শ্রাবণ দিনের প্রেম পর্ব ১০

0
432

#শ্রাবণ_দিনের_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১০

ক্লাস করছিল আলিশা, অনেকদিন পর অশান্ত মনটা স্বান্ত হয়েছে। উত্তাল সমুদ্র যেমন হুট করে শান্ত হয়ে যায় ঠিক সে ভাবেই৷ মানুষ যে বলে, ভালোবাসায় ম্যাজিক আছে! কথাটা একদম সত্য। এতো,অভিযোগ এতো মন খারাপ, সব কেমন নিমিষেই শেষ। আলিশাকে মুচকি মুচকি হাসতে দেখে হুমায়রা বলে,কিরে একটু মধুর কথায় গলে আইসক্রিম হয়ে গেলি! নাকি আমার ভাইয়ের প্রেমে পরলি!
‘চুপ কর স্যার রেগে যাবে।আলিশার কথা শোষ হওয়ার আগেই রোদ ক্লাসে ঢুকে বলে, আলিশা, অভ্রকে পুলিশ গ্রেফতার করছে।

আলিশা বিস্মিত দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে, প্রফেসার আব্দুর রহমান বলেন, কি হচ্ছে কি ডাক্তার রোদ!দেখছেন তো ক্লাস চলছে।
‘স্যার আলিশাকে ইমার্জেন্সি একটু দরকার ছিলো৷

ক্লাস থেকে বের হয়ে আলিশা বলে, দেখুন রোদ ভাইয়া এখন যদি বলেন মিথ্যে নাটক করে আমাকে ক্লাস থেকে নিয়ে এসেছেন তাহলে কিন্তু!
‘আলিশা সত্যি গ্রেফতার হয়েছে অভ্র।গতকাল রাতে ওর অটি ছিলো ডাক্তার রায়হানের সাথে। কিন্তু কিছু ত্রুটির কারণে রোগি মা’রা যায়। তাই রোগির ফ্যামিলি কেস করেছে।
‘আচ্ছা এখন অভ্র কোথায়?
‘মতিঝিল থানায়।
‘হসপিটাল কতৃপক্ষ কি পদক্ষেপ নিয়েছে?
‘এখনো কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কারন তারা আন্দোলন করছে।
রোদকে সাথে নিয়ে থানায় পৌঁছালো আলিশা। সেখানে অভ্রের বাবা ডাক্তার আরাফাত আনান আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন৷ সে জামিনের ব্যাবস্তা করেছে৷ সেই প্রক্রিয়া শেষ করছে।
আলিশা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
অভ্রকে মুক্ত করা হলো। আলিশা সেটা দেখে থানা থেকে বের হয়ে যেতে নিলো৷ এমন সময় অভ্র বলে, দাঁড়াও আলিশা।
-অভ্র আলিশার সামনে এসে বলে, তার মানে কি তুমি আমাকে ক্ষমা করেছ!
-আপনি বিপদে পরেছেন তাই দেখতে এলাম৷ আমি যখন বিপদে পরেছিলাম আপনি আমাকে সাপোর্ট করেছেন। আমি অকৃতজ্ঞ না।

ডাক্তার আরাফাত সাহেব, আলিশাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আলিশা আঞ্জুম। তোমার নাম!
-আসসালামু আলাইকুম, জ্বি আঙ্কেল। তোমাদের কথা থাকলে পরে বলবে, এখন আপাতত কিছুদিন অভ্রকে নিরব থাকতে হবে।জানোই তো পরিস্থিতি!
-জ্বি। আসি আঙ্কেল।
-গুড গার্ল। এসো তবে আবার দেখা হবে।
-আলিশা বের হয়ে চলে আসলো।

আরাফাত সাহেব আর অভ্র পাশেই গাড়ীতে বসে আছেন৷ ড্রাইভার ড্রাইভ করছে। আরাফাত সাহেব বলল,ভুলটা কি সত্যি হয়েছে!ইয়েস অর নো।
‘ইয়েস। তবে সেটা ডাক্তার রায়হানের জন্য হয়েছে। আমি বলছিলাম এটা এভাবে করলে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে। সে আমাকে ওটিতেই ধমক দিয়ে বলেন, তুমি ভুলে যাবে না৷ তুমি নতুন আর আমি তোমার সিনিয়র। ওটি আমি নতুন করছি না৷ এটা তোমার জন্য নতুন।
‘এই কথাগুলো শুনেছে এমন ক’জন আছে?
‘দু’জন নার্স।
-আর মেয়েটাকে এখানে কে আসতে বলল।
-ও নিজেই এসেছে।


মানাফ নিজের রুমে ল্যাপটপে কাজ করছিল। এমন সময়ে হুমায়রা এসে বলে ভাইয়া,তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে!
‘আমি জানি তুই কি বলবি। আর তুই যা বলতে এসেছিস সেটা আজকেই আমি জেনেছি৷
‘তাহলে তোমার মত কি এখন!
‘জোড় করে তো আর কিছু পাওয়া যায় না। আমার আলিশাকে ভালো লাগতো এটা সত্য। কিন্তু তাই বলে তো আর জোড় করবো না। আমার এখন কারো পিছনে ঘোরার বা কাউকে ইমপ্রেস করার মত সময় নেই। একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করব।
‘আচ্ছা একটা কথা বলো, যদি তোমাকে অপশন দেয়া হয় তাহলে তুমি কোনটা বেছে নেবে!
‘কেমন অপশন!
‘তুমি যাকে ভালোবাসো আর যে তোমাকে ভালোবাসে।এই দু’জন থেকে কাকে বেছে নেবে।
‘প্রশ্নটা কঠিন তাই তার উত্তর আরো জটিল। তবে এখান থেকে যাকে বেঁছে নেবো, আমার মনে হয় আমি ভালো থাকবো।
‘তাহলে তুমি সুহানা আপিকে বিয়ে করে নাও। সুখে থাকবে। কত লক্ষী মেয়েটা।
‘তুই কি ওকালতি করতে এসেছিস!
‘বয়েই গেছে আমার। তোমার কপালে এতো ভালো বউ নেই।
হুমায়ারা নিজের কথা শেষ করে রুমে চলে আসলো।রুমে এসে দেখে তার মোবাইল ভাইব্রেশন হচ্ছে। দ্রুত মোবাইল নিয়ে রিসভ করে কানে তুলতেই। ওপাস থেকে একজন রাগী কন্ঠে বলল,কতবার কল করেছি! জানোই তো এই সময় আমি কল করবো।
‘কি আশ্চর্য রাগ করছো কেন তুমি! আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম৷
‘এবার গুণে গুণে দশবার আই লাভ ইউ বলো।
‘কি নিব্বাদের মত শুরু করলা। এসব টিনেজাররা করে।
‘ভালোবাসা তো ভালোবাসাই। বলো এখন দ্রুত নয়ত আমি বাসার নিচে চলে আসবো।
‘আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ।
‘থামলে কেন বলো আর পাঁচবার।
‘এর পরেও বলতে বললে, আমি বলবো আই হেট ইউ।
‘জঙ্গি বিল্লি আর ভালো হইলা না৷
‘ভালো হতে পারবো না। ভালো লাগলে অন্য কোথাও দেখতে পারো।
‘খুব কথা শিখেছো একবার পাই শুধু।
হুমুর কথার মাঝেই সুহানা এসে বলে,হুমু আজ আমি তোর সাথে শোব।
হুমায়রা কল কেটে দিয়ে বলে, সমস্যা নেই আর ভালো। দুই ননদ ভাবী জমিয়ে আড্ডা দেবো সারা রাত৷

‘আর ভাবি হওয়া। তোমার ভাই তো পছন্দ করে অন্য কাউকে।
‘তাতে কি ভাবি পছন্দই তো করে, ভালো তো আর বাসে না। পছন্দ পরিবর্তন হতে সময় লাগে না।
‘বাদ দাও তো।তোমার কি খবর সেটা বলো।
‘আমার আবার খবর!
✨সন্ধ্যার পর থেকে হসপিটাল এরিয়ায় আন্দোলন কারি লোকের ভীড় বেড়েছে কয়েক গুণ। ডাক্তার রায়হানকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কিন্তু ডাক্তার অভ্রকে গ্রেফতার করার পরেও জামিনে কেন মুক্ত করা হলো সেটা নিয়েই উত্তাল৷
অভ্র টিভিতে সেই নিউজ দেখছিল৷ ইচ্ছে করছে টিভিটা ভেঙ্গে ফেলতে। যেখানে তার কোন দোষ নেই।সে কাজের শাস্তি আবার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে। কিছুক্ষণ টেনশন করে আলিশা কে কল কররো। কল করার সাথে সাথে রিসিভ। আলিশাই আগে বলল, কি অবস্থা এখন৷
‘আর অবস্থা মনে হচ্ছে আমার ক্যারিয়ার এখানেই শেষ।
‘চিন্তা কইরো না। আমি বাবাকে বলবো তোমার কেসটা লড়তে।
‘তোমার বাবা শুনেবে তোমার কথা!
‘কোন শুনবে না। বাবা আজ রাতের ফ্লাইটে ঢাকা ফিরছে। আগামীকাল সুযোগ বুঝে বলব।
‘যদি শ্বশুর মশাই আমার কেস লড়ে তবে আমি জিতবোই। শতহোক জামাইকে ন্যায় বিচার দিবেই৷
‘মানে আমি বুঝিনা এমন মূহুর্তে তোমার এমন কথা কি করে আসে!
‘তুমি পাশে থাকলে সব মূহুর্তই মধুর মনে হয়।
‘এসব ফ্লার্ট পরেও করতে পারবে৷ আগে চিন্তা কর পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। দেখলাম রোগীর স্বজনরা লাশ নিচ্ছে না। তাদের একটাই কথা, অপরাধীকে শাস্তি না দেয়া পর্যন্ত তারা লাশ গ্রহণ করবে না।
‘দেখো আমরা ছেলে মানুষ আমাদের টেনশন তোমাদের চোখে পরবে না। কারণ তোমরা টেনশনে কেঁদে ভাসিয়ে দিতো পারো আমরা পারিনা। আমার এতো সাধনার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে। আমি কি মানুষিক ভাবে ঠিক আছি! কিন্তু তবুও তোমাদের মত টেনশন করতে পারি না।
‘রিলাক্স এতো বড় বড় কথা বলতে হবে না। তোমার স্বাদের ক্যারিয়ার কেউ নষ্ট করতে পারবে না। আর ভুলটা যেহেতু তোমার না। সেখানে চিন্তা করতে হবে না। আচ্ছা ওই নার্সদের নাম বলোতো। যারা ওইদিন তোমাদের সাথে ওটিতে ছিলো।
‘ইলাম, আর রাত্রি৷
‘আমাদের আকে ওদের স্টেটমেন্ট নিতে হবে৷ এখন ওরাই ভরসা।
‘তোমাকে এতো ভাবতে হবে না। খেয়ে ঘুমিয়ে পরো৷
‘আমি করবো তোমাকে বলতে হবে না। তুমি খেয়ে ঘুমাও। যা হবে দেখা যাবে।জানোই তো, সত্য কোন দিন চাঁপা থাকে না।
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here