#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_১৩
”আমি শুধু আপনারই ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব।সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছাতে আপনাকে চেয়েছি। এতো অধর্য্যবান কেনো আপনি? সময় হোক আপনার ইচ্ছে অবশ্যই পূরণ হবে।”
দর্শিনীর কথা কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্র আলহামদুলিল্লাহ্ বলে অগোচরে হাসলো আবিদ। অন্যদিকে এসব শুনে আহানাফের কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু কিছু করার ছিলো না। আবিদ ফোনটা রেখে আহানাফের দিকে ফিরে বলল,
‘বিশ্বাস হয়েছে নিশ্চয়?আশা রাখছি এবার নিজেকে সামলে নিবে এবং আমার দর্শিনীকে ভুলে যাবে?’
আহানাফ নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল আবিদের দিকে। সেই তাঁকানোতে রয়েছে একবুক পরিমান হতাশা, কাউকে না পাওয়ার ক’ষ্ট, কারো সৌভাগ্য দেখে নিদারুণ ব্যাথা। আহানাফ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চোখের পানি মুছে ফেলল,
‘আমি বাড়ি যাবো। আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিবেন প্লীজ।’
আবিদ আহানাফের করুণ অবস্থা বুঝতে পারছে। মায়া হলো আহানাফের জন্য।আহানাফ যেন কষ্ট না পায় এজন্য মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আবিদ। তারপর তার সঙ্গে যেতে বলে। আবিদ চেয়েছিল গার্ডদের দিয়ে আহানাফকে বাড়িতে পৌঁছে দিবে কিন্তু এখন সে নিজে পৌঁছে দিবে বলে ঠিক করলো। সেইফাঁকে আশরাফ মুহতাসিমের সঙ্গে দেখা করে কিছু আলোচনা সেরে নিবে।
___
কেঁটে গেছে চারদিন। আবিদের মাঝে দর্শিনীকে তীব্র ভাবে পাওয়ার স্বতঃপ্রণোদিত অনুভূতিরা গাঢ় হয়েছে।ঘটেছে নতুন ভাবে প্রণয়ের সুত্রপাত। আবিদের দর্শিনীর সঙ্গে কথা হয়েছে নিয়মিত। ব্যাস্ততা কাটিয়ে তবেই ফোন করার সুযোগ পায় আবিদ।অন্যদিকে প্রিয়দর্শিনী সারাদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে, আবিদের একটি ফোন কলের! সামনের শুক্রবারে তাদের বাগদান, হাতে রয়েছে দু’দিন। আবিদের অপেক্ষা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে না নির্নিমেষ। আবিদ দর্শিনীকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিতে বিচলিত, উদগ্রীব হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে আহানাফের বিষয়টি সবার থেকে পুরোপুরি গোপন করে ফেলেছে। আশরাফ মুহতাসিম কে কিছু বনোয়াট কথা জানিয়েছে। বিষয়টিকে আবিদ পুরোপুরি নিজের আয়ত্তে নিয়েছে যে কেউ আহানাফের ব্যাপারে জানতে পারবে না।সেদিনের পর থেকে আহানাফও প্রিয়দর্শিনীকে ভুলে যেতে ক্রমশ চেষ্টা করছে। এখন প্রিয়দর্শিনী তার জন্য নিষিদ্ধ। যদিও প্রিয়দর্শিনী আহনাফের প্রথম ভালোলাগা, বা এরচেয়েও প্রগাঢ় অনুভূতি হয়তো ভালোবাসা।তবুও কি এতো সহজে ভুলে যাওয়া যায়?কিন্তু চেষ্টা করে সেটা বুকের ভিতর দমিয়ে রাখতে পারবে অনায়াসে।
