#প্রেয়সী
#নন্দিনী_নীলা
১৫.
এইচএসসি রেজাল্ট দিয়েছে। তিন্নি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। বাসাটা উৎসব মুখর হয়েছে উঠেছে। তিন্নি ভালো স্টুডেন্ট মধু জানতো। ওর রেজাল্ট এমনটাই হবে আশা ছিল। কিন্তু ও নিজে ওতোটা ভালো স্টুডেন্ট নয়। বাবার উপর রাগ করেই এইচএসসি পরীক্ষা আরো খারাপ দিয়েছিল এজন্য রেজাল্ট আরো খারাপ হয়েছে। 4.38 পেয়েছে মধু। লজ্জা মধু রেজাল্ট দেখার পর থেকে বের হয়নি রুম থেকে। তিন্নি যেখানে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সেখানে ও সাধারণ এ প্লাস ও পায়নি। আর না কাছাকাছি গিয়েছে। বাসার সবার সামনে লজ্জা মাথা তুলতে পারছে না। মধু শঙ্কিত হচ্ছে বাবা রেজাল্ট তো কলেজ থেকে জানতে পারবে। এই রেজাল্ট নিয়েও তিনিও অসন্তুষ্ট হবেন। মধুর সাথে সবাই দেখা করে গেছে মন খারাপ করতে মানা করেছে। কিন্তু মধু তো রেজাল্ট নিয়ে একটুও মন খারাপ করেনি। ও এমন রেজাল্ট করবে ও জানতো কিন্তু এখানে সবার সামনে সেটা ফেস করতে লজ্জাবোধ করছে তাই মুখ লুকিয়ে আছে।
বাহির মুখো আজ ওকে কেউ করতে পারল না। ফাহাদ এসে এই অবস্থায় ও ওর কাছে ট্রিট চেয়ে গেছে। তিন্নি এসে সাদা মিষ্টি খাইয়েছে। এতো ভাল রেজাল্ট এর জন্য সারা মহল্লায় মিষ্টি বিতরণ হচ্ছে। লাঞ্চ মধু ঘরে বসেই করেছে।
এখন বিছানায় শুয়ে আছে পায়ের উপর পা তুলে।
তখনি কেউ দরজায় টোকা দিয়ে বলল,,” আসব?”
মধু লাফিয়ে উঠে বসল। পাশ থেকে ওরনা টেনে গায়ে জড়িয়ে হাসিমুখে বলল,,” আসুন।”
সমুদ্র ওর সামনে চেয়ার টেনে বসে বলল,,” শুনলাম তোমার নাকি মন খারাপ সত্যি নাকি?”
মধু কাঁচুমাচু মুখ করে বলল,,” না তো। কে বলেছে আমার মন খারাপ?”
” সবাই বলল তুমি নাকি কষ্টে রুম থেকেই বের হতে পারছো না।”
মধু খুব লজ্জা পেলো। লজ্জিত গলায় বলল,,” আসলে…”
সমুদ্র বলল,,” তুমি চাইলে বোর্ড challenge করতে পারো। তাহলে রেজাল্ট পরিবর্তন হতে পারে।”
মধু ঢোক গিলে আমতা আমতা করতে লাগল।
” কি হলো করবে নাকি? করলে আমাকে জানাতে পারো আমি সাহায্য করব। তুমি নিজের রেজাল্ট আরো ভালো আশা করলে করতেই পারো। পরীক্ষা তুমি দিয়েছ কেমন রেজাল্ট পাবেন সেটা তুমি ভালো জানো।”
” না না তার প্রয়োজন নাই।”
” শিউর?”
” হ্যা। আমি এক্সাম বেশি ভালো দেয় নি। তাই এসব করেও আমার রেজাল্ট এর থেকে বেটার আসবে না।”
সমুদ্র ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো করে বলল,,” ইটস ওকে। মন খারাপ করো না। সবাই যে প্লাস পাবে এমন না।”
” হুম।” নিচু স্বরে বলল মধু।
সমুদ্র বলল,” তোমার বাড়িতে কথা বলেছ? রেজাল্ট জানিয়েছ?”
” আমি না জানালেও তাদের কাছে রেজাল্ট পৌঁছে গেছে।”
” ওহ আচ্ছা। মন খারাপ করে থেকো না। সন্ধ্যার একটা জায়গা যাব সবাই তুমি যাবে তো?”
মধু অবাক হওয়া গলায় বলল,,” কোথায়?”
” তিন্নি বলেনি কিছু?”
