দূর আলাপন
পর্ব-২
________________________
রাতে এশার সালাতের পর তিতিক্ষা বারান্দায় হাটছিল।যদিও শ্রাবণ মাস।আকাশে তবু মেঘের দেখা নেই।রুক্ষ আবহাওয়ায় থমকে আছে দিনরাত।চারিদিকে শুধু একটা গুমোট বাতাসের ছড়াছড়ি।ভীষণ গরম ফেলে দিয়েছে সে বাতাস! তাপদাহে ঘরে টেকা দায়।এদিকটা তবু কিছু ঠান্ডা।তিতিক্ষা গ্রীল ধরে দাঁড়ায়।বাইরে তখন শ্রাবণের অন্ধকার রাতের আকাশে, ভীষণ কালো মেঘেদের আনাগোনার বদলে অসংখ্য তারা জ্বলজ্বল করছে।বাড়ির পাশেই একটি বড় কামিনী গাছ । বহু বছর ধরে সেই গাছটি এবাড়িতে রাজত্ব করছে।তার সরু সরু ডালপালা আর গাঢ় সবুজ পাতা দিয়ে সে ঘিরে রেখেছে বাড়ির সামনের চারপাশ।সেই গাছের ফুলের মাদকতাময় গন্ধে ছেঁয়ে গেছে পুরো বাড়ি ।থেমে থেমে বাতাস দিচ্ছে।শরীর হিম করিয়ে দেয়া শীতল বাতাস নয়।বাতাসে গুমোট ভাব।সে বাতাসে কামিনী ফুলের গন্ধ আরও জোড়ালো হয়ে নাকে এসে লাগছে।
তিহা পেছনে এসে দাঁড়ালো।মুখ ফিরিয়ে তাকে এক ঝলক দেখে নিয়ে তিতিক্ষা হাসলো।তিহা বুঝলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন কথা বলা যায়।
‘এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছিস যে।ওদিকে ছোটন তোকে খুঁজে হয়রান। ‘
‘একটু আগেই তো দেখলাম বাবার সাথে খেলছে।তাই আর ডাকি নি।’
তিহা বোনের আরেকটু কাছে এসে দাঁড়ালো।’ আজ পাপড়ি ফোন দিয়েছিল। জানিস কি বলল…. ‘
‘তুমি বললেই জানবো! তার আগে বলো নামায পড়েছো?’
‘পড়েছিই তো।তুই কি ভাবিস।তুই একাই নামায পড়তে জানিস শুধু? ‘
তিতিক্ষা হাসলো।বললো -‘না।পাপড়ি আপু কি বললো ?’
তিহার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।সে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো, ‘ওর বিয়ের কথা চলছে বলেছিলাম না? বিয়েটা ওখানেই ঠিক হয়ে গেছে। ‘
‘বলেছিলে নাকি ? কই মনে পড়ছে না তো!’
‘ফাজলামি করবি না একদম। তোকে বলেছিলাম আমি।মনে আছে আমার। ‘
‘তাহলে আমার মনে নেই যে!’
‘শুধু শুধু কথা পেঁচাচ্ছিস না ? কাজের কথা শোন, এই শুক্রবারের পরের শুক্রবার বিয়ে।কাল তাই আমরা শপিংয়ে যাবো। ‘
‘আমরা কারা?’
তিহা আশ্চর্য হয়ে বললো, ‘কারা আবার! তুই, আমি।’
‘আমি গিয়ে কি করবো? ‘
‘বিয়েতে যাবি শপিং করতে হবে না?’
‘আমি তো বিয়েতে যাবো না ।’
‘ যাবি না মানে? পাপড়ি আমাকে ফোনে বারবার করে তোর কথা বলে দিয়েছে। যাবিনা কেন?’
‘আমার ওসব জায়গায় যেতে একদম ভালো লাগে না বুবু।’
তিহা তার বোন কে চেনে।সে বুঝল এই মেয়ে সত্যি শেষে যাওয়া নিয়ে টালবাহানা শুরু করবে।সে মুহূর্তকাল অপেক্ষা করলো।তারপর কঠিন চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে মুহুর্তে গিয়ে মারুফ সাহেব কে ডেকে নিয়ে এলো।
মারুফ সাহেব বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। গম্ভীর মুখে বললেন, ‘কি ব্যাপার তিতি।তুমি নাকি পাপড়ির বিয়েতে যাবে না বলেছো ? মেয়েটা কল করে বলেছে বিয়ের দুদিন আগেই যেন ওদের বাসায় তোমাদের পাঠিয়ে দিই।এখন তুমি হঠাৎ যাবে না কেন বলছো?’
