#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব__১৮
আবিদের এমন অপ্রত্যাশিত কর্মকাণ্ডে অসস্থি লজ্জায় মিইয়ে করুণ অবস্থা দর্শিনীর। দর্শিনীকে আরেকটু অসস্থিতে ফেলার জন্য আবিদ ইচ্ছে করে তার দিকে এগিয়ে আসে।দর্শিনী ধীরে ধীরে পিছিয়ে যায়। এভাবে একটা সময় পর দেওয়ালের সঙ্গে পীঠ ঠেঁকে গেলে,আবিদ দর্শিনীর মুখোমুখি দাঁড়ায়। আবিদের চোখে মুখে দু’ষ্টু হাসি। দর্শিনী মাথা নিচু করে ফেলে। আবিদ মুখটা দর্শিনীর কাছে এগিয়ে নিয়ে আসলে দর্শিনীর শরীর ঝিমঝিম করে ঝাঁকুনি দেয়। দর্শিনী ভাবতে পারছেনা আবিদ কী করতে চাইছে? দর্শিনী ভয় পেয়ে দ্রুত চোখ বন্ধ করে নেয়। আবিদ দর্শিনীর করুন অবস্থা বুঝতে পেরে।নিজের অদম্য ইচ্ছে দমন করে ফেলে। সে দর্শিনীকে অবাক করে দূরুত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পর আবিদের অস্তিত্বের আভাস না পেয়ে দর্শিনী চোখ খোলে। আবিদ মুচকি হেসে দর্শিনীকে লজ্জায় ফেলতে জিগ্যেস করে,
‘কী ভেবেছিলেন দর্শিনী?ভয় পাবেন না বিয়ের আগে আপনাকে এভাবে স্পর্শ করবো না। আপনি কী লজ্জা পাচ্ছেন? আপনাকে এভাবে আকষর্ণীয় লাগছে দর্শিনী।’
দর্শিনী অদ্ভুতভাবে নেত্র পল্লব ঝাঁপটায়। আবিদের প্রতিটা আদুরে কথাবার্তায় তার শরীরে শিহরণ বয়ে যায়। এটা কী তার উ’ন্মাদ ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বোঝেনা? দর্শিনী লজ্জা পেয়ে মিষ্টি হেসে রুম থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে আবিদ শাড়ির আঁচল ধরে ফেলে। দর্শিনী শাড়ির আচঁলে হাত রেখে ছাড়াতে চেষ্টা করে। আবিদ শক্তিশালী বলিষ্ঠ হাতে হালকা করে ধরে আছে।কিন্তু দর্শিনী শক্তি প্রয়োগ করে ছাড়াতে পারছে না। দর্শিনী অসহায় কন্ঠে বলে,
‘ছাঁড়ুন প্লীজ। এতোক্ষণে সবাই খুঁজছে আমাকে।’
আবিদ বাঁকা হাসে। দর্শিনীর উদ্দেশ্যে নির্বিকারভাবে বলে,
‘যদি না ছাঁড়ি?কেউ কী ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরে?আপনি সবসময় পালাই পালাই করেন কেনো দর্শিনী?’
