বামনের ঘরে চাঁদ
সাজিয়ানা মুনির
২৩.
( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )
গম্ভীর র/ক্তিম দৃষ্টিতে সামনের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে চাঁদ। বন্যার উপর প্রচন্ডরকম মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার। বিগত আধাঘন্টা যাবৎ আষাঢ়ের সাথে অনবরত গল্প করে যাচ্ছে বন্যা।গল্পের মূল বিষয় বিজনেস। এমন একখানা ভাব করছে যেন, ভাজা মাছটা উল্টাতে পারে না। বন্যা সবসময় বলে, ছেলেদের প্রেমে ফেলার মূল মন্ত্র হচ্ছে, তাদের সামনে নিষ্পাপ অবুঝ সেজে থাকা।এতে ছেলেমানুষ আকৃষ্ট হয় বেশি। সেই ট্রিক আষাঢ়ের সামনেও প্রয়োগ করছে। আষাঢ় সবসময়কার স্বভাবসুলভ দায়িত্বের সাথে বুঝিয়ে দিচ্ছে। চাঁদের প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে। নিজের উপর রাগ হচ্ছে, কেন বন্যাকে বলতে গেল তার কাজিন আসছে! বলল তো বলল, কাজিনই কেন বলল। চোখ পাকিয়ে আশেপাশে তাকালো। মেলার সুবাদে টার্জেন্ট পয়েন্টে মোটামুটি ভিড়। এই জায়গাটায় এমনিতেই সবসময় লোকজনের আনাগোনা থাকে। এখানকার চটপটি, ফুসকা বেশ জনপ্রিয়। পাশেই অনেক গুলো জুসের দোকান। বেলের শরবত থেকে শুরু করে স্ট্রবেরির জুস সবরকম জুস পাওয়া যায়। ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র জুনিয়র অনেকেই আনাগোনা করছে। নীরবে ফোঁসফোঁস নিশ্বাস ফেলে কোনোরকম রাগ দমানোর চেষ্টা করছে। দুজনের কথার মাঝে চাঁদ ফোঁড়ন কা/টলো। কণ্ঠে চাপা রাগ চেপে অনেকটা ধমকের মত করে আষাঢ়ের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ অনেক তো মেলা দেখা হলো! বাসায় যাবেন না আষাঢ় ভাই?’
আষাঢ় বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠে জবাব দিলো,
‘ কেন আমার এখানে থাকায় কি তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে? আমি তো তোমার কাজিন ভাই, কাজিন ভাইদের কেউ এভাবে ধমকায়?’
চাঁদ চোখ ছোট ছোট করে নিলো। আষাঢ়ের কণ্ঠে স্পষ্ট বিদ্রুপ, অভিযোগ শোনা গেল। তাকে কাজিন পরিচয় দেওয়াটা আষাঢ়ের ভালো লাগেনি। চাঁদ বুঝেও না বোঝার মত করে বলল,
‘ আপনার অনেক কাজ আছে। বাড়িতে মা অপেক্ষা করছে! অতদূর রাস্তা যেতে কত সময় লাগবে। তাই না?’
বন্যা যেন চাঁদের কথার ঝাঁঝ বুঝলো। টেবিলের নিচে হাত চেপে পাশ ফিরে কৃত্রিম হেসে বলল,
‘ কেন তাড়িয়ে দিতে চাইছিস! থাকুক না।’
চাঁদের রাগ হলো। কোনো উত্তর দিলো না। হাত ঝারা দিয়ে আষাঢ়ের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ আপনি কি এখন যাবেন?’