তিতিক্ষা মাথা নুইয়ে দাঁড়ালো। বললো, ‘আমি আগে থেকে কিছু জানতাম না বাবা।এখন এভাবে হঠাৎ……. ‘
-‘তিতি, তুমি বড় হয়েছো।বাচ্চাদের মতো সব বিষয়ে জেদ কি এখন মানায়? তাছাড়া সবদিক সামলে সবার সাথে মিলিয়ে চলাটাই তো প্রকৃত বুদ্ধিমানের পরিচয়।তুমি আগে জানতে না সে তো খুব বড় সমস্যা নয়।আর বিয়ে বাড়ির কোলাহল তোমার পছন্দ না সে আমি জানি ।কিন্তু সেই কষ্টটা কি একজনের স্নেহের আবদারের থেকেও বেশি? ভালোবাসা এভাবে তুচ্ছ কারনে পায়ে ঠেলতে নেই মা।নাহয় সেই ভালোবাসা একসময় পিছু ছেড়ে দেয়।হাতড়ে বেরালেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
তবু আমি জোর করছি না।তুমি যেতে না চাইলে যেও না।এখন খেতে চলো।তিহা, এসো।আমাদের ভাত দাও।’
মারুফ সাহেবের চলে গেলেন।পিছু পিছু তিহাও বেরিয়ে গেল।তিতিক্ষা মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে রইল।তার কান গরম হয়ে গেছে।চোখ জ্বালা করছে।এই তুচ্ছ কারনে বাবা তাকে কোমল গলায় কড়া কথা শোনালেন? বাবা কেন তাকে কথা শোনাবেন ? বাবা একবার বললে তো সে এমনিতেই চলে যেত।সে তো সবসময় তার বাবার বাধ্য মেয়ে হয়েই থাকতে চেয়েছে।বাবা কি তা বোঝেন না ?
শত শত তারার আড়ালে কাস্তের মতো চিকন যে চাঁদটা লুকিয়ে ছিল তিতিক্ষা এবার তার দিকে চোখ তুলে তাকালো।আজ যে চাঁদটা চোখে দেখা না যাওয়ার মতোই সামান্য, দিন কয়েক পর সে চাঁদ টাই তার রূপোরঙা আলো দিয়ে পৃথিবীর রাতের আকাশকে সর্গীয় আভায় ভরে তুলবে।কি আশ্চর্য!
সকালে তিহা তিতিক্ষা আর ছোটনকে নিয়ে শপিংয়ের জন্য বেরোলো।রিকশায় বসে ঢাকার বিখ্যাত জ্যামে আটকা পড়ে তিতিক্ষাকে সহসা সে বললো পাপড়ির বিয়েতে তারা সব বন্ধুরা এক রঙের পোশাক পড়বে।
তিহার এই সহজ কথার পেছনে অন্য ইঙ্গিতটা তিতিক্ষা যে খানিক বুঝল না তা নয়।সে বোনের দিকে ঘুরে বসলো।ভুরু কুচকে বললো , ‘তোমার বন্ধুরা আবার এখন এসে আমাদের সাথেই শপিংয়ে যোগ দেবে না তো?’
তিহা কি বলবে বুঝতে পারলো না। কাল রাতে তিতিক্ষার সাথে কথা বলার পর নিমি কল করে জানালো বিয়েতে তারা সবাই এক রঙা পোশাক পড়বে। সেজন্য আজ সকালে নিউমার্কেটে যাবে।সাজগোজের বিষয়ে বরাবরই তিহার দূর্বলতা। তাই সে আর না করতে পারলো না।এদিকে বাবাকে বাসায় একা ফেলে বারবার বাইরে যাওয়া চলে না।বন্ধুদের কথা শুনলে তিতিক্ষা হয়তো যাবে না। তার কিছু কেনাও হবে না। তারপর এই অজুহাতেই হয়তো সে বিয়েতে যাওয়া আটকাবে।এসব ভেবে সে ব্যাপার টা তিতিক্ষা কে জানায় নি।
‘বোধহয় আসবে দু’একজন।’ তিহা বললো মিনমিনে স্বরে।
তিতিক্ষা রাগ সামলে নিয়ে বললো, ‘তারা কি ছেলে নাকি মেয়ে?’
