প্রিয়দর্শিনী পর্ব ১১

0
1588

#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_১১

আবিদের চিন্তিত মন প্রিয়দর্শিনীর বিপদের আশঙ্কা করে উঠে।তীক্ষ্ণ মেজাজে আবিদ হন্তদন্ত পায়ে আসফির রুমের সামনে যায়।রাগে আবিদের হাত পা কাঁপতেছে,আবিদের অবচেতন মন বলছে আসফি ছিলো গার্ডেন এরিয়ায়।আজ এর বিহিত করে ছাড়বে।আবিদ আসফির দরজায় অনেক বার নক দেয়। আসফি রুমে ছিলোনা। অজানা আশঙ্কায় আবিদের শরীর দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়।এতক্ষণে চৌধুরী পরিবারের সবাই চলে এসেছে।আবিদ চিৎকার করে বলে,

‘আসফি কোথায়?আসফি বাসার বাইরে কেনো?’

চৌধুরী বাড়ির সবাই চিন্তিত হয়ে আবিদকে পরোক্ষ করে।আবিদ প্রচন্ড রেগে আছে।শাহরিয়ার চ‍ৌধুরী আবিদকে শান্ত হতে বলে।অনুসা বেগম আবিদের কাছে গিয়ে জিগ্যেস করে,

‘কী হয়েছে বাবা কেনো রেগে আছিস?কী করেছে আসফি?’

‘আসফি কোথায়?আসফিকে তাড়াতাড়ি আসতে বলুন। আমি পনেরো মিনিটের মধ‍্যে আসফিকে আমার সামনে চাই।’

শাহরিয়ার সাহেব আরহান, পুস্পিতাকে ইশারা করেন। দুজনে আলাদা আলাদা করে আসফিকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ফোনটা ঘরের মধ‍্যে বাজছে।আসফি ফোন রেখে বাইরে যায় না।এদিকে আবিদ সবাইকে সবটা খুলে বলে। সবাই আসফিকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। শাহরিয়ার চৌধুরী ভাবতে পারছে না আসফি এমন কাজ করেছে। ড্রয়িং রুমে সবাই আসফির জন‍্য অপেক্ষা করতে থাকে। মিনিট দশেক পর, আসফিকে ছাদ থেকে নামতে দেখে সবাই হতভম্ব।সবার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ আবিদ কি করবে ভেবে। আসফিকে দেখে আবিদ জিগ্যেস করে,

‘কোথায় ছিলি?কোথায় থেকে আসছিস তুই?’

আসফি হঠাৎ ঘাবড়ে যায় এমন প্রশ্নে। আর ভাবতে থাকে তার তো কোথাও যাওয়ার ছিল না। তবে সবাই জিগ্যেস করছে কেনো? আসফি ভাইয়ের উপর রেগে ছিল। এজন্যই আবিদের মুখোমুখি কম হয়। এই কয়েকদিনে একটা অভ‍্যাস হয়েছে ছাদে গিয়ে একটু নিরিবিলি সময় কাটানো। আজকে হঠাৎ সবাইকে চিন্তিত হয়ে অপেক্ষা করতে দেখে ভড়কে গেছে। আসফি অবাক হয়ে সবার উদ্দেশ্যে জিগ্যেস করে,

‘আমি তো ছাদে ছিলাম। কোথাও যাওয়ার কথা ছিল নাকি?আজব! তোমরা এভাবে বসে আছো কেনো?তোমাদের চিন্তিত দেখাচ্ছে।’

আবিদের ভেতরের সত্তা নির্বিকার হয়ে ভাবে,
‘আসফির কথা মিথ্যা মনে হচ্ছে না। কারণ আসফি যদি সত্যি ওখানে যায়,তবুও এতো তাড়াতাড়ি আসতে পারবে না। তবে কি আসফি সত্যি বলছে?তাহলে দর্শিনীদের গার্ডেন এরিয়ায় কে ছিল?’

