ছন্দময় সংসার পর্ব ৪

0
430

#_ছন্দময়_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_৪_

সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট,
মাত্র অফিস থেকে বের হলো কুশান। আজ সারাদিন অফিসে মন বসে নি কুশানের। অসহ্য এক যন্ত্রণা তাড়া করে বেড়িয়েছে তাকে। বার বার শুধু তরির কথা মনে পড়ছে।

গতকালের সব কাহিনি না জেনে তরি তাকে দোষারোপ করলো,, সে তো বার বার চেষ্টা করছিলো,, তরিকে বোঝানোর জন্য। কিন্তু,, তরি তাকে কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়ে এরকম একটা বদনাম তুলে দিলো মাথার উপর,, কেমনে পারলো তরি? এতোদিনের বৈবাহিক সম্পর্কে তরি কি তাকে এখনো চিনতে পারলো না?

গতকাল তরিকে মেরে কুশান নিজেই এক অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগেছে। ধুর! কেন যে মারতে গেলো তরিকে,, কিন্তু কি করবে কুশান? তরির মুখে ওরকম কথা যে সহ্য করতে পারে নি কুশান,, সামলাতে পারে নি নিজেকে,, তাই তো তরিকে মেরেছে কুশান।

ভালো লাগছে না কুশানের। তরি ভুল বুঝেছে তাকে,, তরিকে সত্যিটা জানানো উচিত। আর কিছু না ভেবে কুশান বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

বাসার সামনে চলে এসেছে কুশান। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দারোয়ান এগিয়ে আসে কুশানের দিকে। কুশান দারোয়ানের তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে মজিদ কাকা?”

মজিদ বলে ওঠে,
–” স্যার! ম্যাম আপনাকে এই চাবি টা দিতে বললো।”

কুশান কিছুটাহ ভ্রু কুচকিয়ে চাবিটা হাতে নেয়। মজিদ চলে যায়। কুশান আর কিছু না ভেবে দৌড়ে ফ্লাটের সামনে চলে যায়। ফ্লাটের দরজা লক করা। কুশান চাবি দিয়ে দরজা খুলে তাড়াতাড়ি ফ্লাটের ভেতরে চলে যায়।

চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কুশান অন্ধকার রুমেই চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। হাত বাড়িয়ে লাইট টা অন করে। আস্তে আস্তে নিজের রুমে চলে আসে কুশান। বিছানার উপর শিশিরের খেলনা ছড়ানো আছে।

কুশানের চোখ ছলছল করে উঠে। কুশানের হঠাৎ চোখ যায় ড্রেসিংটেবিলের আয়নার দিকে। একটা কাগজ আটকানো আছে আয়নায়। কুশান আস্তে আস্তে সেইদিকে এগিয়ে যায়। হাত বাড়িয়ে কাগজটি খুলে নেয় আয়না থেকে। কাগজের ভাজ খুলতেই দেখতে পায় তরির হাতে লেখা মুক্ত ঝরা অক্ষরে এক চিঠি। পড়তে শুরু করে কুশান…
___________________________________

কুশান,,,

আমি চলে যাচ্ছি। তুমি যেইটা চেয়েছিলে সেইটা পূর্ণ করে দিয়েই আমি চলে যাচ্ছি। তুমিই তো চেয়েছিলে,, আমি যেন তোমার জীবন ছেড়ে চলে যায়,, দেখো আজ আমি চলে গিয়েছি। তোমার সাজানো রঙিন ফ্লাটে কোথাও আমি নেই আজ।
তুমি রিমিকে ভালোবাসো,, এইটাই ছিলো আমার সাথে ঝামেলা হওয়ার মূল কারন,, তাই না? আমি জানি তোমার এই শুন্য ফ্লাট বেশিদিন শূন্য থাকবে না,, ডিভোর্স পেপারের সাইন সম্পূর্ণ হতেই,, নতুন কেউ এসে তোমার এই ফ্লাট পূর্ন করে দিবে। কোনো অভিযোগ রেখে যাচ্ছি না তোমার প্রতি। শুধু বলবো,, খেয়াল রেখো নিজের প্রতি।
আমি আমার সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছি। এই মূহুর্তে আমার সন্তান ছাড়া আমার আর দুনিয়ার উপর কিছু নেই। তুমি অন্ততো আমার সন্তানকে নিয়ে কোনো ঝামেলার সৃষ্টি করো না। কারন,, এই মুহুর্তে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র চাবিকাঠি হলো আমার সন্তান।
তুমি ভালো থাকো,, সুখে থাকো,, সব সময় দোয়া করি আমি,, আর ভবিষ্যতেও করবো। আমি আমার বাবার বাড়ি আপাততো চলে যাচ্ছি। তুমি ডিভোর্স পেপার রেডি করে আমার বাবার বাড়িই পাঠিয়ে দিও,, আমি সাইন করে দেবো।

