#প্রেয়সী
#নন্দিনী_নীলা
২৯.
তিন্নি বিস্মিত নয়নে মধু আর মিতুল কে এগিয়ে আসতে দেখে ওদের দিকে। দুজনেই খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে বলতে আসছে। তিন্নি ফুয়াদ এর দিকে চেয়ে দেখে ফুয়াদের চোখ ভরা ও বিষ্ময়।
তিন্নি মধুকে জিজ্ঞেস করল,,” কোথায় গিয়েছিলি?”
” এইতো পাশেই।”
” মিতুল আপুর সাথে কেন গেলি? সে তোকে পছন্দ করে না জানিস তো?”
মধু রহস্য করে হেসে বলল,,” বাদ দে তো। রাহী আপু বিয়ের শাড়ি চুজ করতে পেরেছে তো?”
তিন্নি সন্দেহ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদ মধুর দিকেই তাকিয়ে আছে। মধু ভুল করেও ওর দিকে তাকাল না। মিতুল এসেই রাহীর কাছে চলে গেল। ওর সাথে নিজেও বিয়েতে পরার জন্য ড্রেস চুজ করছে।
পর পর সময় গুলো অদ্ভুত বিষ্ময় নিয়ে কাটাল ফুয়াদ। মিতুল বিয়ের তোরজোর শুরু হতেই ওদের বাসায় এসে জায়গা করে নিয়েছে। আর এই সময়টা মধু আর মিতুল কে এক সাথেই দেখা যাচ্ছে বেশি। এমন সুসম্পর্ক ওদের কিভাবে হয়ে গেল ফুয়াদের মাথায় ঢুকছে না। মিতুল তো মধুকে একটু সহ্য করতে পারত না এখন সেই মধুর সাথে এতো মাখামাখি নেওয়াই যাচ্ছে না।
ওদের মধ্যে এতোই ভালো সম্পর্ক হয়েছে যে গতকাল মিতুল মধু কে খাইয়ে পর্যন্ত দিয়েছে এটা করেছে তাও মেহেদী দিয়ে মধু খেতে পারছিল না তাই মিতুল ওকে খাইয়ে দিয়েছে।
ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে ফুয়াদ ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্র। দুই ভাই চন্দ্র বিলাশ করতে এসেছে ছাদে।
” ভাই বলোতো মধুর সাথে মিতুল এর এতো সুন্দর সম্পর্ক হলো কি করে?”
সমুদ্র নিজেও কনফিউজড। মিতুল যে পরিমান রেগে ছিল ট্যুর থেকে ফেরার দিন ও তো ভেবেই নিয়েছিল বাসায় এসেই একটা ঝামেলা সৃষ্টি করবে। মধুর সাথে আরো লেগে থাকবে। এখন যে লেগে থাকছে না তা নয়। যেটা শত্রু হয়ে থাকার কথা ছিল সেটা মিত্র হওয়াতে ও নিজেও ভীষণ কনফিউজড।
“ট্যুর থেকে যেদিন ফিরলাম। গাড়িতে মিতুল কি পরিমাণ বাড়াবাড়ি করছিল। আর আসার পর তার একটু রাগ ওর চোখে আমি দেখতেই পেলাম না। ওর মাথায় অন্য পরিকল্পনা ঘুরছে।”
” যা খুশি করুক আই ডোন্ট কেয়ার। শুধু মধুর কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করলে ওকে আমি আমার খারাপ চেহারাটা দেখায় দেব সুন্দর করে।”
” অল্পতে মাথা গরম করার ছেলে তো তুই নস। মিতুল ক্ষতি করবে না মধুর। তাই মাথা ঠান্ডা রাগ। ওতো সাহস ওর নাই। মধুকে নিজের কাছে টেনে তোর থেকে দূরে সরাতে চাইছে এটাই ওর পরিকল্পনা। রাগ করে কাজ হাসিল করতে না পেরে ইমোশনাল টর্চার করবে।”
ফুয়াদ ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি এনে বলল,,” মিতুলের ধারণা মতে মধু আমার খুব কাছে আছে তাই না?”
