বামনের ঘরে চাঁদ
সাজিয়ানা মুনির
২২.
( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )
বিকালের শেষ প্রহর। সূর্যের তুখোড় উজ্জ্বল আলোটা নিভিয়ে আসছে। ক্লাস শেষে রঙ পুকুরের পাশে চাঁদ বসে। খাতায় কিছু নোট তুলে নিচ্ছে। আচমকা পাশ থেকে অদ্ভুত আওয়াজ কানে এলো। মুখ দিয়ে কেমন অদ্ভুত আওয়াজ করছে কেউ। চাঁদের কপাল কুঁচকে এলো। পাশ ফিরে তাকাতে একটা হ্যাংলা পাতলা ছেলেকে দেখলো। চাপা ভাঙা, হাতে সিগারেট জ্ব/লছে। চোখ দুটো রক্তিম কোটরের ভিতরে ঢুকে। পাক্কা নেশাখোর। চাঁদের দিকে ঠোঁট উঁচিয়ে বা/জে ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রথমে চাঁদ পাত্তা দিলো না। বিরক্তি ঘৃ/ণায় চোখ ফিরিয়ে নিজের কাজে মনযোগ দিলো। ছেলেটা দমলো না, হাতের সিগারেট ফেলে চাঁদের দিকে এগিয়ে গেল। ছেলেটাকে দেখে চাঁদ উঠতে গেলে। খপ করে ছেলেটা চাঁদের হাত চেপে ধরল, জিহ্বা বের করে বিশ্রীভাবে হেসে বলল,
‘ হট ফিগার! খাইয়া ফেলতে ইচ্ছা করতাছে। এক ঘণ্টা কত টাকা নেও ডার্লিং। শুনছি এখানকার মাইয়াগো আবার ডিমান্ড মেল্লা। প্রতি ঘণ্টায় দু হাজার দিমু। হোটেলে চলো সোনা।’
ঘৃ/ণায় চাঁদের শরীর শিরশির করে উঠলো। ছেলেটার স্পর্শ কথা ইঙ্গিতে গা গুলিয়ে আসছে তার।গায়ে যেন কেউ আগুন ধরিয়ে দিলো। পায়ের র/ক্ত মাথায় উঠলো। হাত ঝারা দিয়ে ফেলল, সাথে সাথে পায়ের জুতা খুলে এলোপাতাড়ি মা/রতে শুরু করল। চাঁদের এমন কাণ্ডে আশেপাশের লোকজন ছাত্রছাত্রীরা জড় হলো। পাশে চায়ের দোকানে চাঁদদের ডিপার্টমেন্টের ছেলেরা আড্ডা দিচ্ছিলো। শোরগোল শুনে ছুটে আসলো। চাঁদকে ক্ষিপ্ত দেখে এখানে কি হয়েছে বুঝতে বাকি রইল না কারো। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলেটাকে মা/রার জন্য এগিয়ে এলো। চাঁদ হুঙ্কার দিয়ে থামালো। রাগে ফোঁসফোঁস করে বলল,
‘ এই কু/কুর, নর্দমার কীট কি ভেবেছে? নারী দুর্বল। দূর বাড়ি ছেড়ে মেয়েরা হলে থাকে বলে তারা অসহায়, দুশ্চরিত্রা! যেমন ইচ্ছা তেমনি ব্যবহার করা যায়? বিছানায় নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া যায়। ওদেরকে পুরুষ দিয়ে না, নারীর হাতে শায়েস্তা করতে হয়, এতে যদি এদের লজ্জা হয়।’
চাঁদ বলতে বলতেই কয়েকটা মেয়ে এসে জুতা খুলে ছেলেটাকে মা/রতে শুরু করল। ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। বাবাগো বাবাগো বলে চিৎকার করছে। ভিড় ঠেলে কয়েকটা ছেলে ভেতরে ঢুকলো। মা/র খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে থাকা ছেলেটাকে বাঁচাতে চেষ্টা করলো। এত মেয়েদের ভিড়ে সামাল দিতে পারছে না। দুচারটা মা/র তাদের গায়েও পড়লো। শেষমেশ উপায়ন্তর না পেয়ে সবার কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চেয়ে বলল,
