বামনের ঘরে চাঁদ
সাজিয়ানা মুনির
২৬.
( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )
কয়েক মুহূর্ত আগে বিরাট এক কাণ্ড ঘটেছে। আষাঢ় আইমানের মধ্যে বড়সড় ধস্/তাধ/স্তি হয়েছে। দুজনই আ/হত, আইমান খুব বাজে ভাবে র/ক্তা/ক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছে। দুজন শক্তিশালী পুরুষকে চার নারী কি আটকাতে পারে? শেষমেশ রাজিব এসে সাহায্য করায় দুজনকে ছাড়াতে পেরেছে। বেশ বড়সড় ঝামেলা হয়েছে। ঘরের ফার্নিচারেরও ক্ষয়ক্ষ/তি হয়েছে, কাচের টি টেবিলটা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ। আষাঢ়ের হাত থেকে অনবরত র/ক্ত ঝরছে। সেদিকে তার খেয়াল নেই, রাগে এখনো ফোঁসফোঁস করছে। চাঁদ আজ মা/রাত্মকরকম ভয় পেয়েছে, ভীষণরকম ঘাবড়ে গেছে। আষাঢ়ের এমন রূপ দেখেনি আগে। শান্ত মানুষ রেগে গেলে বোধহয় এমনি তান্ডব হয়! খানিক পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে করে কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভয়ে গা শিরশির করছে। আষাঢ়ের রক্তিম কাঠকাঠ চোখজোড়ায় ভয়ঙ্কর ক্রোধ। কোনো ভাবেই দমে যাওয়ার নাম নেই। অনেকটা সময় কাট/লো। বিকাল মাড়িয়ে সন্ধ্যা পড়েছে, ভাঙা ফার্নিচার পরিষ্কার করে সবে আরশি চাঁদ বসেছে। পরিবেশ শান্ত হলেও, চাঁদ শান্ত থাকতে পারছে না। বুক এখনো প্রচন্ডরকম কাঁপছে তার! আজ প্রথমবার আষাঢ়কে মা/রাত্নকভাবে ভয় করছে তার। এই ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের সরল দেখতে মানুষটা এতটা হিং/স্র! এতটা?
আরশিদের সন্ধ্যার আগেই বাড়ির জন্য রওনা হওয়ার কথা ছিল। আগামীকাল পাশের বাড়িতে দাওয়াত করেছে। যেতেই হবে! এদিকে চাঁদও হলে ফিরে যেতে চাইছে, আজকের ঘটনা দেখার পর বেচারি ভীষণ ভীত। ফ্লোর পরিষ্কার করার সময় বেশ শঙ্কিত সুরেই বলল,
‘ আমি এখানে উনার সামনে থাকছি থাকছি না, দেখা যাবে জেদের মাথায় দুচারটা চড় আমার গালেই না পড়ে।সুযোগ বুঝে, তোমাদের সাথে আমিও হলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাবো!’
এখানকার পরিস্থিতি, আর আষাঢ়ের উগ্র মেজাজ দেখে চাঁদকে সাথে নিয়ে যাওয়াটাই ভালো মনে করল আরশি। চাঁদের চিন্তিত ভীতু মুখখানা একপলক দেখে বলল,
‘ ক্লাস শুরু হতে তো এখনো অনেক দেরি। আমাদের সাথে বাড়ি চলো, সেখানে বেড়িয়ে তারপর….
আরশি কথা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই আষাঢ়ের ক্রোধান্বিত আওয়াজ কানে এলো। আষাঢ় বেশ চড়াও গলায় বলল,
‘ তোর বাড়িতে পাঠাবো? আরো, অসম্ভব! আজকের পর ও আর কোনো দিন তোর বাড়িতে একা যাবে না। আমার সাথে যাবে আমার সাথে আসবে। তাও বিবাহিতা মেয়েদের মত চুড়ি নাকের দুল পরে।’
আষাঢ়ের এমন ঈর্ষায় জর্জরীত কথায় ফিক করে হেসে ফেলল রাজিব। আরশির চোখেমুখে বিস্ময়, স্বামীর দিকে কাঠকাঠ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ ওমা! এখানে আমার বাড়ির কি দোষ? ‘
‘ তোর বাড়িরই দোষ। চারবছর আগে তোর বাড়িতে না গেলে এসব হতো না।’
‘ তোর বউ সুন্দর। যেকারো পছন্দ হওয়ার মত। এখানে অন্যকারো কি দোষ।’
‘ ওর দিকে তাকাবে কেন? সুন্দর হলেই কি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাড়ি আসতে হবে?’
