প্রেয়সী পর্ব:১২

0
719

#প্রেয়সী
#পর্ব:১২
#তানিশা সুলতানা

“মুহিতের সাথে ঘুরতে কেনো গিয়েছিলি?

অধরা নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। মিটমিট করে হেসে তাকাঁয় মাহিমের চোখের দিকে। ইসসস কি সুন্দর চোখ দুটো।
” চেঞ্জ করে এসে বলছি।

বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। মাহিম অধরার ফোনটা তুলে খাটে বসে।
তখনই মুহিত অধরা অধরা বলে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকে পড়ে।
মাহিম চোয়াল শক্ত করে মুহিতের দিকে তাকাঁয়। মাহিমকে দেখে মুহিত খানিকটা অবাক হয়ে বলে
“ব্রো তুমি এখানে?

মাহিম বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। এটা দেখে মুহিতের হাসি পায়। তবুও হাসি চেপে মাহিমের পাশে বসে পড়ে।

” এটা আমার হবু বউয়ের রুম। এখানে যখন তখন ঢুকে পড়বা না। আমি জেলাস হই।

মাহিম হাত শক্ত করে মুঠ করে ফেলে। এই মুহুর্তে সে মুহিতের সাথে কথা বলতে চায় না। মুডও নেই।

মুহিত বুঝতে পারে মাহিমকে চেতিঁয়ে দেওয়া এতোটা ও সহজ হবে না আজকে। কিন্তু চেতাতেঁ তো হবেই।

“ভাবছি কালকেই অধরাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো। দেন রাতে ফুলসজ্জা, তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বেবি
আইডিয়াটা দারুণ না বিগ ব্রো?

মাহিমকে চোখ টিপে এক গাল হেসে বলে মুহিত। মাহিম শক্ত চোখে তাকাঁয় মুহিতের দিকে। মুহিত হাসি থামিয়ে ফেলে। মাহিমের চোখে চোখ রেখে বলে
” ভালোবাসলে আগলে রাখতে জানতে হয়। যত্ন করতে হয়। যা তুমি পারো না। তাই ভালোবাসা তোমার জন্য না। তুমি হেরে গেছো। অধরাকে আমি নিজের করেই ছাড়বো। এট এনি কস্ট।
একটা মেয়ের জন্য ভাইয়ের সাথে লড়াই করবো না। তোমাকে বরং আমি কিউট, সুইট, ড্যাশিং জোশ, একটা মেয়ে খুঁজে দিবো। কেমন?

এবার মাহিম বাঁকা হাসে। কুঁচকে থাকা কপাল সোজা করে ফেলে। অধরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। দুই ভাইকে পাশাপাশি বসে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে ফেলে। এদের মতিগতি বোঝা বড় দায়। অধরা তো বুঝতে পারে না৷
মুহিত অধরাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। এক গাল হেসে বলে ওঠে
“অধরা ইু আর লুকিং সো গর্জিয়াস। এই এম ইমপ্রেসড।

অধরা বড়বড় চোখ করে নিজের দিকে তাকায়। টিশার্ট আর প্লাজু পড়েছে সে। তাকে গর্জিয়াস লাগে কি করে? এই ছেলেটার মাথা পুরোই গেছে।

মুহিত বেরিয়ে যায়। তার কাজ শেষ। যাওয়ার সময় দরজা চাপিঁয়ে দিয়ে দরজা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। যাতে এই দিকে কেউ না আসে। অধরা আর মাহিমকে কেউ এক সাথে দেখে না ফেলে।

মাহিম অধরার পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক পলক দেখে তারপর বলে ওঠে
“জাস্ট ভাল্লাগে না আর। এতো স্ট্রেস আমি নিতে পারছি না। আমার একটু শান্তি প্রয়োজন। জাস্ট ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি আমি।

অধরা মাহিমের পাশে বসে। হাতের ওপর হাত রাখে। মাহিম চোখ বন্ধ করে আছে। ছোট থেকেই সে টেনশন করতে পারে না। পাগল পাগল হয়ে যায়।
“মাথা ঠান্ডা করুন মাহিম।

মাহিম অধরার দিকে ঘুরে তার দুই কাঁধ শক্ত করে ধরে। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” আমি মাথা ঠান্ডা করতে পারছি না। জাস্ট পারছি না। এখন তোর জন্য ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ করতে হবে আমার? বুঝি না আমি কিছু তাই না? তুই আশকারা না দিলে ও কখনোই এতোটা বাড়াবাড়ি করার সাহস পেতো না। তোর ওকেও নাচাতে ভাল্লাগে আর আমার সাথেও ঘেষাঘেষি করতে ভাল্লাগে।