‘ছেলে বন্ধু আমার আর কই ? নিমি আসবে আর সাথে আরও একজন কেউ হয়তো আসবে।’
উত্তরে বলার মতো কিছুই তিতিক্ষা খুঁজে পেল না । সামনে ঘুরে গাট হয়ে বসে রইল শুধু।
তিহা তিতিক্ষা এক দোকানে বসে শাড়ি দেখছিল।নিমি তখন কল করলো।তারা কোথায় আছে জানতে চাইলো।তিহা তাদের অবস্থান বলে আড়চোখে একবার তিতিক্ষার মুখ দেখে নিমিকে জিগ্যেস করলো তার সাথে আর কে বা কারা আসছে? নিমি ওপাশ থেকে কিছু একটা বললো।
তিহা ফোন রেখে হাসি মুখে তিতিক্ষা কে বলে,’শুধু নিমি আর নিনাদ আসছে।বাকিদের সাথে কথা বলেই আসছে।দেখেছিস, আমি তো আগেই বলেছিলাম আমার ছেলে বন্ধু একেবারেই নেই। শুধু নিনাদ..। ‘
তিতিক্ষা কিছু বলার অবস্থায় নেই।রাগে তার গাঁ রি রি করছে।তখন দেখা গেল দূর থেকে নিনাদ আর নিমি হেঁটে আসছে। মুহুর্তে তিতিক্ষা আড়ষ্ট হয়ে পরল।অদ্ভুত এক অস্বস্তি শুরু হল তার।সে ছোটনের হাত ধরে তিহার পেছনে এসে দাঁড়াল। নিকাব আরো নিচে টানতে শুরু করল।যেন তার চোখ দুটো ছাড়া ভ্রু অবধি দেখা না যায়! নিনাদকে কাছে আসতে দেখে ছোটন তিতিক্ষার হাত ছেড়ে ততক্ষণে ভোঁ দৌড় দিয়েছে।ছোটন কাছে যেতেই নিনাদ তাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরল।
নিমি তিহা ও তিতিক্ষার সাথে কথা বলছে।তিহার পেছনে দাঁড়িয়ে থেকেই ক্ষীণ স্বরে তিতিক্ষা নিমির সাথে কুশল বিনিময় করলো।
নিনাদ তা দেখে মনে মনে হাসলো।তিতিক্ষার দিকে ইশারা করে তিহাকে বলল,’তোর পেছনে কালো ভূতের মতো ওটা কাকে নিয়ে এসেছিস।দিনেদুপুরে মানুষের হার্ট অ্যাটাক করাবি নাকি?’
‘এখানে এসেও তোর বাদরামি! আমার বোন অনেক দামি তাই প্যাকেট করে নিয়ে এসেছি।
ও কি তোর ই’য়েদের মতো যে টপ আর শর্টস পড়ে চলে আসবে লাফিয়ে লাফিয়ে ?’
নিনাদের কথাশুনে তিতিক্ষার রাগ হচ্ছিল।এবার তিহার কথা শুনে তার কান্না পেয়ে গেল।তার বোন এসব কি বলছে ! টপ শর্টসের কথাটা কি না বলতে হতো না? এভাবে সবার মাঝখানে তার ইজ্জত ডোবানো টা কি খুব জরুরি ছিল!’
ই’য়েদের কথা ওঠা মাত্র নিনাদও চুপসে গেল।এ বিষয়ে কথা বাড়তে না দেয়াই ভালো।বলা যায় না কখন তিহা মুখ ফসকে বাকি সবকিছুও বলে দেয়!