দর্শিনী শাড়ির আচঁল নিয়ে টানাটানি করছে। আবিদ একটু একটু করে দর্শিনীকে আচঁল সহ নিজের দিকে টানছে। আবিদ যদি এই মুহুর্তে আচঁল না ছাড়ে দর্শিনী টানাটানি করে ছিঁড়ে ফেলবে। তাই বাধ্য হয়ে আবিদ আচঁলটা ছেড়ে দেয়। দর্শিনী ছাড়া পেতেই দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে হাঁপাতে থাকে। মুখে তার মিষ্টি হাসির আভাস। দর্শিনী আদিবার রুমের সামনে এগোতে যাবে তখনই আসফির সঙ্গে ধাক্কা খায়। আসফি কপালে ব্যাথা পেয়েছে কিনা দেখতে টাচ করতে যাবে তার আগেই দর্শিনী ছিটকে দূরে সরে যায়। আসফি বাঁকা হেসে দর্শিনীকে অপাদমস্তক পরোক্ষ করে দেখে। আসফির অসস্থিকর নজর এড়াতে দর্শিনী বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে ফিরে। আসফি এগিয়ে এসে জিগ্যেস করে,
‘আস্তে দৌঁড়াবে তো। দেখি কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?’___বলেই দর্শিনীর দিকে হাত বাড়ায়। দর্শিনী স্তব্দা খেয়ে যায় আসফির ব্যবহারে। এমন গায়ে পড়া স্বভাব তার একদম পছন্দ না।
তৎক্ষণাৎ আবিদ আসফির হাতটা শক্ত করে ধরে ফেলে। দর্শিনী আবিদকে দেখে নিশ্চিন্ত হয়। আসফি ছেলেটা সত্যি অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছিল। প্রথমদিন থেকে ছেলেটার নজর দর্শিনীর ভালো লাগেনা। কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো। আবিদের কন্ঠে কঠোরতা। মৃদু রাগ দেখিয়ে আসফির উদ্দেশ্যে বলে,
‘দর্শিনীর ব্যাপারে তোর নাক গলানোর প্রয়োজন নেই। নেক্সট টাইম উনার দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করিস না।উনার থেকে দূরে থাকবি।’
দর্শিনী আবিদের দিকে মুগ্ধতার সহিত তাকিয়ে থাকে। আবিদের চোখে মুখে স্পষ্টত রাগ। হয়তো আসফি দর্শিনীর দিকে হাত বাড়িয়েছে বলে। মেয়েরা তো সারাজীবন এমন ছেলেই চায় যে সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে নিজের প্রিয়তমাকে রক্ষা করবে। প্রিয়তমার ঢাল হয়ে রবে। আসফি নিজের রাগটা হজম করে নেয়। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের রুমে পা বাড়ায়। আসফি চলে যেতেই আবিদ দর্শিনীর দিকে ফিরে মুখটা আলতো হাতে আজলা করে ধরে। তারপর জিগ্যেস করে,
‘ঠিক আছেন আপনি? কোথায় ব্যাথা পেয়েছেন?’
দর্শিনী আবিদের হাতে হাত ছুঁয়ে হেসে বলে,
‘কপালে তৎক্ষণাৎ ব্যাথা পেয়েছিলাম এখন নেই। আমি রুম থেকে বের হয়েছি আদিবা রুমে যাওয়ার জন্য। তখনই হঠাৎ আসফি ভাইয়ার সঙ্গে ধাক্কা লাগল। মনে হচ্ছে উনি রুমের বাহিরেই ছিল। ব্যাপারটা এতো দ্রুত হলো আমি বুঝতে পারিনি।’
আবিদ মনে মনে ক্রু’দ্ধ হলো। বেশ বুঝতে পারছে আসফি ইচ্ছে করে আবিদের রুমে নজর রেখেছিল। যা হলো সবটা ইচ্ছাকৃত। আবিদ দর্শিনীর কপালে হাত বুলিয়ে বলে,
‘আদিবাকে নিয়ে নিচে যান। আমি শাওয়ার নিয়ে এখুনি আসছি।’
