বামনের ঘরে চাঁদ
সাজিয়ানা মুনির
২৪.
( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )
সারাদিনের ব্যস্ততা ছাপিয়ে সবে বাড়ি ফিরলো আষাঢ়। ভেতরে ঢুকে চারদিকে চোখ বুলালো। কাঙ্ক্ষিত কাউকে খুঁজলো। চাঁদ আসেনি! আগামীকাল থেকে রোজা শুরু। চাঁদের ভার্সিটি ছুটি দিয়েছে আরো দুইদিন আগে। আসার হলে , এতক্ষণে চলে আসতো। যার অর্থ আষাঢ়ের সেদিনের স্বীকারোক্তি চাঁদ সহজ ভাবে নেয়নি। রেগে আছে! হয়তো আসামি শুনে ঘৃ/ণা করে। দূরে সরে যাবে! অনেক তো জোর করল। আর কত? যদি চাঁদ তাকে অপরাধী ভাবে, তাহলে তাই সই! হতাশ নিশ্বাস ফেলে নিজের ঘরের দিকে গেল। ঘণ্টা খানেক পর ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে এলো। খাবার বেড়ে মালা বেগম আগে থেকেই বসে। আষাঢ় চেয়ার টেনে বসতেই, তিনি কাউকে ডাকলো। বলল,
‘ কিরে তোর হলো?’
আষাঢ় কপাল কুঁচকে নিলো। বাড়িতে সে আর মালা বেগম ছাড়া অন্যকেউ থাকে না। নদীর ওপার থেকে সকালে টুনির মা এসে সারাদিন কাজ করে, সন্ধ্যায় চলে যায়। তবে কি আরশি এসেছে? ও আসলে তো সাইফার শোরগোল শোনা যেত। কপাল কুঁচকে গভীর আগ্রহ নিয়ে আষাঢ় রান্না ঘরের দিকে তাকালো।
‘ এইতো শেষ। বাটিতে বেড়ে আনছি মা।’
বেশ পরিচিত সুশ্রী, মিষ্টি একটা আওয়াজ রান্না ঘর থেকে ভেসে এলো। আওয়াজ চিনতে তার এক সেকেন্ড সময় লাগলো না। আষাঢ়ের চোখেমুখে অদ্ভুত এক চমক নাড়া দিয়ে উঠলো। ঠোঁট জোড়ায় আনন্দের হাসি ফুটলো।
সবে গরম করা মাংসের বাটি হাতে তুলে চাঁদ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। পরনে শাড়ি! নিশ্চয়ই মা জোর করে পরিয়েছে। চাঁদ এখানে আসলে মা ওকে শাড়ি পরতে প্রায়ই আবদার করে। মায়ের ভাষ্যমতে, কিছু কিছু মেয়েদের শাড়ি পরলে বড্ড বেশি মানায়।চাঁদ তেমন একজন। মা ভুল বলেনি। শাড়িতে চাঁদ একটু বেশিই সুন্দর লাগে।ঢিলেঢালা খোপা, হলুদ পাড়ে সবুজ শাড়ি, কপালে বিন্দুবিন্দু ঘাম জমেছে মেয়েটিকে পাক্কা গৃহিণী লাগছে। আষাঢ় নিমিষ দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে।
চাঁদ শাশুড়ীর পাশের চেয়ারে বসলো। প্লেটে ভাত তুলে দিচ্ছে। আষাঢ় তখনো নিগূঢ় চেয়ে। মায়ের সাথে চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। খাবার টেবিলে কথা হলো না কোনো। চাঁদ সবসময়ের মত বেশ স্বাভাবিক। আষাঢ়ের দিকে তাকাচ্ছে না একবারও। এতে অবশ্য আষাঢ়ের কোনো মাথাব্যথা নেই। এইযে চাঁদ বাড়িতে এসেছে। আষাঢ়ের কথা রেখেছে এটাই তার কাছে অনেক।
