#প্রেয়সী
#নন্দিনী_নীলা
১৩.
মধু চোখ পিটপিট করে তাকাল। একটা অপরিচিত রুমে শুয়ে আছে ও। রাহী ওর পাশেই ফোন টিপছিল ও তাকাতেই কাছে এল।
” মধু আর ইউ ওকে?”
মধু উঠে বসল। আশেপাশে কোথাও ফুয়াদ আছে নাকি জহুরি নজরে পর্যবেক্ষণ করল। ভয়ে ওর হাত পা এখনো কাঁপছে। মধু মাথা নাড়িয়ে না বোঝাল। রাহী বলল,,” তুমি ফুয়াদ ভাইয়ের মুখে কেক ছুঁড়ে মেরেছিলে?”
মধু আমতা আমতা করে বলল,” বিশ্বাস করো আপু আমি সত্যি ইচ্ছাকৃত ভাবে এটা করিনি। উনি সামনে চলে আসলেন আর ভুলে….।”
” ইটস ওকে এই জন্য তুমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। জানো কত ভয় পেয়ে গেছিলাম আমরা সবাই।”
মধু অপরাধী ন্যায় মুখ করে বলল,,” উনি এমন ভাবে তাকিয়েছিল আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। এটা কোথায় আমরা কি বাসায় চলে এসেছি?”
” আরে না কি যে বলো। তোমাকে ওই অবস্থায় নিয়ে বাসায় কিভাবে যেতাম বলো। খাওয়া দাওয়া ও তো করো নাই।”
” এটা কার রুম?” মধু রুমের এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল।
” এটা মিতুল ভাবির রুম।”
” আমি এখানে কীভাবে এলাম?” বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল মধু।
রাহী বলবে তখন একজন মহিলা আসে প্লেট হাতে। রাহী সেটা এনে মধুর হাতে দিয়ে বলে,,” তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। আমাদের ফিরতে হবে।”
” তুমি না থাকতে চেয়েছিলে?”
” না মিতুল ভাবিকে ম্যানেজ করেছি একটু পর চলে যাব। আমাদের খাওয়া শেষ তোমার হলেই বের হবো আমরা।”
” আমরা বলতে সবাই কি আমার জন্য রয়ে গেছে কয়টা বাজে এখন?”
” বেশি সময় অজ্ঞান ছিলে না। কিন্তু চিত্রা ভাবি আর ভাইয়া চলে গেছে। ফাহাদ আমার আব্বু আম্মু ও সমুদ্র ভাইয়া চলে যাবে বলল। আমি তুমি আর ফুয়াদ ভাইয়া একসাথে যাব।”
ফুয়াদের সাথে যাবে শোনে মধুর মুখটা আবার শুকিয়ে গেল। রাহী মধুর ভয়ার্ত চোখ মুখ দেখে আস্বস্ত গলায় বলল,,” ভাইয়া কিছুই বলবে না তোমায় ভয় পেয়ো না তো। জানো কি হয়েছে?”
মধু কপাল কুঁচকে বলল,,” কি হয়েছে আপু?”
রাহী উত্তেজিত গলায় বলল,,” ফুয়াদ ভাইয়া তোমায় কোলে করে এই রুমে নিয়ে এসেছে। এটা দেখে তো মিতুল ভাবি খুব রাগ করেছে। ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করেছে। মিতুল ভাবি তোমাকে নিয়ে অনেক জেলাস ফিল করছে। ভাইয়াকে অনেক ভালবাসে তো। তাই ভাইয়াকে কারো সাথে সহ্য করতে পারে না।”
মধু হাত মুখ ধুয়ে এসে খাবার খেতে খেতে শুনছিল।
ওকে নিয়ে জেলাস করেছে শুনে মধু খাওয়া বাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করল,,,” আমাকে নিয়ে জেলাস কেন? আমি কি তার গার্লফ্রেন্ড নাকি?”
রাহী বলল,,” গার্লফ্রেন্ড না কিন্তু মিতুল ভাবির আফসোস তাকে কোলে নেওয়ার আগে ভাইয়ার তোমায় কোলে নিয়েছে। এটাই মানতে পারছে না। তার নাকি ইচ্ছে ছিল তার হাজবেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড প্রথম তাকেই কোলে নিবে। তারপর পাহাড়ের চূড়ায় উঠবে।”
মধু চোখ ছোট ছোট করে বলল,,” পাহাড়ে উঠবে কেন?”
” আরে ফুয়াদ ভাইয়া তো ভ্রমণ প্রিয় মানুষ। এজন্য মিতুল ভাবির স্বপ্ন একবার ভাইয়ার সাথে সাজেক যাবে তারপর ভাইয়ার কোলে চড়ে চূড়ায় উঠে মেঘ স্পর্শ করবে।”
মধু অবাক স্বরে বলল,,” আমার ও সাজেক, কক্সবাজার, যাওয়ার অনেক শখ।”
রাহী বিস্মিত গলায় বলল,,” তুমি এখনো কক্সবাজার যাও নাই?”