চাঁদের অস্থিরতা, ঈর্ষা তার চোখেমুখে ভেসে আছে স্পষ্ট। আষাঢ় ব্যাপারটায় বেশ মজা পেল। চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ তোমাদের মুক্তমঞ্ছের কনসার্টের কত গল্প শুনেছি। আজ সুযোগ পেয়েছি না দেখে কি করে চলে যাই? সন্ধ্যায় কনসার্ট দেখবো তারপর রওনা হবো।’
চাঁদ আষাঢ়ের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। আষাঢ় ঠোঁট মেলে হাসছে। চাঁদের ঈর্ষা মিশ্রিত এই অস্থিরতা বেশ উপভোগ করছে।
পাশ থেকে বন্যার বেশ আহ্লাদী স্বর শোনা গেল। যেন কণ্ঠে মধু মিশিয়ে বলল,
‘ অবশ্যই কনসার্ট দেখে যাবেন। নয়তো মিস করবেন।আমাদের মুক্তমঞ্ছের কনসার্ট দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসে।’
রাগে, জেদে ফিসফিস করে বলল চাঁদ, ‘ হ্যাঁ, দেশবিদেশ থেকে অস্কার পাওয়া শিল্পীরা যে আসে। যতসব ঢঙ আহ্লাদ।’
পুরোটা সময় বন্যা আষাঢ়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। চাঁদের ভীষণ রাগ হচ্ছে।
অপরদিকে প্রথমদিকে আষাঢ় চাঁদের জেলাসি উপভোগ করলেও এখন বন্যার উপর ভীষণ বিরক্ত আসছে। অনেকক্ষণ যাবৎ চাঁদের সাথে একটু আলাদা সময় কা/টাতে চাইছে। কিন্তু মেয়েটি বিন্দুমাত্র প্রাইভেসি দিচ্ছে না। আঠার মত লেগে আছে সাথে। আষাঢ় বেশ কায়দা করে বন্যাকে বলল,
‘ এক্সকিউজ মি! আমার চাঁদের সাথে কিছু ফ্যামিলি ডিসকাশন আছে। একটু আলাদা কথা বলা যাবে? আসলে বিষয়টা একটু ব্যাক্তিগত।’
বন্যা হাস্যোজ্জ্বল স্বরে উত্তর দিলো,
‘ সিওর। আপনারা কথা বলেন, আমি মুক্তমঞ্ছের দিকে যাচ্ছি।’
বন্যা চলে যেতেই চাঁদ যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। আষাঢ় হাত টেনে ধরল। নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,
‘ কোথায় যাচ্ছো? অনেক কষ্টে নিরিবিলি একটু সময় কাটানোর ব্যবস্থা করলাম।’
কপাল কুঁচকে নিলো চাঁদ। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
‘ আমার সাথে আপনার কিসের কথা? আপনি তো বন্যার সাথে পরিচয় হতে এসেছেন। যান তার সাথে কনসার্ট দেখেন।’
আষাঢ় হেসে ফেলল। চাঁদের হাত টেনে কাছাকাছি আনলো। আমোদ ঢালা সুরে বলল,
‘ কেউ কি পু/ড়ছে? কোথা থেকে যেন পোড়া গন্ধ আসছে।’
চোখ গোল গোল করে নিলো চাঁদ। বলল,
‘ আজেবাজে কথা! আমি পুড়বো কেন?’
‘ অদ্ভুত! আমি তোমার নাম কখন বললাম?’
কথা কা/টাতে চাঁদ মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আষাঢ় বলল,
‘ বসো! একটু কাছ থেকে দেখি তোমায় ।’
চাঁদ বসলো না, দাঁড়িয়ে রইল ঠাই। আষাঢ় চাঁদের হাত টেনে পুকুর পাড়ের সিঁড়ি বেয়ে নামলো। শেষের দিকে তিন নাম্বার সিঁড়িতে গিয়ে দুজন বসলো। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। চারিপাশে অন্ধকার নামছে। চারুকলা ভবনের পাশের পুকুরটা খানিক নির্জন। এদিকে লোকজন তেমন একটা আসে না। পুকুরের পাশে ল্যাম্পপোস্টে হলদেটে আলো জ্বলছে। যার আবছা রশ্মিতে চাঁদের সাজসজ্জা বিহীন রাগে রক্তি/ম মুখশ্রীটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেয়েটির কপালে খোঁচ, দৃষ্টি খাটো করে রেখেছে। চাঁদের ছেলেমানুষীতে আষাঢ় হেসে ফেলল। কপালে পড়ন্ত চুল গুছিয়ে দিতে হাত বাড়াতে, চাঁদ ঠেলে সরালো। আষাঢ় মানলো না। একপ্রকার জোর খাটিয়ে গুছিয়ে দিলো। বলল,
‘ আমার কি দোষ। তোমার বান্ধবী! তাছাড়া তুমিই তো কাজিন ভাই বলে পরিচয় দিলে।’
চাঁদ প্রতিবাদী আওয়াজে বলল,
‘ আপনারই দোষ! আপনি এড়িয়ে গেলেই পারতেন। আপনার তো ওর সাথে আড্ডা দিতে ভীষণ ভালো লাগছিল। তাই না?’