‘ নেশা করে মাথা ঠিক নাই ওর। ছাইড়া দেন আপা। আর কোনো দিন ক্যাম্পাসে ঢুকব না।’
ছেলেদের অনুনয় বিনয়ে সবাই দমলো। ছেড়ে দিলো। চাঁদ ক্ষি/প্ত কণ্ঠে বলল,
‘ আশাকরি আজকের শিক্ষা মনে থাকলে আর কোনো দিন মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকাবে না। রাস্তাঘাটে মেয়ে দেখে কুপ্রস্তাব দেওয়া পুরুষত্ব না। অমা/নুষ জানো/য়ারদের পরিচয়।
অকপটে পায়ে হলের দিকে রওনা হলো চাঁদ। চোখজোড়া ছলছল করছে। ক্রোধ কোনো ভাবেই দমছে না। আজ প্রথম না। চারবছরে এমন নানারকম হ্যারেজমেন্টের স্বীকার হয়েছে। যেদিন প্রথম টিউশনি করতে গেল, স্টুডেন্টের চাচা কুপ্রস্তাব দিলো। লজ্জা অপমানে চাঁদের ম/রে যেতে ইচ্ছা করছিলো। সেদিনই টিউশনি ছাড়লো। নিজেকে সময় দিলো, সময়ের সাথে সাথে বুঝলো। এই বিশাল নির্দয় দুনিয়ায় এভাবে একা চলা সম্ভব নয়। হয়তো ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হবে, নয়তো কঠোর হতে হবে। প্রথম অপশন কোনো দিন বাছাই করবে না চাঁদ। বাড়ি ফিরে যাওয়া মানে হেরে যাওয়া, তার অভিমান চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া। সে দ্বিতীয় অপশন বেছে নিলো। কঠোর শক্তপোক্ত রূপ ধারণ করল।
হলে এসে মাথা ঠান্ডা করতে গোসলে ঢুকলো। পানির নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। ছেলেটার বলা কথা গুলো মনে পড়তেই নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। ঘৃ/ণায় গা গুলাচ্ছে। অনেকক্ষণ মাথায় পানি ঢেলে তোয়ালে দিয়ে চুল প্যাঁচিয়ে বেরিয়ে এলো চাঁদ। বিছানায় থাকা সাইলেন্ট মোবাইলটা অনবরত আলো জ্বলছে আর নিভছে। স্কিনে বিদেশি নাম্বার ভেসে। তোয়ালে মেলে দিয়ে ফোন রিসিভ করল। অপর পাশ হতে পৃথার চিন্তিত আওয়াজ শোনা গেল,
‘ ফোন ধরছিস না কেন? কি হয়েছে?’
পিলারে পিঠ ঠেকিয়ে কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে উত্তর দিলো চাঁদ,
‘ কিছু হয়নি তো! গোসল করছিলাম তাই ধরতে পারিনি।’
পৃথার চিন্তিত স্বর,
‘ এই অসময়ে গোসল কেন? ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।’
‘ এমনি গরম লাগছিলো তাই।’
‘ বাংলাদেশে খুব বেশি গরম পড়েছে কি? হলে থাকতে কষ্ট হচ্ছে?’
চাঁদ মৃদু হেসে বলল,
‘ তেমন কিছু না ভাবি। ঠিক আছি আমি। তুমি কেমন আছো?’
‘ ভালো। বাড়ির সবাই কেমন আছে? এর মধ্যে বাড়িতে যাওয়া হয়েছিলো কি?’