মধু মলিন মুখে বলল,,” নাহ আমি দূরে কোথাও যাই নি। আমার বাসা থেকে কোথাও নিয়ে যায় না বেড়াতে। আর কলেজ থেকে ও শিক্ষাসফরে একা যেতে দেয়না। তুমি গেছো?”
” দুইবার গেছি। আমার তো সব জায়গায় বেড়ানো শেষ। এখন বিদেশে ভ্রমণ করা বাকি সেটা পূরণ করবে নাঈম।” বলেই লাজুক হাসলো।
মধুর অর্ধেক খাবার খেয়েই হাত ধুয়ে এল ওর মনটা খারাপ হয়ে গেছে। কোথাও ঘুরতে যেতে না পারার আফসোসে মনটা বিষাদ হয়ে গেছে। বাবা ও ভাইয়ের প্রতি রাগ লাগছে। সব সময় ওকে বন্দি করে রাখতো তারা কলেজ ছাড়া আর কোথাও যেতে দিত না। দূরে শুধু নানু বাড়ি যেতে পারত সেটাও বছরে একবার।
রাহী মধুর মলিন মুখ দেখে বলল,,” আরে কেঁদে দিবে নাকি। আচ্ছা কেঁদো না তুমি তো এখন আমাদের সাথে আছো কিছুদিন। আমার টেস্ট পরীক্ষার পর ঘুরতে যাওয়ার প্লান আছে আমার বিয়ে আগে এটা আমার উপহার ফুয়াদ ভাইয়ার তরফ থেকে। তুমি থাকলে তোমাকেও সাথে নেব।”
মধু উজ্জ্বল মুখ করে বলল,,” তোমার পরীক্ষা শেষ হবে কবে আপু?”
” তাড়াতাড়িই শেষ হবে। এবার চলো নিচে যাই।” মধুকে নিয়ে রাহী নিচে এল। মধু আল্লাহর নাম নিচ্ছে শুধু সমুদ্র যেন থাকে তাহলে তাদের সাথে ও চলে যাবে। ফুয়াদ রগচটা গম্ভীর লোকটার সাথে ও যেতে চায় না। এমনিতেই যে প্যারা দেয় ওকে। আজ কাছে পেলে না জানি কি করবে।
আল্লাহ তাআলা যেন তাড়াতাড়িই মধুর ডাকে সারা দিল। নিচে নেমে মধু দেখতে পেল সমুদ্র এখনো যায়নি। ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল। রাহী আর মধু সমুদ্র কাছে এগিয়ে গেল।
মিতুল আর ফুয়াদ দাঁড়িয়ে আছে ছাদে। মিতুল জোর করেই ফুয়াদ কে নিয়ে ছাদে এসেছে। ফুয়াদ আসতে চাইছিল না। কিন্তু সবার সামনে সিনক্রিয়েট ও করতে পারে নি। মিতুলের মা বাবা ছিল তাই তাদের প্রতি সম্মান দেখাতেই মিতুলের সাথে ছাদে আসতে হয়েছে। আসার পর থেকে মিতুলের ফালতু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে ফুয়াদ।
মিতুল রাগী গলায় ফুয়াদ কে প্রশ্ন করল,,” তুমি ওই রাস্তার মেয়েকে কোলে নিলে কেন?”
ফুয়াদ গমগমে গম্ভীর গলায় বলল,,” রাস্তার মেয়ে কে?”