ভালো থাকো,, তোমার সুখের ঠিকানা পরিপূর্ণ হোক,, যে ভালোবাসা আমি তোমাকে দিতে পারি নি,, তোমার ভালোবাসার মানুষ তোমাকে সেই ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিক।!!

ইতি
তোমার সন্তানের মাম্মাম
___________________________________

কুশান চিঠি টাহ টুকরো টুকরো করে ছুড়ে ফেলে দেয়। চুল টেনে ধরে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে কুশান। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে তার।


#_৩_দিন_পর_

–” তুই আর নানুভাই তিনদিন হয়ে গেলো আসলি,, জামাই বাবা একদিনও এলো না।”

তরির দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে ওঠে আহিয়া বেগম ( তরির মা )। তরি এখনো বাসায় কিছুই জানায় নি। তরি আস্তে করে বলে ওঠে,
–” আম্মু! আমি তো তোমাকে বলেছি,, এইবার বেশ কিছুদিন আমি এখানে থাকবো।”

–” তোর থাকার কথা কি আমি কিছু বলেছি? জামাইকে একদিন আসতে বল।”

–” ওর অফিসে অনেক কাজ আম্মু! ও আসতে পারবে না।”

কথাটাহ বলে তরি নিজের রুমে চলে যায়। আহিয়া বেগম তরির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করে মেয়েটা এই বাড়ি চলে আসলো,, সব সময় কেমন মন মরা হয়ে বসে থাকে। অনেক বার জিজ্ঞেস করেছেন তিনি,, কিছু হয়েছে কি না,, কিন্তু মেয়েটা কোনো উত্তর দেয় নি।

এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজ ভেসে আসতেই আহিয়া বেগম দরজা খুলে দিতেই অবাক হয়ে যান তিনি৷ তার সামনে কুশান দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু,, কুশানকে কেমন যেন ক্লান্ত মনে হচ্ছে তার। কুশানকে দেখে তিনি একটা হাসি দিয়ে মাথায় কাপড় টেনে নেন। কুশান একটু ইতস্তত করে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম! আম্মা!”

আহিয়া বেগম একটু হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা! তুমি এসেছো? কই সকালেও তো আমি তরিকে বললাম,, তোমাকে আসতে বলতে,, ও তো কিছু বললো না,, উল্টো বললো,, তোমার অফিসে নাকি অনেক কাজ আছে,, আসতে পারবে না।”

আহিয়া বেগমের কথায় কুশান কিছুটাহ ভ্রু কুচকায়। তাহলে কি তরি এখনো কাউকে কিছু জানায় নি? নিজেকে কোনোরকম সমালিয়ে কুশান বলে ওঠে,
–” আসলে,, আম্মা! তরিকেও আমি কিছু জানায় নি।”

–” ওহ! যাই হোক,, ভালো করেছো এসেছো। ভেতরে আসো।”

কুশান ভেতরে আসতেই কোথা থেকে শিশির দৌড়ে এসে কুশানকে জড়িয়ে ধরে। কুশানও শিশির কে কোলে তুলে নিয়ে,, চুমু দিতে থাকে। শিশির কুশানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” পাপা! জানো,, আমি তোমাকে অনেক মিস করেতি। অনেক,, অনেক।”

কুশান শিশিরের মুখে আরও কয়েকটা চুমু দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি বাবা!”