আশরাফ মুহতাসিম সকাল সকাল জিলার উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছেন, উদ্দেশ্য মেয়ের বাগদান হবে দুইদিন ব্যাস্ততা থাকবে এজন্য বেশকিছু কাজ আগেই সেরে ফেলবেন। এদিকে উজান অফিসে যাবে এজন্য তৈরি হয়ে বসে আছে। প্রজ্জ্বলিনীর সকাল থেকে শরীরটা খারাপ পেটে মৃদু ব্যাথা হচ্ছে। দু’বার বমি করেছে! উজান অফিস যেতে চায়নি প্রজ্জ্বলিনীকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রজ্জ্বলিনী বাঁধ সাধে। প্রজ্জ্বলিনী উজানকে বলে দিয়েছে প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে হসপিটাল যাবে উজান প্রথমে আপত্তি করলেও পরে মেনে নেয়। এদিকে প্রিয়দর্শিনী খাবার নিয়ে এসেছে অনেকক্ষণ। বোনের পাশে বসে জিগ্যেস করছে কোন সমস্যা কিনা প্রজ্জ্বলিনী কিছু বলছে না শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। প্রিয়দর্শিনী বোনের সামনে খাবার তুলে ধরে। প্রজ্জ্বলিনী দেখল গরম গরম খিচুড়ি সঙ্গে খাসির কষা মাংস। প্রজ্জ্বলিনীর সবচেয়ে পছন্দের খাবার। প্রজ্জ্বলিনীর খিদে পেয়েছে কিন্তু খাওয়ার পর আবার বমি হয়ে যাবে এজন্য খেতেও পারছে না। উজান রুমে আসে জুরুরি ফাইল নিতে। এসেই দেখে প্রজ্জ্বলিনীকে খাবারের জন্য জোরাজুরি করা হচ্ছে। উজান মৃদু রাগ দেখিয়ে প্রিয়দর্শিনীর উদ্দেশ্যে বলে,
‘রেখে দাও রেড রোজ! ওর খেতে হবে না। তোমার বোন চায় আমার ছেলে না খেয়ে শুকিয়ে যাক।’
প্রজ্জ্বলিনী উজানের কথায় তীব্র অভিমান খুজেঁ পেলো। প্রিয়দর্শিনী অসহায় হয়ে দুজনের দিকে তাঁকায়। প্রজ্জ্বলিনী ঠোঁট উল্টে ফেলে। উজান ফাইল নিয়ে যেতে যেতে আবার ফিরে আসে। প্রজ্জ্বলিনী এখনো উজানের দিকে তাঁকিয়ে রয়েছে। উজান প্রজ্জ্বলিনীর কাছে এসে প্রিয়দর্শিনীর দিকে তাঁকিয়ে বলে,
‘চোখ বন্ধ করো তো রেড রোজ!’
প্রিয়দর্শিনী অবাক হয়ে বলে,
‘কেনো ভাইয়া?’
‘উহুম! কোন প্রশ্ন নয় যা বললাম সেটাই করো।’
প্রিয়দর্শিনী চোখ বন্ধ করতেই উজান প্রজ্জ্বলিনীর ঠোঁটে চুমু খেয়ে ইশারায় খাবার খেতে বলে চলে যায়। প্রজ্জ্বলিনী উজানের যাওয়ার পথে তাঁকিয়ে হেসে ফেলে। প্রিয়দর্শিনী চোখ বন্ধ করে বলে উঠে,
‘আমি চোখ খুললাম কিন্তু।’
প্রজ্জ্বলিনী একটু লজ্জা পায়। মাঝে মাঝে উজানের ছেলে মানুসি দেখে নিজেই হতবাক হয়। প্রজ্জ্বলিনী হাসতে হাসতে বলে,
‘চলে গেছে উজান! এবার তুই চোখ খুলতে পারিস।’
প্রিয়দর্শিনী যেন হাঁপ ছেড়ে বাচে। প্রিয়দর্শিনী নিশ্চিত উজান প্রজ্জ্বলিনীকে চুমু দেওয়ার জন্যই চোখ বন্ধ করতে বলেছে।উজান সবসময় এমনটা করে।বড্ড ভালোবাসে প্রজ্জ্বলিনীকে। প্রিয়দর্শিনী প্রজ্জ্বলিনীকে খাইয়ে রেডি হতে চলে যায়। আজকে বোনের সঙ্গে হসপিটালে যেতে হবে।বোনের সামান্য কষ্ট সহ্য করতে পারেনা প্রিয়দর্শিনী। এতটাই ভালোবাসে প্রজ্জ্বলিনীকে।
___
চৌধুরী বাড়িতে,
পুস্পিতা আর অনুসা বেগম সবাইকে খাবার সার্ভ করছে।
সবাই ডাইনিং টেবিলে ব্রেকফাস্ট করছে। শাহরিয়ার চৌধুরী সহ বাড়ির সব পুরুষ সদস্যরা অফিসের ফর্মাল গেটআপে। আবিদ শিক্ষা বোর্ডে যাবে এজন্য তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠে পরে। আবিদ,আদিবাকে তাড়া দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়। আদিবা আবিদের সঙ্গেই কলেজ যাবে। আবিদ আদিবাকে জিলাতে নামিয়ে তারপর শিক্ষা বোর্ড রওনা দিবে।আদিবা পরিপাটি হয়ে তৈরি! পরক্ষণে ব্যাগটা নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বেড়িয়ে পরে। একে একে চৌধুরী বাড়ির সব পুরুষ সদস্যরা বেড়িয়ে পরে।