শক্ত করে ধরায় ব্যাথা পাচ্ছে অধরা। শরীরের ব্যাথার চেয়ে মনের ব্যাথা বেশি ভয়ংকর। অধরা শরীরের ব্যাথা অনুভব করছে না। কিন্তু মাহিমের বলা কথা গুলো হৃদয়ে আঘাত করছে৷ দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।

মাহিম অধরাকে ছেড়ে দেয়। সোজা হয়ে বসে দুই হাতে মাথার চুল খামচে ধরে। অধরা মাথা নিচু করে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

“আমাকে বিয়ে করবি? কাল সকালে বিয়ে করছি আমরা।

অধরা ফট করে তাকায় মাহিমের দিকে। বিয়ে করবে?
অধরার তাকানো দেখে মাহিম বলে ওঠে
” কি?
বিয়ে করতে প্রবলেম? দোটানায় পড়ে গেছিস?

অধরা চোখের পানি মুছে শক্ত গলায় বলে
“সত্যিই দোটানায় পড়ে গেছি। কি করে বিয়ে করি বলুন তো? আপনি তো আমায় বিশ্বাস করতেই পারেন না। এতো বছর হলো চিনেন আমায়। অথচ কতো সহজে হার্ট করে কথা বললেন।
যে আমাকে বিশ্বাস করতে পারে না তাকে বিয়ে করি কি করে বলুন তো?
আপনাকে বিয়ে করছি না আমি।

মাহিম দাঁতে দাঁত চেপে অধরার কোমর জড়িয়ে তাকে কাছে নিয়ে আসে। রাগে তার শরীর কাঁপছে। ঘনঘন শ্বাস টানছে। শ্বাস গুলো অধরার মুখে এসে পড়ছে। চোখ বন্ধ করে ফেলে অধরা।
মাহিম ফিসফিস করে বলে
” বিয়ে করতেই হবে। না করলে তুলে নিয়ে যাবো তোকে। তোকে ছাড়ছি না আমি। মাহিমের প্রেয়ঁসী হতেই হবে তোকে।

অধরা মাহিমের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। আরও শক্ত করে চেপে অধরে মাহিম। অধরার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। পাগল পাগল লাগছে তার। শান্তির খোঁজে প্রেয়সীর কাছে এসেও শান্তি পাচ্ছে না। যন্ত্রণা হচ্ছে। প্রেয়সীকে কাছে পাওয়ার লোভ জাগছে। একটুখানি বেহায়া হতে ইচ্ছে করছে।

“আই নীড ইউ অধরা। আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাচ্ছি। ঘুমতে পারছি না, খেতে পারছি না। রোগী দেখাতে মন দিতে পারছি না। কি করলি আমায়? ডাক্তার এমন পাগল হলে লোকে কি বলবে?

মাহিমের কথা শুনে বুক কাঁপতে থাকে অধরার। হাত পায়ে যেনো বশ চলে গেছে। ফর্সা গাল দুটোতে লাল আভা ফুটে উঠেছে। অদ্ভুত একটা ফিলিংস হচ্ছে। প্রিয়তমের পাগলামিতে সায় দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
অধরা ইচ্ছেকে দমিয়ে না রেখে মাহিমের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
অধরার নরম ঠোঁটের ছোঁয়ায় মাহিমের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাহিমকে।
অধরা তার লজ্জা মাখা মুখখানা লুকায় মাহিমের বুকে।
” বিয়ে কিন্তু করবোই কাল।

অধরা ছোট্ট করে “হুম” বলে।

মনি খাবার নিয়ে অধরার রুমে আসছিলো। তখনই মাহিম এক লাফে মনির সামনে দাঁড়িয়ে যায়। মনি খানিকটা চমকে ওঠে
“বাঁদর ছেলে ভয় কেনো দেখালি?

মুহিত মনির কাঁধ জড়িয়ে বলে
” মাম্মা আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। তাকে বিয়ে করতে চাই। লজ্জায় পাপা আর দাদুকে বলতে পারছি না। তুমি বলে দিবে প্লিজ?

মনি অবাক হয়। এই ছেলের লজ্জা আছে?
“মেয়েটা কে?

” তুমি এখনই পাপাকে বলো বিয়ের কথা দেন রাতে খাবার টেবিলে আমি সবার সামনে তার নাম বলবো। ওকে?

“ঠিক আছে অধরাকে খাবার দিয়ে আসছি।

” অধরা খাবে না। তুমি এখনই যাও।

মনি চলে যায়। মুহিত হাসে। রাতে খেলা হবে।

মুহিত মাহমুদাকে একটা টেক্সট করে
“মাম্মা আমি বিয়ে করেছি। বউ নিয়ে দাদু বাড়িতে আছি। বউ দেখতে চাইলে চলে এসো”

ফোনটা পকেটে রেখে অধরার রুমের দিকে তাকিয়ে বলে
“কাল জীবনটা বদলে যাবে তোমার প্রেয়সী।

চলবে

ফলো করুন,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here