” কই না তো।”
” ওর কাছ থেকেই শুনে নিও।” সমুদ্র বিদায় নিয়ে চলে গেল।
মধু দুই মিনিট ওভাবেই বসে রইল। তারপর বিছানা থেকে উঠে বাইরে উঁকি দিল। সঙ্গে সঙ্গে ফুয়াদের নজরে পরে গেল। তিন্নির রুমের সামনের রুমটা ফুয়াদের ও মাথা বের করে উঁকি দিতেই ফুয়াদকে দেখল এদিকেই তাকিয়ে আছে। ও তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। ফুয়াদ ডেকে উঠল ,,” এদিকে আসো।”
মধু দেয়াল ধরে বাঁকা হয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে উঁকি দিয়েছিল। ফুয়াদের হাত নাড়িয়ে এদিকে আসো বলে ডাকতেই মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে পড়ল। পুতুলের মতো কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে ফুয়াদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ফুয়াদ দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল মধু ওর মুখোমুখি এসে দাড়াতেই নিজের ফোনটা মধু হাতে দিল। চমকে উঠল মধু। ও ভয় পাচ্ছিল সেদিন কেকের জন্য বকতে ডাকল নাকি। সবসময় পালিয়ে গেলেও আজ ফুয়াদের ঠান্ডা স্বরে ডাকটা ও ইগনোর করতে পারল না। তাইতো বাঘের সামনে এসে দাঁড়াতে পারল। না বকে ফোন দিল কেন লোকটা ওকে? মধু প্রশ্নতুক চোখে তাকাল ফুয়াদের দিকে।
ফুয়াদ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,” বাংলায় কেউ এতো কম পায়? যেখানে ম্যাথ এ বিরানব্বই সেখানে বাংলায় মাত্র ৪২?”
মধু চমকে তাকাল ফোনের স্ক্রিনে থাকা মার্ক সিটের দিকে। সব সাবজেক্ট এই খারাপ করেছে। বাংলা সবচেয়ে বেশি কম। ও জড়সড় হয়ে তাকিয়ে নিজের নাম্বার দেখল। ফুয়াদ ফোন নিয়ে নিল। মধু অসহায় মুখে বলতে চাইল ও ভালো করে এক্সাম দিলে হয়তো প্লাস থাকত কিন্তু দেয়নি। বাবা বলেছিল ভালো রেজাল্ট না পেলে নাকি সাজিন ওকে বিয়ে করবে না সাজিন লেখাপড়া নিয়ে অনেক কনসার্ন। এটা শুনে ও খারাপ পরীক্ষা দিয়েছিল কিন্তু ওর কপাল খারাপ শয়তান সাজিন রেজাল্ট বের হওয়ার আগেই বিয়ে করতে পাগল হয়ে উঠল। তখন ওর চাচাতো বোন সিমা বলেছিল,’ তোর রুপ দেখে বেটার বিয়ের জন্য আর তর সইছে না। এখন লেখাপড়া গোল্লায় যাক। খবর নাই।”
মধুকে বোবার মতো চুপ করে থাকতে দেখে ফুয়াদ রাগে লাল হয়ে উঠল। কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেল। মধু ফুয়াদকে চলে যেতে দেখে সরে এল।
তিন্নির অনেক দিন ধরেই ক্লাবে যাওয়ার শখ কিন্তু এখন অবধি যাওয়ার আশা পূরণ করতে পারেনি। এইচএসসি পরীক্ষার সময় তিন্নি কায়দা করে সমুদ্রের কাছে আবদার করে বসেছিল ও গোল্ডেন এ প্লাস পেলে ও যা চাইবে তাই দিতে হবে। সমুদ্র বোনকে কথা দিয়েছিল। আজ যখন রেজাল্ট বের হয় সবার আগে সমুদ্র কে চেপে ধরে বলে বসে রাতে ক্লাবে নিয়ে যেতে হবে ওদের সবাইকে।
সমুদ্র কি আর বলবে বোনকে কথা দিয়েছিল তাই রাখতে তো হবেই। সন্ধ্যার পর ভাই বোনদের নিয়ে যাবে ক্লাবে। তিন্নি তো মহা খুশি। ওর সাথে রাহী আর ফাহাদ ও খুশি। তিন্নির জন্য ওরা সবাই ক্লাবে যেতে পারবে। তিন্নি রুমে এসে দেখল মধু বসে আছে।
” কিরে গাল ফুলিয়ে বসে আছিস কেন?”
” তোরা যে বেড়াতে যাবি আমাকে বললি না তো। আমাকে কি নিতে চাস না?”
” তোকে নেবো না কেন আমরা ভাই বোন সবাই যাব।”
” তা যাবি কোথায়?”
” ক্লাবে।” উত্তেজিত গলায় বলল।
” বলিস কি?রাজি হলো সবাই?”
” অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি রে।”
” আমার ও অনেক যাওয়ার শখ ছিল কিন্তু যাওয়া হয়নি আব্বু বলেছিল সাজিনের সাথে একবার যেতে আমি যাইনি।”
” ওহ এবার ঝটপট রেডি হয়ে নে।”
” এখনি?”