খাবার টেবিল গুছিয়ে। শাশুড়ীর কথায় আষাঢ়ের ঘরে চা নিয়ে গেল চাঁদ। সারাদিনের ক্লান্তি, অবসন্নতার পর রিফ্রেশমেন্টের এক কাপ চায়ের আষাঢ়ের বেশ প্রয়োজন। রোজ রাতে ঘুমানোর আগে চা খাওয়া তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। চায়ের কাপ হাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল চাঁদ। ভেতরে আলো নিভানো অন্ধকারে মাখানো। বারান্দায় টিমটিমে জ্বলতে থাকা হলদেটে লাইটের আলো এসে ঘরে পড়ছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে আবছা জ্যোতির দেখা মিলছে। চাঁদের খানিক ভয় লাগছে, আষাঢ়রা এই বাড়িতে উঠেছে দেড়বছর হয়েছে। এই দেড় বছরে যতবার বাড়িতে এসেছে, কোনো দিন এই ঘরের আশেপাশে আসেনি চাঁদ। তার কেমন যেন একটা অস্বস্তি কাজ করে। পুরানো বাড়িতে আষাঢ়ের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো চোখে ভাসে। মন মস্তিষ্কের যুদ্ধ লাগে। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। চোখ বন্ধ করে এক হাতে বুকের বাঁ পাশে হাত রাখলো চাঁদ। চোখ বুজে বিড়বিড় করে বলল,
‘ কিছু হয়নি সব ঠিক।’
ঠোঁট নাড়িয়ে বেশ কয়েকবার বিড়বিড়িয়ে বলল চাঁদ। ভিতরে আষাঢ়কে দেখা যাচ্ছে না। বোধহয় বারান্দায় আছে! এটাই সুযোগ। অনেকটা ভাবনাচিন্তা করে ভিতরে গেল। মনে মনে ঠিক করে নিলো। চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে সাথে সাথেই বেরিয়ে আসবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আলো জ্বালাল না। আবছা আঁধারে ঢেকে থাকা ঘরে ঢুকলো। টেবিলে চায়ের কাপ রেখে যেই বেরিয়ে যাবে, অমনি এক জোড়া হাত এসে শক্ত করে চাঁদের কোমর জড়িয়ে ধরলো। ভয়ে কেঁপে উঠলেও চিৎকার করলো না চাঁদ। সে জানে পেছনের মানুষটা কে! ভীতি লুকিয়ে বেশ স্বাভাবিক শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ আষাঢ়! আমাকে ছাড়ুন।’
পেছন থেকে কোনো উত্তর এলো না। আচমকা আষাঢ় চাঁদকে কোলে তুলে নিলো। পা বাড়িয়ে চাঁদকে পাজকোলে নিয়েই বিছানায় বসলো। পুরো ঘর অন্ধকারে নিমজ্জিত। বারান্দার টিমটিমে আলোটা চাঁদের মুখে এসে পড়লো। চাঁদ নিজেকে ছাড়াবার জন্য ছটফট শুরু করলো। আষাঢ় ছাড়লো না। আরো শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। মৃদু হাওয়া চলছে, অবাধ্য চুল এসে চাঁদের মুখশ্রীতে ছড়িয়ে। নিগূঢ়, নিমিষ দৃষ্টিতে চেয়ে পড়ন্ত চুল গুছিয়ে দিলো আষাঢ়। দৃষ্টিতে তার পরম প্রেম, আদর, সোহাগ। চাঁদ দৃষ্টি সরালো। ছাড়া পাবার চেষ্টা করেই চলছে আপ্রাণ।
চাঁদের ছেলেমানুষীতে আষাঢ় হেসে ফেলল। চাঁদের রাগটা যেন আরো বেড়ে গেল। কপাল কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘ বিটলামি করছেন? ছাড়ুন আমাকে, মা অপেক্ষা করছে।’
আষাঢ় হাসি চেপে বলল,
‘ মা অপেক্ষা করছে না। জানে, ছেলের বউ ছেলের কাছে এসেছে। দেড় বছরে এই প্রথম আমাদের ঘরে এসেছ! এমনি এমনি কি করে যেতে দেই তোমাকে?’
চাঁদ ভড়কে গেল। বড়বড় চোখ করে তাকালো। বিস্মিত সুরে বলল,
‘ আপনি কি করবেন? ‘
চাঁদের কপালে আদুরে চুমু এঁকে দিয়ে বলল,
‘ বেশি কিছু না একটু বুকে জড়িয়ে রাখবো। শান্ত মেয়েদের মত বসে থাকো।’
‘ যদি শান্ত হয়ে না বসি?’