দর্শিনী আবিদের কথায় আদিবার রুমে নক করে। আদিবা দরজা খুললে আবিদের কথামতো দুজনে নিচে নামে। আবিদ নিজের রুমে ফিরে আসে। আসফির উপর তার রাগ হচ্ছে বাড়িতে দর্শিনী আছে তাই সিনক্রিয়েট করতে চায়না নাহলে ক’ষে চড় মারা উচিত এমন যঘন্য পলেসির জন্য। ভাইয়ের রুমের নজর রাখা নিশ্চয় প্রশংসনীয় কাজ নয়। এখন মাথা ঠান্ডা করতে তাকে শাওয়ার নিতে হবে নাহলে রাগ কিছুতেই কমবে না।
_
ডাইনিং টেবিলে সবাই নাস্তা করছে। আবিদ একেবারে পরিপাটি হয়ে নিচে নামছে। দর্শিনীকে অনুসা বেগম নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন। দর্শিনী আবিদকে সিঁড়িতে নামতে দেখে দিকবেদিক হারিয়ে তাকিয়ে রইল। আবিদের পড়নে কালো ব্লেজার,খয়েরী শার্ট,কালো প্যান্ট! ডান হাতে কালো কোট। গমরঙা ত্বকে খয়েরী কালো কম্বিনেশন। প্রচন্ড মানিয়েছে আবিদকে। তার বলিষ্ঠ সুঠাম দেহ,জেল দিয়ে সেট করা চুল। দর্শিনী মনে মনে মাশ-আল্লাহ্ বলে ফেলল। আবিদ ডাইনিং বসতেই দর্শিনীর দিকে তাকালো মেয়েটা কী সুন্দর হবু শাশুড়ির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। অনুসা বেগম যখন যত্ন সহকারে পরোটা আর সুজির হালুয়া মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। ঠিক সেই মুহুর্তে দর্শিনীর হাসি মুখটা লক্ষ্য করে আবিদের বুকে ঢিপঢিপ শব্দ বাড়ছে। আবিদ নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়। পুস্পিতা আরহানকে নাস্তা দিয়ে আবিদের জন্য ব্রকলি সুপ আর স্যালাড নিয়ে আসে। দর্শিনী খেতে খেতে অবাক হয়ে তাকায়। আবিদ সাস্থ্য সচেতন সকালবেলা ব্রকলি সুপ,স্যালাড, ডিম, দুধ, জ্যাম-পাউরুটি নিত্যদিনের খাবার। সকলে খাওয়া শেষ করে তৈরি হয়ে নেয়।পুস্পিতা,অনুসা বেগম,আদিবা,দর্শানী সবাই এক এক করে গাড়িতে উঠে বসেছে। আবিদের পাশের সিট ফাঁকা। আরহান রেডি হয়ে এসে পাশের সিটে বসে। আবিদ গাড়ি স্টার্ট দেয়। আরহান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছে।এদিকে আবিদ ফ্রন্ট আয়নাতে দর্শিনীকে দেখতে ব্যাস্ত। মাঝে মাঝে দু’একবার ভাইয়ের কথায় জবাব দেয়। দর্শিনী আদিবা, পুস্পিতা, হবু শাশুড়ির সঙ্গে দু’একটা কথা বলছে। মাঝে মাঝে মন দিয়ে তাদের কথা শুনছে হাসছে। সে জানলোই না তার ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব তার সব রূপে মুগ্ধ হচ্ছে। চৌধুরী বাড়িতে শুধু আসফি আর শাহরিয়ার চৌধুরী থাকবেন। আসফিকে বলা হয়েছিল সবার সঙ্গে যেতে। সে রাগের বসে সরাসরি মানা করে দেয়। এখন অবশ্য আফসোস করছে। আসফি বেলকনি থেকে আবিদের গাড়ি বের হয়ে যেতে দেখল। আবিদকে অনেকদিন পর হাসিখুশি দেখল আসফি। এমনিতেই আবিদকে হাসিখুশি দেখলে তার শরীর জ্বলে। এখন তো আরো প্রিয়দর্শিনী আছে। প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে আবিদকে দেখলে তার রাগ উঠবে। এরচেয়ে দূরে থেকে প্লান করা যাক কীভাবে কী করে সবটা আটকানো যায়।