মিতুল রাগে ফুয়াদের কলার চেপে ধরতে এগিয়ে আসলো। ফুয়াদ মিতুলের হাত ধরে ওকে দূরে সরিয়ে বলল,,” ডোন্ট টাচ মি। দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলো।”
মিতুল ফুয়াদের কথায় আরো ফুঁসে উঠল। ওকে দূরে সরিয়ে দেওয়া আর ওই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে রাখা ও সহ্য করতে পারল না।
চিৎকার করে উঠল,,” আমাকে স্পর্শ করতে এতো দ্বিধা আর ওই বাইরের অপরিচিত মেয়েকে স্পর্শ করতে কি দ্বিধা লাগে না। রাস্তার মেয়েটাকে তোমরা এখনো বাসায় আশ্রয় দিয়ে রেখেছ। তাকে তুমি কোলে নিচ্ছ আমার সামনে। আমি তোমার ফিয়ান্সে ভুলে গেছো তুমি ফুয়াদ। কখনো সেচ্ছায় আমার হাতটাও ধরতে চাও না। উল্টো দূর দূর করো আর ওই মেয়েটা একটু জ্ঞান হারাতেই কোলে উঠিয়ে নিলে।”
” মিতুল তুমি কিন্তু লিমিট ক্রস করছো। এইভাবে আমার সাথে কথা বলতে পারো না তুমি। কথা বার্তা সাবধানে বলো।”
মিতুল নাছোড়বান্দা গলায় আবার বলে উঠল,,”ওকে কোলে কেন নিলে তুমি? জানো না তোমায় আমি ভালবাসি এসব দেখলে আমার কষ্ট হয়।”
ফুয়াদ বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,,” আমি ওকে সামান্য কোলে নিয়েছি। বিয়ে করিনি যে তুমি এমন আচরণ করবে।”
” তুমি বিয়ের কথা টানলে কেন? ওকে কেন তুমি বিয়ে করবে।” চোখ বড়ো করে আশ্চর্য হয়ে বলল মিতুল। ফুয়াদ উত্তর না দিয়ে চলে আসতে চাইল।
ফুয়াদ বিরক্ত ছাদ ত্যাগ করতে উদ্যত হয়। এদিকে মিতুল ওকে যেতে দিল না। ছুটে এসে আচমকা ফুয়াদের গলা জড়িয়ে ধরল জোর করে। রাগে ফুয়াদের চেয়াল শক্ত হয়ে এল। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল সঙ্গে সঙ্গে। মিতুল শক্ত করে ফুয়াদের গলা জড়িয়ে ধরেছে। ফুয়াদ হাত উঁচিয়ে ওর হাত গলা থেকে ছাড়াতে চাইছে।
” মিতুল ছাড়ো আমাকে।” দাঁতে দাঁত চেপে বলল ফুয়াদ।
মিতুল ছাড়ল না উল্টো আরো শক্ত করে ধরে বলল,,” ওকে কোলে নিয়েছ। যাও আমি মেনে যাব আর কোন প্রশ্ন করব না। আমাকে এই মুহূর্তে কিস করবে। তোমার ঠোঁটের প্রথম স্পর্শ আমার ঠোঁট পারবে।”
বলেই ফুয়াদের ঠোঁটে দিকে মিতুল নিজের ঠোঁট এগিয়ে নেয়। মিতুল চোখ বন্ধ করে ঠোঁট চোখা করে চুমু খেতে যায়। ফুয়াদ নিজের রাগ আর সংযত করতে পারল না। দুহাত মিতুলের কাঁধে ধরে ছুঁড়ে মারল মিতুল কে ফ্লোরে।
অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় ফ্লোরে পরে থাকা মিতুলের দিকে। রাগে ওর শরীর কাঁপছে। মিতুল পরে গিয়ে আর উঠতে পারছে না। কোমরে ব্যথা পেয়েছে। এখনো ওর পরণে সাদা গাউন। ও চোখ ভর্তি জল নিয়ে তাকাল ফুয়াদের দিকে। ভেজা গলায় বলল,,” তুমি আমাকে এইভাবে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলে ফুয়াদ? একটুও হাত কাঁপলো না। সামান্য কিস করতে চেয়েছি তাতেই এতো রাগ?”
” একটা মেয়ে এতোটা বেহায়া কীভাবে হয়! ছিহ তোমার প্রতি যতটা সম্মান ছিল তাও আজ শেষ হয়ে গেল। শোন আমাদের শুধু বিয়েটা ঠিক হয়েছে। এখনো বিয়ে হয়নি। আমি এখনো তোমার জন্য পরপুরুষ। তাই যে মেয়ে একটা পরপুরুষের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে জড়াজড়ি করে তার দিকে প্রতি ভালবাসা আসা তো দূরে থাক তার মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করে না। মায়ের পছন্দের মেয়ে তুমি তাই তিনি তোমায় বাড়ির বউ করতে আংটি পড়িয়ে গেছে। আমি যেহেতু ওই আংটি পড়াই নি তাই তুমি আমার কোন ফিয়ান্সে না। যে আমার ফিয়ান্সে হবে তার আঙুলের আমার পড়ানো আংটি থাকবে। আর সে তোমার মতো বেহায়া একদমই হবে না। কাছে গেলে অন্তত লজ্জা পাবে। তোমার মতো পরপুরুষের সামনে নিজেকে খোলে দিবে না। এতো দিন মায়ের কথাকে সম্মান করে তোমার সাথে ভালো আচরণ করেছি। কিন্তু তুমি তার যোগ্যাই না। আমি কাকে কোলে নেব কাকে কি করব তার কৈফিয়ত তোমায় কেন পৃথিবীর কাউকে দেব না। নিজের সীমার মধ্যে থাকবে আবরার ফুয়াদ কাউকে কৈফিয়ত দেয় না। মনে রাখবে।”
মিতুল ওখানেই পরে রইল আর ফুয়াদ রাগে গজগজ করতে করতে নিচে নেমে এল।
#চলবে…..
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালোবাসা অবিরাম পাঠকমহল। যথার্থ মন্তব্য করবেন।