” হ্যা আমরা আরেকটা জায়গায় যাব সেখানে থেকে ঘুরে ক্লাবে যাব।”
মধুর ড্রেস ও তিন্নির আলমারির একপাশে রেখেছে। মধু সেখানে থেকে একটা ব্লাক ড্রেস বের করল। নিচে এসে দেখল রাহী ফাহাদ ও মিতুল বসে আছে। মধু আর তিন্নি নিচে নামতেই ওরা উঠে দাঁড়াল। তিন্নিকে এগিয়ে এসে মিতুল অভিনন্দন জানাল হাসিমুখে তারপর মধুর দিকে তাকিয়ে তিন্নিকে জিজ্ঞেস বলল,,” তোমার বান্ধবী নাকি ভালো রেজাল্ট করেনি। প্লাস ও পায়নি কোন রকম পাশ করেছে। এমন খারাপ স্টুডেন্ট তোমার ফ্রেন্ড হলো কি করে? আমি ও তোমার মতো ফাস্ট গার্ল ছিলাম। আমার বন্ধু বান্ধবীরাও সব আমার মতোই ভালো স্টুডেন্ট ছিল। ওর সাথে তো তোমার ফেসবুকে পরিচয় তাই হয়তো কেমন স্টুডেন্ট জানতে না তাই না?”
মধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল অপমানে লাল চোখ মুখ নিয়ে। ফাহাদ, রাহী, তিন্নি, মিতুল আর ও ছাড়া এদিকে কেউ নাই। মিতুলের সাথে মধুর এখনো কথা হয়নি তেমন জন্মদিনের পার্টিতে মধু একবার হ্যাপি বার্থডে বলতে পেরেছিল বিনিময়ে মিতুল হাসি বিনিময় করেছিল। আর কথা হয়নি আজ হঠাৎ এমন অপমান জনক কথা শুনে ওর লজ্জা মরে যেতে ইচ্ছা করল। মধু ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে মাথা নিচু করে। মিতুল কে দেখে একটুও এমন কাঠখোট্টা টাইপের মনে হয়নি। দেখতে কি মিষ্টি অথচ এমন ভাবে ওকে অপমান করছে যেন ও তার সবচেয়ে বড়ো শত্রু। মধু মিতুলের দিকে দিকে তাকিয়ে আছে। মিতুলের চোখে মুখে ওর জন্য তীব্র ঘৃণা। ঈর্ষান্বিত চোখ মেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
মধু এই ঘৃণার মানে বুঝতে পারছে না। যাকে চেনে না ঠিক মতো ভালো করে দুটো কথাও হয়নি সেই ব্যক্তির এমন চাহনি ওর পছন্দ হলো না। অপমানে ওর চোখ টলমল করে উঠেছে।
তিন্নির প্রচুর রাগ হলো মিতুলের কথা শুনে।
” মিতুল আপু তুমি এভাবে আমার ফ্রেন্ড কে অপমান করতে পারো না।”
মিতুল বলল,,” অপমান কোথায় করলাম তিন্নি আমি তো সত্যি টাই বললাম।”
রাগে ফেটে পড়ল তিন্নি কিছু কঠিন কথা বলতে যাবে সমুদ্র নিচে আসলো তাকে দেখে থেমে গেল।
মিতুল সমুদ্র সামনে গিয়ে বলল,,” বাহ এতো সেজেগুজে যাচ্ছ। মনে হচ্ছে আজ তোমার স্পেশাল কেউ আসবে?”
সমুদ্র কিছুই বলল না। শুধু হাসল।
” ফুয়াদ কোথায় ও যাবে না?”
সমুদ্র মধুর দিকে তাকিয়ে বলল,,” একি মধু কাঁদছো কেন?”
মধুর গাল গড়িয়ে এক ফোঁটা জল পড়েছে সেটা সমুদ্র দেখে ফেলেছে। মধু গাল মুছে বলল,,” কিছু হয়নি।”
তিন্নি মধুকে টেনে বাইরে নিয়ে এল। আর বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলল,,” তাড়াতাড়ি আসো তোমরা আমরা গাড়িতে বসছি।”
” এখন যাবে না পরে আসবে।”
” ও কি বাসায় আছে?”
” একটু আগেই বের হয়েছে।”
” আমাদের সাথে গেলে কি হতো সব কিছুতে অনিহা।”
মিতুল আর সমুদ্র সবার পরে বের হলো। ফাহাদ আর রাহী তিন্নি আর মধুর পেছনেই চলে গেছে।
রাহী বাইরে আসতেই ফাহাদ বলল,,” মিতুল ভাবি কেমন রুড বিহেভ করল মধু আপুর সাথে দেখেছ?”
” হুম এর কারণ ও আমি জানি!”
ফাহাদ বলল,” কি কারণে এমন করল বলোতো। মধুর সাথে তো তার আলাপ ও হয়নি বেশি তাহলে!”
” বেশি আলাপ হয়নি কিন্তু যতটা হয়েছে তাতে মধুর তার অপছন্দের তালিকায় পরে গেছে।”
ফাহাদ কথার আগামাথা কিছুই বুঝল না। কি এমন আলাপ হয়েছে যে মধু অপছন্দ হলো। মধু তো খুব ভালো মেয়ে তাকে অপছন্দ করার কারণ কি হতে পারে?
#চলবে…..
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যথার্থ মন্তব্য করবেন। শুধু নাইস নেক্সট না লিখে তাহলে গল্প তাড়াতাড়ি দেওয়ার আগ্রহ পাই। ভালো কমেন্ট না পেলে গল্প লিখতে ইচ্ছে করে না। আমার জন্য দোয়া করবেন।