‘ এখন কি মানুষের চোখ বন্ধ করে রাখবি?’
‘ যদি সম্ভব হতো তাহলে তাই করতাম!’
আষাঢ় বিড়বিড় করে বলল। আরশি হতভম্ব! তার বুঝদার ভাইয়ের এ কেমন পাগলামো! একজন মানুষকে উলোটপালোট করতে এমন একটা কাণ্ডই যথেষ্ট। চাঁদের শুকনো মুখখানায় তাকিয়ে, আরশি ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলল। তার পাগল ভাই বাচ্চা মেয়েটার সাথে না জানি কি করে আবার! বেচারীর জন্য বড্ড মায়া হচ্ছে তার।
সন্ধ্যার পরপর আরশিরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। বাড়ি জুড়ে পিনপতন নীরবতা এখন। মালা বেগম নিজের ঘরে বিশ্রাম করছে, আষাঢ় সেই যে নিজের ঘরে ঢুকেছে এরপর আর বের হয়নি। চাঁদ ভীষণ অনুতপ্ত। ঈদের দিন বাড়িতে এমন বাজে একটা কাণ্ড ঘটে গেল। যদিও এতে তার কোনো হাত ছিল না, কিন্তু যা কিছু হয়েছে তাকে ঘিরেই। ভীষণ লজ্জা অনুতপ্ততা কাজ করছে। আষাঢ়ের হাতে প্রচণ্ড চোট লেগেছে, টপটপ করে র/ক্ত ঝরছিলো। যেমন ক্ষি/প্ত হয়ে ঘরে গেল, ব্যান্ডেজ করেনি নিশ্চয়ই। চাঁদ কি একবার ঘরে যাবে? দরজা থেকে উঁকি দিয়ে দেখবে? মন মস্তিষ্কের অনেক যুদ্ধের পর, ঔষধের বাক্স হাতে ঘরের দিক এগিয়ে গেল। দরজার কাছে যেয়ে উঁকি দিলেই দেখলো। আষাঢ়ের হাতে জ্বল/ন্ত সিগারেট, বারান্দার দরজায় হেলান দিয়ে নিমিষ কালো আকাশে চেয়ে। হাতের চোটে র/ক্ত জমে, বারান্দার আবছা আলোতে স্পষ্ট। ছোট ছোট পা ফেলে অন্ধকারে নিমজ্জিত ঘরটায় ঢুকল চাঁদ। ঔষধের বাক্সটা বিছানায় রেখে নরম নত সুরে বলল,
‘ অনেকটা কেটেছে, ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিন।’
আষাঢ় কোনো প্রত্যুত্তর করল না। চাঁদ খানিক অপেক্ষা করলো। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে, ঘরের দরজার দিকে পা বাড়ালো। অমনি পেছন থেকে আষাঢ়ের গম্ভীর আওয়াজ কানে এলো,
‘ এসব কতদিন ধরে চলছিলো? আইমানের কথা আমাকে জানাওনি কেন?’
পেছন ফিরে তাকালো চাঁদ। আষাঢ় এখনো বারান্দার দিকে মুখ করে। তার কণ্ঠে গভীর অনুরাগ, অভিমান।
বাড়ন্ত পা জোড়া আষাঢ়ের দিকে এগিয়ে দিলো। শ্বাস ফেলে স্বাভাবিক সুরে বলল,
‘ কিছুদিন আগে ক্যাম্পাসে এক নেশাখোর সাথে ঘুমানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। চারবছরে এমন আরো অনেক কিছুর সম্মোখীন হয়েছি। নিজেনিজে সব সামলেছি, আমার জন্য শুধু আমি ছিলাম। আমি এখন সব পারি, তাই জানানোর প্রয়োজনবোধ করিনি!’