‘ তোমাকে শান্ত করার কৌশল জানা আছে আমার।’
চাঁদ চোখজোড়া ছোট ছোট করে নিলো। আষাঢ় তোয়াক্কা করল না। বুকের গভীরে আরো শক্ত করে জড়িয়ে রাখলো। আষাঢ়ের ঠোঁট জোড়া চাঁদের চুলের ভাঁজে। খানিক পরপর চুমু দিচ্ছে। অনেকটা সময় কাটলো। চাঁদ এখন শান্ত। চুপটি করে বিড়ালছানার মত আষাঢ়ের বুকে লেপ্টে আছে। হ্ঠাৎ আষাঢ়ের গলার ভাঁজ শোনা গেল। গভীর কণ্ঠে বলল সে,
‘ জানো চাঁদ, গত দেড়বছর এই ঘরে আমার প্রতিটা রাত, প্রতিটা মুহূর্ত কতটা অশান্তি ব্যথাতুর কে/টেছে? তোমার শূন্যতা আমাকে ক্ষণেক্ষণে জ্বলসে দিচ্ছিলো। তুমি নেই তবুও যেন সবকিছুতে তোমার সুগন্ধ। এই বিছানায় রোজ ছটফট করতাম। চোখ বুজলে তোমার সরল মুখখানা ভেসে উঠতো। এই ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস তোমার পছন্দ মত। ওইযে সামনে যেই আলমারিটা দেখছ, এর ভেতর পুরোটা তোমার জিনিসে পূর্ন। তোমার তিরস্কৃত ফেরত পাঠানো উপহারে ভারী!’
আষাঢ়ের কণ্ঠ উদ্বেগ, ব্যাথাতুর শোনা গেল। দৃষ্টি তুলে ব্যকুল হয়ে অন্ধকারে আষাঢ়ের চোখজোড়া দেখতে চাইলো চাঁদ। খুব আবছা আলোতে আষাঢ়ের জলে চিকচিক দৃষ্টি জোড়া চোখে পড়লো। কেন যেন চাঁদের বুকটা খচ করে উঠলো। সরু একটা যন্ত্রণা হৃদয় ছুঁইলো। যন্ত্রের মত আষাঢ়ের গালে হাত ছোঁয়ালো, দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে নিমগ্ন চেয়ে রইলো। আষাঢ় আলতো মাথা ঝুঁকিয়ে চাঁদের কপালের সাথে কপাল মিলিয়ে, চোখ বুজে বলল,
‘থ্যাঙ্কিউ, আমার কথা রাখার জন্য।……তোমার রাগ জেদ সব কিছু সয়ে নিবো, শুধু তুমি চোখের সামনে থাকো।’
উত্তরে কিছু বলল না চাঁদ। চোখবুজে সময়টাকে অনুভব করলো।
আজ দশ রোজা। আষাঢ়ের বন্ধুর বাড়িতে ইফতারের দাওয়াত পড়েছে। ভার্সিটি জীবনের বন্ধু রিক্ত। আষাঢ় ,রুবেল, রিক্ত এক সাথে পড়াশোনা করেছে। চাঁদকে চিনে। বাড়ি এসে দাওয়াত দিয়ে গেছে। চাঁদকে সাথে নিয়ে যেতে অনেক রিকোয়েস্ট করেছে। তাই বিকালের পরপর দুজন রওনা হলো। ইফতারের বিরাট আয়োজন করেছে। ছেলে মেয়েদের ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন। রিক্তের বোন নোভা চাঁদের স্কুল জীবনের বান্ধবী। মূলত বোনের আবদারে রিক্ত চাঁদকে নিয়ে আসতে আষাঢ়কে রিকোয়েস্ট করেছিলো। অনেক বছর পর দুই বান্ধবীর দেখা হয়েছে। এতবছরের হাজারো কথা জমে। পুরো সময়টা দুজন গল্প করলো। ছেলে মেয়ে আলাদা আলাদা ইফতারের বেশ নিদারুণ আয়োজন করেছে। অনেক লোক দাওয়াত করেছে। রুবেলের বন্ধুবান্ধব থাকায় অনেকেই চাঁদের পরিচিত। দেখা হওয়ার পর গল্পগুজবে মেতে আছে। ইফতারের পর দেখাসাক্ষাৎ করে যেই সবার কাছে বিদায় নিবে, অমনি রুবেলের সাথে দেখা হলো। আজ চারবছর পর চাঁদ ভাইকে দেখলো। সেই ঘটনার পর, শিকদার বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি চাঁদ। পরিবার পরিজনের খাতা থেকে ওদের নাম মুছে ফেলেছে। ভীষণ ঘৃ/ণা করে।
হ্ঠাৎ রুবেলের মুখোমুখি পড়ে যাওয়ায় অপরিচিতদের মত পাশকাটিয়ে যেতে চাইলো চাঁদ। রুবেল তিরস্কারের সুরে বলল,