এদিকে অনুসা বেগম আর পুস্পিতা একসঙ্গে নাস্তা করে তৈরি হয়।তারা আজ শপিং এ যাবে। বাগদানের জন্য দু’দিন ভর চলবে তাদের শপিং। আদিবা তাদের সঙ্গে যেতে চেয়েছিল কিন্তু কলেজে থেকে ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন। যেহেতু জিলার প্রিন্সিপাল আশরাফ মুহতাসিম। এবং তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক হচ্ছে এজন্য ছুটি পেতে সমস্যা হবেনা শুধু দেখা করে একটা সিগনেচার নিবে।
–
প্রজ্জ্বলিনী, প্রিয়দর্শিনী বাড়ির গাড়িতে করেই হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। প্রিয়মা বেগম ড্রাইভার আব্দুল রহমাকে সাবধানে চালাতে বলেন। প্রিয়মা বেগম আজ দুইমেয়ের সঙ্গে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু বাড়িতে অনেক কাজ আছে। দু’দিন পর বাগদান হবে পুরো বাড়ি ঝকঝকে পরিস্কার করার ব্যাপার আছে। তাছাড়া প্রজ্জ্বলিনীর চেকআপে দেরী হবে এদিকে আহমেদ মুহতাসিম বাড়িতে একা থাকবেন সব ভেবে তিনি থেকে যান। প্রিয়মা বেগমের ভরসা আছে প্রিয়দর্শিনী একাই যথেষ্ট বোনকে সামলানোর জন্য।
প্রজ্জ্বলিনীদের গাড়িটা মেডিপ্যাথের সামনে দাড়াঁলে প্রিয়দর্শিনী প্রজ্জ্বলিনীকে সাবধানে গাড়ি থেকে বের করে দাঁড়াতে বলে, গাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যাগটা নামাতে থাকে। প্রজ্জ্বলিনী টুকটুক করে হেঁটে হসপিটালের সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রিয়দর্শিনী প্রজ্জ্বলিনীর পরপরই আসছে। হঠাৎ প্রজ্জ্বলিনী অসাবধানতা বশত শাড়ীতে বেঁধে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। প্রিয়দর্শিনী ‘আপু সাবধানে’ বলে মৃদু চিৎকার করে তৎক্ষণাৎ ধরে ফেলে। প্রজ্জ্বলিনীর হৃদয় চমকে উঠেছে। একটুর জন্য বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারতো।প্রজ্জ্বলিনীর নিশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে। যদি বড় ধরনের ক্ষতি হতো তবে উজানকে কিভাবে সামলাতো। প্রজ্জ্বলিনীর চোখ ভিজে উঠেছে গলা শুকিয়ে চৌ’চি’র। প্রিয়দর্শিনী বোনের অবস্থা বুঝে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে প্রজ্জ্বলিনীকে পানি খাইয়ে দেয়। ড্রাইভার আব্দুল রহমান গাড়ি পার্ক করে এদিকে এগিয়ে আসে। প্রিয়দর্শিনী ব্যাগটা আব্দুল রহমানের হাতে দিয়ে প্রজ্জ্বলিনীকে জরিয়ে বলে,
‘আমি সময় মতো না ধরলে কি হতো আজ? তুমি আমার জন্য একটু অপেক্ষা করতে পারলে না আপু?তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি উজান ভাইয়াকে কি জবাব দিতাম?সবাই তো তোমাকে আমার ভরসায় পাঠিয়েছিল।’
প্রজ্জ্বলিনী দেখল প্রিয়দর্শিনী তাকে জরিয়ে কাঁদছে। প্রজ্জ্বলিনী বোনের চোখের পানি মুছিয়ে দেয়। তারপর বোনকে আদর করে বলে,
‘আমার ভুল হয়ে গেছে প্রিয়! প্লীজ কান্না করিস না। আমি অনেক সাবধানে হাটঁছিলাম বুঝতে পারিনি এমনটা হবে।’
প্রিয়দর্শিনী অভিমানে নিশ্চুপ হয়ে প্রজ্জ্বলিনীর চোখের পানি মুছে দেয়। প্রজ্জ্বলিনী ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
‘প্লীজ উজানকে কিছু বলিস না! অনেক টেনশন করবে আমাকে নিয়ে।’
প্রিয়দর্শিনী জানে উজান কতটা সিরিয়াস প্রজ্জ্বলিনীকে নিয়ে। এই ঘটনা জানতে পারলে প্রজ্জ্বলিনীকে বিছানা ছেড়ে নামতে দিবেনা। এতটাই ভালোবাসে প্রজ্জ্বলিনীকে। প্রিয়দর্শিনী বোনের উদ্দেশ্যে বলে,
‘ভাইয়াকে কিছু বলবো না। চলো এখন! তোমার সিরিয়াল চলে আসবে অনেক দেরী হয়ে গেল।’
#চলবে
| প্রিয় পাঠক ভুলত্রু’টি ক্ষ’মার নজরে দেখবেন। রিচেক দেইনি অবিরাম ভালোবাসা :’)🌺❤|