‘ভালো আছে। বাড়িতে তেমন যাওয়া হয় না। সামনে ফাইনাল পড়ার চাপ বেড়েছে। সেদিন সাইফার জন্মদিনে আরশি আপার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে সবার সাথে দেখা হয়েছিলো।’
পৃথার কণ্ঠে উদ্বেগ শোনা গেল। বলল,
‘ তোর আর আষাঢ় সাহেবের মধ্যে সবকিছু ঠিক আছে? দূরেদূরে থেকে এভাবে সংসার হয় না চাঁদ। জানি তোর স্বপ্ন পড়াশোনা এসব কিছু তোর কাছে অনেক মূল্য কিন্তু পরিবারকে হেলাফেলা করলে চলবে না। সবদিক মানিয়ে চলতে হবে।’
উশখুশ করছে চাঁদ। ভাবিকে সে কি বলবে? কিছু ঠিক হয়নি।আষাঢ় আর তার মাঝে এখনো সেই পুরানো দ্বন্দ্ব চলছে। চার বছর আগে ফেলে আসা সংসারে আর ফিরে যায়নি সে! মাঝেমধ্যে অতিথিদের মত হানা দেয় ওই বাড়িতে। বুক চিড়ে হতাশ নিশ্বাস ফেলল। ভাবি দেশ ছেড়ে বহু দূরে আছে। আগে থেকেই চাঁদকে নিয়ে ভাবির জীবনে এত ঝামেলা চলছে সেখানে উটকো চিন্তা চাপিয়ে দেওয়ার কোনো মানে নেই। কণ্ঠে কৃত্রিম আমোদ ঢেলে চাঁদ বলল,
‘ সবকিছু ঠিক আছে ভাবি। আষাঢ় রোজ ফোন করে আমাদের অনেক কথা হয়।’
তারপর কথা এড়াতে বলল আবার,
‘ তুমি বলো, এত সকালে ফোন করলে যে। আমেরিকায় সবে সকাল ছয়টা বাজছে।’
অপর পাশ হতে পৃথার আওয়াজ এলো,
‘ গত কয়েকদিন যাবৎ ব্যস্ততার তাড়নায় তোর সাথে কথা হচ্ছে না। গত রাতে তোকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখলাম, মনটা ভীষণ আনচান করছিল তাই ফোন করলাম। সবকিছু ঠিক আছে তো?’
‘ সব কিছু ঠিক আছে ভাবি।’
চাঁদ মাঝেমাঝে ভীষণ বিস্মিত হয়। রক্তের সম্পর্ক নেই, তবুও মানুষটার তার প্রতি কত টান। তার জন্যই পৃথা বাড়ি ছেড়ে আমেরিকা নিজের ভাইয়ের বাড়িতে পারি জমিয়েছে। চারবছর আগে সেদিন পৃথা চাঁদকে সাহায্য করেছিলো বলে, শিকদার বাড়ির সকলে তাকে দোষারোপ করেছিল। পুরো ঘটনার দায়ভার তার উপর চাপিয়ে দিলো। উঠতে বসতে ফুপুর নানারকম বাঁকা কথা শুনতে হতো। রুবেলের সাথেও সম্পর্ক বেগতিক হয়ে এলো। এসব ঝামেলার মধ্যে দিয়ে জানলো, মা হতে চলেছে। প্রেগ্ন্যাসির দুই মাস চলছে। বিয়ের এত বছর পর হাজারো আহাজারি দোয়ার পর উপরওয়ালা যেন মুখ ফিরে তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু তখনো পরিবারে দ্বন্দ্ব চলছিলো। রুবেলের সাথে ছন্নছাড়া সম্পর্ক, সন্তানের খবর পেয়ে খুশি হলেও, ইগো দমিয়ে গ্রহণ করতে পারছিলো না। প্রায় রোজ দুজনের কথা কাটা/কাটি চলতো। এমনি একদিন পৃথার গায়ে হাত তুলল। টেবিলের সাথে গভীর ভাবে আঘা/ত পেয়ে মিসক্যারেজ হলো। এতবড় একটা শোক পৃথা কা/টিয়ে উঠতে পারলো না। তার উপর গভীর প্রভাব পড়লো। ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করতে চাইলো। কিন্তু পৃথার বাড়ির লোকেদের জন্য পারলো না। যেহেতু রুবেলের সাথে বিয়েটা একটা রাজনৈতিক সমঝোতা ছিল, এখনি ডিভোর্স নেওয়া উচিত হবে না। রাজনৈতিক সম্পর্ক বেগতিক হতে পারে। পরিবার থেকে সহযোগিতা না পেয়ে পৃথা ভেঙে পড়লো। সেই সাথে এটাও জানালো ওই বাড়িতে কোনো দিন ফিরে যাবে না। না রুবেলের মুখ দেখতে চায়। তাই পৃথার বাড়ির লোকেরা মাঝামাঝি একটা সুরাহা বের করল। পৃথাকে তার ভাইয়ের কাছে আমেরিকা পাঠালো। চারবছর যাবত সেখানে থাকছে। দেশের প্রতি, পরিবারের প্রতি তার বিতৃষ্ণা চলে এসেছে। তাই পেছনে ফিরে তাকায়নি আর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে, শুধুমাত্র চাঁদের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। পৃথার ভাষ্যমতে, চাঁদ তার সন্তান।’ আরো কিছুক্ষণ দুজনের কথা চলল। চাঁদ বেশ কায়দা করে সবসময়কার মত নিজের সমস্যা, এখানকার বাস্তবতা লুকিয়ে নিলো।
