#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মৌরীকে নিজ হাতে তার পছন্দের খাবার খাইয়ে দিচ্ছেন আতিফা বেগম। আর মৌরী ভীষণ তৃপ্তি সহকারে সেই খাবার গুলো খাচ্ছে। খেতে খেতেই মনের আনন্দে বলছে,
‘জানো বড়মা এই ক’দিন তোমার হাতের খাবার না খেয়ে আমার মুখের রুচি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছিল৷ আজ আবার সেই রুচি ফিরে পেলাম।’
“তোর এখানে সবাইকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হয় তাই না রে মৌরী?”
“হ্যাঁ, কষ্ট তো হয়ই৷ তবে সবার জন্য না শুধু আর শুধুমাত্র তোমার জন্যই আমার কষ্ট হয়। বাকি কারো জন্য আমার কষ্ট হয় না।”
“প্লাবণের জন্যেও না?”
মৌরী কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকে। অতঃপর দৃঢ় ভাবে বলে,
“না। ওর জন্য আমার বিন্দু মাত্র ক’ষ্ট হয়না।”
আতিফা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“আচ্ছা যদি আমার ছেলেটা নিজের ভুল বুঝতে পেরে তোর কাছে এসে ক্ষমা চায় তাহলে কি তুই ক্ষমা করবি।”
“তুমিই বলো বড়মা, আমার কি ওকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ।”
“যদি একজন মা হয়ে আমি তোকে উত্তরটা দেই তাহলে বলব, হ্যাঁ তোকে অবশ্যই ওকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ। কিন্তু কি বল তো আমি একজন মা হয়ে নয়,একজন নারী হয়ে বলছি তুই প্লাবণকে কক্ষনো ক্ষমা করিস না। ও তোকে বার বার অপমান করেছে, তোর চরিত্রের দিকে ও আঙুল তুলেছে। এত কিছুর পরেও ক্ষান্ত হয়নি। তোকে আর তোর বাবাকে বাড়ি ছাড়া করেছে।”
“আমি কখনোই ওকে ক্ষমা করব না।”
আতিফা বেগম মৌরীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
“তুই একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস। আমার ছেলে তোর যোগ্য নয়। তুই অনেক ভালো কাউকে ডিজার্ভ করিস। যেই সম্পর্কে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা থাকে না সেই সম্পর্কে থাকা নিরর্থক। আর হ্যাঁ, ক্ষমা মহৎ গুণ হলেও ক্ষমা হয় ভুলের জন্য অপরাধের জন্য নয়। স্বয়ং আল্লাহও তার বান্দাদের উপর জুলুম কারীদের ক্ষমা করেন না যখনো পর্যন্ত না যেই বান্দার উপর জুলুম করা হয়েছে সে তার অপরাধীকে ক্ষমা করে। ”
মৌরী মৃদু হাসি হাসে। তার সেই হাসির মাঝে যেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এক চেতনা লুকিয়ে ছিল।
★★
আতিফা বেগম চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। মৌরী তাকে একটু এগিয়ে দিতে আসে। বিদায় নেওয়ার আগে মৌরীকে জড়িয়ে ধরেন তিনি। মৌরী অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় দেয় নিজের বড়মাকে। তবে যাওয়ার আগে আতিফা বেগম মৌরীকে বলে যান,
“তুই আর পিছনে ফিরে তাকাবি না। আর ৪ মাস গেলে তোদের কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের ৬ মাস পূর্ণ হতেই তুই কোর্টে পেপারস পাঠিয়ে দিবি। মনে রাখবি তোর আর দূর্বল হলে চলবে না। শক্ত হতে হবে তোকে।”
“হ্যাঁ, বড়মা। আমি অনেক শক্ত করার চেষ্টা করব নিজেকে।”
“মনে রাখবি নরম মাটিতে সবাই আঘাত করতে পারে যেটা শক্ত মাটিতে পারে না।”
মৌরী মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়।
প্লাবণ বিদ্ধস্ত অবস্থায় বাড়িতে ফিরলো। মৌরীর প্রতি করা অধ্যায় গুলো আজ সে স্পষ্টত অনুভব করতে পারছে। মৌরী শুধু মাত্র তার জন্য বিনা দোষে কত কি সহ্য করেছে সেটা ভেবেই প্লাবণের কান্না পাচ্ছে। এরমধ্যে আতিফা বেগম বাড়িতে ফিরে আসেন। তাকে দেখা মাত্রই প্লাবণ ছুটে যায় তার দিকে। প্লাবণকে নিজের দিকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে আতিফা বেগম চরম অবাক হন। বলেন,
“কি হয়েছে তোর প্লাবণ? তোকে এমন লাগছে কেন?”
“আম্মু তুমি কি আজ মৌরীর ওখানে গিয়েছিলে?”
“হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। দেখ তোকে আমি আগেও বলেছি তুই চা বা না চা তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি মৌরীর সাথে যোগাযোগ রাখব।”
“আমাকে মৌরীর ঠিকানা টা দিতে পারবে তুমি প্লিজ?”
“কেন? ওর ঠিকানা নিয়ে কি করবি তুই? ওকে কি আরো কষ্ট দেওয়া বাকি আছে? ওকে দেওয়া কষ্টের ষোলকলা কি পূর্ণ হয় নি?”
“তুমি আমায় ভুল বুঝছ আম্মু। আমি ওকে অপমান করতে নয় বরং ওর কাছে ক্ষমা চাইতে যাব।”
আতিফা বেগম বিদ্রুপাত্মক হেসে বলেন,
“ক্ষমা…আজ হঠাৎ মৌরীর মতো চরিত্র হীনা মেয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন পড়ল কেন?”
“প্লিজ আম্মু আমাকে আর লজ্জা দিও না। আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছি। ঐ সুমা মৌরীকে ফাসিয়েছিল।”
“আমি তো আগেই বলে ছিলাম সত্য এক সময় সামনে আসবেই। কিন্তু কি জানিস তো, সময় গেলে আর সাধন হয় না। এখন তুই যা যা করেছিস মৌরীর সাথে এত কিছুর পর আর এটা আশা করিস না যে মৌরী তোর জীবনে ফিরে আসবে।”
“মৌরী ফিরবে,,ওকে ফিরতেই হবে। কারণ ও আমাকে ভালোবাসে।”
“মৌরী উত্তরার *** এলাকার *** নং ফ্ল্যাটে থাকে। তোকে ঠিকানা টা আমি বললাম। এখন তুই যা, গিয়ে যা পারিস কর। কিন্তু আমি মন থেকে চাই যে মৌরী তোকে ক্ষমা না করুক। অন্তত আমি মৌরীর যায়গায় থাকলে তোকে ক্ষমা করতাম না কখনোই। তবে তুই একটা কথা ঠিক বলেছিস মৌরী তোকে অনেক ভালোবাসতো৷ এখন কতোটা ভালোবাসে জানি না। যদি এখনো ও তোকে অনেক ভালোবাসে তাহলে তো তোর জন্য ভালোই। আর নাহলে…”
আর কিছু না বলে আতিফা বেগম নিজের রুমের দিকে চলে যান। আর প্লাবণ বেরিয়ে পড়ে মৌরীর বাসার ঠিকানায়।
★★★
পরপর কয়েকবার মৌরীর ফ্ল্যাটের সামনে এসে কলিং বেল বাজায় প্লাবণ। মৌরী কেবল পড়তে বসেছিল৷ সামনেই তার এডমিশন টেস্ট। এখন অনেক পড়া বাকি। তাই সে বিরক্তির সাথে উঠে দাঁড়ায় অতঃপর দরজাটা খুলে দেয়। দরজা খুলে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে প্লাবণকে দেখে হতবিহ্বল হয়ে যায়। ক্রোধে লাল হয়ে যায় তার মুখ। প্লাবণের মুখের উপর দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনই প্লাবণ জোরপূর্বক ভিতরে ঢুকে আসে।
মৌরী সশব্দে চিৎকার করে বলে,
“কেন এসেছ এখানে তুমি?”
“আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরে তোর কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি মৌরী।”
মৌরী অট্টহাসি দেয়। হাসতে হাসতে বলে,
“কোন মুখে তুমি ক্ষমা চাইতে এসেছ? তুমি কি করে ভাবলে এত কিছুর পরেও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো?”
“আমি জানি আমি ভুল করেছি। কিন্তু আমি তো ভুলটা বুঝতে..”
“ভুল নয় অপরাধ করেছ তুমি। যেই অপরাধের কোন ক্ষমা হয়না।”
“আমাকে কি আর একটা সুযোগ দেওয়া যায় না মৌরী?”
“কখনোই না।”
প্লাবণ মৌরীর পায়ের কাছে বসে পড়ে। পা ধরে বলে,
“প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে।”
মৌরী দ্রুত সরে দাঁড়িয়ে বলে, “এসব করে কোন লাভ হবে না। ভালোয় ভালোয় এখান থেকে চলে যাও নাহলে আমি সিকিউরিটি ডাকতে বাধ্য হবো।”‘
এরমধ্যে আজাদ চৌধুরীও চলে আসেন। প্লাবণকে দেখে তিনি খুব রেগে যান। উত্তেজিত হয়ে বলেন,
” তোমার সাহস তো কম নয় এত কিছুর পর তুমি এখানে এসেছ।”
“চাচ্চু…”
“কোন কথা বলিও না। বেরিয়ে যাও বলছি”
প্লাবণ হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসে। তবে সে পণ করে এত সহজে দমে যাবে না। যে করেই হোক মৌরীকে আবার নিজের জীবনে ফেরাতে চায় প্লাবণ।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