সমুদ্র নিজেও হেসে দিল।
” ও তো আর জানে না। মধু তোকে রিজেক্ট করে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে।”
ফুয়াদ উত্তর দেওয়ার আগেই ওদের মাঝে এসে উপস্থিত হলো মধু, মিতুল, রাহী তিন্নি,।
এসেই রাহী বলল,,” ভাইয়া আমার লং ড্রাইভে যেতে চাই। গতকাল তো সবাই কমিউনিটি সেন্টারের চলে যাব। তারপর আমি বিবাহিত হয়ে যাব। আজকে শেষ বারের মতো চলো সবাই একটু রাতের নির্জন রাস্তার হাওয়া খেয়ে আসি।”
রাত দশটায় বোনদের এমন অবদার শুনে সমুদ্র আর ফুয়াদ দুজনেই কপাল কুচকায়।
ফুয়াদ তো মুখের উপর মানা করে দেয় ওরা গিয়ে ধরে সমুদ্র কে। সবাই সমুদ্র কে নিয়ে ব্যস্ত এই সুযোগে ফুয়াদ মধু কে টেনে সবার থেকে আলাদা করে নেয়। মধু আচমকা কারো হাতের স্পর্শে চিৎকার করতে যাবে তার আগেই ফুয়াদ ওর মুখ চেপে ধরে দূরত্বে চলে আসে সবার থেকে। মধু ফুয়াদের হাতে কামড় দিতেই ফুয়াদ চোখ মুখ খিচে হাত সরিয়ে নেয়।
” রাক্ষুসী একটা।”
বলেই হাতের তালু অন্ধকারেই দেখতে চায়। একহাতে মধুর কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেছে। যাতে মধু পালাতে না পারে। মধু দুই হাতে ওর হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য ছটফট করে যাচ্ছে।
ফুয়াদ মধুর ঘাড়ে হাত রেখে ওর মাথা সোজা করে দেয়। জোছনার আলোয় মধুর মুখের দিকে গাঢ় গভীর দৃষ্টি মেলে তাকায়। মধু ঢোক গিলে মুখ কাচুমাচু করতে থাকে।
দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত গলায় বলে,,” ছাড়ুন আমাকে। অসভ্যের মতো সবার মাঝে থেকে এমন টেনে আনলেন কেন?”
” তোমার সাথে মিতুলের এতো কিসের মাখোমাখি?”
” বলব না!”
” বলো, মিতুল কিন্তু ডেঞ্জারাস।”
” আপনার থেকে কম।”
বলেই মধু আবার নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করতে লাগল। ফুয়াদ ওর কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,,” ওর থেকে দূরে থাকবে মনে থাকে যেন!”
বলেই ফুয়াদ একহাত উঁচু করে মধুর মুখের দিকে বারিয়ে দিল। মধু ওর হাতের দিকে তাকিয়ে ভরে গেল।
ফুয়াদ ওর কপালে একটা টোকা দিয়ে বলল,” মাথায় রাখবে আমার কথাটা। মিতুল এর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবে।”
মধু জেদি গলায় বলল,,” আরো বেশি করে মেশবো আপনার কি? আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নয়। আর আমার উপর অধিকার দেখাতে আসবেন না।”
ফুয়াদ খামচে ধরল মধুর কোমর মধু ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল। দুহাতে ফুয়াদের বুকের কাছে ট্রি শার্ট শক্ত করে ধরে দাঁত দিয়ে চেপে ধরল নিজের নিচের ঠোঁট।
ফুয়াদ অন্ধকারেই ওর টলমল চোখ দেখতে পেল। ফুয়াদ তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিল কোমর থেকে। আর নরম স্বরে বলল,,” আই এ্যাম সরি। আমি কিন্তু ব্যথা দিতে চায়নি। তুমি সহজেই আমার কথা মেনে নিলে এটা হতো না।”
মধু ওর ট্রি শার্ট ভেদ করে আঙুল ঢুকিয়ে নখের আঁচড় কেটে দিল বুকে। চোখ মুখ কঠিন করে ওর বুকে খামচে দিতে লাগল।
ফুয়াদ তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে টেনে নিল। মুখে যন্ত্রণার সাফ এনে বলল,” তোমার নখ কাটতে হবে সুইটহার্ট। এই নরম তুলতুলে আঙুলে এই ডাইনির মতো নখ গুলো খুব পিড়া দায়ক।”