নানান বিষয় নিয়ে তিহা, নিনাদের মধ্যে তর্ক চলতে থাকল।নিনাদ যা-ই বলে তাতেই তিহা তার পিঠে একটা করে কিল বসিয়ে দেয়।তিহা, নিমি চলে গেল একদলে।শপিংমলে নিনাদকে মাঝে রেখে দুটি সুন্দরী রমণী দু’দিক থেকে ঘিরে হাটছে।মাঝে মাঝে একটা দুটো কিল পড়ছে তার পিঠে। পেছন থেকে এই দৃশ্য দেখে তিতিক্ষা হা হয়ে রইল।এদের মারামারি দেখে মনে হচ্ছে এরা এখনো স্কুলের গন্ডি পেরোয় নি।
মারামারির মাঝেই নানান কথা বলতে বলতে পোশাকের কথাটা ওঠা মাত্র নিমি জানালো বিয়েতে তারা সবাই আকাশী রঙা পোশাক পরবে।ছেলেরা আকাশী পাঞ্জাবি, মেয়েরা আকাশী শাড়ি।কাল রাতে আলাপ আলোচনা পর এটাই ফাইনাল হয়েছে।তারপর দুপুর পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে তারা সবকিছু কিনলো।তিতিক্ষা শুরু থেকে শেষ অবধি চুপ রইল।মাঝে মাঝে তিহাকে খোঁচা দিয়ে বাড়ি ফেরার তাড়া দিল শুধু ।শপিং শেষে বাইরে বেরিয়ে নিনাদ বললো, ‘খুব ক্ষিদে পেয়েছে রে।তোদের কিল খেতে খেতে পেটের খাবার সব হজম হয়ে গেছে আমার।এখানেই চল কোথাও বসে খেয়ে নিই।’
তিহা উৎসুক হয়ে বললো, ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ সামনের ওই রেস্তোরাটায় বসি চল।’
তিতিক্ষা পেছন থেকে সাথে সাথে তিহার পিঠে চিমটি কাটলো।তিহা ‘উউউ’ করে উঠে পেছন ফিরল।
তিতিক্ষা রাগি চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে পেছন থেকে ফিসফিস করে বললো, ‘বুবু এইবার কিন্তু বারাবাড়ি হচ্ছে।যোহরের নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে।আমি এখনই ফিরবো। ওদের সাথে তোমার রেস্তোরায় যাওয়ার হলে একাই যাও ।আমি বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’ কথা বলতে বলতে সহসা তার নিনাদের দিকে চোখ পরে গেল।নিনাদ একদৃষ্টে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। যেন তার ফিসফিস কথার মানে বোঝার চেষ্টা করছে।তিতিক্ষা তৎক্ষনাৎ তার রাগি চোখ দুটো ঘুরিয়ে নিল।
নিনাদ এবার তিহার দিকে তাকাল।বললো, ‘কি কানপড়া দিচ্ছিলো ও তোকে ? খেতে যাওয়ার ব্যাপার নিয়ে। না ? ‘
‘হু তোরা যা রে।আজ আমি আর যেতে পারছি না।নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে।বাড়ি ফিরে নামায পড়তে না পারলে ছোটনের মিমি আমাকে চিবিবে খেয়ে ফেলবে।তাই না ছোটন ?’
ছোটন হাসি হাসি মুখ করে মাথা নাড়লো। বললো, ‘হ্যাঁ নামায পড়তে না পারলে খুব রেগে যায় মিমি।কান্নাও করে।আর তারপর….. ‘
বাকিটুকু আর বলা হলো না ছোটনের।তিতিক্ষা ছোটনের মুখ চেপে ধরেছে।এই ছেলেটা পুরো মায়ের মতো হয়েছে। তাকে শুধু ‘এক’ বলতে বললে ‘এক’ বলার সাথে সাথে ‘দুই’ ‘তিন’ ‘চার’ …….সব তার বলা চাই!