_
চৌধুরী পরিবারের সবাই ‘বিগ বাজারে’ এসেছে। অনুসা বেগম শপিংমলের সবচেয়ে বড় শাড়ির দোকান ‘জামদানি বিতানে’ গিয়ে শাড়ি দেখাতে বলেন। ‘জামদানি বিতানে’ সব রকমের দেশী বিদেশী শাড়ি, লেহেঙ্গা, সারারা পাওয়া যায়। দোকানের সবাই চৌধুরী পরিবারকে চেনে। অনুসা বেগম প্রায় কেনাকাটা এখান থেকেই করেন।আরহাম আর আবিদ দোকানের এক কোনায় সোফায় বসে আছে। বাকিরা সামনের সোফায় দেখা-শোনা করে বেশ কয়েকটি শাড়ি পছন্দ করলো। শিফনের নরম কয়েকটি শাড়ি কেনা শেষ। শেষে অনুসা বেগম দর্শিনীর জন্য বাসন্তী রঙের একটা জামদানি পছন্দ করলেন। দোকানে শাড়ি পড়াতে এক্সপার্ট একজন দর্শিনীর গায়ে শাড়ি মেলে ধরতে গেলে আবিদ উঠে দাঁড়ায়।
‘দাঁড়ান আমি করছি।’ ___বলে লোকটাকে সরিয়ে মেরুন রঙের একটা জামদানি দর্শিনীর গায়ে জড়িয়ে দেয়। বাসন্তী রঙের চেয়ে মেরুন রঙটা দর্শিনীকে বেশ মানিয়েছে। সবাই আবিদের পছন্দে মুগ্ধ হয়। আবার আবিদের এমন কান্ডের জন্য হাসাহাসি করতে ভুলেনি। দর্শিনীকে দেখে অনুসা বেগমের চোখ চিকচিক করে উঠে। ছেলের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘বাহ্! এই রঙ প্রিয়কে প্রচন্ড মানিয়েছে।’
পুস্পিতা শাশুড়ির কথায় হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে বলে,
‘তবে এটাই পড়িয়ে দেখান প্রিয়দর্শিনীকে।’
আবিদ দোকানে শাড়ি পড়ানো মহিলা এক্সপার্টদের খোঁজ করে। দোকানের একজন কর্মচারী হন্তদন্ত হয়ে একজন মহিলাকে ডেকে আনেন। চৌধুরী পরিবার হচ্ছে তাদের সবচেয়ে লাকি কাস্টোমার। তাদের জন্য বরাবর সুযোগ সুবিধা থাকেই। মহিলাটি এসে দর্শিনীর শাড়ির উপরে সুন্দর করে শাড়িটা পড়িয়ে দেখায়। দর্শিনী আবিদকে ইশারা করে ভালো লাগছে কিনা। আবিদ ঠোঁট মেলে পজেটিভ ইশারা করে। দর্শিনী আবিদের ইশারা পেয়ে অনুসা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে,
‘আমার এটাই পছন্দ হয়েছে আন্টি।’
অনুসা বেগম পুস্পিতা সবাই সর্মথন করে। শাড়ির কেনাকাটা শেষে আবিদ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পে করে দেয়। দু’তিনঘন্টা সময় নিয়ে দর্শিনীরা ব্যাগ, সুজ থেকে শুরু করে সমস্ত কসমেটিক আইটেম কিনে ফেলেছে। সবার বাজার করা শেষ এখন শুধু জুয়েলারি আইটেম আছে। আবিদ আর আরহান হাঁপিয়ে গেছে প্রায়। তারা সবাইকে শপিংমলের রেস্টুরেন্টে আসতে বলে এগিয়ে যায়। সবাই কেনাকাটা করে সবেমাত্র রেস্টুরেন্টে বসতেই আবিদ সবার পছন্দের খাবার অর্ডার দেয়। টুকটাক খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই শপিংমলের দ্বিতীয় তলায় জুয়েলারির দোকানে যায়। এখানেই দর্শিনীর জন্য জুয়েলারি অর্ডার দিয়েছিল অনুসা বেগম।
#চলবে
| আজ আরেক পর্ব থাকবে। ভুলত্রু’টি ক্ষমার নজরে দেখবেন।রিচেক করার সময় হয়নি। আগের মতো রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।🧡|