আষাঢ় মুচকি হাসলো। বলল,
‘ এমন করে যদি তোমার একটু এটেনশন , অধিকারবোধ পাওয়া যায়। তবে আমি রোজ এমন উটকো মাথা ব্যাথা নিতে প্রস্তুত।’
চাঁদ উত্তর দিলো না। আষাঢ় আবার বলল,
‘ হাজার অমান্য করো, তুমি আজও আমায় প্রচন্ডরকম ভালোবাসো। আমি আজও তোমার শখের পুরুষ যার জন্য তুমি রাজমহল ছেড়ে ভাঙা টিনের ঘরে এসেছ। আমাদের মধ্যে হাজারো দুরত্ব, ঝামেলা থাকুক আমার উপর সবসময় শুধু অধিকার থাকবে তোমার।’
চাঁদ কিছু বলল না। আষাঢ় এক সিঁড়ি নেমে চাঁদের সামনে বসলো। হাত জোড়া মুঠোয় নিয়ে বলল,
‘ আমি জানি তুমি রেগে! তোমার রাগ জেদ অস্বাভাবিক নিরর্থক নয়। তবে আমাকেও একবার ক্লারিফিকেশন দেওয়ার সুযোগ দেও!’
চাঁদ চুপ। আষাঢ় নিজে থেকেই বলল,
‘ তোমার প্রতি আমার কোনো কালেই অবহেলা ছিল না। ছিল শুধুই মুগ্ধতা আর সুপ্ত ভালোবাসা। যেদিন তোমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, নিজের প্রতি প্রচন্ড রাগ হয়েছিলো। চারিপাশের সবকিছু, এই জীবন সবটাই ব্যর্থ মনে লাগছিলো। ঘন বর্ষণে যেদিন আমার বাড়িতে এসে উঠলে, না চাওয়ার শর্তেও তোমাকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কারণ তোমার ভাইয়ের আমার উপর ঋণ ছিলো, তাছাড়াও তোমাকে নিজের কাছে রাখার মত আমার সামর্থ্য ছিলো না। তুমি আমার সামর্থ্যের বাহিরে ছিলে। তোমার জেদের বসে বিয়েটা হলো। বিয়ের পরও আমি তোমাকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার নানারকম চেষ্টা করেছি।কারণ তোমার এই দারিদ্র পরিবারে মানিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম আমি প্রতি নিয়ত দেখছিলাম। রোদে পুড়ে পায়ে হাটা, গরমে ছটফট করা, ডাল ভাত মুখে পুরা সবকিছু আমি খেয়াল করছিলাম। প্রতিনিয়ত নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছিলাম। এক কদম তোমার দিকে এগিয়ে এলে চার কদম পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। নিজের দৃষ্টিতে খাটো হয়ে গেছিলাম, দুর্বল মনে হচ্ছিলো। একই সঙ্গে তোমার ভালোবাসায় পুড়ছিলাম, কাছে এলে চক্ষু লজ্জায় বারবার পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। যেদিন আরশির বাড়িতে আমার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে বললে, ‘ আমার শূণ্যতা কি আদৌ আপনার মন পোড়ায়?’ বিশ্বাস করো সেদিন যন্ত্রণায় ম/রে যেতে ইচ্ছা করছিলো। নিজের পরিস্থিতি, দ্বিধাদ্বন্দের উপর ঘৃ/ণা চলে এসেছিলো। কেন তোমাকে পেয়েও দূরে থাকতে হচ্ছিলো। সেদিন সারারাত বুকে আগলে রেখে তোমার জ্বরে পোড়া মুখখানায় তাকিয়ে ছিলাম। আর বারবার ভাবছিলাম, ‘ এই অমূল্য চাঁদ কি করে এই দারিদ্র বামনের ঘরে এলো? আমার ভাগ্য কি আদৌ এমন সোনায় সোহাগা ছিলো!’ বুকে ভয় ভর করেছিলো, মনে হচ্ছিলো মরিচিকার মত এটাও কোনো সুন্দর স্বপ্ন। নিজের ভাগ্যের উপর ঘোর অবিশ্বাস ছিলো। ঠিক তেমনটাই হলো। কয়েক দিন কা/টতেই বিচ্ছেদ হলো। বিশ্বাস করো, তোমার বাপ ভাইদের পরিকল্পনা সম্পর্কে আমি ঘুনাক্ষরেও জানতাম না। অতীতের কৃতজ্ঞতার যুক্তিতে , আমাকে ব্লাক/মেইল করে তোমাকে নিয়ে গিয়েছিল। যখন সবটা জানলাম অনেক দেরি হয়ে গেছে। তুমি হাসপাতালে, ততক্ষণে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে। বাড়ি ফিরে আমি অনেকবার তোমাকে সত্যিটা জানাতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। ভাবলাম তোমার সময়ের প্রয়োজন। তোমার বাড়ি ছাড়ার কথা শুনে মাথা ঠিক ছিলো না আমার। আগেরদিন রাতে যখন তোমাকে নিজের কাছে রাখতে প্রয়াস করলাম, ভুল বুঝাবুঝি বাড়লো। আমার জোর খাটানো কুৎসিত রূপ নিলো। তুমি বাড়ি ছাড়লে। অনুশোচনা অনুতপ্ততায় আমি পুড়তে শুরু করলাম। তোমার সামনে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার, কি করে যেতাম ওইযে আমার চক্ষুলজ্জা, দ্বিধাদ্বন্দ্ব! আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো। তোমাকে সময় দিলাম, নিজেকে আড়াল রাখলাম। সবকিছু থেকে বের হতে দিনরাত কাজে ডুবে থাকলাম। আমার কাছে মনে হয়েছিলো, আমার পরিস্থিতি শুধরে নিলেই এই লুজার খেতাব হতে মুক্তি মিলবে আমার। যদি আমার কাছে অগাধ টাকা, ক্ষমতা থাকতো তাহলে তোমার পরিবার কোনো দিন ছিনিয়ে নেওয়ার সাহস করতে পারত না। এই সমাজ অনেক বেশি স্বার্থপর।নারীকে মাপে রূপের পাল্লায়, পুরুষকে বিচার করে টাকা আর ক্ষমতায়। লুজার খেতাব মিটাতে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম যে আমার অমূল্য চাঁদ হারালাম। যখন তোমার কাছে তোমাকে চাইলাম ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তোমার অভিমান আরো কঠিন হয়েছে। ভাবলাম হয়তো সময় ঠিক করবে সব! হয়তো কখনো ঠিক হবে। কিন্তু অত ধৈর্য নেই আমার। আমার এখনি আমার চাঁদকে চাই। আমি দিন দিন অধৈর্য, ভয়, অস্থিরতায় ভুগছি। আর পারছি না! ঘৃ/ণা করো তবুও আমার দৃষ্টির সামনে থাকো।’
চাঁদের দৃষ্টি অশ্রুতে চিকচিক করছে। অভিমানে বুক পুড়ছে। টপ করে দুফোঁটা জল গড়িয়ে গালে পড়লো। আষাঢ় মুছে দিতে দিতে বলল,
‘ আজ আমি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছি। আড়পার একটা কিছু করেই ফিরবো। তুমি আমার অতীত জানতে চেয়েছিলে না? যদি বলি আমি ঘৃ/ণিত অপরাধের আসামি! ভালোবাসবে আমায়?’