ক্যাম্পাসে বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রজাপতি মেলা চলছে। রঙিন চারিদিকে। তটিনী বন্যাদের জোরজবরদস্তিতে ইচ্ছা না থাকার শর্তেও শাড়ি পরতে হয়েছে চাঁদকে। কোনোরকম সাদামাটা খোপা করে বেশ সাধারণ ভাবে বেরিয়েছে। ক্যাম্পাসের বাহিরের থেকেও অনেক লোকজন এসেছে। শাড়ি চুড়ি আরো নানারকম দোকান বসেছে। জাবিয়ানদের প্রত্যেক উৎসব-ই সুন্দর, আনন্দে মুখরিত সকলে। যার হাঁকডাক আশেপাশে শোনা যায়, দূর দূরান্ত থেকে মানুষ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। বেশ হৈহুল্লোড় করে মেলা চলছে। মাটি, কাঠের তৈরি গহনার দোকান দেখা যাচ্ছে। বন্যা সেদিকে ছুটে গেল। চাঁদ পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বন্যা তার ডিপার্টমেন্টের। ছটফটে স্বভাবের দুরন্ত মেয়েটা। আশেপাশেই বাড়ি ওদের, মোটামুটি বিত্তশালী ঘরের মেয়ে। এখানে মানিয়ে নিতে প্রথম থেকে চাঁদকে ভীষণ সাহায্য করেছে। প্রতি কদমে কদমে সাহায্য করেছে। চাঁদের প্রথম টিউশনিটা বন্যাই খুঁজে দিয়েছে। আর্থিক মানসিক ভীষণ সাপোর্ট করেছে। হ্ঠাৎ বন্যার ডাকে চাঁদের ঘোর কা/টলো। চাঁদের গলায় মাটির নীলাভ হার ধরে দেখছে। কিছু একটা ভেবে চোখ ছোট ছোট করে নিলো সে। ঘাড় নাচিয়ে বলল,
‘ উম! ভীষণ সুন্দর লাগছে। তোকে সব কিছুতেই সুন্দর লাগে। আমাদের চাঁদ সুন্দরী যে।’
চাঁদ হাসলো। মুখ বাঁকিয়ে বলল,
‘ হ্যাঁ, হাজার বার শুনেছি। এবার বল তোর পছন্দ হয়েছে?’
‘ হয়েছে, তবে দাম বেশি যে। ইয়াররিং সহ আড়াইশ! এই মাটির জিনিসের! পুরো লুটে নিচ্ছে।’
চাঁদ হাসলো। বলল,
‘ মাটির হোক, এসব বানাতে পরিশ্রম আছে। তোর পছন্দ হয়েছে কি না বল! আমি দাম দিচ্ছি।’
বন্যা খানিক অবাক হলো। বলল,
‘ তুই শুধু শুধু কিনে দিবি কেন? টাকার গাছটাছ আছে নাকি।’
ঠোঁট মেলে কৃত্রিম হাসলো চাঁদ। বলল,
‘ না, বাসা থেকে আসার সময় সেদিন মুরগী আর পেঁয়াজ এনে দিয়েছিলি যার মূল্য দেওয়া হয়নি।’
‘ তোর কাছে আমি চেয়েছি?’
‘ না, কিন্তু আমি দিতে চাচ্ছি। কারণ..
চাঁদের মুখের কথা ছিনিয়ে নিয়ে বলল বন্যা,
‘ কারণ আমাদের চাঁদ সুন্দরীর কারোর ঋণ রাখা পছন্দ না। জানি, হাজারবার শুনেছি।’
চাঁদ হাসলো। বন্যার মাটির গহনা প্যাকেট করছে। এমন সময় চাঁদের ফোনটা বেজে উঠলো। আষাঢ়ের নাম্বার দেখে চাঁদ কপাল কুঁচকে নিলো। এটা নতুন নাম্বার। সেদিন ছলচাতুরী করে নিয়ে চুমু খাওয়ার শাস্তি চাঁদ কায়দা করে দিয়েছে। হলে ফিরে প্রথমে আষাঢ়ের নাম্বার ব্লক করেছে। পুরো দুই সাপ্তাহ কড়াকড়ি এড়িয়ে গেছে। আষাঢ় কয়েকবার ক্যাম্পাসে এসেছে, দূর থেকে দেখে চাঁদ আড়াল হয়ে গেছে। দেখার পর্যন্ত সুযোগ দেয়নি। গতরাতে আষাঢ় নতুন নাম্বার থেকে ফোন ম্যাসেজ করেছিল। সকালে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ায় ব্লক করা হয়নি। অনবরত মোবাইল বাজতে থাকায়। বন্যার থেকে খানিক দূর যেয়ে ফোন রিসিভ করল চাঁদ। ক্রোধান্বিত সুরে বলল,
‘ সমস্যা কি? বারবার ফোন দিচ্ছেন কেন?’