তিতিক্ষার কান্ড দেখে নিনাদ হো হো করে হেসে উঠল।নিমি তার পাশেই দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।
শুক্রবার তিহার বান্ধুবির বিয়ের দিন একটা দারুন ব্যাপার ঘটে গেল! বরাবরই তিহা বন্ধু পাগল আর ভীষণ ছটফটে।সেকথা তিতিক্ষার অজানা নয়।তাই সে বিয়ে বাড়ি যাবার আগে বারবার করে বোনকে বলে রাখল।সে যেন বিয়ে বাড়িতে বন্ধুদের পেয়ে তাকে একা ছেড়ে না দেয়।এবং সবিশেষ! তাকে নিয়ে তার বন্ধুমহলে যেন কোন কথা না ওঠে।তিহা তাকে আশ্বাস দিল।সে অনুক্ষণ তার পাশে পাশেই থাকবে এবং এবিষয়ে কথার কোনো নড়চড় সে করবে না।
বিয়ে বাড়ি এসে তিতিক্ষা আড়ষ্ট হয়ে তিহার পেছন পেছন হাটতে লাগলো।তার পড়নে বোরকা।দুধ চা রঙা সেই বোরকাটা ভীষণ সুন্দর।তার গৌর বর্ণে মানিয়েছেও বেশ।তবু যেন তার পাশের জনের তুলনায় সে বড্ড বেমানান! পাশেই তার বোন তিহা। সে যেন রৌদ্র দিনের উজ্জ্বল সাদা-নীল আকাশের সমস্ত সৌন্দর্য নিজের গায়ে নামিয়ে নিয়ে এসেছে! তার পড়নে আকাশী রঙা জামদানী, সাদা ব্লাউজ, হাতে এক-গাছি সাদা রেশমি চুড়ি, খোপায় বেলীফুলের গাঁজড়া আর গলায় একটা ভারি চিক।তাতেই যেন তার সৌন্দর্যের মাত্রাধিক্য হয়ে বাকিটা বেয়ে পড়ছে! অন্যদিকে তারই পাশে তার ছোট বোন পড়ে আছে বোরকা।মুখের ওপর বড় নিকাব,হাত-পা মোজায় ঢাকা।সে বেশ অস্বস্তি নিয়েই বোনের পিছু পিছু হাটছে।হঠাৎ এই দৃশ্য দেখলে যে কেউ বিচলিত হয়ে পরবে সন্দেহ নেই ।তবে অদূরে দাঁড়ানো তিহার বিশাল বন্ধুর দল একটুও হলো না।তারা এই এক উদর থেকে জন্ম নেয়া, পৃথিবীর দুই মেরু সমান পার্থক্য বিশিষ্ট বোনদের চেনে ! তিহা বন্ধুদের দেখে অস্থির হয়ে উঠল। তিতিক্ষা ও ছোটনকে ফেলেই সেদিকে ছুটে গেল।তিতিক্ষা কিছু না বলে ছোটনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইল। এবং বুঝলো আজ দিনের মধ্যে আরও অসংখ্যবার তাকে এই অপমানের ভাগ নিতে হবে।ছোটনের কাছেও মায়ের এই ছেলেমানুষী , বেখেয়ালী স্বভাব অপরিচিত নয়, এসব দেখে সে অভস্ত্য।সে তার মিমির হাত ধরে সুবোধ বালক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
পুরো সময় বন্ধুদের সাথে থাকলেও খাওয়ার বেলায় তিহাকে তিতিক্ষার কাছে ফিরতে হলো। তিতিক্ষা তার বন্ধুদের সঙ্গে একসাথে বসে খাবে না একথা সে আগেই জানিয়েছিল।তিহা তাই বোনকে নিয়ে একদম কোণার দিকে একটু আড়ালে খেতে বসলো।খাওয়া শেষ হতেই কোথা থেকে একটি মেয়ে এসে হাজির হলো।তিহা তাকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে কথা শুরু করলো।তিতিক্ষা তিহার সব বন্ধুদের চিনতো কিন্তু এই আগন্তুক কে বুঝতে না পেরে চুপচাপ বসে রইল।তিহার সাথে কথা শেষ করে মেয়েটি এবার তার দিকে ফিরলো।তিহাকে ইশারায় জিগ্যেস করে জেনে নিল এ তার ছোট বোন।তারপর তিতিক্ষার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলা সহসা তার ফোন নাম্বার চেয়ে বসলো।তিতিক্ষা অস্বস্তি নিয়ে মেয়েটির পেছনে দাঁড়ানো তার বোনের দিকে তাকালো।দেখলো তিহা তাকে ইশারায় বারবার নিষেধ করছে নাম্বার দেয়ার জন্য।ওদিকে মেয়েটি তখনো ফোন নাম্বার দেয়ার জন্য তাড়া দিয়ে যাচ্ছে।তিতিক্ষা একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাকে ফোন নাম্বার দিয়ে হাত ধোয়ার কথা বলে সেখান থেকে উঠে চলে গেলো।এই পুরো ব্যাপারটা একজন দূর থেকে প্রত্যক্ষ করছিল।তিতিক্ষা কে যেতে দেখে এবং তারপর ওই মেয়েটিকেও জায়গা ছাড়তে দেখে সে এবার সতেজে তিহার সামনে এসে দাঁড়ালো।
চলবে……
অদ্রিজা আহসান