চাঁদের চোখেমুখে হতভম্ব, বিস্ময়ে বিস্ফোরিত। কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলো। আষাঢ় থামিয়ে দিলো। বলল,
‘ কি হয়েছে জানতে চেয়ো না প্লিজ। সেদিনের সেই ঘটনা আমার স্মৃতিতে আজও অস্পষ্ট! শুধু এতটুকু বলবো, সেই বিপদ থেকে তোমার ভাই উদ্ধার করেছিলো। তোমার সকল অভিযোগের আড়ালে ছিলো, তোমার দৃষ্টিতে ঘৃ/না দেখার ভয়, কৃতজ্ঞতার প্রলেপ।’
চাঁদ হতভম্ব। ঠিক কি বলা উচিত এখন। আষাঢ়ের দৃষ্টির গভীরতা, সত্যতা ভাসছে। যা উপেক্ষা করার সাধ্যি চাঁদের নেই। ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে রইলো। চোখজোড়া থেকে অশ্রু ঝরছে অনবরত। আষাঢ় চোখজোড়া মুছে দিলো। চাঁদের দুই গালে হাত রেখে ঠোঁটে আলতো চুমু খেলো। কপালের সাথে কপাল মিলিয়ে গভীর অনুরাগে বলল,
‘ তোমার সব শাস্তি মাথা পেতে নিবো, শুধু তুমি চোখের সামনে থেকো জান।’
চাঁদ চুপ। সারা শরীরে কম্পন উঠেছে তার। নিশ্বাস ভারী হচ্ছে, কণ্ঠে তৃষ্ণা জমেছে। সময় বেগতিক চলছে। হীম হাওয়া এসে দুজনের গায়ে লাগছে। অভিমান, অভিযোগ যেন মনমস্তিষ্ক ছেড়েছে। মাথাটা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে আছে প্রণয় চাদরে। এমন সময় আচমকা চাঁদের ফোন বাজলো। বন্যার নামটা স্কিনে ভেসে। দুজন ছিটকে উঠলো। চাঁদ খানিক দূরে সরে ফোন রিসিভ করল।অপর পাশ হতে বন্যা বলল, ‘কনসার্ট শুরু হয়েছে ওদের জন্য জায়গা রেখেছে। তাড়াতাড়ি যাওয়ার তাড়া দিলো।’
‘ আসছি’ বলে চাঁদ ফোন কাট/লো
অনেকটা দূরত্ব রেখে দুজন নীরবে সেদিকে হাঁটতে শুরু করলো।
অন্ধকার হয়ে এসেছে। চারিপাশ কালো আঁধারে ঢেকে। চাঁদ আষাঢ় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। স্টেজে পারফরমেন্স চলছে। kahani suno গান গাইছে। সবার হাতে মোবাইল । ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে উঁচিয়ে রেখেছে। গানের সাথে ঠোঁট মিলাচ্ছে। আচমকা চাঁদের শাড়ির আড়ালে হাত রেখে কোমর টেনে কাছে আনলো আষাঢ়। হেচকা টানে বুকের সাথে মিশে গেল চাঁদ। ঢিলেঢালা খোঁপা খুলে চুলের কাঠিটা একাই নিচে পড়লো। আষাঢ় কানের লতিতে ঠোঁট ছুঁয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘ Kabhi Sun To Zara Jo Main Keh Na Saka, Meri Dunia Bhi Ho Tum Hi Asra’
আষাঢ়ের কণ্ঠের গভীরতায় চাঁদের বুকটা ধুক করে উঠলো। চোখ উঁচিয়ে তাকালো, আবছা আলোতে আষাঢ়ের অনুভূতি যন্ত্রণা মিশ্রিত চাহনি স্পষ্ট! সেই চাহনিতে চাঁদ আটকে গেল, গভীর ভাবে ডুবে রইল।
রাত নয়টায় আষাঢ় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। যাওয়ার আগে চাঁদকে বলে গেল, ‘ এবার রোজায় বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকবে তার।’
চলবে……..