চৌধুরী বাড়ির সবাই আসফির কথা বুঝতে পারছে না।আসফি যদি ছাদে থাকে তবে প্রিয়দর্শিনীদের গার্ডেনে কখন গেলো?এইটুকু সময়ে ফিরে আসা কী সম্ভব?শাহরিয়ার চৌধুরী আসফিকে সবটা বললে আসফি ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করে,

‘আশ্চর্য! তোমরা কি ভাবছো আমি প্রিয়দর্শিনীদের গার্ডেনে চোরের মতো গেছিলাম?সিরিয়াসলি ভাইয়া তুমি এমন ভাবছো আমাকে? আমার যদি যেতে হতো বুক ফুলিয়ে বীরের মতো যেতাম।এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই আমার।’

আবিদ ভিষণ চিন্তিত। তাকে একটা কথা খুব ভাবাচ্ছে আসলেই কে ছিল দর্শিনীদের গার্ডেনে?নতুন করে কে আসলো আবিদ এবং দর্শিনীর মাঝে?আসফির কথা অবিশ্বাস করার মতো না। সবকিছু কেমন গোলক ধাঁধার মতো মনে হচ্ছে।আবিদ কাউকে কিছু না বলে গাড়ির চাবি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। চ‍ৌধুরী পরিবারের কেউ আটকায়নি আবিদকে। সবাই ভালো মতো জানে আবিদ দর্শিনীর প্রতি কতোটা সিরিয়াস তাই কেউ কিছু বললো না।শুধু বি’স্মি’ত হয়ে সবটা দেখে গেল। আজ আসফি বি’স্ম’য় নিয়ে দেখছে আবিদের প্রিয়দর্শিনীর প্রতি সিরিয়াসনেস। অবশ‍্য আবিদ আগে থেকেই এগ্রেসিভ ছিল। অতটা অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয়।

__
এদিকে উজান এবং আশরাফ মুহতাসিম বাড়ির দারোয়ানকে নিয়ে গার্ডেনের দিকে তখন থেকে খুজেছে। তারা কাউকে না পেয়ে দারোয়ানকে কড়া পাহাড়া দিতে বলে বাড়িতে ফিরে আসে।উজান আর আশরাফ মুহতাসিমকে দেখে প্রিয়মা বেগম জিগ্যেস করে,

‘কে ছিল কিছু জানতে পেরেছেন?’

আশরাফ মুহতাসিম ঘেমেনেয়ে হাপিঁয়ে গেছে। উজান দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্বশুরের হয়ে বলে,

‘না মা কেউ ছিলনা। আশেপাশে ভালো মতো খুজেছি কাউকেই তো পেলাম না।’

প্রিয়মা বেগমের ভাবলেশহীন হয়ে তাকিয়ে দেখল। তিনি মেয়েকে আগলে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। প্রিয়দর্শিনী মায়ের আদর পেয়ে বিড়ালছানার মতো কাধে মাথা দিয়ে বসে আছে। আজকের ঘটনায় প্রচন্ড ভয় পেয়েছে মেয়েটা। প্রজ্জ্বলিনী বোনের দিকে তাকিয়ে উজানকে বলে,

‘কেউ ছিলোনা এমনটা তো হতে পারেনা। প্রিয়দর্শিনী নিশ্চয় ভুল দেখবে না তাইনা?’

উজান প্রজ্জ্বলিনীর কথায় সিরিয়াস হয়ে আশরাফ মুহতাসিমকে বলে,

‘সব জায়গা তো ভালো করে খুজলাম। বাবা আপনি নাহয় বাসাতে আরো দু’চারজন দারোয়ান রাখার ব‍্যবস্থা করেন। বিষয়টি কিন্তু সত্যি সিরিয়াস। আজকে প্রাচীর টপকেছে কাল বাসাতে প্রবেশ করবে না এমনটা ভাবা অসম্ভব কিছু নয়।’

আশরাফ মুহতাসি চিন্তিত হয়ে বলেন,
‘আমি দেখছি কি করা যায়। আবিদ ফোন দিয়েছিল ছেলেটা প্রিয়দর্শিনীর চিন্তায় অস্থির ছিল। আমাকে বলল থানায় জিটি করে রাখতে আরো দু’চারজন দারোয়ান নিয়োগ দিতে। শোনো উজান কাল আমার সঙ্গে একবার থানায় যাবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা বিহিত করতে হবে। সেইসঙ্গে আরো দু’তিনজন দারোয়ান বেশি নিয়োগ দিবো।’

