোরে গাড়ি চালিয়ে উপস্থিত হয়। গাড়ি থেকে নেমে দেখে ইসরাত গালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। একটা কথা ও বলছে না। সৌন্দর্যের সাথে সাথে নূর ও নেমে আসে।

সৌন্দর্য এসব দৃশ্য দেখে বিরবির করে বলে,, একটা ব;ল;দ। আরেক টা তারছিরা।

#চলবে,,,,?

আজকে বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কেমন হলো জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here