নীলাম্বরে জোছনা পর্ব ১৩

0
361

#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৩

‘বিভৎস রাত পেরিয়ে নতুন ভোরের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পরছে।
আরহাম হসপিটালের মসজিদে নামাজ আদায় করলো। নামাজ শেষে বের হয়ে আসলো।
হুট করে মনে পরলো মাহিবার বলা একটা কথা, মিস্টার অসুস্থ মাঝে মাঝে জুতো খুলে নগ্ন পায়ে মাটিতে হেঁটে দেখবেন। হৃদয় জুড়ে কেমন এক আলোড়ন সৃষ্টি হবে।
জুতো হাতে নিয়ে মাটিতে পা রেখে হাটছে। এখানে মাটির উপর সবুজ ঘাস। ঘাসগুলো সুন্দর সাইজ করে কাটা। কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা টুলে বসে পরলো। চোখ বন্ধ করে বলে,আমাকে ভালো না বাসার কারণ বলতে হবে তোমাকে মাহি। আমার হৃদয়ে তোমার অবস্থান তোমাকে বুঝে নিতে হবে।আমি যে দহনে দগ্ধ হচ্ছি, সেই দহনে তোমাকেও পুড়তে হবে!আর নয়তো আমার হৃদয় প্রশান্তি ছড়িয়ে দিতে হবে।

বেশ খানিকটা সময় বসে থেকে উঠে দাঁড়ালো। হসপিটালের ভেতরে এসে, মিফতাজকে দেখে। মানহাকে খুঁজতে লাগলো।

কাল রাতের পর থেকে আদুরী আর মানহা দু’জনেই নিস্তব্ধ।

আদুরী আয়াতের সাথে কেবিনে। মানহা বাহিরের বেঞ্চে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

আরহাম ধীর পায়ে মানহার পাশে খানিকটা দূরত্ব রেখে বসলো।

মানহার মধ্যে কোন হেলদোল নেই একি ভাবে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

আরহাম কিছু সময় চুপ থেকে নরম কন্ঠে বললো, ছোট তারা।

মানহা ফট করে চোখ খুলে বলে,মিস্টার অসুস্থ!

‘ছোট তারা, আমার ভিনদেশী কোথায়?

মানহা সোজা হয়ে বসলো, আরহামের মলিন চেহারার দিকে তাকিয়ে বলে,’মিস্টার অসুস্থ আপনি কি জানেন আপনার ভিনদেশী, এতোটুকু বলে দীর্ঘ শ্বাস নিলো।

আরহাম অস্থির হয়ে বলে, আমার ভিনদেশীর কি হয়েছে?

‘আপনার সাথে কথা বলতে, বলতে আপনাকে ভালোবেসে ফেলে,আপনাকে একবার বলেছিল দেশে আসতে, আপনি মানা করে দিয়ে বলেছিলেন তুমি আসো মাহি, আমি সব ব্যবস্থা করে দেয়।সেদিন থেকেই আপনার সাথে যোগাযোগ কমাতে থাকে।

‘কিন্তু চিঠিতে লিখেছিলো ও আমাকে ভালোবাসে না!

‘কারণ ও ভেবেছিলো আপনি কখনো ওর হবেন না। ও কখনে আপনার জন্য নিজের দেশ নিজের মানুষদের ছেড়ে যাবে না।

‘আচ্ছা সব বুঝলাম এখন বলো আমার প্রান পাখি কই?

‘সে এখন অসুস্থ মস্তিষ্কের একজন মানসিক রোগী। সহজ ভাষায় আমরা যাদের পা’গ’ল’/পাগলী বলে থাকি।

‘আরহাম নিজের অজান্তেই বুকের বা পাশে হাত রাখলো। হয়তো সেখানে কষ্ট হচ্ছে।

‘মানহা অশ্রু টলমল চোখ মুছে নিয়ে বলে,ও অসুস্থ হওয়ার আট মাস পরে ওর লেখা চিঠিটা পাই। ঠিকানা দেয়া ছিলো তাই নিজেই চলে যাই, চিঠি দিতে।সেদিন ছিলো আমার জীবনের কালদিন। আজ সেই দিনের জান্য আফসোস হচ্ছে।

আরহাম বাকি কথা শুনলো নাকি জানা নেই। প্রথবার যখন মাহিকে বলেছিল সে মানসিক রোগের ডাক্তার হচ্ছে । তখন মাহি মুখে হাত দেয়া হাসির ইমোজি দিয়ে লিখেছিল, তারমানে ভবিষ্যতে পাগল হলেও সমস্যা নেই! আপনি ঠিক সুস্থ করে নেবেন? চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। আরহামের বুঝতে বাকি নেই তার মাহিবা আর কেউ নয়। মানহার বোন আয়াত।

আরহামের অবস্থা দেখে মানহা বলে,খুব ভালোবাসেন আয়াত আপুকে?

‘আরহাম শুধু বললো,একবার ওকে দেখতে চাই?

‘আসুন আমার সাথে এই হসপিটালেই আছে।

আরহাম দাঁড়িয়ে আছে তার ভিনদেশীর খুব কাছে। কি নিষ্পাপ চেহারা।ঘুমন্ত মুখটায় যেনো পৃথিবীর সব মায়া এসে ভীড় করেছে। ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে খুব। কিন্তু অধিকার আর সাহস কোনটাই নেই। চোখের তৃষ্ণা মিটছে তবে হৃদয়ের তৃষ্ণা বাড়ছে। এই মূহুর্তে মাহিবাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে পারলে হয়তো হৃদয়ের তৃষ্ণা কিছুটা কমতো!

