#প্রেয়সী
#নন্দিনী_নীলা
২০.
” উইল ইউ মারি মি?” হাঁটু গেড়ে লোকটা মধুর সামনে বসে বলল।
” নো।”
” করবে।”
” করব না। বিয়ে করব না বলেই আপন জনদের ফেলে পালিয়ে এসেছি দূর শহরে।”
” তুমি পালিয়ে এসেছ আমার জন্য। তুমি তোমার পছন্দমত বিয়ে করতে চাও। আর তোমার চয়েজ লিস্টের প্রথমে আমি।”
মধু হতবিহ্বল গলায় বলল,,” ইম্পসিবল আমি আপনাকে পছন্দ করি না।”
” করো। তুমি আমাকে বিশেষ পছন্দ করো। আমাকে ভালোবাসো।”
মধুর খুব রাগ হলো লোকটার হাতে থাকা আংটি নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলল,,” আমি আপনাকে পছন্দ করি না বললাম না। তারপর ও কেন বলছেন পছন্দ করি? ভালোবাসি! মনগড়া কথা একদম বলবেন না।”
লোকটা রেগে উঠে দাঁড়াল। তার শান্ত মুখশ্রী রাগে রক্তিম হয়ে উঠল। রাগান্বিত চোখে মধুর দিকে তাকিয়ে রইল। মধু লোকটার চাহনি দেখে ভয় পেয়ে গেল। লোকটা একবার মধুর দিকে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ফেলে দেওয়া আংটির বক্সের দিকে তাকাল। মধু লোকটার মনোযোগ অন্যদিকে দেখে পালিয়ে যাওয়ার ট্রাই করল। কিন্তু তার আগেই লোকটা ওর হাত চেপে ধরে আটকে দিল।
লোকটা গমগমে গলায় বলল,,” ওটা নিয়ে আসো।”
” ইম্পসিবল।”
” আনো।” চিৎকার করে উঠল লোকটা।
মধু তার চিৎকার শুনে চমকে উঠল। এক ছুটে গিয়ে আংটির বক্স নিয়ে এল। লোকটা এবার নিজের হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,” পরিয়ে দাও।”
মধু পলক ফেলতে যেন ভুলে গেল। একটু আগে ওকে প্রপোজ করছিল সেই রিং এখন নিজেকেই পরিয়ে দিতে ওকে ধমক দিচ্ছে পাগল নাকি?
আবার ধমকে উঠতেই মধু কেঁপে উঠল। আর তাড়াতাড়ি আংটি বের করে আঙুল ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু ছোট আংটি তার শক্তপোক্ত মোটা আঙুলে ঢুকছে না।মধু ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ফট করেই লোকটা ওর হাত ধরে এক টানে পেছনে ঘুরিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে পেছনে থেকে। আর আংটি নিয়ে মধুর অনামিকা আঙ্গুলে পড়িয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় ওর আঙুলের মাথায় পেছনে থেকে মধুর ঘাড়ের পাশ দিয়ে।
মধু চিৎকার করে উঠে বসল বিছানায়। ঘেমে একাকার অবস্থা। তাড়াতাড়ি হাতের আঙুল চেক করতে লাগল না কোন আংটি নাই। তাহলে ওসব কি ছিল স্বপ্ন? তিন্নি চোখ বড়ো বড়ো করে ওর দিকে বলল,,” কিরে ভূতের স্বপ্ন দেখছিস নাকি এতো ভয় পেয়ে উঠলি যে।”
” দোস্ত ভূতের থেকেও ভয়ংকর স্বপ্ন দেখছি।”
” কি দেখছিস?”
” আমি বলতে পারব না। কিন্তু শুনে রাখ খুব ভয়ংকর স্বপ্ন।”
” কখন দেখেছিস?”
” হ দেখেই তো জেগে গেলাম।”
” যত ভয়ংকর দেখ না কেন এটা সত্য হওয়ার চান্স আছে।”
মধু থমকানো মুখে বলল,,” দেখ একদম মজা করবি না আমার সাথে।”
” সত্যি। আমি শুনেছি ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্য হয়। শোন উঠেছিস ভালো হয়েছে রেডি হ আমরা সূর্যদয় দেখতে যাব সমুদ্র ভাই ডাকতে এসেছিল।”
মধু ভীতু মুখ করে বলল,,” দোস্ত সত্যি কি ভোরের স্বপ্ন সত্য হয়?”