চাঁদের প্রথম কথাটাই আষাঢ়ের মেজাজ বিগড়ে দিতে যথেষ্ট ছিলো। রাগে হাত মুঠোবন্ধি করে নিলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ এসবের জন্য কি আমি দায়ী?’
চাঁদ মলিন হাসলো। বলল,
‘ আপনি দায়ী হবেন কেন? আমার সাথে যা কিছু ঘটছে তার জন্য আমি দায়ী। ভালো কাজের ক্রেডিট নিবো, মন্দটা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিবো এমন না! মানুষ তার কর্মের জন্য নিজে দায়ী।’
‘ বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে আমি বারবার তোমার কাছে আর্জি করেছিলাম। তোমার ভয়/ঙ্কর জেদের বসে সেসব কথা তুমি কানে তুলোনি।’
‘ আপনি যখন আর্জি করেছিলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি ততদিনে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। তাছাড়া কানে তুলিনি ভালোই হয়েছে, অন্তত নিজের একটা পরিচয়, স্বাধীনচেতা জীবন হয়েছে। আত্মনির্ভর, স্বার্থপর দুনিয়াকে জানাতে পেরেছি।’
‘ তাই বলে আমার বউয়ের জন্য বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব আসবে?’
বলতে বলতে ক্ষি/প্ত হয়ে দেয়ালে আঘাত করলো। সাথে সাথে কাঁচা চোট থেকে গলগল করে র/ক্ত পড়তে শুরু করলো। আষাঢ়ের সেই দিকে কোনো ধ্যান নেই। রাগী কণ্ঠে বিড়বিড় করে কিছু বলছে। চাঁদ শান্ত দৃষ্টিতে সবটা পরখ করলো। বিনাবাক্যে আষাঢ়ের দিক এগিয়ে হাত টেনে বারান্দার চেয়ারে মুখোমুখি বসলো। ক্রো/ধ দমিয়ে রাখা অকপট চোখ চাঁদের, ঔষধের বাক্স খুলে তুলাতে লিকুইড স্যাভলন লাগিয়ে দাবিয়ে দাবিয়ে হাতের র/ক্ত পরিষ্কার করে দিচ্ছে। আষাঢ় চাঁদের রাগ চাপা মুখখানায় তাকিয়ে। হুট করে মেয়েটির অধিকার খাটানো আষাঢ়কে স্তব্ধ করে দিয়েছে, রাগ সেই অনেক আগে পড়ে গেছে। এমন দাবিয়ে দাবিয়ে স্যাভলন দেওয়ায় হাত খানিক জ্বালাপোড়া করছে, কিন্তু সেদিকে আষাঢ়ের আপাতত খেয়াল নেই। নিমগ্ন দৃষ্টিতে চাঁদকে দেখতে ব্যস্ত। মেয়েটা তার কাছে একটা রহস্য, এতবছর হয়েছে আজও মন বুঝতে অক্ষম! পৃথিবীর সব নারী এমন? নাকি তার বউটাই একটু বিশেষ করে বানানো। অনেকটা বিস্ময় নিয়েই আষাঢ় চাঁদকে বলল,
‘ এইযে তোমার হুট করে অধিকার খাটানো এটাকে আমি কি ভাববো দয়া নাকি ভালোবাসা? ‘
ব্যান্ডেজ করতে করতে চাঁদ ব্যস্ত সুরে বলল,
‘ ভালোবাসা হবে কেন? আমি কাউকে ভালোবাসি না।’
‘ আচ্ছা, মানলাম। আরেকবার কি ভালোবাসা যায় না আমাকে?’
আষাঢ়ের অধৈর্য কণ্ঠের আবদার। খানিক চুপ থেকে চাঁদের শান্ত আওয়াজ,
‘ হয়তো যায়। চেষ্টা করতে চাই না। ছোট থেকে অনেক তো সহ্য করলাম। বিশ্বস্ত পরিবার হতে প্রতা/রণার শিকার হলাম, আর কত? এখন আমার ভালোবাসতে ভয় হয়।বোধহয় ফিলোফোবিয়ায় আক্রান্ত হলাম!’