ফুয়াদ মধুর দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মধু হাত ছাড়ানোর জন্য হাত মুচড়া মুচড়ি করছে। ফুয়াদ মধুর ডান হাত উঁচু করে ওর মুখের সামনে এনে প্রত্যেক আঙুলে ঠোঁটের স্পর্শ করতে লাগে। মধু ফুয়াদের স্পর্শ পেয়ে নড়াচড়া অফ করে গাঁট হয়ে যায়। নগ্ন পা দ্বারা ফ্লোর খামচে ধরে। ফুয়াদ বেহায়ার মতো ওর দুইহাতের দশ আঙুলে মাথায় সময় নিয়ে ঠোঁটের স্পর্শ দেয়। মধু দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে ফুয়াদ এর থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে। ওর বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা হয়। সারা শরীর থরথরিয়ে কাঁপতে থাকে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। ফুয়াদের নিজের কাজ হতেই হাত ছেড়ে দেয়। মধু ছাড়া পেতেই হাঁপাতে থাকে আর এক সেকেন্ড বিলম্ব করে না। এক দৌড় লাগায়।এক দৌড়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে আসে। ওর দৌড় দেখে মিতুল সহ সবাই অবাক হয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ফুয়াদ মধুর পেছনেই বেরিয়ে এল। সবাই মধুর থেকে চোখ সরিয়ে তাকাল ফুয়াদের দিকে। ফুয়াদ ওদের কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়াল। সবাইকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল,,” কি ব্যাপার? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন সবাই আমার দিকে?”
রাহী বলল,,” মধুর কি হলো? ওভাবে ছুটে গেল কেন?”
ফুয়াদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,” আমি কিভাবে জানব? ও কেন ছুটে গেল ওকেই জিজ্ঞেস কর।”
ফুয়াদ রেলিং এ উঠে বসে সিগারেট ধরাতে লাগল। সমুদ্র বাদে সবাই চলে গেল। মিতুল যাওয়ার আগে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গেল ফুয়াদ এর দিকে। ফুয়াদ মিতুলের সেই দৃষ্টি দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল।
রাতের লং ড্রাইভে যাওয়া টা একাই ক্যান্সেল হয়ে গেল। পরদিন সবাই কমিউনিটি সেন্টারের এসে হাজির হলো। তিন দিনের জন্য এই সেন্টার বুকিং করা হয়েছে। গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত।
দুপাশ আলাদা করে একপাশে মেয়ে পক্ষ অপরপাশে ছেলে পক্ষের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাহী নাঈমের সাথে ফোনে কথা বলছে। কমিউনিটি সেন্টারের বাইরে খুব সুন্দর একটা বাগান আছে। নাঈম এই রাত বারোটায় রাহী কে সেখানে গিয়ে দেখা করতে বলছে। রাহী ভয়ে একা বের হতে পারছে না। এতো রাতে দেখা করার ব্যাপার টা কেউ জেনে গেলে মান সম্মান সব শেষ হবে। ওরা যা কাজিন সবাই পচিয়ে দিবে। কিন্তু নাঈম দেখা না করে যেন আজকে ছাড়বেই না। আগামীকাল ওদের হলুদ অনুষ্ঠান আজকে কাজিন রা মিলেই মেহেদী লাগিয়েছে হাতে। রাহী, তিন্নি, মধু, একই রুমের শুয়েছে। মিতুল আছে ওর বোনের সাথে অন্য রুমে।
” এখন দেখা করা সম্ভব না প্লিজ কাল সকালে তো দেখা হবেই। মেহেদীর ডিজাইন আগামী কাল কেই দেইখেন।”
নাঈম বলল,,” প্লিজ একটু আসো না। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায়। কেউ খেয়াল করতে পারবে না সবাই এখন ঘুমে। এই জায়গার পরিবেশ টাও খুব রোমান্টিক একটু আসো না সোনা।”