প্রিয়দর্শিনী বাবার মুখে আবিদের কথা শুনে মায়ের কাধ থেকে সোজা হয়ে বসে। তখন! কথা বলার সময় হুট করে ফোন কেটে যাওয়ায় আবিদ আশরাফ মুহতাসিমকে ফোন দিয়ে সব বলে। এদিকে প্রিয়দর্শিনীর চিৎকারে বাসার সবাই তার রুমে চলে আসে। তারপর সব শুনে,উজান আর আশরাফ মুহতাসিম গার্ডেন এরিয়ায় দারোয়ান সহ তন্ন তন্ন করে সবটা খুজেছে। তারা কাউকে খুজে পায়নি।

আহমেদ মুহতাসিম এতোক্ষণ থমথমে মুখে বসেছিল। কিন্তু আশরাফ মুহতাসিমের থানায় জিটি করার কথায় আহমেদ মুহতাসিম আপত্তি করে বলেন,

‘আশরাফ থানায় যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের পরিবারের কেউ কোনদিন থানায় যায়নি। এখানে মানসম্মানের বিষয় আছে।এমনিতেই বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ড রাখো। আমরা তো আছি, আমার দাদুভাইয়ের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।’

আশরাফ মুহতাসিম, প্রথম বাবার উপর বিরক্ত হলেন। আগে কেউ যায়নি বলে কি এখন যেতে পারবে না? আগের নিয়ম বজায় রাখতে গিয়ে তিনি বাড়ির কাউকে বিপদে ফেলতে পারেন না। আশরাফ মুহতাসিম বাবার উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন তার আগেই আহমেদ মুহতাসিম থামিয়ে দেয়,

‘ঐ ম‍্যাজিস্ট্রেটকে তো বিশ্বাস করো নাকি?অপেক্ষা করো সব রহস্য খুব দ্রুত উদ্ঘটন হবে। আবিদ শাহরিয়ার আমার দাদুভাইয়ের প্রতিরক্ষা ব‍্যাপারে যত্নশীল। বলেছিলাম না আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী আমার দাদুভাইয়ের ঢাল হবে। অপেক্ষা করো সঠিক সময়ের। আমার তো ভিষণ ভালো লেগেছে ম‍্যাজিস্ট্রেটকে। দেখনা কেমন বিচক্ষণ মানুষ। পুলিশের দরকার হবে না ও একাই যথেষ্ট।’

প্রিয়দর্শিনী দাদু কথায় সবার অগোচরে হাসে। এদিকে আশরাফ মুহতাসিম আবিদকে ফোন দিয়ে তার উপর পুরো ব‍্যাপারটা ছেড়ে দেয় তদারকি করার জন‍্য। আবিদ আশরাফ মুহতাসিমকে নিশ্চিত করে সবটা দেখবে বলে। এতে সবাই নিশ্চিন্ত হয়। উজান আহমেদ মুহতাসিমের পাশে বসে বলে,

‘দাদু আপনি যথার্থই বলেছেন। আমাদের রেড রোজের জন‍্য আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী একদম পারফেক্ট ডিসিশন ছিল। দেখুন এখুনি কতোটা দায়িত্ববান।’

আহমেদ মুহতাসিম উজানের কথায় হাসলেন। অন‍্যদিকে সবাই উজানের কথায় সমর্থন করলেও প্রজ্জ্বলিনী খুশি হতে পারেনা। আশরাফ মুহতাসিমের সিদ্ধান্তে প্রজ্জ্বলিনী সাহস করে বলেছিলো বিয়েটা ক‍্যানসেল করতে। প্রজ্জ্বলিনীর কথায় আশরাফ মুহতাসিম ভিষণ অবাক হয়। মেয়েকে এই বিয়েতে মত না দেওয়ার কারণ জিগ্যেস করলে প্রজ্জ্বলিনী কোন কারণ দেখাতে পারেনি। আশরাফ মুহতাসিম প্রজ্জ্বলিনীকে বোঝায় তিনি শাহরিয়ার চৌধুরীকে কথা দিয়ে ফেলেছেন। বিয়েতে অমতের কোন কারণ নেই, তবে কেনো রাজি হবেন না তিনি? ম‍্যাজিস্ট্রেট আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী প্রিয়দর্শিনীর জন‍্য সবচেয়ে সুযোগ‍্য পাত্র। পুরো পরিবার এমনকি প্রিয়দর্শিনী নিজেও সম্মতি দিয়েছে। সামনের শুক্রবারে বাগদান হবে দুই পরিবার এর সম্মতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রজ্জ্বলিনীর এমন অযৌক্তিক আবদারে আশরাফ মুহতাসিম বিরক্ত বোধ করেন। প্রজ্জ্বলিনী চেয়েও কিছু করতে পারেনি এজন্য বেশ রাগান্বিত, ইর্ষান্বিত হয়। প্রজ্জ্বলিনীর ক্রু’দ্ধ হয়ে বলে,”শেষ পযর্ন্ত যথাযথ ভাবে চেষ্টা করে যাবে বাকিটা পরে দেখা যাবে।”