–” পাপা! তুমি এতো বিদি থাকো? মাম্মামকে যকনই বলি,, পাপাকে পোন দাও,, মাম্মাম তকনই বলে পাপা বিদি।”

–” আই এ্যাম সরি বাবা! আমি আর কখনো এতো বিজি থাকবো নাহ।”

–” প্রমিদ!”

–” প্রমিস!”

–” আই লাপ ইউ পাপা!”

কথাটাহ বলেই শিশির কুশানের মুখে পাপ্পি দেয়। কুশান ছেলেকে আদর করে বলে ওঠে,
–” আই লাভ ইউ ঠু,, বাবা!”

শিশির কুশানের কোল থেকে নেমে আবার খেলতে চলে যায়। আহিয়া বেগম কুশানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কুশান,, বাবা! তরি ওর রুমে আছে। তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নাও।”

–” জি! ভাইয়া কোথায়?”

–” অফিসে গেছে। আমি ফোন করে দিচ্ছি,, চলে আসবে।”

–” ঠিক আছে!”

কথাটা বলে কুশান তরির রুমের দিকে চলে যায়। আহিয়া বেগমও কিচেন রুমে চলে যায়,, একমাত্র জামাই এসেছে,, তার জন্য ভালোমন্দ রান্না না করলে চলে?

……………………কুশান তরির রুমে আসতেই দেখে তরি জানালার গিরিল ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কুশান রুমের দরজা লাগিয়ে দিতেই তরি শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে কুশানকে দেখে থমকে যায়। কুশান দরজা লাগিয়ে তরির দিকে তাকাতেই দেখে তরি অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

কুশান তরির দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়। তরি এখনো কুশানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কুশান তরির মুখোমুখি দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” সুখে আছো আমাকে ছাড়া? নাকি আমাকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে এসেছো?”

কুশানের এমন কথায় প্রচন্ড কান্না পায় তরির। কুশানের মুখই বলে দিচ্ছে তার যন্ত্রণার পরিমান। রাতে ঘুম না হওয়ার এক ক্লান্ত ছাপ কুশানের মুখে ভেসে উঠেছে। কুশান তরির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে ওঠে,
–” যে অন্যায় করে,, দোষী,, মানুষ তো তাকেও কিছু বলার সুযোগ দেয় তরি। কিন্তু,, তুমি তো আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলে না। নিজের মনের মতো করে আমাকে কথা শোনালে,, আর নিজের মনের মতো করে চলে এলে। আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলে না। এতোটাই অপরাধী আমি তোমার কাছে? কিন্তু,, আশ্চর্য আমার কোনো দোষই নেই। একবার তো আমাকে নিজের সম্পর্কে বলার সুযোগ দিবা তরি। কি সংসার করলাম আমরা ছয় বছর? যেখানে,, আমার নিজেরই দাড়ানোর মতো কোনো স্থান নেই।”

কুশানের এইসব কথায় তরির যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। কোনো ভুল করে ফেললো না তো সে? ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তরি। কুশান আবার বলে ওঠে,
–” কফিশপে আমাকে আর রিমিকে দেখে আমাকে সন্দেহ করলে,, একটিবার বিশ্বাস করে আমার কাছে জানতে চাইলে না,, আসল কাহিনি কি? নিজের মন মতো করে আমাকে ছোট করে কিভাবে কথা বললে? কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করে,, একটা চিঠি লিখে চলে এলে সব সম্পর্ক শেষ করে,, কিভাবে পারলে? আমাদের সন্তানের কথা ভাবলে না? শিশিরের কথা একবারও মনে হলো না তোমার? একটা বাবার থেকে তার সন্তানকে এইভাবে দুরে সরিয়ে দিতে চাইছিলে তুমি?”