‘ বড়লোকের বউ হওয়ার পর ! দম্ভ দেখি পা পড়েনা। মনে, রাখবি ছোটলোক সবসময় ছোটলোক হয়। হাজারো টাকার মালিক হোক, র/ক্তে ছোটলোকি স্বভাব রয়ে যায়। ‘
রুবেলের কথায় প্রচন্ডরকম মেজাজ খারাপ হলো চাঁদের। পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে বর্বর। এরা মানুষের ভালো সহ্য করতে পারে না। না কখনো নিজের দোষ অপরাধ তাদের চোখে বাঁধে। এরা বিবেকহীন অমানুষ।
পেছনে ফিরে তাকালো চাঁদ। কঠোর হাসলো। রাগ চেপে তেজি কণ্ঠে বলল,
‘ সে আজ যা হয়েছে নিজের যোগ্যতা, পরিশ্রমের বলে। আপনার মত মেরুদণ্ডহীন বাপের পয়সায় চলে না। আমার কাছে বড়লোক ছোটলোকের ব্যাখ্যা ভিন্ন। যার মন পরিষ্কার সে বড়লোক, যার মন কুৎসিত, কালো সে ছোটলোক আপনাদের মত’
রুবেল চটে উঠলো। ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলল,
‘ ওকে কতটুকু চিনিস তুই? ও একটা আসামি। আমি ওকে বাঁচিয়েছি নয়তো জেলে পঁচতো।’
গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো চাঁদ। বেশ শান্ত সুরে বলল,
‘ তোমাকে আমি ছোট থেকে চিনি। নিজ স্বার্থ ছাড়া নিশ্বাসও গুনে গুনে ফেলো। তুমি আষাঢ়কে স্বার্থ ছাড়া রক্ষা করবে? বিশ্বাস করি না। নিশ্চয়ই এর পেছনে অন্য কারণ লুকিয়ে আছে। আরেকটা কথা যদিও আমার নাকগলানো উচিত না। তবুও বলছি, অন্যের নিন্দা, বিচার না করে নিজের জীবনের দিকে তাকাও। ওই পাপের রাজ্যে, একটা নিষ্পাপ মানুষ এসেছিলো যার মূল্য তোমরা কেউ দিতে পারোনি। অমানুষের মত অত্যাচার করেছ। পাপের কলস এত ভারী করো না যে আজীবন টানতে হয়। একদিন জঘন্যরকম অনুতপ্ততায় ভুগতে হয় তোমাদের। আর একটা কথা ভালো করে মনে রাখো! আমার স্বামী থেকে দূরে থাকো। ওর কোনোরকম ক্ষতি করার চেষ্টা করলে সবকিছু জ্বালিয়ে দিবো। আর তোমরা বেশ ভালো করে জানো আমি এমনটা করতে পারবো!’
দূর থেকে চাঁদ রুবেলের কথা কাটাকাটি দৃশ্য আষাঢ়ের চোখে পড়লো। তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এলো। রুবেলের দিকে কটমট চেয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?’
পরিস্থিতি বেগতিক করতে চাইছে না চাঁদ। বেশ স্বাভাবিক সুরে উত্তর দিলো,
‘ কিছুনা। বাসায় চলুন।’
আষাঢ় তখনো রুবেলের দিকে ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আরেকটু এখানে থাকলে যে কোনো কিছু ঘটে যাবে। আষাঢ়ের হাত চেপে ধরে গেটের দিকে পা বাড়ালো।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আষাঢ় জিজ্ঞেস করল,
‘ নিয়ে আসলে কেন? ও তোমায় কি বলছিল?’
চাঁদের অকপটে রাগী উত্তর,
‘ যাই বলুক! আমাদের দুজনের হাজার দ্বন্দ্ব চলুন, তৃতীয় কেউ আপনাকে অপমান করবে মেনে নিবো না কখনো। ‘
আষাঢ়ের রাগ হুট করেই পড়ে গেল। নিমিষ দৃষ্টিতে সামনের রঙ বদল করা প্রজাপতিটার দিকে চেয়ে রইল। মুখে হাজার বলুক, ‘ভালোবাসি না’। চাঁদ আজও পুরোপুরি আষাঢ়ে নিমগ্ন!
চলবে……..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি।
টাইপোগ্রাফি করেছে Maksuda Ratna আপু❤️🌺