” আমি তো এমনটাই শুনেছি আংশিক সত্য হয়। আবার নাও হতে পারে।”
” আমার সাথেই কেন এমন হয় দূর ভাল্লাগে না।”
” কি দেখছিস বল তো।”
” বলা যাবে না।”
” ছেলে ঘটিত ব্যাপার নাকি?”
মধু চোখ কপালে তুলে বলল,,” তুই জানলি কি করে?”
” ধারণা করলাম!”
” তোর ধারণা সত্য হয় কবে থেকে।”
” তা বল ছেলে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখলি? খুব রোমান্টিক কিছু নাকি? এমন ব্লাশিং খাচ্ছিস।”
মধু সব খুলে বলল। তিন্নি অবাক স্বরে বলল,,” ও মাই গড। এতো রোমান্টিক স্বপ্ন কোন পুরুষ নিয়ে দেখলি। বান্ধবী দেখি আমার প্রেমে পরে গেছে। তাড়াতাড়ি বল কে সেই সুপুরুষ।”
” কি সব আবুল তাবুল বকছিস! প্রেমে পড়তে যাব কেন?”
” প্রেমে না পরলে বুঝি কেউ কাউকে নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখে। ”
“দেখ আজগুবি কথা বলে আমার মেজাজ খারাপ করবি না। স্বপ্ন দেখছি সেখানে প্রেমের কথা আসছে কেন?”
” আসছে কারণ আমরা প্রেমে পরলে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। যেখানে সেখানে তার উপস্থিতি টের পাই। সব খানে তাকে কল্পনা করি। মনে হয় সে পাশেই আছে। আচ্ছা দোস্ত বল তো তোর কি এমন হয়?”
মধু শুকনো ঢোক গিলে চোরের মতো মুখ করে তাকিয়ে আছে তিন্নির দিকে। তিন্নি প্রশ্ন বিন্দু চোখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মধু কথা বলতে পারছে না। তিন্নি কি ওর সাথে জোকস করছে নাকি সত্যি এসব প্রেমে পড়ার লক্ষণ? যদি সত্যি এসব প্রেমে পড়ার লক্ষণ হয়ে থাকে তাহলে ও তো প্রেমে পরেছে। তাও এমন একজনের যাকে ও দুই চক্ষে সহ্য করতে পারে না। তার প্রেমে ও কিভাবে পরে গেল। আল্লাহ এসব কি হচ্ছে! তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি, তার মুখে থেকে শুনছি,’ ব্লাক এঞ্জেল।’
এমন চমক না খেলেও হতো। মধু বিস্মিত মুখে আকাশ পাতাল ভাবনায় চলে গেছে।
সমুদ্র দরজায় নক করে ভেতরে এসে বলল,,” একি এখনো তোরা রেডি হস নি কেন? আমরা সবাই বের হচ্ছি তো।”
মধু পাথরের ন্যায় মাথা নিচু করে বসে আছে নড়তে পারছে না। ও প্রেমে পরেছে! এমন চমকানো খবর জানতে পেরে নির্বাক হয়ে গেছে। ও নিজের মধ্যে তা টের পাওয়ার পর থেকে ওর দুনিয়া উল্টে গেছে যেন। এমন একজনকে নিয়ে ওর স্বপ্ন, ওর কল্পনা তাকে ও কোনদিন পাবে না ও জানে। এমন একজনকে নিয়েই এসব ঘটতে হলো যাকে পাওয়া দুষ্কর। প্রেমে পড়লাম তো পড়লাম এমন একজনের যার..
” হেই মধু,,’
মধু বজ্রপাতের মতো চমকে উঠল। ভয় ভয় চোখে তাকাল সমুদ্রের দিকে। যেন তাকালেই ওর মনের খবর ধরে ফেলবে।
” বসে আছো কেন? সূর্যদয় দেখতে যাবে না?”