কথার মাঝে থেমে গেল চাঁদ। দৃষ্টিতে অশ্রুকণা জমেছে। খানিক চুপ থেকে গলা স্বাভাবিকরকম করার চেষ্টা করে বলল,
‘ আজকাল আপনার কাছে আসা আমাকে দ্বিধাদ্বন্দে ফেলে দেয় আষাঢ়! আমি কি চাই বুঝে উঠতে পারছি না। চারবছর অনেক সময়, অনেক কিছু পাল্টে গেছে। একটা সময় ছিল যখন আমি আপনার জন্য পাগল ছিলাম, সব ছেড়ে চলে এসেছিলাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে, আমি চাইলেও দ্বিধার দেয়াল মাড়িয়ে আপনার কাছে আসতে পারছি না। আমাকে আরেকটু সময় দিন। সামনে আমার ফাইনাল, ফাইনাল শেষ হোক। ততদিনে আমি একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো। আপনি….
আষাঢ় চাঁদকে থামিয়ে দিলো। চেয়ার ছেড়ে চাঁদের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে মাথা রাখলো। চাঁদ হতভম্ব। আষাঢ় চাঁদের ডান হাত নিয়ে নিজের মাথায় রাখলো। চোখ বুজে শান্ত স্বরে বলল,
‘ মাথা ধরছে, বিলি কে/টে দেও।’
চাঁদ বিস্মিত, হতভম্ব! সিরিয়াস কথাবার্তার সময় কেউ এমন কিছু করতে পারে, তার ধারণা ছিলো না। আষাঢ়ের এমন উদাসীন কাণ্ড চাঁদকে আঙ্গুল দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলো, ‘ সে যাই বলুক, করুক আষাঢ় তাকে কোনো ভাবেই ছাড়ছে না। সিদ্ধান্ত যাই হোক চাঁদ চিরকাল আষাঢ়ের হয়েই থাকবে।’
আষাঢ় জোরালো হাতে চাঁদের কোমর চেপে ধরেছে। বেশ শক্তপোক্ত বন্ধন। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে, চাঁদকে আষাঢ়ের চুলে বিলি কে/টে দিতে হচ্ছে। অনেকটা সময় এভাবে কাটলো। হ্ঠাৎ আষাঢ়ের নিগূঢ় , গাঢ় আওয়াজ কানে এলো,
‘ তোমার বাল্যকালে আমি ছিলাম না। বিয়ের পর আমার ভুলের জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হয়েছে! অতীত পাল্টানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে কথা দিচ্ছি, তোমাকে কষ্ট দেওয়া প্রত্যেকে শা/স্তি পেতে হবে।’
চাঁদ নিরুত্তর কি করতে চাইছে আষাঢ়! সেই রাতে আর নিজের ঘরে যাওয়া হলো না। পুরো রাত নিশ্চুপ অব্যক্ত ভালোবাসায় কা/টলো।
ঈদের ছুটি কা/টিয়ে চাঁদ হলে এলো। আষাঢ় নিজে এসে নামিয়ে দিয়ে গেছে। বিদায়কালে চাঁদের কপালে গভীর চুমু এঁকে হাত চেপে গভীর অনুরাগ জড়িয়ে বলেছিল,
‘ সব থাকার পরও, আমি আজও সেই দারিদ্র বামন, চাঁদের অপেক্ষায় আমার কুঠির অন্ধকারময়। আমার আঁধার ঘেরা দুনিয়া তোমার অপেক্ষায় রইল চাঁদ। ফিরে আসবে তো আমার হৃদয়ের কৌটায়?’