রাহী নাঈমের এতো অনুরোধ ফেলতে পারল না। আচ্ছা দেখছি বলে ফোন কেটে দিল। আস্তে আস্তে উঠে বসল। মাঝখানে ও শুয়েছে দুই কোনায় তিন্নি আর মধু। ও খুব সাবধানে দুজনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে দেখল ঘুম কতটা গভীর। ভারি নিঃশ্বাস ফেলছে দুজনেই ও আস্তে পা টিপে টিপে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। দরজার ছিটকিড়ি খুব সাবধানে খুলে আলতো চাপিয়ে বাইরে পা রেখেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ভয়ে ওর হাত পা কাঁপছে। কেউ টের পেলে কি লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরতে হবে।
রাহী দরজা চাপিয়ে বেরিয়ে যেতেই মধু ধরফরিয়ে উঠে বসে। রাহীর সব কথা ও ঘুমের ভান করে শুনেছে। ওর মাথায় শয়তানি বুদ্ধি খেলে যায় ও তাড়াতাড়ি তিন্নি কে তুলে সব জানায়। দুই বান্ধবী রাহী আর নাঈম কে হাতে নাতে ধরে লজ্জা দেবার জন্য তাড়াতাড়ি উঠে বাইরে আসে। ওরাও চোরের মতো পা টিপে হাঁটতে লাগে। দেখতে পায় রাহী বাইরে বাগানের দিকে যাচ্ছে।
তিন্নি মধুর দিকে তাকিয়ে বলল,” তুই পিছে যেতে থাক আমি বাকিদের ডেকে নিয়ে আসি।”
তিন্নি মামাতো ফুফাতো ভাই বোনদের ডাকার কথা বলে তিন্নি ওদের রুমে নক করতে যায়। সবাই মিলে বর কনে কে আজ লজ্জা দিবে। মাঝরাতে প্রেম করার জন্য। মধু আচ্ছা বলে একাই পিছু হাটে। বাগানে এসে ওর মনটাই ভালো হয়ে যায়। ড্রিম লাইটের আলোয় দূরে থাকা দোলনায় নাঈম আর রাহী কে বসে থাকতে দেখতে পায়। নাঈম রাহীর হাত দেখছে ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে। মধু ওদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে ছিল।
হঠাৎ পেছনে থেকে নিজের পাশে কারো ছায়া দেখে চমকে পাশে তাকায়। লোকটা ওর একদম পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে তাই ও পাশে তাকিয়ে কাউকে দেখে না শুধু একটা পুরুষের ছায়া বুঝতে পারে। ছায়ার মানুষটাকে ও চেনে ফেলেছে তাই আর পেছনে ঘুরে তাকে দেখার প্রয়োজন বোধ করল না শক্ত কন্ঠে বলল,,” আপনি এখানে কি করেছেন?”
ফুয়াদ ওর কাঁধে ফুঁ দিয়ে বলল,,” তোমার সাথে প্রেম করতে আসলাম। চাঁদনি রাতে নির্জন বাগানে।”
মধু ফুয়াদের মুখের গরম হাওয়া নিজের কাঁধে পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। শরীর শক্ত করে জামা খামচে ধরেছে দুহাতে।
ফুয়াদ ফের মাথা নিচু করে। মধু কে স্পর্শ হীন ভাবেই কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,”সুইটহার্ট করবে নাকি?”
মধু অজান্তেই বলে,,” কি?”
” প্রেম।”
মধু ছিটকে সরে দাঁড়ায়। আর চিৎকার করে বলে উঠে। নাক মুখ লাল করে তাকিয়ে থাকে ফুয়াদ এর দিকে। ফুয়াদ এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে টেনে ওকে নিয়ে সামনে এগুতে থাকে। মধু পা শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকতে চায় ফুয়াদ ওকে টেনে দোলনার কাছে এনে ওকে জোর করে বসিয়ে নিজেও বসে। মধু এদিক ওদিক তাকিয়ে রাহী আর নাঈম কে খুঁজছে। তারা দুজন না এই দোলনায় বসে ছিল কোথায় গেল? চোখ বড়ো বড়ো করে দুজনকে খুঁজছে।
ফুয়াদ ওর খোঁজা খুঁজি দেখে বলল,,” খুঁজে লাভ নাই বড়ো ভাইয়ের ভয়ে দুটোতেই পালিয়ে গেছে।”
মধু লাফ দিয়ে দোলনা থেকে উঠতে চাইল। ফুয়াদ ওর কাঁধ ধরে উঠতে দিল না। মধু চোখ কটমট করে ওর দিকে তাকাল।
” কি করতে চাইছেন বলুন তো?”