কুশানের চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। ধুক করে উঠে তরির বুক। কতটা কষ্ট দিয়ে ফেললো সে মানুষ টাকে? কুশান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে আবার বলে ওঠে,
–” রিমির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই তরি! বিশ্বাস করো,, কোনো সম্পর্ক নেই। সেইদিন কফিশপে রিমির সাথে যখন আমাকে দেখেছিলে,, তখন যদি একবার ওখানে যেতে,, তাহলে ঘটনাটা আজ এই পর্যন্ত আসতো না। সেইদিন রিমি আমাকে বলেছিলো,, সে নাকি আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু বিশ্বাস করো তরি,, আমি ওর কোনো কথাকে প্রোশ্রয় দেই নি। উল্টো আমি ওকে আমার স্ত্রীর কথা শুনিয়েছিলাম। আমি কোনো পরকীয়ায় জড়িত না তরি! এতো টা নিম্ন চরিত্রের আমি না,, বিশ্বাস করো। ইনফ্যাক্ট,, আমি রিমিকে অন্য একজনের পি.এ তে ট্রান্সফার করে দিয়েছি। আমি একটা ছেলে পি.এ নিয়েছি। এইটাই সত্যি,, বিশ্বাস করো প্লিজ!”

তরির চোখ বেয়ে অজস্র পানি গড়িয়ে পড়ছে। একি করে ফেললো সে? অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ছে কুশানেরও। কুশান আবার বলে ওঠে,
–” আমি তোমাকে কখনো ডিভোর্সের কথা বলতাম না তরি! আসলে,, কয়েকদিন অফিসে এতো ঝামেলা চলছে,, খুব প্রেশারে ছিলাম আমি। তার উপর তোমার সাথে ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে ঝামেলা লেগেই আছে,, সব মিলিয়ে আমি খুব আউলা ঝাউলা হয়েছিলাম। তাই মুখ থেকে ওরকম কথা বেরিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু,, আমি মন থেকে বলিনি বিশ্বাস করো। একটা মানুষের তো ভুল হতেই পারে,, তাই না? তার জন্য কি তাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে? আমাকে আমার ভুল সুধরানোর সুযোগ দিবা না? চলে যাবা আমাকে ছেড়ে? তোমাকে ঐ কথা বলে আমিও ভালো ছিলাম না তরি!”

তরির এখন প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। কুশান নিজের চোখ মুছে আবার বলে ওঠে,
–” জানো তরি,, তুমি তো চলে এলে আমাদের সন্তানকে নিয়ে। জানো,, এই তিনদিন আমার কতো যন্ত্রণা হয়েছে? আমি এই তিনদিন অফিসেও যায় নি,, বাসায় গুমড়ে মরেছি একা একা। শিশিরকে খুব মিস করছিলাম,, বাসায় আছি,, অথচ আমার ছেলেটা আমার কাছে নেই। কেউ পাপা বলে জড়িয়ে ধরছে না,, ফোনে কার্টুন দেখার বায়না করছে না,, আধো বুলিতে কেউ হাজারো গল্প শোনাচ্ছে না,, আমার বুকের ভেতরটা হাহাকার করছিলো। কষ্ট হচ্ছিলো আমার অনেক। একটা বার আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারলে না তুমি? নিজের মনের মতো করে সব ছেড়ে চলে আসলে। আমাকে একদম সুখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে এসেছো,, তাই না?”

তরি আর সামলাতে পারে নাহ নিজেকে,, হুহু করে কান্না করে দেয়। তরি কান্না করতে করতে বলে ওঠে,
–” আই এ্যাম সরি,, কুশান! আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ! আমি আর কখনো এমোন করবো না। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি,, আমিও ভালো নেই বিশ্বাস করো। আই এ্যাম সরি! সরি!”