চাঁদ নিরুত্তর। ফ্যালফ্যাল চেয়ে, আলতো স্বরে বলেছিলো,
‘ ভালো থাকবেন, আসি।’
দুদিন পর তটিনী বাড়ি থেকে ফিরলো। আসার পর থেকে চাঁদকে এড়িয়ে চলছে। পুরোপুরি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টা প্রথমে তেমন তোয়াক্কা না করলেও, ধীরেধীরে চাঁদের ঠাহর হলো। তটিনীকে জিজ্ঞেস করতেই জানলো, সে রেগে আছে কারণ, চাঁদের জন্য তটিণী আর রবিনের ভেতর সমস্যা হচ্ছে। রবিন তটিনীকে দোষ দিচ্ছে যে, সে জানতো চাঁদ বিবাহিত জেনেশুনে লুকিয়েছে সব। ওইদিকে মিথিলার আম্মা দুইদিনের সময় দিয়েছে সকল পাওনা মিটিয়ে বাড়ি ছাড়তে। রবিন বেকার হাতে কাজ নেই, এই সময় পাওনা মিটিয়ে এডভান্স দিয়ে নতুন বাড়িতে উঠা তার জন্য অসম্ভব প্রায়। মাথা বিগড়ে, সেই রাগ তটিণী-র উপর ঢালছে। সবটা শুনে চাঁদ গভীর নিশ্বাস ফেলল। সমাধান করতে আইমানকে ফোন করল।
জাহাঙ্গীর নগরের পেছনে বেশ সুন্দর নিরিবিলি একটা কফি হাউস আছে। চাঁদ ভেতরে ঢুকে কোনার টেবিলটায় আইমানকে বসে থাকতে দেখলো। চাঁদকে দেখে তার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে এলো। উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। স্বাভাবিক ভাবে তার সামনে বসলো চাঁদ। কৌশল বিনিময়, কোনো বাড়তি কথায় সময় না ব্যায় করে অকপট কণ্ঠে বলল,
‘ আপনারা এমন কি করে করতে পারলেন? রবিন ভাই এতবছর যাবত আপনাদের বাড়িতে থাকছে, এখন বেকার বিপদের দিনে এমন তুচ্ছ কারণে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করছেন?’
আইমানের আশার আলোটা যেন ধপ করে নিভে গেল। চাঁদের ফোন পেয়ে ভেবেছিলো অন্যকিছু বলবে বোধহয়! কিন্তু..
আইমান কিছুক্ষণ শান্ত থেকে চাঁদকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ এটা বলতে ডেকেছিলেন আপনি?’
চাঁদের সহজ স্বীকারোক্তি,
‘ হ্যাঁ, তাছাড়া আর কেনো ডাকবো?’
আইমান চেয়ার এগিয়ে আরো সামনে আনলো। মুখের ক্ষত গুলো এখনো সেরে উঠেনি। চাঁদের দিক তাকিয়ে অধৈর্য করুন সুরে বলল,
‘ এমন বিয়ে নামক একটা জোরজবরদস্তির বন্ধনে আটকে থাকার মানে হয় না চাঁদ। আপনি চাইলে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি। আষাঢ় ভালো মানুষ না। ওর সাথে আপনি ভালো নেই, ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন?’
চাঁদ ক্ষেপে উঠলো। ক্রোধান্বিত সুরে বলল,
‘ আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলার আপনি কে? সীমানা অতিক্রম করার চেষ্টা করবেন না। আষাঢ় কেমন তার সার্টিফিকেট আমি আপনার কাছ থেকে নিবো? আমার থেকে দূরে থাকেন, নয়তো আষাঢ়ের হাতে খু/ ন হবেন!’
‘ ভালোবাসি চাঁদ।’
রেগে চেয়ার ছেড়ে উঠলো চাঁদ। ক্ষি/প্ত কণ্ঠে বলল,
‘ আপনার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আমি! এতকিছুর পর আপনার আক্কেল হয়নি? আমি কখনো বলেছি আপনাকে আমার পছন্দ? মানুষের এড়িয়ে চলা বুঝেন না আপনি? যেই যে আপনি আর আপনার বোন আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলেন, এখানে আমার মাথা কতটা হেট হয়েছে জানেন? ভালোয় ভালোয় বলছি শুধরে যান।’
‘ আপনার আমাকে একটুও পছন্দ নয় চাঁদ?’
‘ আমি বিবাহিতা! শুনেছেন?’
আইমান ফোঁস করে হতাশ শ্বাস ফেলল। বলল,
‘ তবুও আমি আজীবন তোমাকে চাইবো। বাই দ্যা ওয়ে তুমি রবিনের বিষয়টা সমাধান করতে এসেছিলে তো? হয়ে গেছে ভাবো!’
চাঁদ দাঁড়ালো না হনহন করে কফি হাউজ ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আইমান ফিসফিস করে বলল,
‘ আমরা সবসময় ভুল মানুষকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসি!’
চলবে……
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
টাইপোগ্রাফি করেছে Maksuda Ratna আপু❤️🌺