ফুয়াদ পকেটে থেকে ফোন আর একটা কোন মেহেদি বের করল। মধু প্রশ্নতুক চোখে সেসব এর দিকে তাকিয়ে আছে।
ফুয়াদ ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে ওর হাতে দিয়ে বলল,” এটা ধরে রাখো।”
মধু বোকা কন্ঠে বলল,” কেন?”
” দেখতেই তো পাবে।”
মধু বোকার মতো লাইট ধরে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদ ওর বাম হাত এক টানে নিজের হাতের মুঠোয় আনল।
” আমার হাত টানছেন কেন?”
ফুয়াদ উত্তর দিল না। মেহেদি ধরে ওর তালুতে মেহেদি দিতে লাগল। মধু চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড়ো করে হাতের দিকে তাকিয়ে আছে স্তব্ধ চোখে।
ফুয়াদ মধুর হতভম্ব নেস দেখে বলল,,” সুইটহার্ট তোমার সাদা হাত একটু রাঙিয়ে দেই কেমন। চুপটি করে বসে থাকো।”
মধু কথা বলতে পারল না। বিষ্ময় এ ও হতভম্ব হয়ে ফুয়াদ এর কাজ দেখছে। ফুয়াদ ওর হাতে বড়ো করে ইংরেজি তে লিখে দিল ফুয়াদের সুইটহার্ট মধু। তারপর একটা লাভ আঁকিয়ে দিল। মধু বাধা কেন দিল না ও নিজেও জানে না। পুতুলের মতো ফুয়াদের কাজ দেখতে লাগল।
ফুয়াদ কাজ শেষ করে বলল,,” সুইটহার্ট আজকে তুমি এতো ভদ্র হয়ে গেলে কি করে? আমি তো ভাবিনি এতো সহজে তুমি আমার নামটা নিজের হাতে লিখতে দিবে।”
এতোক্ষণ মধুর টনক নড়ল। এতোক্ষণ যেন ও নিজের মধ্যে ই ছিল না।ওকে ফুয়াদ মনে হয় ভস করে ফেলেছিল তাই ও পুতুলের মতো তার কাজে বাঁধা দিচ্ছিল না। এক লাফে উঠে পরল দোলনা থেকে। আর হাত মুঠো করে লেখা নষ্ট করে ফেলল। ফুয়াদ ওর পাগলামি দেখে বলল,,” লেখা তো হৃদয়ের মধ্যে হবে। সেটা কীভাবে নষ্ট করবে? হাতের লেখা তো মুঠো বন্দি করে নষ্ট করতে পারলে। কিন্তু সেই লেখা কোন ভাবেই মুছতে বা নষ্ট করতে পারবে না সুইটহার্ট।”
” আপনি একটা চরম বেয়াদব লোক।”
বলেই মধু বাগান ত্যাগ করতে উদ্যত হলো। ও ভাবছে এতো সময় চলে গেল তিন্নি রা আসলো না কেন? ভেতরে এসে দেখল ড্রয়িংরুমে লাইট জ্বালানো। নাঈম আর রাহী চোরের মতো মুখ করে বসে আছে। আর ওদের দুজনের সামনে বসে আছে সবাই। তিন্নি ও ওর সব কাজিন রা বড়োরা বাদে। নাঈমের কাজিন রাও আছে সবাই দুজনকে টিজ করছে। দু’জন সবাইকে ম্যানেজ করছে বড়দের কানে যেন এই কথা না যায়।
#চলবে……
( আজকে অনেক বড়ো পর্ব দিয়েছি। ১৯০০ উপরে।)