মধুর ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মধু জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মৃদু স্বরে বলল,,” যাব।”
খুব লজ্জিত মুখে বলেই মধু এক ছুটে বাথরুমে ঢুকে গেল। সময় নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখল সমুদ্র, তিন্নি কেউ নাই। কি বিপদ সবাই আমাকে রেখে চলে গেল নাকি? মধু চুল আঁচড়ে পিঠে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হলো।
বাইরে বের হয়ে মধু স্তব্ধ। প্রত্যেক রুম থেকে সবাই দল বেধে বের হচ্ছে সবাই সূর্যদয় দেখতে যাবে হয়তো। মধু সবার মাঝে পরিচিত মুখ খুঁজতে লাগল। বাকিদের রুমে গিয়ে উঁকি মারল কেউ নাই। কি আজব! এভাবে আমায় রেখে সবাই চলে গেল কেন? আমি তো সমুদ্র কে যাব বললাম তাও কেন চলে গেল। আর তিন্নি ও কেন রেখে গেল। ও কি থাকতে পারত না। কান্না পেয়ে গেল মধুর। এতো সাধনার পর আসতে পারল বেড়াতে তাও ভালো করে ঘুরতে যাওয়া হবে না। মধুর চোখ টলমল করে উঠল। অভিমানে মুখে শুকিয়ে গেল। বাম চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল।
” কাউকে লাগবে না আমি একাই যাব। ওই তো সবাই যাচ্ছে তাদের সাথেই যাব।”
মধু নিজের মনেই কথাগুলো বলে নিজেকে ধাতস্থ করল তারপর রিসোর্ট থেকে বের হলো।
সামনে একদল ছেলেমেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা ফ্রেন্ডস ট্যুরে এসেছে। মধু পা চালিয়ে তাদের কাছাকাছি যাওয়া ধরতেই হঠাৎ একটা হাত ওর হাত চেপে ধরল। মধু কারো হাতের মুঠোয় নিজের হাত অনুভব করতেই চমকে উঠল। ও সামনে এগুতে পারে নি লোকটা ওর হাত টেনে ধরেছে।
মধু ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,,” কে?”
বলতে বলতে মধু কিশ্চিৎ ঘাড় কাত করে পেছনে ফিরতেই ঝটকা খেল। চোখ মনি দুটো রসগোল্লার মতো বড়ো করে অগত্যা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে আছে। স্বপ্ন ও কল্পনার সেই পরিচিত মুখটা দেখতে পেল। খুব কাছে ওর ছোট হাত নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে রেখেছে। লোকটা গাঢ় দৃষ্টি ওর দিকে নিক্ষেপ করে আছে। ও তার দৃষ্টিতে চোখ রাখতেই কেঁপে উঠল। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। হাত পা অসাড় হয়ে আসছে। মধু ঘনঘন পলক ফেলে দৃষ্টি স্থির করল।
” কোথায় যাও? রাস্তা তো এইদিকে।”বলেই অন্য রাস্তা দেখাল লোকটা।
মধু বিষ্ময় এ হতভম্ব হয়ে গেল। ওর মুখের রক্ত স্বরে গেছে যেন।
মধু বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল,,” আবার কল্পনা করছি। আবার উনি আমার সামনে এসেছে আমার সেই কল্পনার মতো। আমার হাত ধরেছে। সব মিলে যাচ্ছে। তিন্নি কথা মতো সব খানেই উনাকে দেখছি। আমি কি তাহলে সত্যি এই মানুষটার প্রেমে পরে গেছি।”
লোকটা মাথা ঝুঁকিয়ে বলল,,” কি বলছো বিড়বিড় করে?”
” আপনি এভাবে কেন জ্বালাতন করছেন? আমি আপনার প্রেমে পড়তে চাইনা। কিন্তু পরে গেছি এটা কেন হলো। আমি তো কখনো এমন কিছু ভাবিনি। তাহলে কেন এটা হলো?”
মধুর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। ও ভাবছে এটাও কল্পনা তাই নিজের মনের সব কথা এক এক করে প্রকাশ করতে লাগল। আর সামনের ব্যক্তিটি মধুর কথা শুনে হাসছে। কি অদ্ভুত লোকটা ওর কথায় হাসছে কেন?
#চলবে……
( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। লিখে শেষ করতে পারিনি। নেক্সট পার্টে জানতে পারবেন কার প্রেয়সী মধু)