***
আবিদ গাড়ি নিয়ে প্রিয়দর্শিনীদের বাসা থেকে একটু দুরে দাড়িঁয়ে আছে। তার সঙ্গে বিশ্বস্ত দুজন গার্ড রয়েছে। আবিদের চোখ ব‍্যাস্ত হয়ে সবকিছু পরোক্ষ করছে। হঠাৎ রাস্তার পাশে ল‍্যাম্পপোস্টের কাছে সিসিটিভি দেখে আবিদের ঠোঁটে সু’ক্ষ্ম হাসির বিচরণ দেখা যাচ্ছে। আবিদ গার্ডসদের ইশারা করলে তাদের মাঝে সুদ’ক্ষ একজন সিসিটিভি ফু’টেজ সংগ্রহ করে আনে।এরমধ্যে আবিদ ফোন করে কাউকে ডেকে নেয়।

গভীর রাত। চাদেঁর আলোতে সব আলোকিত চারপাশ। আশেপাশে মানুষের সারা শব্দ নেই। প্রিয়দর্শিনীদের বাড়ি থেকে একটু দুরে আবিদের গাড়ি পার্ক করা। অথচ তারা কেউ জানেনা। আবিদ দুজন গার্ড সহ গাড়ির ভিতরে বসে রয়েছে। অন‍্যদিকে একজন আবিদকে ল‍্যাপটপে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাচ্ছে। আবিদ তার পাশে অবস্থান করে ভালো মন্দ নির্দেশনা দিচ্ছে। সিসিটিভিতে কাউকে দর্শিনীদের প্রাচীর টপকাতে দেখে আবিদ বলে উঠে,

‘থামো রাশেদ! এখানে লোকটির মুখে জুম করো।’

রাশেদ নামের ছেলেটি আবিদের কথা মতো জুম করে। এদিকে ল‍্যাম্পপোস্টের আলো না থাকায় অন্ধকারে মুখটা হালকা বোঝা যাচ্ছে। রাশেদ নামের ছেলেটি বলে উঠে,

‘স‍্যার এখানে মুখ স্পষ্ট নয়। ল‍্যাম্পপোস্টের আলো পৌঁছায়নি এখানে।’

আবিদ বিরক্ত হয়।কেটে কেটে সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা পযর্ন্ত অংশটুকু চেক করছে রাশেদ। আবিদ রাশেদকে ধমকে বলে উঠে,

‘তাহলে এরপরের অংশটুকু দেখাও।’

রাশেদ এরপরের অংশ চালু করতেই একজনের চেহারা সুস্পষ্ট হয়। রাশেদ লোকটির মুখ জুম করে। আবিদ হঠাৎ লোকটির মুখ দেখে হাসতে শুরু করে। রাশেদ সহ বাকি দুজন গার্ড আবিদের গতিবিধি লক্ষ‍্য একে অপরের দিকে চেয়ে দেখে। আবিদ হাসতে হাসতে বলে,

‘এই পুচকে ছেলের এতো সাহস? আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে একদম। আমি ছেলেটাকে কিছু বলবো না ভেবেছিলাম। কিন্তু তার অতিরিক্ত দুসাহস দেখানো উচিত হয়নি। পছন্দ করার জন‍্য আমার দর্শিনীকেই পেয়েছে? দর্শিনী শুধু আমার ওকে ভালো মতো বুঝিয়ে দিতে হবে। একে আমার সিক্রেট জায়গাতে চাই। একদিন ভালো মতো শিক্ষা দিলে সবটা বুঝে যাবে।’

#চলবে

| প্রিয় পাঠক রেসপন্স করার জন‍্য অনুরোধ রইল।ভুলত্রু’টি ক্ষ’মার নজরে দেখবেন। অবিরাম ভালোবাসা :’)🌺❤|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here