‘আমাকে বিয়ে করতে চাইলে আমার পাগলী বোনকেও বিয়ে করতে হবে! আমি আমার বোনকে একা ছেড়ে যাবো না।
পাত্রী দেখতে এসে পাত্রীর মুখে এমন উদ্ভট কথা শুনে সকলেই বিস্মিত।
মিফতাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে,কি ছেলে মানুষি করছো মানহা? এসবের মানে কি?
– দেখো মানে খুব সোজা আমি বোনকে ছাড়া একা বিয়ে করবো না।
-এরজন্য নিজের বোনকে সতীন বানাবে?
-দরকার পড়লে তাই করবো।
খাটের উপর শেকলে বন্দী হয়ে বসে আছে এক রমনী। কি মায়াবী মুখখানি তাহার।তবে কে বলবে এই মানবী অসুস্থ মস্তিষ্কের!
মিফতাজ মানহাকে টানতে টানতে একটা রুমে নিয়ে আসলো, মানহার হাত শক্ত করে ধরে বলে,এসব পাগলামোর মানে কি?
মানে খুব সোজা মিস্টার মিফতাজ আয়মান চৌধুরী। আমার বোনকে আমি কিছুতেই এই অবস্থায় একা ছাড়বো না।
আয়াত তোমার আপন বোন না। তাহলে এতো কিসের দরদ?
– আপনার কাছে আয়াত আপুকে আমার কাজিন বোন মনে হতেই পারে,কিন্তু আমার কাছে সেই আমার সব। আর আয়াত আপুর এই অবস্থার দায় শুধু মাত্র আমার। আজ আমার জন্য আমার আয়াত আপু পাগল হয়ে গেছে।তাই তাকে এভাবে রেখে আমি কখনো বিয়ের পিরিতে বসবো না।
মানহার কথা শুনে মিফতাজের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলে। রাগে কপালের রগ গুলো দপদপ করছে। চোখ দিয়ে যেনে ভস্ম করে দেবে সব। মিহতাজ মানহাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে, বলে খুব সখ তোর সতীনের সংসার করার তোর ইচ্ছে আমি পূরণ করবো। ভালোবাসি বলে মাথায় চড়ে বসেছিস!
– আমার লাগছে ছাড়ো আমাকে।
– আমারও লাগছে ঠিক বুকের বা পাশে। এতোদিন কেন বলিসনি এ কথা? আজ আমার পরিবারের সামনেই তোকে এসব ফালতু টপিক টেনে আনতে হলো।
মানহা চুপ করে আছে মিফতাজের শক্ত হাতের বন্ধনে ব্যাথায় চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
মানহাকে চুপ থাকতে দেখে মিফতাজ বলে,এন্সার মি ডাম্যেড।
মিফতাজের গলার স্বর বসার রুম পর্যন্ত পৌঁছে গেলে মানহা ভয়ে ইষৎ কেঁপে উঠলো। দু’বছরের রিলেশনে কখনো মিফতাজকে এতো রেগে যেতে দেখেনি। কিন্তু মানহা তো নিরুপায়। এমন উদ্ভট কথা বলার মানে কি? আমাকে বলতেই হবে।
–তোমার কাছে উদ্ভট মনে হলেও এটাই আমার শর্ত।
– তোর খুব সখ হয়েছে সতীনের সংসার করার। তোর সখই আমি পূরণ করবো।তুই দেখবি কাছ থেকে দেখবি সতীনের সংসার করা কত সহজ।
– আমি দেখতে চাই মিফতাজ।
মিহতাজ মনহাকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে রেখে হনহন করে চলে আসে হল রুমে। এক নিশ্বাসে বলে, আগামী শুক্রবার আপনার দুই মেয়ের বিয়ে ।তাই আয়োজন শুরু করুন।
হল রুমে সব বড়রা বসে আছেন। দিশা বেগম(মিফতাজের মা) বললেন দেখুন এমন উদ্ভট কথা বলার মানে কি? আমি বুঝতে পারছিনা। এটা কি কোন যুক্তি সঙ্গত কথা হলো? বিয়েটা কি কোন পুতুল খেলা? মন চাইলো খেললাম মন চাইলো না বাদ দিয়ে দিলাম!বিয়ে মানে সারাজীবনের সঙ্গী। সেখানে এমন উদ্ভট কথা সত্যি বেমানান।
– রুনা বেগম বললেন আমরা কি বলবো বলেন। মেয়েটা বড্ড জেদি কারো কথাই শুনতে চায়না। আপনারা চাইলে বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে পারেন।
– দিশা বেগম বললেন আমার ছেলের যখন একসাথে দুই বিয়ে করতে আপত্তি নেই। সেখানে আমারও আপত্তি নেই। তবে আপনাদের মেয়েকে তো আপনারা বোঝাতে পারেন।
– মা মরা মেয়ে কারো কথা শুনলে তো বোঝাবো।
দিশা বেগম কথা না বাড়িয়ে বললেন আচ্ছা আজ তবে উঠি।
মানফা বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বলে,কেন আমাকে একা রেখে চলে গেলে কেন? আমি কি করবো বলো।মিফতাজের ভাগ যে আমি কাউকে দিতে পারবো না। আমি সেদিন তোমাদের সাথে মরে কেন গেলাম না বলতে পারো?