আরহাম সামনে এগোতে চাইলে মানহা আরহামের হাত ধরে বসে।

আদুরী আড় চোখে মানহার দিকে তাকায়। আদুরী আয়াতের পাশেই বসে আছে।

‘মানহার বাঁধা পেয়ে আরহাম স্থীর হয়ে দাঁড়ায়। এবার মানহার হাত ধরেই বাহিরে বের হয়ে আসে।

‘আদুরী অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মানহা আর আরহামের দিকে। তার দৃষ্টিতে রয়েছে কৌতূহল আর প্রশ্ন?

মানহা আর আরহাম বেরিয়ে আসতেই আদুরী তাদের পিছু আসলো। ততক্ষণে মানহা আর আরহাম লিফটে উঠে পরেছে।

আদুরী লিফট না পেয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো। নাহহহ কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আদুরী রাস্তার কাছে চলে আসলো ঢাকা মেডিকেলের পেছনের গেট দিয়ে।

আদি সকাল সকাল গাড়ী নিয়ে বের হয়েছে। উদ্দেশ্য রমনা পার্কে যাবে।
আদুরীর পড়নে একটা অলিভ আর বাসন্তী কালারের মিশ্রণে প্রিন্টের থ্রি পিছ।

হাসপাতালে সামনে দিয়ে গাড়ী স্লো চালাচ্ছে ড্রাইভার। হুটকরে আদিলের চোখ গেলো আদুরীর দিকে। ড্রাইভার কে বলল গাড়ি থামাও।

আদুরী এদিকে ওদিকে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথায় হাওয়া হলো দু’জনে কাউকেউ দেখতে পাচ্ছে না।
‘হুট করে আদিল আদুরীর সামনে এসে বলে,তোমাকে পেরেশান দেখাচ্ছে। কিছু হয়েছে আদু?

‘আদুরী ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,হ্যালো মিস্টার একজন বিবাহিতা মেয়েকে কোন সাহসে এভাবে ডাকলেন?

‘সরি বাট তোমার কোন হেল্প লাগলে বলো।

‘দুনিয়ায় যদি সর্বশেষ ব্যাক্তি হন আপনি। যার সাহায্য ছাড়া আমি বাঁচবো না! তবে ওই মূহুর্তে আপনার সাহায্য নয় মৃত্যু বেঁচে নেবো। রাস্তা ছাড়ুন।

‘আদিল আর কোন কথা বলতে পারলো না। কতটা ঘৃণা করলে কেউ এমন কথা বলতে পারে সেটুকু বোঝা হয়ে গেছে আদিলের। আচ্ছা ওই মূহুর্তে কি বা করার ছিলো!পরিবারের বড় ছেলে আদিল। তার কাঁধে কত শত দ্বায়ীত্ব। যদি সে ওই সময় নিজের ভালোবাসা বেছে নিতো তাহলে তার পরিবার আজ ঘুরে দাঁড়াতে পারতো না। যখন পরিবার আর ভালোবাসার মধ্যে থেকে মানুষকে যে কোন একটা কে বেছে নিতে হয়!তখন আটানব্বই পার্সেন্ট মানুষ পরিবার বেছে নেয়। বড় ছেলে মানেই হলো দ্বায়িত্বের নাম। কে বুঝবে সে কথা। সে সময় যদি আদুরীর সাথে ব্রেকআপ না করে চলে যেতো, হয়তো মেয়েটাকে সমাজের কত কটু কথা শুনতে হতো। সেই কথা ভেবেই ব্রেকআপ নামের বি’ষপান করেছিল আদিল।

‘আদিল যদি জানতো তার আদু আজও অন্য কারো হতে পারেনি। আজ তারই আছে। হয়তো পৃথিবীর সবটুকু সুখ এনে আদুরীর পায়ে রাখতো।

‘আদুরী অনেক সময় নিয়ে খুঁজেও পেলো না। অবশেষে কল করলো মানহাকে। কিন্তু ফোন সুইচ অফ। এতো টেনশনে এতো মানসিক যন্ত্রণা নিতে পারছে না আর। খুব ইচ্ছে করছে কাউকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে। কেউ যদি এই মূহুর্তে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতো। সব ঠিক হয়ে যাবে।এ সময় খুব তাড়াতাড়ি বদলে যাবে।ইশশ এমন কেউ নেই স্বান্তনা দেয়ার জন্য।

‘জীবনে এমন একটা সময় আসে যে সময় মানুষ বড্ড অসহায় হয়ে পরে!তখন সে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে। একটা বিশস্ত বক্ষ খুঁজে মন খুলে কাঁদার জন্য।

✨আরহাম,মানহাকে নিয়ে সোজা চলে আসলো বাসায়। হল রুমে দু’জনে মুখোমুখি বসে আছে। বাসায় কেউ নেই সার্ভেন্ট ছাড়া।

‘আরহাম মানহার উদ্দেশ্য বললো,দেখো আমার কাছে কিছু লুকাবে না। সবটা ঠিক ঠিক ভাবে বলবে। যদি লুকিয়ে যাও কিছু তাহলে আমি মাহিকে সুস্থ করতে পারবো না। তুমি যদি আমাকে সাহায্যের করো তবেই আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো আমার ভিনদেশীকে সুস্থ করার।অতএব সবটা আমাকে বলো। কি কারণে এমন হলো? সেটা যত ঘৃণ্য অতীত হোক আমি শোনার জন্য প্রস্তুত।

মানহা বুঝতে পারছে না কথাটা বলা ঠিক হবে নাকি হবে না! এই একটা কথা জানাজানি হলে কত জনের জীবন পাল্টে যাবে! আচ্ছা তখন সবাই যদি মিফতাজকে ভুল বুঝে?
কিন্তু না বলেও তো উপায় নেই!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here