কুশান তরির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরে। কুশানের চোখ দিয়েও পানি গড়িয়ে পড়ছে। তরি তো কুশানের বুকে মাথা রেখে কুশানকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কান্না করে যাচ্ছে। কুশান তরিকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বলে ওঠে,
–” তরি! আমার আর তোমার মাঝে হাজার ঝগড়া হলেও,, কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যেও না প্লিজ! আমাদের মাঝে যা হবে,, সব কিছু ঐ ফ্লাটের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে,, প্লিজ তরি,, কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না। আমাদের সন্তানকে কারোর আদর থেকেই বঞ্চিত করো না প্লিজ! আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তরি! অনেক ভালোবাসি!”

কুশান তরিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তরির মুখ ধরে বলে ওঠে,
–” তরি! আমি তো মানুষ বলো,, আমি তো ভুল করতেই পারি,, আমি তো রোবট না,, আমি ভুল করলেই কি তুমি ছেড়ে চলে যাবে আমাকে? আমার সন্তানকে আমার থেকে আলাদা করে দিবে? আমি পারবো না থাকতে,, আমি মরে যাবো তরি!”

তরি তাড়াতাড়ি নিজের হাত দিয়ে কুশানের মুখ আটকিয়ে দিয়ে কান্না করতে করতে বলে ওঠে,
–” এই কথা আর একবারও তুমি বলবে না। আমি আর কখনো এরকম করবো না। প্রমিস!”

কুশান তরির চোখ মুছিয়ে দিয়ে নিজের কপালের সাথে তরির কপাল মিশিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি তোমাকে ভালোবাসি তরি! অনেক ভালোবাসি! আমি বিয়ের আগে কোনো সম্পর্কে জড়াই নি,, শুধু আল্লাকে বলতাম,, আল্লাহ! আমার জীবনে এমন একজন কে এনে দাও,, যাকে আমি মন প্রান উজাড় করে ভালোবাসতে পারি। আল্লাহ আমার কাছে তোমাকে এনে দিয়েছে,, আমিও আমার সবটুকু দিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছি। আর এখন আমি অন্য কারোর কাছে কিভাবে যাবো? পারবো না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে। আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি তরি!”

তরি কুশানের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমিও তো আমার এই পাগলটা কে অনেক ভালোবাসি! আমারও তো ভুল হয়ে গেছে। সরি! আর কখনো এমন করবো না।”

কুশান তরিকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে। এমন সময় দরজায় কেউ জোরে জোরে বাড়ি মারে আর বলে ওঠে,
–” পাপা! মাম্মাম!”

তরি আর কুশান একে অপরের থেকে সরে আসে। দরজার ঐপাশে যে তাদের রাজ্য আলোকিত করা রাজপুত্র। তরি তাড়াতাড়ি নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে নিয়ে দরজা খুলতেই ছোট্ট মায়া ভরা মুখটা দেখতে পায়। তরিকে দেখে শিশির বলে ওঠে,
–” মাম্মাম! তোমলা দলজা বন্ধ কলে কি কলছিলে? আমি খুজেই পাচ্চিলামনা তোমাদেল।”

কুশান এগিয়ে এসে শিশিরকে কোলে তুলে নিয়ে বলে ওঠে,
–” আই এ্যাম সরি বাবা! আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন হবে না।”

–” তত্যি?”

–” একদম!”

শিশির একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে কুশানের মুখে চুমু দেয়। কুশানও শিশিরের মুখে আদর করে দেয়। তরি এগিয়ে এসে একটু অভিমানী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” বাহ! দুইজন দুইজনকে আদর করছো আর আমি বাদ? শিশির,, পাপাকে পেয়ে মাম্মামকে আদর করা ছেড়ে দিলে?”

–” তলি মাম্মাম!”

কথাটা বলে শিশির কুশানের কোলে থেকেই তরির মুখে আদর করে দেয়। তরিও শিশিরের মুখে আদর করে দেয়। শিশির খিলখিল করে হেসে উঠে,, বাবা মায়ের আদর পেয়ে। তরি আর কুশান এক দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে সেই হাসি দেখতে থাকে। এই হাসি যেন দুনিয়ার সব সুন্দর দৃশ্যকেও হার মানিয়ে দেয় তাদের কাছে।।!!!!

#_চলবে……………🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here