অপর পাশ হতে আষাঢ়ের দ্বিগুণ ধমক শোনা গেল,
‘ দুই সাপ্তাহ ধরে ব্লক লিস্টে রেখে সমস্যা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে? খুব বেশি সাহস হয়েছে?’
চাঁদের স্বাভাবিক উত্তর,
‘ আমার সাহস কম ছিলো কবে? বলুন বারবার কেন ফোন করছেন?’
অপরপাশ হতে আষাঢ়ের আওয়াজ,
‘ আমি ক্যাম্পাসে আসছি। শুনলাম, মেলা হচ্ছে!’
‘ হ্যাঁ হচ্ছে। আপনি ঝালমুড়ি বিক্রি করতে আসবেন? তাছাড়া আপনার আসার কোনো কারণ দেখছি না।’
রাগে চোখ বুজলো আষাঢ়। চাঁদের লাগাদার এড়িয়ে চলায় তার মাথা বিগড়ে আছে। ক্রোধ ঢালা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
‘ না, বউয়ের চুমু খেতে আসছি। খবরদার! হলে পালাতে যাবে না। আজ দেখা না হলে, সত্যি সত্যি ভীষণ তুলকালাম হবে। যার খেসারত তুমি দিবে।’
চাঁদ উত্তর দিলো না। রাগে ফোন কা/টলো। বন্যা এসে পাশে দাঁড়ালো বলল,
‘ কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?’
চাঁদ কি বলবে কথা খুঁজে পাচ্ছে না। হুট করে আষাঢ়ের কি পরিচয় দিবে? খানিক চুপ থেকে ভেবে বলল সে,
‘ আমার কাজিন ভাই আসছে, মেলা দেখতে।’
বন্যা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ বয়স কেমন? হ্যান্ডসাম?’
উত্তরে চাঁদ কিছু বলল না। দশ পনের মিনিট পর আষাঢ় পৌঁছে চাঁদকে ফোন করল। চাঁদ ক্যাফেটেরিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। বন্যাও সাথে আছে। দূর থেকে আষাঢ়কে দেখা গেল। অফিসের ফর্মাল ড্রেসে এসেছে। চোখে সানগ্লাস, গাড়িতে হেলান দিয়ে সিনেমার অভিনেতাদের মত দাঁড়িয়ে। দূর থেকে ঠোঁট নাড়িয়ে বলল যেন,
‘ চাঁদ আজ তুমি শেষ।’
চাঁদ যেন বুঝলো। চোখ ছোট ছোট করে বিড়ালচোখী দৃষ্টিতে তাকালো।
পাশ থেকে বন্যা লাফিয়ে উঠলো। চাঁদের কানের কাছে মুখ এনে বলল,
‘ উনি তোর কাজিন ভাই? তোর এত হট, হ্যান্ডসাম, রিচ একটা কাজিন আছে আগে বলিসনি কেন? আমিও সিঙ্গেল, উনিও সিঙ্গেল। কি মিল তাই না? আচ্ছা, আমাকে তোর ভাবি হিসাবে কেমন লাগে? চলবে?’
বন্যার কথায় চাঁদের প্রচন্ড রাগ হলো। মেজাজ বিগড়ে গেল। কোথাও ঈর্ষা হলো। বুক জ্বলে উঠলো। ঝোঁকের বসে ঝাঁঝালো কণ্ঠে উত্তর দিলো,
‘ কে বলেছে উনি সিঙ্গেল? উনার একটা সুন্দরী বউ আছে। জানতে পারলে তোর চুল ছিঁড়বে।’
বন্যার যেন বিশ্বাস হলো না। বোকাসোকা মুখ নিয়ে চাঁদের দিকে তাকালো। মেয়েটা হ্ঠাৎ রেগে গেল কেন?
চলবে…..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
টাইপোগ্রাফি করেছে Maksuda Ratna আপু❤️🌺