মানহার হঠাৎ মনে হলো কেউ তার কাঁধে হাত রেখেছে।উঠে বসলো চোখের পানি মুছে সামনে তাকাতেই দেখে রুনা বেগম অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মানহা মুখ খুলে কিছু বলার আগেই রুনা বেগম তার হালে স্ব জোর একটা চড় বসিয়ে বলে,আমার মেয়ের পুরো জীবনটা নষ্ট করে এখন এইটুকু দিতে তোর নাটকের শেষ নেই। অকৃতজ্ঞ মেয়ে।আমাদেরটা খেয়ে আমাদেরটা পরে আমার মেয়েকে পাগল বানিয়ে তুই যে সুখে সংসার করবি ভেবেছিস। সেটা আমি কিছুতেই হতে দেবো না।
মিফতাজ বাসায় এসে নিজের রুমে যেয়ে মানহার দেয়া গিফট গুলো ভেঙ্গে গুরিয়ে দিচ্ছে। কাভার্ড থেকে মানহার দেয়া লাভ কার্ড, বার্থে কার্ড, পাঞ্জাবি, টি-শার্ট বের করে নিয়ে ছাদে চলে গেলো। ছাদে ফার্নিচার বার্নিশ করার জন্য তারফিন আনা ছিলো। সেগুলো গিফটে ঢেলে আ’গু’ন জ্বালিয়ে দিলো। মূহুর্তেই দাউ দাউ করে আ’গু’ন জ্বলে উঠলো।যদিও এই মূহুর্তে এরচেয়ে ভয়ংকর ভাবে মিফতাজের হৃদয় দহনে পুড়ে যাচ্ছে। জ্বলন্ত আ’গুনের উপর হাত রেখে বলে,তুমি আমার ভালোবাসা দেখেছো কিন্তু আমার ঘৃণা দেখোনি এখন থেকে সেটাই দেখবে।আমার হৃদয় যে ভাবে পুড়িয়েছো এরচেয়ে শতগুন বেশী তোমাকে পোড়াবো।
আরহাম এসে মিফতাজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,তুই কি পাগল হয়েছিস! এসব কেন করছিস। মিফতাজ আরহামকে জড়িয়ে ধরে বলে,প্লিজ আমার মানহাকে আমার কাছে এনে দে। ও কেন এমন পাগলামো করছে। ওকি জানেনা ওর মিফতাজ ওকে কত ভালোবাসে! প্লিজ ভাই তুই ওকে বোঝা।
আরহাম দ্বিধায় পরে গেলো।সে কি একবার মানহার সাথে কথা বলে দেখবে।হুট করে অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে কেমন লাগে। দীর্ঘ চৌদ্দ বছর কানাডা ছিলো আরহাম এসেছে মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছে।তাও আসার তার কোন ইচ্ছে ছিলো না শুধু মাত্র তার মামাতো ভাইয়ের জন্য এসেছে। মিফতাজের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে আমি বুঝিয়ে বলবো।এবার তুই সান্ত্ব হ।কোথায় এক সাথে দুই বউ পাবি সেটার জন্য খুশি হয়ে পার্টি দিবি। তা-না করে শোক পালন করছিস!
– কখনো কাউকে ভালোবেসেছিস?
-ওইদিকে তেমন কাউকে মনে ধরোনি।
– এরজন্য বুঝতে পারছিস না।
আচ্ছা চল নিজে চল। যা হবে দেখা যাবে।
মানহা বারান্দার এক কোনে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। অন্ধকার বারান্দায় মৃদু চাঁদের আলো।
আদুরি এসে মানহার পাশে বসে, মানহাকে বলে,তোকে আগেই বলেছিলাম চলে যা এ বাড়ি ছেড়ে। এ বাড়ির মানুষ তোর ভালো কোনদিন চাইবে না। শুনলি না তো আমার কথা এখন দে নিজের স্বামীর ভাগ কর সারাজীবন সতীনের সংসার।
– আমি কোথায় যেতাম বলো চাচ্চুরা তো আমাকে জায়গা দিতো না।আর কেউ এভাবে নিজের মেয়েকে সতীন বেঁধে দেবে সেটাতো কল্পনাও করিনি।
– এখনো সময় আছে চলে যা মানহা।
– আমি পালাবো না। নিজের ভুলের শাস্তি ভোগ করবো। আয়াত আপুর এই অবস্থা আমার জন্য হয়েছে।
– বোকা বোকা কথা বলিস না।এটা ওর ডেস্টিনি তাই হইছে। আর তুইতো ইচ্ছে করে ওর সাথে এসব করিসনি!
– ওটা যদি ভাগ্য হয় তবে সারাজীবন নিজের ভালোবাসার মানুষের ভাগ দেয়া এটাও আমার ভাগ্য।
তুই কেন করছিস এমন! মিফতাজ তোকে বড্ড ভালোবাসে,কেন দিচ্ছিস ছেলেটাকে শাস্তি! এখনো সময় আছে ভেবে দেখ। সতীন সতীনই হয়, হোক সে সুস্থ কিংবা পাগল।
– আমার না আর কিছু বলার নেই আর কিছু ভাবার নেই আসলে কি বলতো যার বাবা, থেকেও নেই আর মা তো নেই-ই তার সাথে এরচেয়ে ভালো কি হবে বলো!
আদুরি রেগে বলে,কিছু চাপিয়ে দিলেই সেটা মেনে কেন নিতে হবে! সুযোগ দিলেই মানুষ সুযোগ নেয় এটা স্বাভাবিক।
– আমি যে অসহায় বড্ড অসহায়। আমি কিভাবে মেনে নেবো এসব। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ভাগ করে নিতে পারবো না।সে হলে পুরোপুরি আমার আর না হলে এক বিন্দুও চাই না।
– এখনো সময় আছে এসবের বিরুদ্ধে কথা বল।এতো বড় ঘোর অন্যায় করিস না। মিফতাজের মত ছেলে এ যুগে পাবি না।
– আমি কি করবো বলো! আমার কপাল যে পোড়া।
#চলবে
সূচনা পর্ব
#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা